মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে তাণ্ডব চালাতে থাকা হেফাজতকর্মীদের সরাতে ১০ মিনিটের অভিযানের সময় ‘হাজার হাজার’ মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
Published : 08 May 2013, 07:07 AM
পুলিশ বলছে, রোববার রাতে হেফাজতের ওই সমাবেশ থেকে বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা, লুটের পর সকালে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ তথ্য পেয়েই সেদিন পুলিশ র্যাব ও বিজিবি একসঙ্গে অভিযান চালায়। অভিযানে ব্যবহার করা হয় টিয়ারগ্যাস, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট।
বিরোধী দল বিএনপি ও হেফাজতে ইসলাম পুলিশের ওই অভিযানে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ আনায় এবং এ নিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের ‘অপপ্রচার’ চলতে থাকায় বুধবার সাংবাদিকদের সামনে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান জিয়াউল আহসান ও বিজিবি কর্নেল এ হিয়া আজম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বেনজীর বলেন, নাশকতা ও ব্যাপক মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে জনগণকে রক্ষা করতেই ওই অভিযান চালানো হয়। আর এতে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রাণঘাতী নয়।
পুলিশ কমিশনার বলেন, অভিযানের পর হেফাজতের মঞ্চের কাছে চারটি লাশ কাপনের কাপড়ের ও পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় এবং বিভিন্ন স্থানে আরো তিনটি লাশ পাওয়া যায়, যাদের কেউ ওই অভিযানে নিহত হননি।
“এছাড়া হেফাজত কর্মীরা এক পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে। এর আগে রোববার বিকাল পর্যন্ত সংঘর্ষে মোট তিনজনের মৃত্যু হয়।”
অভিযানে বহু হেফাজত কর্মী হতাহতের যে প্রচার চালানো হচ্ছে তা ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে উল্লেখ করেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার।
এর বাইরে হতাহতের কোনো তথ্য থাকলে তার সুনির্দিষ্ট তালিকা দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
বেনজির আহমেদ বলেন, “রোববার হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ চলাকালে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় তাতে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক বাড়তে থাকে।”
তিনি বলেন, “এই সমাবেশকে ঘিরে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নাশকতার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কোনো একটি দলের পক্ষ থেকে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় নাশকতা চালানোর জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়।”
সেই নাশকতা ও ব্যাপক মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে জনগণকে রক্ষা করতেই রাতে অভিযান চালানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার জানান, হেফাজতকর্মীদের দক্ষিণ আর পূর্ব দিক দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রেখে কেবল উত্তর ও পশ্চিম দিক দিয়ে অভিযান চালানো হয়।
ঢাকা অবরোধের পর সমাবেশের অনুমতি দেয়া ভুল ছিল কি না বা কেন দেয়া হয়েছে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বেনজির বলেন, “দুটি কারণে হেফাজতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এক. গণতান্ত্রিক দিক লক্ষ্য করে। দুই. বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে।
“অবরোধের সময় কমিয়ে দুপুর ২টায় বারবার অনুরোধ করে সমাবেশের অনুমতি নেয়া হয়েছিল। হেফাজত প্রতিনিধিরা তখন বলেছিলেন- শফী হুজুর দোয়া করে সমাবেশ শেষ করে দিবে।”
নাশকতার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও শুধু ‘আবেগের’ কারণে অনুমতি দেয়া হয়েছে কি না আবারো জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমি বার বার বলছি দুটি কারণে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। হুজুররা তো আর মিথ্যা বলেন না। ১৪ বছরের একজন হুজুরকেও আমরা (বাংলাদেশিরা) সালাম দিয়ে সম্মান জানিয়ে কথা বলি।”
অভিযানে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে উপস্থিত অনেক সাংবাদিক সেদিন অভিযানে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং নিষেধের কথা আসবে কেন!।
সন্ধ্যা পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল জানিয়ে বেনজির বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈধ থাকলেও সময় শেষ হওয়ার পর তা অবৈধ হয়ে যায়।
অবশ্য গণজাগরণ মঞ্চ কেন ভাঙ্গা হয়েছে সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের কাছ থেকে।