একচল্লিশ বছরের পুরনো ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান প্রশাসনের তৃতীয় বর্ষ পূর্ণ হয়েছে গেল বছর। তাদের আগ পর্যন্ত ৩৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের মোট সংখ্যা ছিল ৩৪০। পক্ষান্তরে শুধু বর্তমান উপাচার্যের তিন বছরে দলীয় কোটা, মন্ত্রীর সুপারিশ, আত্মীয়তার সম্পর্কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৯৩ জন শিক্ষককে, যা পূর্ববর্র্তী ৩৮ বছরের নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ। বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগে নিয়োগ পাওয়া এসব অতিরিক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত তিন বছরে দু’টি ইনস্টিটিউটসহ পাঁচটি অনুষদের ৩৩টি বিভাগে ১৯৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। উপাচার্য নিজে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হওয়ায় সেখানে যথেষ্ট শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি এই তিন বছরে নতুন করে ১১ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এই বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরা হচ্ছেন বর্তমান প্রক্টরের পত্নী সুবর্ণা কর্মকার এবং মো: এনামুল হক, মো: আব্দুস সবুর, শিশির ঘোষ, মো: কামাল হোসেন, শাহেদ রানা, মো: আওলাদ হোসেন, মো: আমিনুর রহমান, মীর তামজীদ রহমান, সুবাস রাজবংশী, আনন্দ কুমার ঘোষ। এদের মধ্যে অজৈব শাখা থেকে ভৌত শাখায় নিয়োগ পান শাহেদ রানা, যিনি অনার্সে তৃতীয় ও মাস্টার্সে নবম। অথচ বাদ দেয়া হয়েছে এই বিভাগে নতুন ভৌত শাখায় পিএইচডিধারী ও ২০টির মতো আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধের প্রণেতা একজন প্রার্থীকে। এ ছাড়া সুবর্ণা কর্মকার অনার্সে ষষ্ঠ ও মাস্টার্সে ১৭তম, মো: আমিনুর রহমান অনার্সে ১৪তম ও মাস্টার্সে দশম।
কলা ও মানবিক অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ ছিল অস্বচ্ছ ও নিয়মবহির্ভূত। দর্শন বিভাগে দুই শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয় পাঁচজনকে। ওই পাঁচজনের মধ্যে দুইজনের অনার্স ও মাস্টার্সের কোনোটিতেই প্রথম শ্রেণী নেই। ইতিহাস বিভাগে ৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী ইংরেজি বিভাগের আলাদা গুরুত্ব থাকার পরও অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত এক প্রার্থীকে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে পাঁচজনকে। এরা হলেন- মো: হুমায়ুন কবীর, মো: মশিউর রহমান, রুবিনা রহমান, মো: মাহবুবুর রহমান ও মো: আলমগীর কবীর। আন্তর্জাতিক জার্নালে একাধিক প্রকাশনাসহ প্রথম বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় স'ান অধিকারী একাধিক প্রার্থীকে ইন্টারভিউতে ডাকাই হয়নি, অন্য দিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অনার্সে চতুর্থ ও মাস্টার্সে তৃতীয় স'ান অধিকারী মো: মশিউর রহমান ও মাস্টার্সে চতুর্থ স'ান অধিকারী মো: হুমায়ুন কবীরকে। দু’টি প্রভাষক পদের বিজ্ঞপ্তি দেয়া সত্ত্বেও অনার্সে প্রথম শ্রেণী ও মাস্টার্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারী পাঁচটি প্রকাশনার কৃতিত্বধারী প্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে মাস্টার্সে দ্বিতীয় স'ান অধিকারী মো: আলমগীর কবীরকে নিয়োগ দেয়া হয়।
একইভাবে বাংলা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পৃথিলা নাজনীন নিয়োগ একাই নিয়োগ দিয়েছেন সাত নতুন শিক্ষককে। এরা হলেন- খন্দকার শামীম, নাজমুল আলম তালুকদার, তাসনুমা জামান, রেজাউল করিম তালুকদার, রেজওয়ানা আবেদীন, আহসান ইমাম ও রেজাউল ইসলাম। বাংলা বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের আহসান ইমামকে । তার অনার্স নেই। এ ছাড়া অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে চতুর্থ স'ান ও মাস্টার্সে সপ্তম স'ান অধিকারী তাসনুমা জামান এবং অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ষষ্ঠ স'ান পাওয়া রেজওয়ানা আবেদীনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
জীববিজ্ঞান অনুষদের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ফার্মেসি। এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মান। কিন' এই বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আট শিক্ষককে। এদের মধ্যে আছেন অনার্সে ১১তম ও মাস্টার্সে নবম স'ান অধিকারী সঞ্চিতা শারমিন চৌধুরী, অনার্সে অষ্টম ও মাস্টার্সে চতুর্থ স'ান পাওয়া তাসনিমা আক্তার, অনার্স ও মাস্টার্সে চতুর্থ কে এম খায়রুল আলমকে নিয়োগ দেয়া হয় নিয়মবহির্ভূত উপায়ে।
অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই’ শীর্ষক সেমিনারে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবেদনশীল জায়গায় দলীয় কোটায় অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে পরবর্তী ৩০-৪০টি প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তিনি এই গণনিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির তার দেয়া বক্তব্যে বলেন, বিভাগীয় সভাপতির যৌক্তিক চাহিদানুযায়ী অভিজ্ঞ সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তিন বছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০০ শিক্ষক নিয়োগের কারণও ব্যাখা করলেন নিজেই- তার ভাষায়, বিগত তিন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। পূর্ববর্তী প্রশাসনের আমলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফলে ওই নিয়োগ হয়নি। ফলে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষাকার্যক্রম স'বির হয়ে পড়েছে। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষাকার্যক্রম সচল করতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে দুই-তৃতীয়াংশ (১৯৩) শিক্ষক নিয়োগ ৩ বছরে!!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!
রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।
আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!
এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন