somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বরেন্দ্র জাদুঘর: পুরাকীর্তির এক অচেনা জগতে.. [ছবি ব্লগ]

০৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনও প্ল্যান না নিয়েই সকালে নাস্তার পর বের হয়েছিলাম রাজশাহী শহরটা একটু ঘুরে দেখার জন্যে। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ মনে পড়লো আরে! বাসার পাশেই তো জাদুঘর, সেখানেই তো যাওয়া যায়। এভাবেই হুট করে ঢুকে পড়লাম রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরে। আমি অবশ্য আগেও একবার এসেছি এখানে, তবে সেটা অনেক পিচ্চিকালের কথা। তখন তো এইসব পুরাকীর্তির এতোকিছু বুঝতাম না। চোখ বড় বড় করে সবকিছু দেখেছি, হলের ভেতর কিছুক্ষণ লাফালাফি করেছি, তারপর হয়তো বাদাম খেতে খেতে বের হয়ে এসেছি :P কিন্তু এবারের যাওয়াটা একটু আলাদা, হারানো সেইসব যুগের ব্যাপারে জানার একটা তাগিদ কিছুটা হলেও ভেতরে অনুভব করছিলাম।

প্রধান ফটকের ভেতর প্রবেশ করেই টের পেলাম এখানে সংস্কারের কাজ চলছে। ভবনের মূল দরজা বন্ধ, আমাদেরকে একটা ফোকরের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। ভেতরের অবস্থাও তথৈবচ, সমস্ত দর্শনীয় বস্তুকে দুইটা রুমের ভেতর এনে রাখা হয়েছে, বাকী সব রুম সিল করা। বারান্দা আর সামনের চত্বরে সারি সারি প্রাচীন মূর্তি আর বিভিন্ন শিলালিপি রাখা আছে, বেশিরভাগই ভাঙ্গাচুরা, অনেকগুলার গায়ে আবার ট্যাগ-ও নাই। ছবি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঘুমকাতুরে গার্ডের উপর ভরসা করে ক্যামেরা বের করতে বেশীক্ষণ ভাবতে হয়নি ;)

কি কি দেখেছি তার বিস্তারিত লিস্ট দেয়া সম্ভব না, যে জিনিষগুলা মাথায় আছে সেগুলাই বলছি। যেমন জমিদারী আমলের পোশাক আশাক, বিশেষ করে সাজিয়ে রাখা ফতুয়া আর পশমি শালগুলা দেখেই মনে হলো আচ্ছা জমিদারী আমলের পোশাক নিয়ে একটা ফ্যাশন শো হলে কেমন হয়, যেখানে ঐ সময়ের সব শ্রেণীর মানুষের পোশাকের ধরন ফুটে উঠবে? B-) ফ্যাশন শো-র কথা চিন্তা করলেই চোখের ভিতর কিছু উদ্ভট পোশাক পরা নারীদেশের কথা মাথায় আসে :D কিন্তু এই ধরনের শো কোথাও হয় না কেন? নাকি হয়, হয়তো আমি-ই খবর রাখি না..কি জানি!

সরে আসলাম তৈজসপত্রের দিকে, মুঘল আমলে ব্যাবহার করা বিশাল বিশাল থালা, বাটি, জগ এসব রাখা আছে। সবকিছুতেই অপরূপ নকশা খোদাই করা। সেসময়ের কিছু হুক্কাও চোখে পড়লো। এত নিখুঁত সব নকশা যন্ত্রের ব্যাবহার ছাড়া তারা কিভাবে যে করতো তা ভেবে পেলাম না। বিশাল হলরুমের মাঝে সুলতানি আমলের ক্যালিওগ্রাফি ও নকশা করা কুরআন শরীফ, আর আরবি সংস্কৃত ও প্রাচীন বাংলায় লেখা বিভিন্ন শিলালিপি রাখা আছে। প্রাচীন বাংলা ভাষা পড়তে গিয়ে হোঁচটের পর হোঁচট খেলাম, নাহ! ঐ যুগে যদি চলে যাই কোনও ভাবে, ইংরেজি দিয়েই কাজ চালাতে হবে যা বুঝলাম। :(( শুধু শিলালিপির শুরুতে “আরম্ভ” আর শেষে “ইতি” লেখা আছে এটা পাঠোদ্ধার করতে পেরেছি। /:)

পাশের হলরুমটা পুরাটাই সাজানো ছিলো বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবী, আসন রত বৌদ্ধমূর্তি আর সুলতানি আমলের মসজিদের কারুকাজ করা টালি দিয়ে। ট্যাগ দেখে দেখে সবগুলো মূর্তি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম, অনেকগুলোর নাম-ও শুনিনি আগে। এখানে থাকা সব দেবী কি এই সময়ের মন্দির গুলোতে পূজিত হয়? নাকি সভ্যতা, যুগ আর রাজত্বের পতনের সাথে সাথে পতন হয়েছে দেবতাদের-ও?? জানিনা, শুধু দেখে গেলাম…

অনেক মূর্তির-ই সারা শরীর অক্ষত, কিন্তু মাথাগুলো ভাঙ্গা। বোঝা যাচ্ছে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। অনুমান করলাম উপমহাদেশে আরবদের আগমনের চিনহ বহন করছে তারা। ভাঙ্গা টুকরাগুলো এক করে এক জায়গায় মসজিদের মেহরাব সাজানো হয়েছে, পুরাটাই পাথরের উপর কারুকাজ করা। একটা জিনিষ খটকা লাগলো, কিন্তু কারও কাছ থেকেই সন্তোষজনক উত্তর পেলাম না। সেটা হলো, ঐ মেহরাবের ঠিক পেছন দিকে মানে বাইরের অংশে হিন্দু দেবদেবীদের ছবিসহ নকশা করা। প্রথমে ভাবলাম হয়তো কোনও মন্দির থেকে পাথর এনে তার উপর নকশা করা হয়েছিলো, কিন্তু তা যদি হয় তাহলে বাইরে থাকা এইসব নকশা তুলে ফেলা হলো না কেন? মসজিদের দেয়ালে এগুলো থাকার প্রশ্নই আসে না, প্রততত্ন বিভাগ নিশ্চিতভাবেই একটা ভজঘট বাধিয়েছে এখানে। X(

মনে আরও কিছু প্রশ্ন ছিলো, কিন্তু উত্তর দিতে পারেন এমন কাউকে আশেপাশে পেলাম না। তবে গার্ড কিন্তু আমাকে আশাহত করে নি, বেশ কিছু ছবি তুলতে পেরেছি। বেছে বেছে কয়েকটা শেয়ার করলাম, ছুটির দিন বাদে জাদুঘর বিকাল ৪ পর্যন্ত খোলা থাকে, যারা রাজশাহীতে থাকেন বা বেড়াতে এসেছেন চাইলে সময় করে একদিন ঘুরে আসতে পারেন :)














আরও লেখা, আরও ছবি :)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×