somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তাররা কি মনুষ্য প্রজাতির বাইরে?

০১ লা মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডাক্তারদের রক্তচোষা অমানুষ কেন বলা হচ্ছে তার সম্ভাব্য কারণঃ
১. সারাদিন হাসপাতালে ডিউটি করে বিকেলে চেম্বার এ বসে রোগীদের থেকে নিজের প্রাপ্য ভিজিট চাওয়া;
২. রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য টেস্ট লিখে দেয়া;
৩. রোগীর অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘালাপ শুনতে না চাওয়া;
৪. যে ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়েছে তার দাম যদি বেশি হয়;
৫. রোগীর ভালোর জন্য এক-আধটু বকাঝকা করা (কখনো কখনো রোগীরা এমন কাজ করে ফেলে যাতে তার জীবন যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়। পরে কিছু হলে দোষ হয় যে ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছিলো তার);
৬. রোগীর অ্যাটেন্ড্যান্টকে বের করে দিলে (কতকগুলো রোগ আছে যে ক্ষেত্রে বেশি লোক থাকলে রোগীর অবস্থা খারাপ হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়ে যায়);
৭. রোগীকে রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত না জানানো (হুম এই জায়গায় দোষ আছে);
৮. চেম্বারে সাধারণ রোগী সিরিয়াল পাচ্ছেনা কিন্তু বিশেষ কনো ব্যক্তি সিরিয়াল ভঙ্গ করে চেম্বারে ডাক্তারকে দেখানোর সুযোগ পেলে;
৯. রোগীদের মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করার জন্য (অনেকের আজন্মলালিত সাধ থাকে ডাক্তার হবার কিন্তু সবাই যদি ডাক্তার হবে তাহলে দেশ চলবে কীভাবে?);
১০. কখনো কখনো ডাক্তাররা জরুরি মুহূর্তে সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানায় (হয়তো তারা নাশতা করবে অথবা সারাদিন রোজা রেখে ইফতারি করবে ইত্যাদি অজুহাত দেয়);
১১. প্রাইভেট কোনো হাসপাতালে ৫ দিন চিকিৎসা নিয়ে যদি বিল আসে ৫০,০০০ টাকা;
১২. কোনো একটা অপারেশন করার পর পরবর্তী প্রতি ভিজিটে ৫০০ টাকা করে ভিজিট দেয়া;
১৩. ডাক্তারদের চিকিৎসা দিতে বিলম্ব হলে।
এবার আসা যাক বিস্তারিত আলোচনায়।
আমাদের মতো গরিব দেশে চাইলেই ডাক্তার হওয়া যায় না। যে মানুষটি পড়াশুনা ছাড়া জীবনে আর কিছু করেনি কিংবা দিনের পর দিন শুধু যন্ত্রের মতো পড়াশুনা করে গেছে কিংবা শৈশব-কৈশরের আনন্দ-উচ্ছলতা থেকে বঞ্চিত থেকে কিংবা সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে সচরাচর তারাই মেডিকেলে পড়তে আসে। যারা মেডিকেলে পড়তে আসে তাদের অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে যে দুই-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া তারা সবাই স্কুল-কলেজের প্রথম সারির ছাত্র-ছাত্রী, যারা জীবনে শুধুই চিনেছে লেখাপড়া। এরপরের পথ আরো বন্ধুর এবং হতাশার। দীর্ঘ পাঁচ বছরের এমবিবিএস-এর একঘেয়ে রুটিনে ক্লাস, পরীক্ষা এবং পড়াশুনা। এতো নিয়মিত পড়াশুনা আর কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা করে বলে আমার জানা নেই। সারাবছর আইটেম, কার্ড, টার্ম, ওয়ার্ড ফাইনাল, প্রফ দিতে দিতে জীবনটাই হয়ে যায় নীরস এবং বড্ড একঘেয়ে। ফলে প্রতিনিয়ত অনেক ছাত্র-ছাত্রী মানসিক কষ্টে ভোগে। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা অংশ প্রায়ই শরণাপন্ন হন মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে। এরকম ঘটনা অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয় বলে কখনো শুনিনি। এ তো গেলো এমবিবিএস-এর কথা।
