somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চায়না.....১

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জিয়া ওরফে ঢাকা ওরফে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করেই দেখলাম এক প্রাচীন ভাই। বহুদিন আগে খাতির ছিল কিন্তু নাম মনে করতে পারলাম না। নাম ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমার পারদর্শীতা অসাধারণ। তবে নিমকহারাম অর্থে এটি প্রযোজ্য নয়। কাধে হাত রাখলাম। সে তাকাল এবং সহাস্যে সালাম বিনিময়। এমনভাবে কথা বললাম যাতে তার নামটি ভুলে গেছি সেটি প্রকাশিত না হয়। জানতে পারলাম তার গন্তব্য চীনের শেনঝেন। উভয়েই একই বিমানে চীনের কুনমিং পর্যন্ত যাচ্ছি। এটা তার প্রথম বিদেশ সফর,তাই তার পিতা,স্ত্রী সকলে এসেছেন তাকে বিদায় জানাতে। তার পিতাকে বললাম আমি তাকে চিনি আর আমরা একসাথেই যাচ্ছি ফলে কোনো সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। কিন্তু কোনো সমস্যা না থাকলেও পিতা-মাতারা তাদের সন্তানের ব্যাপারে চিন্তিত থাকেন। এটা হল তাদের স্বভাব। আর সন্তানরা এভাবে তাদেরকে নিয়ে সদা চিন্তিত থাকেনা, এটা হল পিতা মাতার নিয়তি।

খানিক কথা হল। তারপর আরও কথা হল। এবং কথা চলতেই থাকল। আলোচনার যে পর্যায়ে নিজের দোষ স্বীকার করলে কোনো সমস্যা হয়না,সেরকম একটি পর্যায়ে বললাম ভাই আমি কিন্তু বহু বন্ধুর নাম মনে রাখতে না পেরে জঘন্নসব গালাগালির মুখোমুখি হয়েছি। তিনি বললেন-আমি ফারসিন। আমি বললাম,আমার নাম মনে আছে ? তিনি বললেন-মুন্নাভাই। আমার নামের সাথে ভাই শব্দটা- লেজের সাথে গোবরের যেমন( মানিকজোড়ের চাইতেও আপন)। বাইরে কেউ ডাকলে সাধারনত: মুন্না ভাই বলেই ডাকে। অতীত-বর্তমানের প্রচুর আলাপ হল।
এবার আমি বেশ ওজনদার ব্যাগ নিয়ে এসেছি যার ভেতর প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে যাতে চায়না থেকে কিছু কিনতে না হয়। আমরা এদেশে চায়নার তৈরী অনেক সস্তা জিনিস কিনতে পারলেও সেখানে গিয়ে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। এর কারন হল,বড় বড় দোকানপাটকে অনেক বেশী ভাড়া গুনতে হয়(এক শহরের একটি ছোট দোকানের ভাড়া জানতে পারলাম মাসে দেড় লক্ষ টাকা,বসুন্ধরা সিটিতে এই দোকানটির ভাড়া হবে ৪০ হাজার টাকা),তারা কোম্পানী থেকে যে মূল্যে কিনে আনেন তা বৈদেশিক রপ্তানী মূল্যের চাইতে বেশী,বহু দূরের কোনো প্রদেশ থেকে কেনার কারনে স্থল পথে পরিবহন ব্যয় অত্যধীক এবং সরকারী ট্যাক্স। কিন্তু যখন কোনো পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিছু রফতানী করে,তখন তারা সরকারী সুবিধা পায়,ট্যাক্স কমে আসে আর বৈদেশিক আমদানীকারক একবারে বেশী কেনার কারনে দামে বেশ সস্তা হয়,সমুদ্র পরিবহনে খরচ কমে আসে। এবং আমরা এভাবে বাংলাদেশে থেকে চায়নিজ জিনিস সেখানকার খুচরা বাজারের তুলনায় সস্তায় পেয়ে থাকি। তবে কখনও কখনও অনেক জিনিস সেখানকার বাজারে খুব সস্তায় পাওয়া যায়। এটি উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিশেষ সঙ্কটের কারনে হতে পারে আবার বিশেষ মূল্যহ্রাসের কারনেও হতে পারে। যেমন- আমি এক টেরাবাইটের একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক বর্তমান বাজার মূল্য দশ হাজার টাকার স্থলে মাত্র সাড়ে তিন হাজারে পেয়েছিলাম এবং একটি ৩৯ইঞ্চী স্মার্ট টেলিভিশন কাম মনিটর চায়নার অন্যান্য স্থানের বাজার মূল্য প্রায় ৭০ হাজারের বদলে ১৬হাজারে পেয়েছিলাম। উল্লেখ্যঃ সঙ্গত কারনে দুটোর একটাও কেনা হয়নি।

