somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ দৃষ্টিহীন

১৫ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পূর্ণিমা রাত
চোখের পাতায় নামে
জোছনা বৃষ্টি
জানালার শার্সিতে
মেলো তব দৃষ্টি
খুঁজে পেতে পারো
ফেলে আসা সৃষ্টি।


গতকাল রাতে আমি গোটা কতক কবিতা লিখেছি। কোন কবিতায় বৃষ্টি নামিয়েছি। কোন কবিতায় জোছনার আলো ছড়িয়েছি। কখনো পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে গান গেয়েছি ডিঙ্গি নৌকোয়। নদীটির নাম ঠিক মনে রাখতে পারিনি। নদীটির নাম অনেক আগে হারিয়ে গেছে। হয়ত পথভোলা হয়েছি বলে হাঁটার অভ্যেসটা ধরে রাখতে পারিনি। মনে রাখতে পারিনি নদীর নাম।

নদী আর আমার চলার পথটি ছিল সমান্তরালে। চলার পথে কিছু আত্মার আত্মীয় ছিল। দূরন্ত শফিক উচ্ছল স্বপন আর আমি। হ্যা আমরা তিনজনই ছিলাম নদীর মত বহমান। ঠিক যেন নদীটির মত। এঁকেবেঁকে কত পথ পাড়ি দিয়েছি। তার ইয়ত্তা নেই। পাড়ি দিয়েছি আর কথার পিঠে কথা জোড়া দিয়ে আমরা ঘুড়ি উড়িয়েছি। এই ঘুড়ি উড়াতে সুতোর জোগানদাতার নামটা না বললেই নয়। দাতা না বলে দাত্রী বলাটাই শ্রেয় হবে বোধ করি। তা না হলে খোদ সুতোর জোগানদাতা ঘাড় মটকাবে। এত প্যাঁচিয়ে না বলে সরল করেই বলি। মধুমিতা নামটি তার। মধুমিতা নাম নিয়ে না খোঁচানোই ভাল। তাতে করে সারবস্তু ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে পারে। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে না হয় মুখ ফসকে বলে দেয়া যেতে পারে।
ঘূড়ি উড়ানোর কথা এসেই যখন পড়লো। একটু বিশদ করি ব্যাপারটা। রঙীন ঘুড়ি উড়ানোর দিন ছিল তখন। ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে উচ্ছৃঙ্খল ঝড় হাওয়ায় নাটাই থেকে সুতো কেটে যায় একদিন। ঘুড়ি খুঁজতে খুঁজতে দিলাম ছুট উত্তর দিকে। গ্রাম ছেড়ে বহুদূর চলে গেলাম। পদ্মপুকুরে তখন আষাঢ় মাস। ব্যাঙ ডাকে গলা ফুলিয়ে। দিনের শেষ আলোয় ঝিঝিপোকারও ডাক শোনা যায়। ঘুড়ি খুঁজতে খুঁজতে নাভিশ্বাস অবস্থা। এই বৃষ্টি আসবে বলে মন তখন ঘুড়ি ছেড়ে গৃহমূখী। গৃহে ফিরবো ফিরবো, এমন সময় পিছন থেকে একটা সুরেলা ডাক শোনা গেল। ব্যাঙ নয় এক ষোড়শীর ডাক। খুশীতে নাচতে নাচতে কাছে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখি পুকুরে সন্তরণরত উচ্ছ্বল হাঁসদলকে তাড়িয়ে নেয়ায় ব্যস্ত সে। সাথে বাড়ির গৃহপরিচারিকা এসেছে। কোন কিছু না ভেবে গৃহমূখী মন টেনে নিলাম হাস তাড়ানোতে। তাতে যদি মালিকের অপার খেয়াল হয়। হাঁস তাড়ানোর পারদর্শিতা স্বরূপ বকশিশ মিললেও মিলতে পারে। হাঁস তাড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়। নচ্ছাড়রা কোমড় বাকিয়ে একবার ডানে তো একবার বায়ে। আর একবার দিক ছাড়া বেদিকে দৌঁড় দেয়। আর আমার মন দৌঁড় দেয় মালিকের মনের কোনাবাড়িতে।
এমনি করে হাঁসের তালে হেলে দুলে হাঁটতে হাঁটতে ষোড়শীর বাড়ির সদর দরজায় উপস্থিত হলাম। তার মনের কোনাকাঞ্চি হাতড়ে কিছুটা সদয় ভাব বোঝা গেল। তার শেষ মুচকি হাসিটি হৃদকোটরে পুরে বাড়ি অভিমুখে পা বাড়ালাম। পথে অজানা ভয় তাড়িয়ে এগোচ্ছি। সব ভয় মাড়িয়ে একটা ভয়ই প্রকট হচ্ছে। যে হাসিটা হৃদকোটরে পুরে নিয়ে আসলাম সেই হাসি কি সারাজীবন সঞ্চয় রাখতে পারবো। কেননা তাদের বাড়ির সদর দরজায় শক্ত গাথুনিতে লেখা ''মল্লিক বাড়ি''।


