somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশ পরিচয়

০৮ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীলমনি ঠাকুর কলকাতার মানুষ। পারিবারিক পদবি ব্যানার্জী। কলকাতার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রদায়ের। কিন্তু নীলমনি পদবি হিসেবে ঠাকুর গ্রহণ করেন। নীলমনি ঠাকুরের দুই ছেলে। রামলোচন ঠাকুর আর রামমনি ঠাকুর। বড় ছেলে রামলোচন ঠাকুর বিয়ে করেন অলকাসুন্দরী দেবীকে। রামলোচন-অলকাসুন্দরী'র কোন পুত্র ছিল না। নীলমনি ঠাকুরের ছোট ছেলে রামমনি ঠাকুর বিয়ে করেন অলকাসুন্দরী দেবী'র ছোট বোন মেনকা দেবীকে। রামমনি-মেনকা দেবী'র তিন ছেলে। রাধানাথ ঠাকুর (১৭৯০-১৮২৮), দ্বারকানাথ ঠাকুর (১৭৯৪-১৮৪৬) ও মহারাজ রামনাথ ঠাকুর (১৮০০-১৮৭৭)।রামমনি বৃটিশ ভারতের পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। আর বড় ভাই রামলোচন ঠাকুর ছিলেন জমিদার। তাই রামেলাচন তার ছোট ভাই রামমনি ঠাকুরের ২য় ছেলে দ্বারকানাথ ঠাকুরকে ১৭৯৯ সালে দত্তক নেন। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুর মারা গেলে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই দ্বারকানাথ ঠাকুর বড় কাকার বড় আকারের সকল সম্পত্তি সহ বহরমপুর আর কটকের জমিদারীর উত্তারাধীকার লাভ করেন। পরবর্তীতে দ্বারকানাথ ঠাকুর নিজের বিবেক বুদ্ধি আর মেধার শক্তি খাটিয়ে সেই সম্পদকে আরো অনেকগুন বৃদ্ধি করেন। দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু। এছাড়া ইংল্যান্ডে তাঁর অনেক বন্ধু ছিল। পরবর্তীতে দ্বারকানাথ ঠাকুর বিলেতে লাক্সারিয়াস জীবন যাপন করেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে লর্ড উপাধিতে ভূষিত করেন। তখন থেকেই দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
১৮১১ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর বিয়ে করেন ৯ বছর বয়সী দিগম্বরী দেবীকে। তাঁদের ১ মেয়ে আর ৫ ছেলে। তাঁদের বড় ছেলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) হলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) বিয়ে করেন সারদা দেবী (১৮৩০-১৮৭৫) কে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবী'র পনের সন্তান। ছয় মেয়ে ও নয় ছেলে। তাঁদের সন্তানদের নাম ক্রমানুসারে হল:
১। কন্যা: শিশুকালেই মারা যান।
২। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪০-১৮২৬): পন্ডিত, কবি, গীতিকার, দার্শনিক ও গণিতশাস্ত্রবিদ ।
৩। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪২-১৯২৩): প্রথম ভারতীয় সিভিল সার্ভিস অফিসার, কবি ও গীতিকার।
৪। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪৪-১৮৮৪): বিজ্ঞানী ও দার্শনিক।
৫। বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪৫-১৯১৫): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না।
৬। সৌদামিনী দেবী: (১৮৪৭- ১৯২০): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না।
৭। জোতিরিন্দ্রণাথ ঠাকুর (১৮৪৮- ১৯২৫): পন্ডিত, সঙ্গীত শিল্পী, নাট্যকার, সম্পাদক ও শিল্পী।
৮। সুকুমারী দেবী: (১৮৪৯- ১৮৬৪): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না।
৯। পুন্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৫০-১৮৫১): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না।
১০। শরৎকুমারী দেবী। (১৮৫৬- ১৯২০): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না।
১১। স্বর্ন কুমারী দেবী। (১৮৫৮- ১৯৩২): কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীত শিল্পী ও সমাজসেবক।
১২। বর্নকুমারী দেবী। (১৮৫৯- ১৯৩৪): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না।
