somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা

১৪ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা বলি। সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপ্ত পরিসরে আছে। প্রচুর ছেলেমেয়ে পড়ে বলে এটিই এখনো সংখ্যাগত বিচারে প্রথম স্থানে আছে। নিযুক্ত হচ্ছেন অসংখ্য ভালো ভালো শিক্ষক শিক্ষিকা, স্কুল সার্ভিস কমিশন আয়োজিত পরীক্ষার মাধ্যমে। [ মাদ্রাসা শিক্ষাও সাধারণ শিক্ষার কাছাকাছি এখানে। মাদ্রাসা কমিশনের মাধ্যমে এখানে নিয়োগ হয়।] বেতনক্রম খুবই আকর্ষণীয়। স্নাতকরা শুরুতে প্রায় ২০,০০০ টাকা ও সাম্মানিক স্নাতকরা ২৩,০০০ টাকা ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর অধিকারীরা ২৫,০০০ টাকা বেতন পান। সেইসঙ্গে চাকুরির নিরাপত্তা ইত্যাদি তো আছেই। কিন্তু সমস্যা ম্যানেজমেন্ট গুলিতে। পরিকাঠামোর কিছু অভাব আছে। একারণে একটা গয়ংগচ্ছ মনোভাব চলে আসে। অন্যদিকে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন, চাকুরীর নিরাপত্তা কম বলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় যারা সুযোগ পেলেন না, মূলত তারাই সেখানে পড়াতে যান। কিন্তু এইসমস্ত স্কুলগুলির ম্যানেজমেন্ট বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কড়া। তাই পড়াশুনো ভাল হয়, অন্তত সেরকম একটা বাতাবরণ অভিভাবক মহলে আছে। আর যুগের চাহিদা অনুযায়ী এগুলি মূলত ইংরাজী মাধ্যম। এটাই অধিকাংশ শহুরে/ আধা শহুরে এলাকার উচ্চ-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, এমনকী নিম্নবিত্তদের একাংশকেও এসব বিদ্যালয়ে নিয়ে আসছে।
এছাড়া রয়েছে কিছু এলিট বিদ্যালয়। পাহাড়ী এলাকায় রেসিডেন্সিয়াল দুন স্কুল ইত্যাদির কথা তো অনেকদিন থেকেই আমরা জানি। এছাড়াও আছে শহরের বুকে ইন্টারন্যাশানাল, হেরিটেজ, ডিপিএস বা দিল্লি পাবলিক স্কুল (ভারতের বড় শহরগুলির মত কোলকাতাতেও কয়েকটি) ইত্যাদি। এগুলির মাস মাইনে বেশ বেশি। ছাত্রছাত্রীদের মাসে হাজার পাঁচেক টাকা দিতেই হয় একটু উঁচু ক্লাসে। পড়াশোনার মান শোনা যায় অত্যন্ত ভালো।
অনেক সম্ভাবনা কিন্তু সাধারণ এইডেড স্কুলগুলিতে আছে, এস এস সির মাধ্যমে আসা যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকদের কাজের পরিবেশ ও মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে পারলে সম্ভাবনার বাস্তবায়ন সম্ভব। বিগত কয়েকবছর সর্বশিক্ষা অভিযানের সূত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নে বিদ্যালয়গুলি বেশ ভালো টাকা পাচ্ছে। কিন্তু ক্লাসরুম শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনিয়তা আছে। সেই দিকটা বেশ অবহেলিত। বিদ্যালয় শিক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই জরুরী। বিগত এক দশকে টেলিভিশন তার সমস্ত অডিও ভিসুয়াল আকর্ষণ নিয়ে পোঁছে গেছে আমাদের বাড়ির দরজায় দরজায়। এই অবস্থায় আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা শুধু পানসে ক্লাসরুম শিক্ষাকে অনেক সময়েই আর ততটা আকর্ষণীয় মনে করে না। ইউরোপ আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি অডিও বিসুয়াল এইড ব্যবহার করছে দীর্ঘদিন থেকে। ভারতীয় উপমহাদেশের বা সার্ক অঞ্চলে এর ব্যবহার বেশ সীমিত। কিন্তু পাঠ্যবিষয়কে আকর্ষণীয় করে তুলতে এর জুড়ি মেলা ভার।
উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসের একটা ক্লাসের কথা ভাবা যাক। প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস পড়াতে গিয়ে ধরে নেওয়া যাক পড়ানো হচ্ছে হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার কথা। বর্ণনার পরিবর্তে একটি স্লাইড যদি সেই অঞ্চলের মানচিত্র তুলে ধরে তবে নিমেষে পরিস্কার হয়ে যায় তার অবস্থান।
ধরা যাক মোর্য রাজবংশের ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে। নন্দবংশের সাম্রাজ্য, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাম্রাজ্য, বিন্দুসারের সাম্রাজ্য, অশোকের সাম্রাজ্য - সব পরপর দেখিয়ে এটা সহজেই দেখানো যাবে কে কোন অংশ জয় করেছিলেন।
বাংলা উপভাষা পড়ানোর সময় রাঢ়ী, বঙ্গালি, কামরূপী, ঝাড়খণ্ডী, বরেন্দ্রী - এগুলির অঞ্চল ম্যাপে দেখানোর পাশাপাশি শ্রাব্য মাধ্যমে এইসব ভাষার কথিত চেহারা পেশ করলে ত ছাত্রছাত্রীদের কাছে অনেক স্পষ্ট ও আকর্ষণীয় হবে।
কোন গল্প/উপন্যাস যেমন পথের পাঁচালী পড়ানোর সময় সত্যজিতের ছবির অংশবিশেষ দেখালে সেই পাঠ অনেক জীবন্ত হয়ে উঠবে। মেঘনাদবধ কাব্য পড়ানোর সময় গৌতম হালদার অভিনীত নাটকের দৃশ্য তুলে ধরাটা নি:সংশয়ে ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষণ অনেক গুণ বাড়াবে।
ভুগোলের ক্লাসে এমনিতেই অনেক ম্যাপ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্লেট টেকটিনিক থিওরী সহ অনেক কিছু যদি ল্যাপটপ এল সি ডি প্রোজেক্টর ব্যবহার করে উপস্থাপন করা যায়, তা প্রবল আকর্ষণীয় হবে।
শিক্ষক শিক্ষিকারা যৌথ উদ্যোগে এ ধরণের টিচিং এইড এর অসাধারণ সম্ভার অল্প দিনেই তৈরি করে ফেলতে পারেন। আর এটা ক্লাসরুম শিক্ষার মানকে বৈপ্লবিক অগ্রগতি দেবে বলেই মনে হয়।
কিন্তু সম্প্রতি চালু হওয়া/হতে যাওয়া রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট নিয়ে কথা না বললে ভারতীয় ও সেই নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা নিয়ে কথা শেষ করা যাবে না। কারণ যতদূর মনে হয় চালু থাকলে এই আইন নতুনভাবে ভারতীয় শিক্ষা ও সমাজের বিকাশকে নতুনভাবে গড়ে পিঠে নেবে।
আর টি ই বা রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট (শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯) ১লা এপ্রিল ২০১০ থেকে জম্বু ও কাশ্মীর ছাড়া ভারতের সমস্ত রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চালু হয়েছে। এই আইনের মূল বিষয়বস্তুগুলোর দিকে নজর দিয়ে আমরা এই আইনটি সংক্রান্ত কিছু আলোচনায় প্রবেশ করতে পারি।
এই আইন অনুযায়ী
• ৬ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সি সমস্ত শিশু প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যালয় শিক্ষা (বুনিয়াদী শিক্ষা) পাবার অধিকারী। কোনো শিশুর কাছ থেকে এমন অর্থ কেউ নিতে বা দাবী করতে পারবেন না, যা দিতে না পারায় তার বুনিয়াদী শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে।
• শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুরাও অন্যান্য শিশুদের মত সমানভাবে বিনামূল্যে বুনিয়াদী শিক্ষা পাবে।
• বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ক্যাপিটেশন ফি (বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনুদান) নেওয়া যাবে না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
• বুনিয়াদী শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন শিশুকে কোন শ্রেণিতে এক বছরের বেশি রাখা যাবে না এবং কোন কারণেই বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া যাবে না।
• কোন বিদ্যালয়ে কোন শিশুকেই শারীরিক শাস্তি দেওয়া যাবে না বা তার ওপর মানসিক অত্যাচার করা যাবে না।
• কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, নবোদয় বিদ্যালয় এবং সৈনিক বিদ্যালয় ছাড়া সরকার দ্বারা স্থাপিত ও পরিচালিত সমস্ত বিদ্যালয়ে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সমস্ত শিশুরা বিনামূল্যে বুনিয়াদী শিক্ষা পাবে।
• সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলি তাদের প্রাপ্ত সরকারী সাহায্যের পরিমাণের অনুপাতে তাদের মোট ছাত্রসংখ্যার একটি নির্দিষ্ট অংশকে বিনামূল্যে বুনিয়াদী শিক্ষা দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু প্রাপ্ত সাহায্যের পরিমাণ যাই হোক না কেন, ঐ সমস্ত বিদ্যালয় তাদের মোট ছাত্রসংখ্যার কম করে ২৫ শতাংশকে বিনামূল্যে বুনিয়াদী শিক্ষা দেবে।
• বেসরকারী বিদ্যালয়, যারা কোনরকম সরকারী সাহায্য পায় না, প্রতি বছর প্রতি শ্রেণিতে মোট যে পরিমাণ ছাত্রছাত্রী ভর্তি করবে, কমপক্ষে তার ২৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীকে সমাজের দুর্বলতর বা পিছিয়ে পড়া শ্রেণি থেকে নেবে এবং ঐ ছাত্রছাত্রীদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা দেবে। ঐ ২৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর সবাই আসবে ঐ বিদ্যালয়ের প্রতিবেশি এলাকা থেকে। একটি সরকারী বিদ্যালয়ে প্রতিটি ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, সরকার সেই পরিমাণ অর্থ দুর্বলতর এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণি থেকে আসা প্রতিটি ছাত্রছাত্রী, যারা ঐ বেসরকারী বিদ্যালয়ে বুনিয়াদী শিক্ষা পাচ্ছে, তাদের জন্য বেসরকারী বিদ্যালয়কে প্রতি বছর দেবে।
• এই আইন চালু হবার তিন বছরের মধ্যে রাজ্য/স্থানীয় সরকার প্রতিটি জনবসতির এক কিমির মধ্যে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তিন কিমির মধ্যে একটি করে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে (যদি তা না থাকে)।
• এই আইন চালু হবার ছয় মাসের মধ্যে রাজ্য/স্থানীয় সরকার সমস্ত বিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ৩০ : ১ করবে। অর্থাৎ সমস্ত বিদ্যালয়ে ৩০ জন ছাত্রছাত্রী পিছু একজন করে শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকবেন।
• রাজ্য সরকার প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করবে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং পড়াশুনোর জিনিসের ব্যবস্থা করবে। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।
• এই আইন প্রয়োগের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের যৌথ দায়িত্ব। কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা করে স্থির করবে যে মোট প্রয়োজনীয় অর্থের ঠিক কত অংশ কেন্দ্রীয় সরকার দেবে আর কত অংশ রাজ্য সরকার দেবে।
• বেসরকারী বিদ্যালয় ছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়কে বিদ্যালয় পরিচালন কমিটি তৈরি করতে হবে। ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এলাকার কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সদস্য, এবং ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক এই কমিটির সদস্য হবেন। পরিচালন সমিতির সদস্যদের অন্তত অর্ধেককে মহিলা হতে হবে। অন্তত ৭৫ শতাংশ সদস্য হবেন ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা।
• প্রতিটি বিদ্যালয় পরিচালন কমিটি ঐ বিদ্যালয়ের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করবে। এই উন্নয়ন পরিকল্পনার ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় সরকার ঐ বিদ্যালয়ের উন্নয়নের অর্থ বরাদ্দ করবে।
• প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়মমত এবং সময়মত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে, সময়মত নির্দিষ্ট পাঠক্রম পড়ানো শেষ করতে হবে, ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি, শিক্ষায় উন্নতি এবং অন্যান্য বিষয়ে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করতে হবে, শিক্ষাদান ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে শিক্ষককে নিয়োগ করা যাবে না।(কেবলমাত্র সরকারি জনগণনা, নির্বাচনের কাজ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রাণকার্যে শিক্ষকদের নিয়োগ করা যাবে)। কোন শিক্ষক শিক্ষিকা প্রাইভেট টিউশন করতে পারবেন না।
