somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিন্দ্যর দিন (একসাথে পুরো গল্প)

১৩ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শচীচরন লেনের ফুটপাথ ধরে হাটছিলো অনিন্দ্য। হঠাৎ হোঁচট খেলো সে। জুতার তলা খুলে এলো। আশপাশে তাকিয়ে মুচি খুঁজলো। না। কোনো শালার দেখা নেই। মুচিরা কি সব শহর ছেড়ে পালিয়েছে নাকি? জুতার তলা হাতে করে বয়ে নেবার মানে হয়না। খোলা ড্রেনে ছুঁড়ে দিলো তলাটা। মুচিদের আরেকদফা শাপ-শাপান্ত করতে করতে সামনে এগোলো সে। আজ আর তাহলে প্রিয়াঙ্কার সাথে দেখা হচ্ছেনা। গতকাল বিকেলে প্রিয়াঙ্কা বারবার বলে দিয়েছিলো, আজ যেনো ১১.০০ টার দিকে টিএসসিতে থাকে। তাকে নিয়ে কোথায় যেনো যাবে, প্রিয়াঙ্কা। শুকতলাবিহীন এ যাত্রা এখানেই থামিয়ে দিতে হবে। মেসে ফেরার কোনো উপায় নেই। আনিস সকালে বেরোবার কালে তাকে চাবি দিয়ে বেরোতে চেয়েছিলো। সে নেয়নি। তার আনিসের পরে বাসায় ফেরার কথা। একটাই চাবি রুমের। আনিস তাকে আরেকটা বানিয়ে নিতে বলেছিলো। সে এটাকে বাড়তি খরচের তালিকায় ফেলে দিয়ে, চাবি বানায়নি। কে জানতো, এমন বিচ্ছিরি ঘটনা ঘটবে। তাও আজকের দিনে!
এক কাজ করা যেতে পারে। আনিসের অফিসে গিয়ে উপস্থিত হলে কেমন হয়? এক সুযোগে দুপুরের খাবারটাও আনিসের ঘাড়ে চাপানো যাবে। আনিস কিছু মনে করবে বলে মনে হয়না। গত মাসকয়েক সে, আক্ষরিক অর্থেই আনিসের ঘাড়ে চেপে আছে। স্কুল জীবনের বন্ধুত্বের দাবীতে। অথচ স্কুলে থাকতে আনিসের সাথে তার দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিলোনা। একই ক্লাসে পড়ার কারনে তারা বন্ধু। অনিন্দ্যর ঢাকায় আসার কারন এমবিএ পড়া। এখন আবার এই বস্তু ছাড়া কোনো জায়গায় চাকরির আবেদন করার জো নেই। মফস্বলের কলেজ থেকে এমএ পাস করেও মুক্তি মেলেনি। এমএ তে রেজাল্ট খারাপ ছিলোনা তার। এতো পরিশ্রমের ফল হাতে-নাতে পাওয়া যাচ্ছে। চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলে, বড় বাবুরা মনে খুব কষ্ট পান। বায়োডাটাতে এমবিএর চাপ নেই বলে।
পা ফেলতে হচ্ছে খুব সাবধানে। মনে হচ্ছে আশপাশের লোকজনের দৃষ্টি সব তার দিকে ওঁত পেতে আছে। এই বুঝি তার করুন দশা দেখে সব একযোগে হেসে উঠবে। উত্তরায় যাবার বাসে উঠে পড়লো সে। কপালের জোড়ে সিট পেয়ে গেলো। বাসের নোংরা, শতশরীরের গন্ধমাখা, ঘামে ভেজা সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো অনিন্দ্য। চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়লো, আজ প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন!

