somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনস্টাইন এবং আমি

০৫ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইনস্টাইন আংকেলের সঙ্গে আমার খাতির বেশ ভালো। আমি পদার্থবিজ্ঞানের আগামাথা কিছুই বুঝি না। তার পরও নতুন কিছু আবিষ্কার করলে আংকেল আমাকে সব বোঝানোর চেষ্টা করেন।
আমার মাথায় কিছুই ঢোকে না। তবে যেখানে মাথা নাড়ানো দরকার সেখানে মাথা নাড়াই, যেখানে চোখ সরু করা দরকার সেখানে চোখ সরু করি।
বেশির ভাগ সময়ই এসব করতে গিয়ে প্যাঁচ লাগিয়ে দিই। যেমন, যে জায়গায় এসে চোখ সরু করার কথা সেখানে এসে দেখা যায়, আমি হে হে করে হেসে দিয়েছি।
আমার বোকামি দেখে আইনস্টাইন আংকেল বেশি রাগ করেন না। তবে মাঝেমধ্যে ভেংচি কাটেন।

আংকেল হাসিখুশি মানুষ। রসিকও বটে!
এত জটিল জটিল জিনিসপত্র নিয়ে গবেষণা করেন, কিন্তু তাঁকে খুব একটা চিন্তিত দেখা যায় না। তবে কিছুদিন যাবৎ ওনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। আমি মূর্খ ছেলে, তাঁকে তাঁর চিন্তিত থাকার কারণ জিজ্ঞেস করিনি সাহস করে। তিনি বিজ্ঞানী মানুষ। চিন্তাভাবনা তো করবেনই। তিনি না করলে করবেটা কে?
ভেবেছিলাম এসব নিয়ে তাঁকে ঘাঁটাবটাটাব না। কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় আইনস্টাইন নিজেই আমাকে ডাকলেন, ‘রাজি, একটা সাংঘাতিক জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছি মনে হয় রে!’
আমি অত্যন্ত কৌতূহলী ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী, কী?’
হালকা উদাস গলায় আইনস্টাইন আংকেল বললেন, ‘সময় ধ্রুব নয় হে বালক। এটা একটা আপেক্ষিক ব্যাপার।’
আমি কিছুই বুঝলাম না। তার পরও বললাম, ‘কী সাংঘাতিক! কী সাংঘাতিক!!’
: দাঁড়া, তোকে বোঝাই।
আংকেল খাতা আর কলম নিয়ে আমার সামনে বসলেন।
: ধর, দুটি জড় কাঠামো...এর মাঝে একটা স্থির। একটির সাপেক্ষে অন্যটি ধ্রুব বেগে গতিশীল।
হালকা থামলেন আইনস্টাইন—‘কিরে! কিছু বুঝলি?’
আমি কিছুই বুঝলাম না, তার পরও বললাম, ‘ক্লিয়ার। একদম ক্লিয়ার। আপনি বলতে থাকেন।’
: গুড বয়। তাহলে এবার ধর, প হচ্ছে আলোর গতি।
আইনস্টাইন আংকেল কিছুক্ষণ অঙ্ক করলেন। সবশেষে একটা অত্যন্ত জটিল সমীকরণ লিখলেন।
আমি বরাবরের মতোই কিছু বুঝলাম না। কিন্তু অনেক জোরে মাথা নাড়ালাম। আমার মাথা নাড়ানো দেখেই হয়তো আইনস্টাইন আংকেল জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী বুঝলি, বল দেখি!’ খাইছে! এভাবে বিপদে পড়ে যাব বুঝিনি। আমি আমতা আমতা করা শুরু করলাম।
আমার অবস্থা দেখে আইনস্টাইন আংকেল আবার ভেংচি কাটলেন। তাঁর সেই বিখ্যাত ভেংচি।
তারপর বললেন, ‘তুই কিছুই বুঝিসনি, গাধা। দাঁড়া। সহজ করে বলি। ধর, তুই আর আমি যমজ ভাই...।’ আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘আপনি আমি যমজ ভাই হতে যাব কোন দুঃখে?’
: আরে বলদ, ধরে নে না! এখন ধর, তুই আলোর কাছাকাছি গতির কোনো রকেটে করে পুরো এক বছর মহাশূন্যে চক্কর দিয়ে এলি। এসে দেখবি আমি বুড়ো হয়ে গেছি। কিংবা আমি হয়তো বুড়ো হতে হতে মরে গেছি। আপেক্ষিক সময় তত্ত্বের এটাই হলো মূল কথা।
আমি সব বুঝে গেছি এমন ভাব করে বললাম, ‘আপনি তো এমনিতেই বুড়ো। বুড়োরা তো আগে আগে মরবেই। সোজা হিসাব। এখানে আপেক্ষিক-ফাপেক্ষিকের কী হলো?’
আইনস্টাইন এবার বিরক্ত হলেন মনে হয় কিছুটা।
: তোর মাথায় কি গোবরও নেই নাকি রে বলদ? এই জিনিস বুঝিস না ক্যান!
আইনস্টাইন আমার দিকে হতাশ ভঙ্গিতে তাকালেন। আমি লাজুক ভঙ্গিতে হাসলাম।
আইনস্টাইন আংকেল আবার বোঝানো শুরু করলেন। আমি তাঁর অ্যানার্জি দেখে অবাক হলাম। বিজ্ঞানীদের এত ধৈর্য!
: আচ্ছা, তোকে সহজ করে বলি, শোন।
: আচ্ছা, বলেন।
: ধর, তুই কোনো সুন্দরী মেয়ের পাশে বসে আছিস। তখন তোর এক ঘণ্টা সময়কে মনে হবে পাঁচ মিনিট। আবার যদি আগুনের ওপর হাত রাখিস, তাহলে পাঁচ মিনিট সময়কে মনে হবে এক ঘণ্টা। এটাই হলো আপেক্ষিক সময় তত্ত্ব। এবার বুঝলি?
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘এবার বিষয়টা পুরো ক্লিয়ার। আসলে ঘড়ি নষ্ট থাকবে। এ জন্যই এক ঘণ্টাকে মনে হবে পাঁচ মিনিট। আর পাঁচ মিনিটকে মনে হবে এক ঘণ্টা। হে হে।’

আমার কথা শুনে গর্জে উঠলেন আইনস্টাইন আংকেল।
: খামোশ! তোকে আমি আর বোঝাতে পারব না। আমার দ্বারা তোকে এই জিনিস বোঝানো সম্ভবও না। তোকে ২০১২ সালে এই জিনিস বুঝিয়ে দেবেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৪৮ ঘণ্টা যে কত লম্বা হতে পারে হাড়ে হাড়ে টের পাবি তখন। এখন আমার সামনে থেকে ফোট।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×