somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি পুরো ভয়ংকর গল্পঃ বুদ্ধিমত্তা

১৪ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিজা অগ্রণী স্কুলে ক্লাস টেনে পড়ে। প্রতিদিনের মত আজও স্কুল শেষে বাসায় ফিরলো। কিন্তু বাসায় ঢুকতে গিয়ে প্রথমেই একটা খটকা লাগল। বাসায় তো কেউ থাকার কথা না। দরজায় তালা নেই কেন? যাগগে, মনে হয় আম্মু আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে।

টিংটং করে কলিং বেল বাজালো।

দরজা খুলল একটা ছেলে। ২৫-২৬ বছর বয়স হবেহয়তো। কিন্তু তাকে তো সে চিনে না। একটু হকচকিয়ে গেল।
“আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না। আপনি বাসায় ঢুকলেন কি করে?” লিজা বলল।
“তুমি ভেতরে আস, আমি তোমার পরিচিত।“

লিজা পুরো অবাক। বাসায় আম্মু নেই। লোকটা চাবি পেল কোথা থেকে?
ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকল সে।
“আপনি কে? বললেন না যে?”
“সময় হলেই বুঝতে পারবে আমি কে? ভয় পেয়োনা, তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।“

টিংটং।
লিজার বুকটা ধক করে উঠল। ছেলেটা দরজা খুলে দিল। লিজা দেখতে পেল ৩ জন মানুষ ঘরে ঢুকল। অবাক বিষয় হল কাউকেই সে চিনে না।

“বসো তোমরা।“ লোকটা ওদের উদ্দেশ্যে বলল।
লোকগুলো ঘরে বসে লিজার দিকে তাকাতে লাগল।

লিজা তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতর চলে গেল।

----------------------------------------------
স্থান: মিসেস রেহানার গবেষণাগার

বিকাল সাড়ে চারটা বাজে। গবেষণাগার থেকে বের হয়ে পাশের রুমে ঢুকলেন মিসেস রেহানা। হঠাৎ বাসার কথা মনে পড়ল। আরে, তাড়াতাড়ি না যাওয়ার কথা ছিল?
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লেন তিনি। যাবার আগে সহকর্মীকে নির্দেশ দিলেন কি করা লাগবে। গবেষণার এ বিষয়টি তাকে যথেষ্ট ভোগাচ্ছে। নিজে থেকে অনেক দিন ধরে কোন কূলকিনারা কেন জানি পাচ্ছেন না।
গবেষণাগার থেকে বের হয়ে রিক্সা নিলেন তিনি। গন্তব্য সোজা বাসা।

এবার বাসার দরজার সামনে এসে খানিকটা হকচকিয়ে গেলেন তিনিও। বাসার দরজা বাইরে থেকে লাগানো। তাতে কোন তালা নেই। আশেপাশে তাকালেন তিনি। বাসার কোন দারোয়ানও নেই যে চোখ রাখবে। আস্তে করে দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলেন।

ঢুকে যেটা দেখতে পেলেন সেটা এইমূহুর্তে তার কল্পনাতেও ছিল না। বিছানা এলোমেলো, জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এক মূহুর্ত কি যেন ভাবলেন তিনি। এমনটাতো হবার কথা নয়।

মিসেস রেহানা ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করলেন পুলিস স্টেশনে।

ঠিক সেই সময়ে ঘটল একটা অঘটন। ভেতরের ঘর থেকে চিৎকার করে উঠল কে যেন।

-------------------------------------------
স্থান: লিজাদের বাসা

“চলুন”, আমরা ছাদে চলে যাই। লিজা বলল।
“হ্যা, এটাই ভাল হবে, চল”।
লিজা সহ সবাই বাড়ির ছাদে চলে এল।

তার কিছুক্ষণ পর তারা সবাই দেখতে পেল লিজার মা বাসায় ফিরছেন।
ছাদের রেলিঙের ফাক দিয়ে দেখতে পেল সবাই। লিজার মা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ঘরের ভেতর ঢুকে গেলেন।
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল তারা।
ওরা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে মিসেস রেহানা কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিস কে ফোন করবেন। তাই ওরা বাসার দিকে নামতে শুরু করল। লিজার মুখে যুদ্ধ জয়ের মত আনন্দ।