ঘুম চটে গেলো অনিন্দ্যর। বাস থেকে নামার জন্য অস্থির হয়ে গেলো সে। ১১.১৯ বাজে! বাস থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে গেলো সে। পেছনে বাসের হেলপারের চিৎকার ভাসছে। ভাড়া দেবার সময় নেই। মৎস্য ভবনের সামনে গিয়ে রিকশা নিলো সে। ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করার পুরানো অভ্যাসটাও আজ আর নেই। রিকশাওয়ালাকে জোরে চালাবার তাড়া দিয়ে, আশেপাশে ফুলের দোকান খুজলো। মনে পড়লো, শাহবাগে ফুলের দোকানের অভাব নেই। কিন্তু দেরী হয়ে গেছে। প্রিয়াঙ্কা সময় মেনে চলে। তার দেরী দেখলে চলে যাবে। আর টিএসসি ক্রস করে, ফুলের দোকানে যেতে হবে!
রাস্তার পাশে বসে, একদল কিশোরী মালা গাঁথছিল। রিকশা থামিয়ে তাদের কাছে গেলো অনিন্দ্য। দশ টাকায় দুটো মালা কিনে, পকেটে পুরে নিলো। টিএসসিতে পৌঁছে, রিকশা বিদায় করে দিলো। চোখ খুঁজছে প্রিয়াঙ্কাকে। পেয়ে যেতে বেশী দেরী হলোনা। চেনা একটা মিষ্টি হাসি তাকে স্বাগত জানালো। এগিয়ে গেলো, প্রিয় মানুষটার দিকে।
- কেমন আছো?
- ভালো। শুভ জন্মদিন।
প্রিয়াঙ্কা হাসলো। সেই ভুবনভোলানো হাসি। দুজনে হাঁটতে লাগলো। জুতোটা নিয়ে হাঁটা সমস্যা। তবে বেশিদূর যেতে হবেনা। গন্তব্য চেনা। দেখা হলে তারা ছবির হাটের চায়ের দোকানে গিয়ে বসে। এ যাত্রায় তাদের কোনো কথা হয়না। ছবির হাটে পৌঁছে শুরু হয়, কথা। এটা গত সাতমাসের অলিখিত নিয়ম। প্রিয়াঙ্কার সাথে পরিচয় হবার পর থেকে। পরিচয়টা সাদামাটা ছিলো। প্রিয়াঙ্কা তার খালাতো ভাইয়ের সাথে পড়ে। খালাতো ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এলে, পরিচয় হয়। প্রথমে খালাতো ভাইয়ের প্রেমিকা ভেবেছিলো, প্রিয়াঙ্কাকে। পরে জানলো, হারামিটা এক ম্যাডামের সাথে প্রেম করছে। যার স্বামীবর বিদ্যমান! টানা কয়েকদিন আসার পর খালাতো ভাই সটকে গেলোও, কিভাবে যেনো তারা দুজনে রয়ে গেছে। অনিন্দ্যর সাথে প্রিয়াঙ্কার মিলে গেলোও দারুন। কিভাবে যেনো ভালোবাসার অলিখিত চুক্তিও হয়ে গেলো।
ছবির হাটে পৌঁছে মুখ খুললো, প্রিয়াঙ্কা
- দেরী হলো যে?
- জ্যামে পড়েছিলাম।
- পায়ে কি হয়েছে?
- কিছুনা। জুতোর তলা নাই হয়ে গেছে।
- ও! সকালে নাস্তা করেছো?
- করেছি। তুমি?
- আমিও। তাহলে শুধু চা চলুক।
চায়ের অর্ডার দিয়ে এলো অনিন্দ্য। চা খেতে খেতে টুকটাক কথা চললো। চা শেষ হলে, প্রিয়াঙ্কা বললো-
- আমি বাসায় যাবো।
অনিন্দ্য পকেট থেকে মালাদুটি বের করে দিলো। ফুলগুলো চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। প্রিয়াঙ্কা মালা নিয়ে নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিলো। হেসে বললো-
- থ্যাংকস।

প্রিয়াঙ্কাকে রিকশায় উঠিয়ে দিতে গেলো, অনিন্দ্য। তারপর সোজা আনিসের অফিসে চলে যাবে। প্রিয়াঙ্কার বাসা মতিঝিলে। রিকশায় উঠে, প্রিয়াঙ্কা হঠাৎ বললো-
- আনিন্দ্য। আমাকে পৌঁছে দেবে?
অবাক হলো, অনিন্দ্য। এতদিনের সম্পর্কে প্রিয়াঙ্কা কোনদিন তাকে একথা বলেনি। কতদিন ইচ্ছে হয়েছে, একসাথে রিকশায় ঘোরার! সাহস হয়নি বলার। আজ! স্বপ্ন নাতো? ভেঙ্গে যাবার সুযোগ না দিয়ে, রাজি হয়ে গেলো সে। রিকশায় পাশাপাশি একটু অস্বস্তি লাগছিলো। প্রিয়াঙ্কা প্রথমবারের মতো অনিন্দ্যের হাত মুঠোয় পুরে নিলো। আলতো করে বললো-
- ভালোবাসি।
কেঁপে উঠলো অনিন্দ্য। চোখে জল এলো। লজ্জায় চারপাশে তাকালো সে। দেখুক, সবাই। আজ অনিন্দ্যর দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:১৯
৪৫টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×