বোর্ডিং কার্ড নেওয়ার সময় বললাম আমাদের দুজনকে একস্থানে দিতে। রাত দুইটায় আমাদের ফ্লাইট টাইম। সে সময় পর্যন্ত প্রচুর গল্প হল। তিনি একটি চায়নিজ টেলিকম সার্ভিস কোম্পানীতে কর্মরত এবং বিশেষ প্রশিক্ষনের জন্যে তার এ যাত্রা। শুনলাম ইতিপূর্বে বাংলাদেশের টেলিকম ক্ষেত্রে এরিকসন,সিমেন্স একচেটিয়া সার্ভিস দিয়ে প্রচুর পয়সা পকেটে ভরেছে কিন্তু চায়নিজ এই কোম্পানী এসে তদের বাড়াভাতে ধুলো,ছাই দিয়েছে। এখন এই কোম্পানী এ ব্যবসার প্রায় ৯০% নিয়ন্ত্রণ করছে। অর্থাৎ এরিকসন,সিমেন্স এর বাড়াভাতে ৯০% ছাই। অতি দ্রুত তাদের এ সাফল্যের কারন হল,সস্তায় চমৎকার সার্ভিস দেওয়া। তারা শুধু ভাল সার্ভিস দিয়েছে তাই নয় বরং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশাল বিশাল কর্মকান্ডগুলোকে সংক্ষিপ্ত করে কোম্পানীর ঝামেলা,লোকবল,পয়সা সব বাঁচিয়ে দিয়েছে। তাদের সার্ভিস চার্জ পূর্ববর্তী কোম্পানীগুলোর প্রায় দশ ভাগের একভাগ। একটি কোম্পানী যা চায় বা যা পেয়ে সন্তুষ্ট তার সবটাই এখন এই চায়নিজ কোম্পানী দিচ্ছে।
প্লেনের ভেতর খাওয়ার সময় তার চোখ-মুখের ভাব দেখে বুঝলাম এ জিনিস তার পছন্দ নয়। বললাম,এটা কিন্তু অমৃত খাচ্ছেন। বড় চমক অপেক্ষা করছে সেখানে যাওয়ার পর। আমরা কিছু খাবার বদল করলাম। আমি এবার মনকে বেশ শক্ত করে ফেলেছি। হিসাব করে ফেলেছি যে, যত কুখাদ্য আসবে সব গিলে ফেলব। কোনো অভিযোগ করব না। আমার কথা আমি রেখেছি,তবে কয়েকবার ছাড়া। একটা সিস্টেম শিখিয়ে দিচ্ছি- মনকে শান্তনা দিবেন যে,এই খাবার শরীরের জন্যে খুবই উপকারী ওষুধসম। শরীর ,মন দুটোই প্রস্তুত হবে। এবার ধুমধাম করে খেয়ে ফেলবেন,একটুও থামবেন না এবং চিন্তা করার সময় নিবেন না, তাহলে একটা ঝোকে সব খেয়ে ফেলতে পারবেন। পেটের মধ্যে একবার পাঠাতে পারলে স্বাদের কথা চিন্তা করা অর্থহীন। এর অর্থ এই নয় যে, সকল চায়নিজ খাবারের স্বাদ আমাদের কাছে খারাপ। চায়নাতে বিভিন্ন ধরনের রান্নার পদ্ধতি আছে। কিছু খাবার খানিক তেল মশলা সহকারে অনেকটা ভারতীয় স্টাইলে রান্না হয়। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা কোনো রকম সিদ্ধ করে বিদঘুটে স্বাদের সস্ এবং সশলা সহকারে পরিবেশন করে।
চলবে...
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×