মল্লিকদের পূর্ব পুরুষ শরাফত মল্লিকের বাড়ি ছিল দক্ষিণে। তিনি বহুঘাটে নাও ভিরিয়েছেন। এ ঘাটে ও ঘাটে জল খেয়ে শেষ পর্যন্ত উত্তরে এসে পৌঁছেছেন। এসেই জলের দামে জমিজমা কিনে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। গ্রামের মধ্যে দোতলা বাড়ি তুলেছেন। বেশ লম্বা চওড়া লোক ছিলেন। চেহারার মত মনটাও ছিল উদার। এলাকার লোকের সাথে খাতির জমাতে জুড়ি ছিলনা। বিভিন্ন মুসলিম ধর্মীয় উৎসবে এলাকার লোকদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতেন। কিন্তু সংসারে তিনি ছিলেন অসুখী মানুষ। দুই ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলেটি ছিল মৌসুমী পাগল। ছোট ছেলে বরকত। মেট্রিক পাশ করার পর সরকারী চাকুরীর সুযোগ পান। বাবার বিশাল সম্পত্তি চাষাবাদের ঝক্কি ঠেলে সেদিকে অগ্রসর হননি। সব জমিজমার চাষাবাদ তারই নখদর্পনে হয়।
যুদ্ধের সময় একদিন গ্রামের অনেক নিরীহ মানুষ পাক বাহিনীর হাতে বন্দী হন। সাথে বরকত মল্লিক ও বন্দী হন। গ্রামের পার্শ্ববর্তী নদীর ঘাটে সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বুকে বুলেট লাগার আগেই মরে যাওয়ার ভান করে নদীতে লাফ দেন। নদীর অথই জল সাঁতরে সেদিনের মত আত্মা হাতে নিয়ে বেঁচে আসেন। যুদ্ধের পরপরই কোন এক মৌসুমে বড় ছেলে নিখোঁজ হলে আর খুঁজে পাওয়া যায়না। ছেলের শোকে কাতর হয়ে দিন গুজরাতে গুজরাতে শরাফত মল্লিক ও তার স্ত্রী তহুরা একে একে ইহধাম ত্যাগ করেন।
বরকত মল্লিকের ঘরেই মধুমিতার আগমন। আর কোন ভাই ভগ্নি নেই তার। মুটে মজুর শ্রেণী যারা তার বাড়িতে কাজ করতো শুধু তাদের অনুপ্রবেশ ছিল এই বাড়িতে। বাড়ির চৌহদ্দিতে বাইরের কোন মানুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল।
পারতপক্ষে আমরা তার বাড়ির ত্রিসীমানা মাড়াতাম না। শরাফত মল্লিকের বদমেজাজের কারণে, ভয়ে কিংবা কোন এক অজানা জড়তায় আড়ষ্ট হয়ে আমার মনের কথা জানানোর কোন পথ খুঁজে পেলাম না। বিপথে আমার কথাগুলো ঘুরেফিরে শেষে মনের মধ্যে জমাট পাকিয়ে থাকলো। সেইসব কথা তার প্রতিমা সাজিয়ে সন্মুখে বসিয়ে কত রাতের পর বলেছি, তার ইয়ত্তা নেই।


