somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিএসপি সুবিধা এবং ক্ষমতাসীনদের তথ্য সন্ত্রাস এবং আমার কিছু কথা ।

৩০ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জেনারেলাইজড সিস্টেমস অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি)’র আওতায় যুক্তরাষ্ট্র অনেক দরিদ্র দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। কিন্তু এই সুযোগ সীমিত পণ্যের জন্য এবং বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এই সুবিধা পায় না। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ বছরে ৪৯০ কোটি ডলার আয় করতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পায় তামাক, ক্রীড়াসামগ্রী ও সিরামিক পণ্য রপ্তানিতে। ফলে এই সুবিধা স্থগিত করাতে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
গত ২৯শে জুন বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগত আদেশ
জিএসপি প্রত্যাহার প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাতিল (জিএসপি প্রত্যাহার) করা যথোচিত বলে আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি...কারণ দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

জিএসপি প্রত্যাহার নিয়ে চলছে আমাদের তথ্য সন্ত্রাস । তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়া জিএসপি-সুবিধা বাতিলের জন্য মার্কিন সরকারের চিঠি লিখেছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই মার্কিন সরকার জিএসপি-সুবিধা স্থগিত করেছে।
হাসানুল হক ইনর বচন
গত কালের সংসদে দাঁড়িয়ে একই রকম কথা বলেছে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনা । প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জিএসপি-সুবিধা বাতিল করার অনুরোধ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকায় খালেদা জিয়া নিবন্ধ লিখেছেন। এর চেয়ে দুঃখের আর লজ্জার কিছু হতে পারে না।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন
এই দিকে বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শনিবার জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করার সুপারিশ করে কোনো চিঠি দেননি ।
খালেদা জিয়ার শনিবার জাতীয় সংসদে বক্তব্য
বারাক ওবামার সিদ্ধান্তটি আচমকা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ নিয়ে দেনদরবার চলছিল বাংলাদেশের। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনাও গত এক বছর ধরে বারবার সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে আসছিলেন। তাগাদা দিচ্ছিলেন শ্রম পরিবেশ উন্নয়নের। এতে কাজ তো হয়ইনি উল্টো শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের পক্ষে বক্তব্য দেয়ার তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। মজিনাকে চিঠি লিখেই তিনি জানতে চেয়েছিলেন, আপনি বলার কে?
মজিনাকে চিঠির বিষয়ে দিপু মনি
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করার পর এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত। নিউইয়র্ক টাইমস মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত দেশটির ৪০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
নিউইয়র্ক টাইমস’এ আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান তৈরি পোশাক শিল্পে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধস ও অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য শিল্পদুর্ঘটনায় শত শত প্রাণহানি ঘটেছে। এপ্রিলে রাজধানী ঢাকার বাইরে ভবন ধসে কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানার ১১ শ’র বেশি শ্রমিকের প্রাণহানি এবং গত নভেম্বরে অপর একটি পোশাক কারখানায় আগুনে দগ্ধ হয়ে ১১০ জনেরও বেশি শ্রমিক নিহত হয়।
নিউইয়র্ক টাইমস আরো লিখেছে, পোশাক শিল্পের ক্ষমতাধর মালিকদের কাছে অপছন্দের হবে এমন নীতি পরিবর্তন শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্বরা আনতে চান না। যখন লাখ লাখ দরিদ্র শ্রমিকের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে তখন আমেরিকা ও ইউরোপের নেতাদের কাছেও কিছু ব্যবস্থা রয়েছে যার প্রয়োগের মাধ্যমে এমন চাপ সৃষ্টি করা যায়।
নিউইয়র্ক টাইমস এর সম্পাদকীয়
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্যের অবাধ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা-জিএসপি স্থগিত করার পর এবার তৈরি পোশাকের অন্যতম ক্রেতা কানাডাও একই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। কানাডার প্রভাবশালী দৈনিক টরোন্টো স্টার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক খাত জিএসপি বা শুল্কমুক্ত সুবিধা না পেলেও কানাডার বাজারে এই সুবিধা পাচ্ছে। ফলে কানাডা এই পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০০৩ সালে বাংলাদেশ কানাডার বাজারে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করে। তবে ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটি ডলারে।’
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় নিম্নমানের কর্মপরিবেশ এবং সাম্প্রতিক সময়ে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এবং তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে ১২ শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর কারণে বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ সরকার।
স্টার পত্রিকার প্রতিবেদন
সন্দেহতীত যে, বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহার এমনসব শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে যেগুলো তৈরি পোশাকে কাজের নিম্নমান ও পরিবেশের জন্য দায়ী নয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যখন একের পর এক তার শ্রমিকের অধিকার ও জীবন রক্ষায় ব্যর্থতার পরিচয় দেয় তখন পশ্চিমা সরকারগুলো এমন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ারও অধিকার রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের দেখানো পথ যদি কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও অনুসরণ করে তখন আমাদের বাঁচার কোন উপায় থাকবেনা ।
বর্তমান ক্ষমতাসীনরা অন্যকে দোষারোপের যে সংস্কৃতি তৈরি করছে তা আমাদেরকে গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে ।
বর্তমান শাসক গুষ্টি যদি মনে করে তথা কথিত এ বছরের ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ পত্রিকায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় যাহা খালেদা জিয়া তাহার নয় বলে দাবী করে তার ফলশ্রুতি তে আজকের স্তগিত আদেশ তাহলে বলতে হয় বোকার স্বর্গে বসবাস । তারপরেও দেখে নেওয়া যাক কি লিখা ছিল ঐ নিবন্ধে
"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে পারেন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় যাঁরা কাজ করছেন বা যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী, তাঁদের ওপর দমনপীড়ন চলায় জিএসপি-সুবিধা প্রত্যাহার করা হবে।’
খালেদা জিয়ার তথা কথিত নিবন্ধ যাহা নিয়া লম্প জম্প
কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আমরা দেখতে পাই , যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে বাংলাদেশে জিএসপি সুবিধা বহাল রাখার পক্ষে জোরালো আহবান জানিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১১সালে ঐ সফরের সময় নিউ জারসি সিনেট বেগম জিয়াকে সংবরধনা দেয়। সিনেট অধিবেশনে দেয়া ভাষণেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ঐ আহবান জানিয়েছিলেন।

বর্তমান সরকারের ব্যাক্তি বর্গ বেমালুম ভুলে গছেন তাদের কৃত কর্ম । বিগত বছরগুলোতে নানা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে বিরক্ত করেছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শীর্ষ ব্যাক্তিবর্গের আচরণ। বিশেষ করে ড. ইউনূসের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করছেন পরযবেক্ষকগণ। তার উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিও রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাসহ এমন অনেক বিষয়ই যু্ক্তরাষ্ট্রের একাধিক শীর্ষ ব্যাক্তিত্বকে ক্ষুব্দ করেছে- ‘বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল’কেও একটি পরিণতি হিসেবে দেখছেন বিশেষ মহল ।
অবশেষে বলব শ্রমিক অধিকার ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার মৌলিক বিষয়গুলো সফলভাবে মোকাবিলায় ভবিষ্যতে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ নিশ্চিত করবো আমরা আবারও জিএসপি সুবিধা ফিরে পাব ।
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×