• বাধ্যতামূলক বুনিয়াদী শিক্ষা শিশুর মৌলিক অধিকার। তাই এর প্রয়োগ না হলে বা অপপ্রয়োগ হলে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে সরাসরি জনস্বার্থ মামলা করা যাবে।
এই আইনের বহিরঙ্গে শিক্ষায় সরকারের দায়বদ্ধতার কথা থাকলেও বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্নে এই আইনটি শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকদের অনেকের কাছে ভয়াবহ মনে হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই আসে শিক্ষার গুণমানের প্রসঙ্গটি। এই আইনটি সর্বশিক্ষা অভিযানের ধারাবাহিকতাতেই সৃষ্ট আর ঘোষিতভাবেই এর লক্ষ্য কেবলমাত্র বুনিয়াদী শিক্ষা। এর মাধ্যমে মূলত সাক্ষরতা কর্মসূচীর দিকেই নজর দিতে চেয়েছে সরকার আর সেই বুনিয়াদী সাক্ষরতা শিক্ষাতেই মূলত নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখছে সে। সাক্ষরতা কর্মসূচীর বাইরে প্রচলিত সাধারণ বা বৃত্তিমুখী শিক্ষা থেকে সরকারী দায় সরিয়ে নিয়ে সে দায় পরোক্ষে বেসরকারী হাতে তুলে দেবার আয়োজনই এখানে নানা আলঙ্কারিক কথার আড়ালে তৈরি করা হয়েছে। এই আইনে পাশ ফেল প্রথা তুলে দেবার যে কথা রয়েছে, পছন্দের স্কুলে লটারির মাধ্যমে ভর্তির যে ভাগ্যভিত্তিক পদ্ধতির কথা উঠছে, তাতে সরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে ইতোমধ্যেই বিরক্ত অভিভাবকেরা বাধ্য হবেন আরো বেশি করে বেসরকারী বিদ্যালয়মুখী হতে। এই আইন সাক্ষরতা কর্মসূচীর ওপরের স্তরের সাধারণ শিক্ষাকে বেসরকারী ও পণ্যমুখী করে তুলবে, পুঁজিকে শিক্ষার মৃগয়াক্ষেত্রে আরও অবাধ বিচরণের জায়গা করে দেবে। সরকার বেসরকারী বিদ্যালয়গুলিকে নজিরবিহীনভাবে এবার ২৫ শতাংশ পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীর জন্য ভরতুকি দানের যে নীতি নিয়েছেন, তা ইঙ্গিত দেয় আগামী দিনে সাধারণ শিক্ষার অঙ্গন থেকে সরে আসার রাস্তাই সে তৈরি করছে। রেশনিং ব্যবস্থাকে কার্যত বি পি এল স্তরে সীমাবদ্ধ রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুকে খোলাবাজারে নিয়ে আসা ও সে সূত্রে সেসব জিনিসের অগ্নিমূল্যের যে অভিজ্ঞতার সাক্ষী মানুষ, আগামী দিনে শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাই হতে চলেছে। সাক্ষরতার, সর্বশিক্ষার যে দায়িত্ব সরকারের বহু আগেই পালন করার কথা ছিল (এই সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়টি ১৯৯৩ সালের), তার বহু বিলম্বিত আয়োজনের আছিলায় সরকার তার দায়কে শিক্ষার মূল অঙ্গন থেকেই সরিয়ে নিতে চাইছে। সাক্ষরতা/সর্বশিক্ষা নিয়ে ব্যাপক প্রচার এর আড়ালে সাধারণ শিক্ষার অঙ্গন থেকে তার দায়মুক্তির চেষ্টার দিকটি ক্রমশই সামনে আসছে।
আমাদের রাজ্যের সরকার কেন্দ্রীয় নির্দেশিকার আড়ালে এই বিষয়ে নিজেদের যাবতীয় সিদ্ধান্তহীন দোলাচলতাকে প্রতিদিন প্রকাশ করে চলেছেন, এক একবার একেকরকম নির্দেশিকা আসছে আর সেই সূত্রে ছাত্রভর্তি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিদ্যালয়গুলিতে ক্ষোভবিক্ষোভ, হাতাহাতি, শিক্ষকনিগ্রহর মত আরাজক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আর প্রতিটি ঘটনাই সরকারী শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে আরো তলানিতে ঠেলে দিয়ে সরকারের মৌন উদ্দেশ্যকে ইন্ধন যুগিয়ে চলেছে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×