নবম শ্রেনীতে উঠার পর নতুন পাঠ্যসূচীর সাথে পরিচিত হতে না হতেই কিছুদিনের মধ্যেই পাঠ্যসূচীর মধ্যগগনে মধূমিতার উদয়ন হলো।
মল্লিকবাড়ির নাক উঁচা স্বভাব হেতু আর কোনদিন তাদের বাড়ির পথ মাড়াইনি। ছোটকালে একবার এক বর্ষাদিনে স্বপন, শফিক এবং আমি পেয়ারা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাই। তাদের বাড়ির এক চাকর লাঠি হাতে পিছু ধাওয়া করতে করতে মায়ের কাছে নালিশ নিয়ে এসেছিল। মায়ের হাতে বেদম প্যাদানী খাই সেদিন। সময়ে অসময়ে এই কথা মনে পরে। সেই থেকে ঐ পথে যাওয়ার কথা আরও ভুলে গিয়েছি। শত ভয়ের দোলাচালে সেই পুরনো হাঁস তাড়ানোর দৃশ্যাবলীর কথা ভুলতে ভুলতে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের মত ক্ষীন হয়েছে। এমতবস্থায় মধূমিতা হুট করে নতুন পাঠ্যসূচীর মধ্যিখানে তেজোদীপ্ত সূর্যের ন্যায় জেকে বসলো। তাকেই নিয়মিত পাঠ করতে করতে ক্লাসের দিনগুলি অতিবাহিত হয় আমার। মেয়েদের আলাদা কমন রুম থাকায় ঐটুকুই সময় পাওয়া যায় অধ্যয়নের। কিন্তু গোমড়ামূখো স্বভাবের কারণে আর নানান ভয়ে মুখফুটে কিছু বলা হয়না। পাথর ঠেসতে ঠেসতে বুকে দাগ পড়ে গেছে যেন। সেই দাগের সাথে মধূমিতার নামটি গাঁথা রইলো আজীবন।
ক্লাস ফাইনালে ডাব্বা খেতে খেতে কোনরকম টিকে গেলাম এই যাত্রায়। এরপর অনেক চেষ্ঠা তদবির করে তার চিন্তা দূরে ঠেলে ক্রমশ পড়াশুনার দিকে ধাবিত হলাম। ওদিকে আমি ছাড়াও স্বপন, শফিকের মনেও দোলা দিয়েছিল মধূমিতা বসন্তের হাওয়া। সে হাওয়ায় কিছুদিন দোল খেয়ে আর চৈত্রের উত্তাপে পুড়ে বাস্তবতা অনুধাবণ করতে পারলে তারাও কিছুটা সংযত হয়ে পড়ে। শেষে পড়াশুনার দিকে ধাবিত হয়।
বাবা-মায়ের অন্ন ধ্বংস করার উপযুক্ত কারণ দর্শিয়ে এতদিনে ক্লাস পাঠ্যসূচী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। মাধ্যমিক ফাইনাল পরীক্ষায় মোটামুটি সন্তোষজনক ফলাফল নিয়ে স্কুল মুখ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের দোরগোড়ায় উপনীত হলাম। স্বপন শফিকরাও এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে অন্য এক কলেজে ভর্তি হলো। অন্যদিকে মধূমিতা শহরের এক মহিলা কলেজে বেড়ার আড়ালে চলে গেল। পণ করলাম একদিন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেভাবে হোক তার পরিবারের সামনে বেড়া সরিয়ে উপস্থিত হবো।
কলেজ জীবনে প্রবেশের পর আবারও সেই পুরনো বেদনাটা জাগ্রত হলো। সেই ব্যথার উপশম হতে না হতেই এক ঝড় হাওয়া এলো। সে হাওয়ায় নিভে গেল আশার প্রদীপ। এক উপযুক্ত দুবাই প্রবাসী পাত্র পেয়ে মল্লিক পরিবার এক যোগে মাথা ঝাকিয়ে রাজী হয়ে গেল। উপযুক্ত লগ্ন দেখে বিয়ের পর মধূমিতা বধু বেশে শ্বশুরবাড়ি চলে গেল।


বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে জীবনের অনেক অন্ধ গলি পার করে একটা ছোটখাট চাকুরীর সন্ধান হলো। হলো দু'মুঠো অন্নের সংস্থান। কিন্তু পরিবার পরিজনের সামান্যতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলাম। শেষে শুধু নিজেকেই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
বাসা থেকে প্রতিদিন হেঁটেই অফিস যাতায়াত করি। স্বল্প দূরত্বগুলো পায়ে হেঁটেই উৎরাই। শুনেছি এ শহরেই মধূমিতা থাকে। পৃথিবী গোলাকার বলে এ শহরটাও গোলাকার কিনা জানিনা, তবে একদিন ব্যস্ততম পথে অফিস থেকে ফেরার সময় তার সাথে অকস্মাৎ দেখা হয়ে গেল। ছাত্রজীবনে সামান্যতম হাই হ্যালোর অতিরিক্ত কোন কথা হয়নি। এ শহরের আলো বাতাসে মধূমিতা অনেকটা স্বচ্ছ হয়েছে। সব জড়তা ঠেলে ঠুলে আমাকে সরাসরি তুই সম্বোধন করে বসলো। যেন অনেক দিনের পর ঘনিষ্ঠ কোন বন্ধুর সাথে দেখা। বললো কাছেই তাদের বাসা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে এক প্রকার টেনেই নিয়ে গেল। মধূমিতা সন্তানসম্ভবা বলে তার মা বেশ কিছুদিন থেকে এ বাসায় আছেন। তার শ্বশুর-শাশুড়ি ও অন্যান্য শ্বশুরকূল আত্মীয়ের অনেকেই এ বাসার বিভিন্ন তলায় থাকেন। মধূমিতা তার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। বিকেলের চা নাস্তা সেরে এক ঘন্টা পর গাত্রোত্থান করলাম। উঠতে উঠতে আড়ালে একটা চাপা কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। তার মায়ের মুখে কান্নাজড়িত কন্ঠে যা শুনলাম, কয়েকমাস আগে মধূমিতার দুবাই প্রবাসী স্বামী এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন।


পথে নেমে যেন পথ খুঁজে পাচ্ছি না। পা দুটো কেন জানি অবশ হয়ে গেছে। চারিদিক ঝাপসা হয়ে পরিচিত রাস্তাঘাট যেন অপরিচিত হয়ে উঠছে। সেই ঝাপসা প্রকৃতির মাঝে বারবার মধূমিতার মলিন অবয়বটা চোখে ভাসছে। তার চোখের নীচে কত নির্ঘুম রাত্রীর অন্ধকার কালীর দাগ।
টলতে টলতে সন্মুখে এগোচ্ছি। আর ভাবছি। আজ মধূমিতা যেভাবে জড়তা ঠেলে হরহর করে কথা বললো, এইভাবে কয়েক বছর আগে পাঠ্যসূচীর সেই প্রথম পর্যায়ে যদি বলতো। একটু খানি কাছে আসতো। তাহলে জীবনটা হয়ত অন্য পথে মোড় নিত। উৎসাহ উদ্দীপনার মূলমন্ত্র থাকলে জীবনের কোন পথই দুর্গম নয়। শফিক আজ একটা ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। স্বপনের স্বপ্নটা বাস্তবে ছুঁই ছুঁই করতে করতে চারচাকার নিচে পড়ে পিষ্ঠ হলো। তার বাবা তার জন্মের কয়েক বছরের মাথায় অজানা দেশে চলে গেছেন। বুকেপেটে মানুষ করা সেই সর্বঅভিভাবিকা মা আজ পাগলপ্রায়। আজ নিজেকে খুব অসহায় কেউ একজন মনে হচ্ছে। যেন অসীম সাগরের মাঝখানে ভাসমান খড়কুটো। আবার মনে হচ্ছে অন্ধকার ঘরের কোন কীট। পৃথিবীতে মাথা নিচু হতে হতে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। একবার জীবনের শেষ শ্বাসটুকু নিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, শফিক স্বপন তোরা কোথায়। তোরা দেখে যা আমি কিরকমভাবে বেঁচে আছি এই পৃথিবীতে। কিন্তু এই শহরের দামী অট্টালিকা ভেদ করে শফিকের কানে সেই শব্দ পৌঁছাবেনা। কিংবা মাটি ভেদ করে স্বপনের কানেও যাবেনা।


