somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরাজিত

০৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কচুপাতা রঙের শাড়ীটা হাতে নিয়ে আবার ড্রয়ারে রেখে দিলাম । এটা পরলে নাকি আমাকে ভাল দেখায় , কিন্তু গাধাটা বলবে কি ? বহুদিন পর সাহস করে দেখা করবে বলছে । কিন্তু এত দিনে যেটা পারল না সেটা আজকে পারবে ? কাপুরুষ একটা । যখন শম্পা প্রথম বুঝতে পারল , ও আসলেই আমাকে একটা খোঁচা দিত । আমি বুঝেও না বুঝার ভাব নিতাম । বেচারা হঠাৎ করে আমার দিকে চাতক পাখির মত তাকাত , তখন ওর সাথে চোখচোখি করে লজ্জায় ফেলতাম । শম্পা একবার আমাকে ধরে জেরা শুরু করছিল ' কিরে সুমন আর তর মধ্যে কিছু চলছে নাকি রে ? ওর চোখ দেখলেই বলে দেওয়া যায় , বেটা স্বপ্ন দেখতেছে । ওর কল্পনার রানী কি তুই ? ' ' তখন হয়ত হেসে উড়িয়ে দিয়েছি , নিজের বেশী দাম দেখাতে গিয়ে হোক আর ওর পেট পাতলা বলে চেপে গেছি হয়তোবা -আসলে আমিও দুর্বল ছিলাম । ও যখন গভীর দৃষ্টিতে তাকাত , আর কথা বলার মাঝে খেই হারিয়ে ফেলত , তখন চাইতাম ওর হাত ধরে সূর্যাস্ত দেখতে । ফোনে কথা বলার সময় কি এমনিতে হাজারবার আকার ইঙ্গিতে বলেছি " ভালবাসি " - কিন্তু ও না বুঝার ভান করে অন্য দিকে চলে গেছে । কখনই জানতে পারি নি কেন এই দ্বৈতসত্তা ওর মধ্যে । আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য অদ্ভুত সব ছন্দহীন কবিতা লেখত , বন্ধুদের প্রশংসার পরও আমার দিকে তাকাত কিছু শোনার জন্য । কিন্তু আসল যায়গায় , বহুবার একসাথে দুজনে ছিলাম , এই ভালবাসার কথা উঠতেই দিত না । শেষে মরিয়া হয়ে ওইদিন আড্ডা দেওয়ার সময় জোরেই বললাম , " আম্মা বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে । " সাথে সাথে সেই বোকা হাসিটা দিল , আর আলটিমেটামটা দিয়ে অপমান হলাম আমি । আজকে আবার নিজেই ফোন করে ডাকল , এরকম ত কখনো আগে করেনি ও ? আবার ভিতরটা ধক করে উঠল । কি করবে হয়ত নিজেও জানে না । যে একটা কথার জন্য দুজন গত দুই বছর থেকে অপেক্ষা করে আছি , দুজনে দৃষ্টিতে সায় দিয়েছি অসংখ্য বার ,পারবে কি ও ?

