somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাবাশ আকরাম!

০৮ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উৎপল শুভ্র

আকরাম খানকে বাংলাদেশের ক্রিকেট কীভাবে মনে রাখবে?
এ প্রশ্নের উত্তর অনেক দিন আগেই নির্ধারিত হয়ে আছে। ব্যাট হাতে আকরাম ছিলেন বিনোদনের ফেরিওয়ালা।
থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে
অভিযোগ মানছেন কামাল!
আকরামকে অভিনন্দন

স্ট্রোকের পসরা সাজানো ব্যাটিং, মুখে অমলিন হাসি, সঙ্গে বাড়তি মাত্রা যোগ করা অমন নাদুসনুদুস শরীর। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে দর্শকপ্রিয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর নামটি শুরুর দিকেই আসবে।
অনাগত দিনে ইতিহাস আরও সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজবে। সেটিও মোটামুটি সর্বজনবিদিত। আকরামের একটি ইনিংসের ওপরই তো দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে হল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৬৮ রানের ওই ইনিংসটি না খেললে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন হারিয়ে যায়। বিশ্বকাপে গিয়ে পাকিস্তানকে না হারালে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস দাবি করার সাহসও থাকে না। একটি মাত্র ইনিংসের এভাবে কোনো দেশের ক্রিকেট-ভাগ্য গড়ে দেওয়ার উদাহরণ আর নেই।
এত দিন শুধু এ কারণেই মনে রাখতে হতো আকরামকে। এখন সঙ্গে যোগ হলো আরেকটি কারণ। হল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ইনিংসটি যদি ক্রিকেটার আকরামের জয় ঘোষণা করে থাকে, দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে পদত্যাগ ঘোষণা করছে আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষ আকরামের জয়।
আকরাম খানকে ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা চেনেন, সবারই একটা অভিন্ন অনুভূতি হয়—মানুষটা খুব নরম-সরম। সেই ‘নরম-সরম’ মানুষের মধ্যে চ্যাম্পিয়নের আগুনটা যেন বেরিয়ে এল এই সিদ্ধান্তে। অনেকে তামিম ইকবালের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কটা সামনে এনে এই সিদ্ধান্তের কারণ খুঁজতে চাইছে। তাতে আকরামকে অন্যায়ভাবে ছোট করা হয়। তামিম এখানে ঘটনাচক্রমাত্র। ব্যাপারটা নীতির।
দল নির্বাচনে বোর্ড সভাপতির সর্বশেষ হস্তক্ষেপকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখাটাও যেমন ভুল। এ ঘটনা অতীতেও নিয়মিতই ঘটেছে। নির্বাচকেরা ‘লড়াই’ করে কখনো জিতেছেন, কখনো আপসও করতে হয়েছে। কিন্তু নির্বাচকদের স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত দল যখন তাদের না জানিয়েই বদলে দেওয়া হলো, আকরামের সামনে দুটি পথই খোলা ছিল। পদ আর সামান্য কিছু টাকার লোভে আত্মসম্মান বিসর্জন দেওয়া অথবা এই ক্রিকেটীয় রীতি-ভব্যতা না মানার প্রতিবাদ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। আকরামকে অভিনন্দন, তিনি সঠিক পথেই হেঁটেছেন।
নির্বাচকের চাকরি খুব ‘উপভোগ’ করছেন বলে মিনহাজুল আবেদীন যতই ভিন্ন কথা শোনাতে চান, তা শুনে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবার শুধুই হাসি পাবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল সভাপতি হওয়ার পর একবারও কি এমন হয়েছে, বাংলাদেশ দল ঘোষণার আগে-পরে ফিসফিসানি শোনা যায়নি? গত বছর দু-তিন বাংলাদেশের দল নির্বাচনে বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ নিয়ে পত্রপত্রিকায় যত খবর ছাপা হয়েছে, ক্রিকেট ইতিহাসেই তো তা রেকর্ড!
গত বছর বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে নির্বাচকদের ‘ধস্তাধস্তি’র কথা পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে। একে নিয়েছ কেন, ওকে কেন নাওনি—টেকনিক্যাল কমিটির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করাটা ‘নিয়ম’ ছিল আরও আগে থেকেই। বিশ্বকাপের সময় সেটি শালীনতার সীমাও অতিক্রম করে গিয়েছিল বলেই খবর হয়েছিল। কাগজে-কলমে টেকনিক্যাল কমিটি ভেঙে দেওয়া হলেও ছদ্মাবরণে সেটি এখনো বহাল। দল নির্বাচন করার সময় ‘একে নিলে তো অমুকে রাগ করবে’, ‘উনি তো ওকে নিতে বলে দিয়েছেন’ এসব অঙ্ক সব সময়ই মাথায় ঘোরে নির্বাচকদের। এর চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার আর হয় না।
নির্বাচকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার রীতিটা তো এমনিতেই হয়নি। কারণ এমন না হলে দল নির্বাচনের সময় নির্বাচকদের মাথায় নানা অঙ্ক খেলা করবে, ক্রমশ তাদের বিচ্যুতি ঘটবে পক্ষপাতহীন থাকার মূল মন্ত্র থেকে। সাহসী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসও হারিয়ে যাবে। অথচ এই ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের তাতে থোড়াই কেয়ার! তাঁরা নির্বাচকদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করায় ব্যস্ত। তাতে দেশের ক্রিকেট গোল্লায় গেলেও কিছু আসে যায় না।
অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ কী? বোর্ড সভাপতি নিজেই তো এর নেতৃত্বে। নির্বাচকদের নির্বাচিত দল অনুমোদনের ‘রুটিন’ কাজটাকে তিনি নিজের সর্বময় ক্ষমতা প্রকাশের একটা মাধ্যম হিসেবে ধরে নিয়েছেন। বোর্ড সভাপতির নাতি পছন্দ করে না বলে আশরাফুলকে দলে রাখলেই তিনি রেগে যান—ক্রিকেট বোর্ডে একটু যাতায়াত আছে, এমন কে না তা জানে? নির্বাচকদের তো একবার এমনও বলে দিয়েছিলেন, আশরাফুল থাকলে সেই দল যেন তাঁর কাছে না পাঠানো হয়। নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের প্রতি বোর্ড সভাপতির এমন বিরাগ এবং সেটির এমন প্রকাশ বাকি ক্রিকেট-বিশ্বের কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে হবে না।
মাঠে অধিনায়কের পারফরম্যান্স নিয়ে নিত্য কাঁটাছেড়া হয়। কিন্তু সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অধিনায়ক তো বোর্ড সভাপতি। এমনই অধিনায়ক, যার সকালে বলা কথার সঙ্গে বিকেলের কথার মিল থাকে না। যাঁর কথা নিয়মিত কৌতুকের খোরাক। আকরাম খান পদত্যাগ করে আরও বড় করে তুললেন প্রশ্নটাকে—কার হাতে পড়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×