১৩। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬০-১৯২৩): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না।
১৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬১- ১৯৪১): নোবেল জয়ী বাংলা ভাষার বিশ্বকবি।
১৫। বুধেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬৩- ১৮৬৪): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না।

১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেন শ্রীমতি ভবতরিণী দেবীকে। ভবতরিণী দেবী'র বয়স তখন মাত্র ১০ বছর আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাত্র ২২ বছর ৭ মাস। ভবতরিণী দেবী'র নাম ঠাকুর পরিবারের কাছে অনেকটা সেঁকেলে মনে হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তাঁর বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখেন মৃণালিনী দেবী (১৮৭৩-১৯০২)। রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনী দেবী'র তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। তাঁরা হল:
১. মাধুরীলতা দেবী (বেলা) (জন্ম: ২৫ অক্টোবর ১৮৮৬- মৃত্যু: ১৬ মে ১৯১৮)
২. রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর (রথী) (জন্ম: ২৭ নভেম্বর ১৮৮৮- মৃত্যু: ৩রা জুন ১৯৬১)
৩. রেণুকালতা দেবী (রানী) (জন্ম: ২৩ জানুয়ারি ১৮৯১- মৃত্যু: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৩)
৪. মীরা দেবী (অতসি) (জন্ম: ১২ জানুয়ারি ১৮৯৪- মৃত্যু: ১৯৬৯) ও
৫. সমীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সমি) (জন্ম: ১২ ডিসেম্বর ১৮৯৬- মৃত্যু: ২৩ নভেম্বর ১৯০৭)।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল একজন নাতী এবং দুইজন নাতনী। তাঁরা হলেন নীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর (গঙ্গোপাধ্যায়), নন্দিতা কৃপালনী (বুড়ি) ও নন্দিনী ঠাকুর।
এদের মধ্যে মীরা দেবী ও নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ে'র এক ছেলে নীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর (গঙ্গোপাধ্যায়)। ডাক নাম নীতু। নীতু'র জন্ম ১৯১২ সালে আর মৃত্যু ৭ আগস্ট ১৯৩২ সালে। আর এক মেয়ে নন্দিতা কৃপালনী (বুড়ি)। বুড়ি'র জন্ম ১৯১৬ সালে। বিয়ে করেন কৃষ্ণ কৃপালনীকে। মারা যান ৫১ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে।
রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী প্রতিমা দেবী একটি কন্যা দত্তক নেন। নাম নন্দিনী। পুরো নাম নন্দিনী ঠাকুর। ১৯২২ সালে নন্দিনী ঠাকুর জন্মগ্রহন করেন। ১৯৩৯ সালের ৩০ জানুয়ারি নন্দিনী ঠাকুর বিয়ে করেন ডক্টর গিরিধারী লালা-কে। গিরিধারী লালা শান্তিনিকেতনের পিয়ারসন মেমোরিয়াল হাসপাতালের একজন ডেন্টিস্ট ছিলেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে গিরিধারী লালা পথ-ভাবনা ও শিক্ষা-ভাবনা শিখতে শান্তিনিকেতনে আসেন। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত তিনি শান্তিনিকেতনে শিক্ষালাভ করেন।
১৯৫৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন নন্দিনী ও গিরিধারী লালা'র পুত্রসন্তান সুনন্দন লালা।
সুনন্দন লালা বর্তমানে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে বসবাস করেন। তিনি একজন বিজ্ঞানী। সুনন্দন লালা'র স্ত্রী সমিতা একজন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। সুনন্দন-সমিতা'র দুই ছেলে। বড় ছেলে নীলঞ্জন ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা বর্তমানে আমেরিকার আটলান্টায় বসবাস করছেন। আর ছোটছেলে প্রতীক পেশায় একজন উকিল। বর্তমানে ব্যাঙ্গলোরে চাকুরি করছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ৮:৪৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×