somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কিছুক্ষণ

০৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইকবাল হাসান
তখন সন্ধ্যা। স্থান : বেলভিউ হাসপাতাল নিউইয়র্ক। ১৬ ওয়েস্ট, রুম ২৯। রুমে ঢুকেই দেখা গেল ধবল শয্যায় বসে একই সঙ্গে কেমো নিচ্ছেন আর দাবা খেলছেন তিনি। দাবার কোর্টে তাঁর তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী স্ত্রী, শিল্পী মেহের আফরোজ শাওন হার মানার জন্য মোটেই প্রস্তুত নন। আমাদের দেখে বলে উঠলেন, খেলা ডিসমিস। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, হার মেনেছো তাহলে? না মানা পর্যন্ত খেলা চলবে। শাওনের মুখে তখন সূক্ষ্ম এক টুকরো হাসি, বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচ্যগ্র মেদিনী_ ভাবটা আর নেই। কে জিতল শেষমেশ? হুমায়ূন আহমেদ বললেন, আমরা এখন পর্যন্ত সমানে সমান। চার রাউন্ড খেলায় দু'বার শাওন আর দু'বার আমি জিতেছি। সদা হাস্যোজ্জ্বল জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে দেখে মনেই হয় না,
তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। অবিশ্বাস্য মনের জোর তাঁর। যেন 'কুসুমিত ইস্পাত'। ভেতরে-বাহিরে লড়ে যাচ্ছেন একজন অমিততেজ লড়াকু হিসেবে। অথচ বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতা এতটুক কেড়ে নিতে পারেনি এই লেখকের মানবিক মূল্যবোধ, সৌজন্য আর রসজ্ঞ শিষ্টাচার। দেখামাত্র হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি, বসতে বললেন শয্যাপাশে। তাঁর হাত ছুঁয়ে মনে হলো, যেন পাখির পালকে হাত রেখেছি। সত্যি বলতে কি, আমরা সবাই (নিউইয়র্কের সংস্কৃতিকর্মী রুমা সাহা, স্থপতি শিখা আহমেদ) ভেতরে ভেতরে আবেগাপ্লুত যখন, আমার মনের ভেতর তখন রুম উইদাউট ডোরস, আউটসাইডার আর গোলাপ-সুন্দরীর উথালপাথাল_ ভিজে উঠছিল চোখের পাতা, হুমায়ূন আহমেদ বললেন, হাসপাতাল তো_ কী দিয়ে যে তোমাদের আপ্যায়ন করি! চা খাবে? কলা, আপেল? আচ্ছা, তোমরা কিছুই যখন খাবে না_ রোগী দেখতে এসেছো, তাহলে তোমাদের 'জোক্স' দিয়েই আপ্যায়ন করি। পুরোপুরি সত্যি ঘটনা, মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। একবার একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছি, আমার পাশে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ডিজাইনার মইনুল হোসেন। অনুষ্ঠান শুরু হলো, হঠাৎ মইনুল বললেন, আপনি আমার চেয়ারটায় বসুন, প্লিজ। আমি কারণ জানতে চাইলাম না_ চেয়ার বদল করলাম আমরা। একটু পর মইনুল আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে যা বললেন, শুনে আমি বিস্মিত। হুমায়ূন, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখুন, কারা দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকালাম_ কিচ্ছু নেই। বললাম, কিছুই তো দেখছি না। মইনুল বললেন, ভালো করে দেখুন_ তিনটা জিন কেমন পথ আগলে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ওই দরজা দিয়ে আমি কীভাবে বেরোব? বললাম, মইনুল, আপনি আমার পেছন পেছন বেরোবেন। জিনরা আমাকে ভয় পায়। আপনার কিচ্ছু হবে না।
শিল্পী সুলতান সব সময় পকেটে বিড়াল নিয়ে হাঁটতেন। আর মাঝে মধ্যেই নিজের মনে বিড়বিড় করে কথা বলতেন। কার সঙ্গে কথা বলছেন জিজ্ঞেস করলে বলতেন, কার সঙ্গে আবার_ তেনাদের সঙ্গে। একবার বললেন, হুমায়ূন, জিনদের অত্যাচারে বড় অস্থির আছি। সারাক্ষণ কানের কাছে খালি বিড়বিড় করে। কী যে বলে কিছুই বুঝি না। তো, একবার শিল্পী সুলতান গেলেন নিউমার্কেট। পকেটে দুই বিড়াল-ছানা। পকেটমার পিছু নিল তাঁর_ যদি কিছু পাওয়া যায়! হঠাৎ দেখা গেল, পকেটমার চিৎকার করে দৌড়_ মানিব্যাগ হাত কামড়ে দিয়েছে।
এভাবে একের পর এক জোক্স বলে গেলেন তিনি।
হঠাৎ জানতে চাইলেন, মেলা কেমন দেখলে?
বললাম, জমজমাট। মেলায় আপনি না থেকেও আছেন, মানুষ আপনার বই কিনছে লাইন দিয়ে। পুরো দেশ আপনার অপেক্ষায়।
নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ সুস্থ হয়ে উঠছেন। বেলভিউ হাসপাতালে নবম কেমোথেরাপি গ্রহণ শেষে তিনি গতকাল বিকেলে বাসায় ফিরেছেন। দু'সপ্তাহ পরপর তাঁকে আরও তিনটি কেমো নিতে হবে। এরপর ডাক্তাররা সিটি স্ক্যান, ক্লোনোসকপিসহ নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তবে তিনি কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন তা এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে কেউ বলতে না পারলেও তাঁর অবস্থা উন্নতির দিকে। হুমায়ূন আহমেদ এ পর্যন্ত নয়টি কেমো নেওয়ার পরও শারীরিকভাবে যথেষ্ট সবল-সুস্থ আছেন।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২


তথ্যসূত্র-
Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×