প্রায় ছয়মাস পর দ্বিতীয় বার মধূমিতাদের বাসায় গেলাম। উপর থেকে একটি নবজাতকের কান্না ভেসে আসছে। দোতলায় ধীর পায়ে উঠে দরজায় নক করলাম। কিছুক্ষণ পর দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে গেল। আমাকে দেখেই মধূমিতার মা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে আবেগ মিশ্রিত হয়ে যে সব কথা শোনা গেল, তার সারমর্ম এই--- হাসপাতালে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মধূমিতা ওপারে চলে গেছে। এপারে রেখে গেছে তার সর্বশেষ চিহ্ন। এই ছেলে শিশুটি। তার দেখা শোনা করছে মধূমিতার ননদ। ফুটফুটে শিশুটিকে কিছুক্ষণের জন্য কোলে নিলাম। বেশীক্ষণ থাকতে পারলাম না। এই বাসা থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমার মন ও চোখের স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছি না। কোন রকমে বিদায় নিয়ে পৃথিবী সমান একটা পাথর বুকে চেপে ধরে পথে নেমে আসলাম।



গল্পের পেছনের কথাঃ এই গল্পটা শুরু করেছিলাম এক বছর আগে। আজ শেষ করলাম। জানি দুর্বল লেখক বলে প্রকাশ দুর্বল হলো। অনেক জায়গায় ভেঙ্গেও পড়েছে। যে শিশুটির কথা উঠে আসলো সেই শিশুটি এ পৃথিবীর এক জন্ম এতিম শিশু। একদিন পাশের বাসা থেকে এক নবজাতকের কান্না অবিরাম ভেসে আসতে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তার বাবা কয়েকমাস আগে প্রবাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। জন্মদাত্রী মা তাকে জন্ম দিতে গিয়ে কয়েকদিন আগে মারা গেছে। তার দেখাশুনার জন্য তার ফুফু নিয়ে এসেছে আজ। এই ঘটনা শোনার পর আমি অনেক দিন নিভৃতে কেদেছি।

আর স্বপন নামের আমার এক বন্ধু ছিল। আমার হাই স্কুলের বন্ধু। তার সাথে পড়াশুনায় প্রতিযোগীতা হতো। আবার তার হাতের লেখা অনুকরণ করার চেষ্ঠা করতাম। আমার দেখা সুন্দরতম লেখা। পরবর্তীতে সে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু হয়ে যায়। পৃথিবীর তাবৎ কথা তার সাথে শেয়ার করতাম। যা অন্য কারো কাছে বলতে পারিনা। এক সময় বেশ বিষণ্নতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেই সময়ে এই অল ইজ ওয়েল (ইডিয়ট মার্কা লিরিক) পোষ্টটা দেই। দেয়ার পর ঐদিন বিকেলে কিছুটা ঘুমানোর চেষ্ঠা করি। এরপর একজনের ফোনে জানতে পারি স্বপন মোটর সাইকেল একসিডেন্ট করেছে। এর চারদিন পর ১৪ জুলাই ২০১০ এ সে মারা যায়। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধুর এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয় আমার। সেদিনের পর থেকে আমার জীবনের অনেক কথাই জমতে থাকে। যেগুলো পৃথিবীর অন্য কাউকে বলার চিন্তাই করতে পারিনা। তার স্মৃতির স্মরণে একটা পোষ্টও লিখেছিলাম একদিন। কিন্তু আমার এই মনোব্যথাটা ব্লগের কাউকে বলে মন খারাপ করাতে চাইনি। আমার প্রিয় বন্ধুটা যেখানে আছে ভাল থাকুক খুব। বন্ধু তুই শান্তিতে ঘুমা। তোর বুকের উপর পৃথিবীর সব ফুলের সৌরভ ছড়াক।


ছবিঃ নিজস্ব এ্যালবাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৩
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×