২.
পুকুর পাড়ে এসে দেখলাম আগেই বসে আছে । ওকে অনেক নার্ভাস মনে হল । একটা খ্যাত টাইপের
নীল রঙের শার্ট পরে আসছে । নিচের দিকে তাকিয়ে কি যে আকাশ পাতাল ভাবছে । কাছে গিয়ে ধ্যান ভাঙ্গিয়ে বললাম " গোটা দুনিয়া থাকতে এখানে কেন ? কি এত দরকার ? "
খামাখা ভাবটা নিয়ে ঠিক করলাম না । বেচারার অবস্থা শুরুতেই কেরোসিন হয়ে গেছে । খালি বলল ," বস । "এরপর আবোল তাবোল কথা বলে দুজন বিশ মিনিট কাটিয়ে দিলাম । যখন দুইজনে প্রসঙ্গ না পেইয়ে চুপ হয়ে গেলাম , টের পেলাম , এতক্ষণ এই মুহুর্তর জন্য দুইজনই অপেক্ষা করে ছিলাম ।
" জানি না কিভাবে বলব । হয়ত অনেক আগেই বলা উচিত ছিল । যখন নীরস পলাশীর দেওয়াল থেকে বের হয়ে কার্জন হলের সামনে মুক্ত বাতাসের স্বাদ নেওয়ার জন্য চলে আসতাম , এরকম পড়ন্ত বিকালে তোমার সাথে দেখা হয়েছিল । সোহেলেদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম , আর তুমি বাড়ি যাবার জন্য তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে গেলে । প্রথম দেখাতেই হয়ত প্রেম না হোলেও , দিন দিন তোমাকে কিভাবে ভালবেসেছিলাম , নিজেও জানি না । এরপর তোমাকে নিয়ে অনেক কিছুই জিজ্ঞেসা করতাম , ওদেরও টের পেতে বেশী দিন লাগল না । তোমাকে দেখার জন্য ওদের কাছে চলে আসতাম । বুঝতাম তুমিও টের পাচ্ছো আমার ছলনা । ক্লাস ফাঁকি দিয়ে হোক আর যেভাবেই হোক , তোমাদের ক্যাম্পাসে হানা দিতাম । সোহেলের উপর কড়া নির্দেশ ছিল তোমাকে আর আমাকে একসাথে রেখে বাকি সবগুলকে নিয়ে অন্য দিকে যেতে হবে । কিন্ত তোমার সামনে আসলেই সব কথা বন্ধ হয়ে যেত । তুমি খুচিয়ে দু একটা কথা অন্তত আমার কাছ থেকে বের করতে ; আমি তাও বলতে পারতাম না , কি বলতে কি ভাব - এটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে সময়গুলো কাটিয়ে দিতাম । মন থেকে চিৎকার করে অনেক কিছুই বলতাম , কল্পনায় অনেক দূর চলে যেতাম , কিন্তু বাস্তবে পারতাম না । শুধু তোমার সাথে হাঁটার সময় মনে হত , যদি একবার ঘড়ির কাটাগুলোকে্ আটকে দিতে পারতাম । আমি বুঝতাম তুমিও আমাকে পছন্দ কর । পরে আমি তোমার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম । আমার হেয়ালিপনার ভাষা হয়ত তুমি কখনই বুঝতে পারনি । কিন্তু আজ তোমাকে সব বলব ।
ক্লাস ফাইভে থাকতে আমি মাঠে খেলতে খেলতে হঠাৎ করে পড়ে যাই । বুকে প্রচন্ড ব্যাথার চোটে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায় । পরে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি । বাবা গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছেন । চোখেমুখে পরাজয়ের ভাব । বাবাকে অনেক শক্ত বলে জানতাম , কিন্তু তখন দেখি বাবার চোখে পানি । পরে ডাক্তারের কাছ থেকে জানলাম , আমার হার্টে একটা ছোট ফুটা আছে । জন্ম থেকেই , কিন্তু আগে জানলে সারানো যেত হয়ত , কিন্তু এখন ঠিক করা হয়ত শম্ভব হবে না । এরপর দেশে , দেশের বাহিরে তিনবার অপারেশন হয়েছে আমার কোন লাভ হয়নি ।বাড়িতে তখন বাবা-মার মুখটা দেখলে দুমড়ে-মুচড়ে যেত । তারা নিজেদের দোষী ভাবতেন , সবাই আমার দিকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকাত । তখন সিদ্ধান্ত নিলাম , যাই হোক না কেন , জীবনে আর দশজনের মতই বাঁচবো । ভিতরের অবস্থাটা কাউকেই বুঝতে দেই নি, হাসি-খুশি মুখে জীবনকে নিজের মত সাজিয়েছি , এর মাঝে হঠাৎ করে ঝড়ো হাওয়ার মত এলে তুমি । এর আগে কখনই পাওয়া না পাওয়ার হিসাব চুকাতে যাই নি , কিছু না পেলেও কষ্ট লাগত না । বিশ্বাস করো , জীবনে শুধু চেয়েছি শুধু তোমাকেই । ভুলে গিয়েছিলাম আমি কে , যে কঠিন সত্য মেনে নিয়ে ছোট থেকে বড় হয়েছি তাকে পাত্তা না দিয়ে তোমার পিছে ছুটছিলাম । আবার বাঁচার জন্য একটা বিশাল ইচ্ছা চেপে বসছিল বুকে । কিন্তু এত গল্প-উপন্যাস না যে বেঁচে উঠব নায়কের মত । আবার আগের বাস্তবতা মেনে নিয়ে সরে এসেছিলাম । তোমার ব্যাকুলতা আমি টের পেয়েছি । চেয়েছি যা ছিল সব নষ্ট করে দিতে , পারি নি । দুরে চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসেছি । আমি হয়তো আর পাঁচ বছর বাঁচবো । বাবা এই মাসে আবার আমাকে ইংল্যান্ড নিয়ে যাচ্ছেন । ডাক্তার,আমি সবাই জানি আর কোন লাভ নেই , তারপরও , বাবার মনতো । শুধু চাই ভালো থেকো , এই অধমকে ভুলে যেও । যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও , অন্তত এই জীবনের জন্য । "

এইটুকু বলে থামল ও । আমার মাথা ঘুরছে , ওর দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছিলাম না । শুধু চোখ দিয়ে অবিশ্রান্তভাবে পানি পড়ছিল । ইছা করছিল , কেউ এসে যেন এই নিরবতা ভেঙ্গে দিয়ে যাক । ওর ভালবাসার কাছে আজ সত্যি পরাজিত আমি , কখনও ওর মত সাহস হবে কি আমার ?

মাগরিবের আজান শুনে চারিদিকে তাকালাম । টলটলে পানিতে এখন শুধুই আমার ছায়া ।



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×