somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃদু আলাপন - ১

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গতকাল (শুক্রবার, ৫ই এপ্রিল, ২০১৩) বিকালের দিকে মতিঝিলের ঐদিকে গিয়েছিলাম একটা কাজে। ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বেজে গেল। আমাকে একজন বললো, "রাস্তা একদম ফাঁকা হয়ে গেছে, ফেরার জন্য যানবাহন কিচ্ছু পাবেন না।" তার কথা আমার বিশ্বাস হলোনা। ভাবলাম বাস-টাস একটা কিছু তো পাবোই। একটা সাধারণ রেস্টুরেন্টে চা খেয়ে, হেটে হেটে পল্টনের দিকে গেলাম, বাস ধরার উদ্দেশ্যে। ওখানে গিয়ে দেখলাম, ঠিক চৌরাস্তার মোড়ে একদল ছেলেমেয়ে মশাল জ্বালিয়ে জড় হয়েছে। মাইকে দেশাত্মবোধক গান বাজছে। এই গানগুলো আমার খুব ভালো লাগে। ভাবলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দেশাত্মবোধক গান শুনি। পরক্ষণেই ভাবলাম, না বাড়ী ফিরতে হবে। দেখলাম কোন বাস নেই, মোড়ে কিছু রিকসা দাঁড়িয়ে আছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম, এই মুহুর্তে রিকসাই সই। কিছুদূর এগিয়ে পরে বাস নেব। এক তরুণ রিকসাওয়ালাকে বললাম, "যাবে?"
ঃ যামু, কই
ঃ মগবাজার মোড় পর্যন্ত। কত নিবে?
ঃ ষাইট টাকা।
ভাবলাম খুব বেশী হয়ে যায়, কিন্তু এখন আমার যাওয়া প্রয়োজন। বললাম
ঃ পঞ্চাশ টাকা দেই?
ঃ না ষাট টাকা।
ঃ টাকায় কুলাবে না, আমাকে আরো দূরে যেতে হবে।
ঃ কই যাইবেন?
ঃ বনানী।
ঃ যামু বনানী।
ঃ ও বাবা! রিকশা নিয়ে এত দূর যাবে! কত দিতে হবে?
ঃ দেড়শো টাকা দিবেন।
ঃ নাহ্, বেশী হয়ে যায়। তুমি বরং মাগবাজার মোড় পর্যন্তই চলো।
রিকশায় উঠতে যাব এই সময় মশালধারীদের মধ্যে থেকে ষন্ডা মতো একজন এসে রিকশায় ধাক্কা দিয়ে বললো, "তোর রিকসা সরা এখান থেকে"। আমি দ্রুত রিকশায় উঠে গেলাম। যেতে যেতে রিকশাওয়ালা আমাকে বলছে।
ঃ কি অবস্থা দেখছেন? পুরা ঢাকা শহর খালি। রাইতে কেউ হরতাল দেয়!
ঃ এই তো অবস্থা (আমি হতাশ ভঙ্গিতে বললাম)
ঃ আপনের জীবনের কোন নিরাপত্তা নাই, আমার জীবনেরও কোন নিরাপত্তা নাই। এগোরে আবার আমরা ভোট দেই!
ঃ ভোট দাও কেন?
ঃ কি করমু? কেউ তো নাই। তিন নম্বর ক্যারো আওন দরকার। এরশাদ আইলে ভালো হইবো না?
এই কথা শুনে আমি একটু আঁতকে উঠলাম। আবার স্বৈরাচার! ওকে বোঝানো দরকার। আমি দ্রুত বললাম
ঃ না, না, এরশাদ না। ঐ ভুল করোনা।
ঃ তাইলে আর কার কথা কন।
ঃ তৃতীয় কেউ আসলে তোমরা ভোট দিবা?
ঃ দিমুনা মানে? অবশ্যই দিমু। ভালো কেউ আইবো?
ঃ যদি আসে?
ঃ তাইলে এই আমরা যত রিকসাওয়ালা, সি, এন, জি, ওয়ালা আছি সবাই তারে ভোট দিমু। ওগো কেমনে সাপোর্ট করি, একটু আগে আপনে যেহান থেইকা উঠলেন, ঐহানে আমারে একজন বাঁশ দিয়া বারি দিতে চাইছিলো। আমি কইলাম, ভাই, ভাই, মাইরেন না। আমারে কয়, "চুপ, ভাই কেডা তোর?" দেহেন কি কয়! ওগো আর না। তিরতিয় কেউ আইলে তারেই ভোট দিমু।
ঃ মনে রেখো কিন্তু।
সে মাথা নেড়ে সায় জানালো। যেতে যেতে আরো অনেক কথা হলো ওর সাথে। ও আমার কাছে সরকার ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ইত্যাদি সম্বন্ধে জানতে চাইলো। আমি কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলাম। দু'এক সময় সামনে থেকে অন্য বাহনের ছুটে আসা দেখে বললাম,
ঃ তুমি সাবধানে চালাও
ঃ না, না, অসুবিধা নাই, আপনে কন, আমি শুনতে চাই। দেশের কি হইবো, কেমনে ভালো করন যায়, আমারে বুঝান।
কথা বলতে বলতে মগবাজার মোড় চলে এলো। আমি বললাম
ঃ তুমি আমাকে নামিয়ে দাও।
ঃ না, নামার দরকার নাই। আমি আপনারে বনানী দিয়া আসমু।
ঃ আমি তো অত ভাড়া দিতে পারবো না।
ঃ দরকার নাই। একশো তিরিশ টাকা দিয়েন। থাউক, আপনি যা পারেন দিয়েন।
তারপর শেষ পর্যন্ত আমাকে বাড়ী পর্যন্ত পৌছে দিলো।
ঃ স্যার, এইটা আপনার বাসা?
ঃ হ্যাঁ।
তারপর আমি ওকে একশো তিরিশ টাকাই দিলাম। ও খুশি হয়ে খুব সুন্দর হাসলো।
মাঝে মাঝে আমার রিকসাওয়ালাদের উপর খুব রাগ হতো। ভাড়া বেশী চায়, একরকম ভাড়া ঠিক করে গন্তব্যে পৌঁছে অন্যরকম বলে, রাফ বিহেইভ করে, ইত্যাদি নানা কারণে। আজ মনে হলো, আঘাতে আঘাতে আমরা পশুর পর্যায়ে চলে গেছি। কিন্তু এতো কিছুর পরও আমাদের মধ্যে একটা মানুষ বসবাস করে। হঠাৎ হঠাৎ সেই মানুষটা বেরিয়ে আসে।
সেই মুহুর্তে আমার ইচ্ছে করছিলো, অসাধু রাজনীতিবিদদের টুটি চেপে ধরতে। শেরে বাংলা, ভাষানী বা উনাদের মতো মহান হৃদয় রাজনীতিবিদদের আমি হাজার সালাম জানাই। কিন্তু আজকাল একশ্রেণীর ঠগ রাজনীতিবিদ আছে, যারা এই সহজ-সরল মানুষগুলোর অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে, তাদেরকেই জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থে বারবার ব্যবহার করছে। আমার মনে হয় সেই দিন খুব দূরে নেই যখন এই সহজ-সরল মানুষগুলোই ঠগ আর জোচ্চোরদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×