ওরা ধারণাও করতে পারে নি সামনে কি অপেক্ষা করছে।
বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ল সবাই।

মিসেস রেহানার রুমে ঢুকতে যাবে, এমন সময় শুনতে পেল রক্ত হিম করা চিৎকার। ভয়ে জমে গেল ওরা।
লিজাও ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল।


ফোন রেখে দিয়ে ঘর থেকে ছুটে বের হলেন মিসেস রেহানা। ঘরের বাইরে ওদের দাড়িয়ে থাকতে দেখে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলেন তিনি।

কথা বলা হল না কোন। সবাই ছুটল রুমের দিকে। যেখান থেকে চিৎকার টা শোনা গিয়েছে।
ঘরে ঢুকে দেখল সবাই। মিসেস রেহানার কাছে মনে হল তার হৃৎপিণ্ডটা গলার কাছে চলে এসেছে।

বিছানায় পরে আছে একটি রক্তাক্ত মৃতদেহ। পেটে ছোরা ঢোকানো। এবং সেই মৃতদেহটি দেখতে হুবহু লিজার মত।

-------------------------------------------------
কিছুক্ষণ বিমূঢ়ের মত সেদিকে তাকিয়ে রইলেন মিসেস রেহানা। কিন্তু কিছু সময় পরই তাকে অবাক করে দিয়ে হো হো করে হেসে উঠল লিজা। তার দিকে তাকালেন মিসেস রেহানা।
“আম্মু তুমি গিয়ে দেখ তো লাশটা আসল না নকল?”
মিসেস রেহানা সম্মোহিতের মত এগিয়ে গেলেন সেদিকে। তারপরই বুঝতে পারলেন সব। এটা কোন লাশ না। একটা বড় পুতুলকে একদম লিজার মত চেহারায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

চেপে রাখা নি:শ্বাস টা ছেড়ে দিলেন মিসেস রেহানা। লিজার দিকে ফিরলেন, এটা কি হল?
“বাহ্, তুমি তোমার নিজের মেয়ের উপর গবেষণা চাপিয়ে দেবে আর আমি তোমার সাথে এটুকু করতে পারব না?”
পুতুল টাকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি, “এটা কার সৃষ্টি?”

“তোমার সহকর্মীর গুণ তুমি নিজেই জানো না?”
মিসেস রেহানা বুঝতে পারলেন এটা রকিবের কাজ। ছেলেদের দিকে ফিরলেন তিনি।
“এমনটা হবার তো কথা ছিল না।“
“ম্যাডাম, আপনার দেয়া কাজটা সফল ভাবে আমারা সম্পন্ন করতে পেরেছি। ঘরে ঢোকার আগমুহূর্ত থেকে পরবর্তী সময়ের তার সমস্ত অনুভূতির রেকর্ড ভিডিও টাতে রয়েছে।“
“আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এবার গবেষণাটা আমরা শেষ করতে পারব।“

“আসলে হয়েছে কি, রকিব নামের ছেলেটি বলতে শুরু করল, লিজা খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। একারণে তাকে আমাদের সব খুলে বলতে হয়েছে। এদিকে আপনারো আসতে এতোটা দেরী হল.....”

“আমি হঠাৎ করে ভুলেই গিয়েছিলাম আসলে।“
“কিন্তু আমার শুধু একটাই প্রশ্ন করার ছিল। চিৎকার টা কে করল?”

পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল ওরা। কারণ তাদের প্ল্যানে চিৎকারের কথা ছিল না। উত্তর দিতে পারলনা কেউ।

অবাক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলেন মিসেস রেহানা।
আর একটি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে গিয়ে পরবর্তিতে অন্য এক নতুন রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে পড়লেন তিনি।

এবং যেটা ছিল আরো অনেক বেশী ভয়ানক।


৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×