এরপরেও থেমে নেই নব্য ডাক্তারদের কষ্টের জীবন। শুরু হয়ে যায় ১ বছরের ইন্টার্ণশিপ। নামেমাত্র টাকার বিনিময়ে দিনরাত্রি খাটুনি। সেই সাথে হাতে-কলমে শিক্ষালাভ। একই সাথে চলে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন এর বিরক্তিকর প্রস্তুতি, যার নেই কোনো সিলেবাস। ইতোমধ্যে ভার্সিটির বন্ধুরা পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে দিব্যি চাকরি করছে। কেউ বা ভার্সিটির টিচার, কেউ বা বিসিএস দিয়ে আমলা কিংবা পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি। হায়রে কপাল আমি এখনো ব্যস্ত পোস্টগ্র্যাজুয়েশন এডমিশনের প্রিপারেশন নিয়ে। দিল্লী যে আসলেই বহুদূর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কী শুনি, বিনা বেতনে অনারারি (অনাহারী বলে সুখ্যাতি রয়েছে) করতেও নাকি ঝক্কি! হায়রে আমার এমনই দাম যে বিনে পয়সায়ও কেউ আমাকে চায় না! এর পরেও অনেকে বলে, সরকারি টাকায় পড়েছ বাবা (অথবা জনগণের টাকায়), বিদেশ কেনো যেতে চাও? আমার বলতে ইচ্ছা করে, আপনার ছেলে (বা মেয়ে) সরকারি টাকায় ভার্সিটিতে পড়েনি? সে দেশকে কী সেবা দিলো? সরকারি টাকায় পড়লেও আমাদের নেহায়েত ই কম খরচ হয় না। দামি দামি বই, যন্ত্রপাতি আর পরীক্ষার উচ্চ ফিস আর কোথাও কি আছে? পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন অ্যাডমিশন দিতে হলে ৬০,০০০ টাকা আর কেউ দেয় কি? (তা-ও চান্স পাওয়ার গ্যারান্টি নাই) এর পরে বিনা বেতনে ৪ বছর ট্রেইনিং (এবং অবশ্যই কঠোর পড়াশুনা) আর অসংখ্য বিরক্তিকর পরীক্ষা পাস করে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন এর প্রায় অনন্ত একটা কোর্সের সমাপ্তি। কিন্তু হায়! আমার বয়স তো ৩২ পার হয়ে গেছে। সরকারি চাকুরি করার সুযোগ আর পেলাম কই? বিসিএস এ টেকা চাট্টিখানি কথা নয়! নিলো তো মাত্র ২৫ জন। শুনেছি যারা বিসিএস দিয়ে গ্রামে গিয়েছিল তারা কেউই FCPS শেষ করতে পারেনি। কীভাবে পারবে? প্রফেসরের অধীনে ৮ বছরের ট্রেইনিং করা লাগে, সেই সুযোগ কই?
শহরে আসতে চাইলে আবার বদনাম। “জনগণের টাকায় পড়েছ, গ্রামে থাকবানা কেন?” “গ্রামের মানুষের চিকিৎসার অধিকার হরণ করতে পারো না” কিংবা “কর্তব্যে অবহেলা” ইত্যাকার আরো কত কথা! আবার একই সাথে অভিযোগ করা হয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বড়ই অভাব। বেচারা ডাক্তার নিজ সন্তানকে ভালো স্কুলে দিতে পারছেনা! যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই বেহাল যে কখন বলে নসিমন উলটে যায় প্রাণ (গেছেও অনেকের)! ভাইরে আমার সারাজীবনের এত কষ্টের পড়াশুনার শাস্তি কি তাহলে এটাই? যাক গে সে কথা। চেম্বারে রোগীরা টাকা দিতে কার্পণ্য করছে। এইটা কি আমার পাওনা না? একটা রোগীকে সেবা দিয়ে আমি ৫০০ টাকাও নিতে পারবো না? অথচ সেই রোগীই যে একজন আর্কিটেক্টকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ির ডিজাইন করছে সেটার কী হবে? মোবাইলে বছরে ৫০০০ টাকার কথা বলবেন আর ডাক্তারকে অসুস্থ হয়ে ৫০০ টাকা দিতে কার্পণ্য! আসলেই, কেনই বা দিবেন বলুন? ডাক্তাররা তো মহান সেবক, তারা কেন টাকা নিবে? তাদের পেট ও নেই, ক্ষুধার প্রশ্নও অবান্তর। যেহেতু তাদের পেট নেই তাদেরকে সুযোগ বুঝে অমানুষ রক্তচোষা বলা যায়, কী বলেন?
রোগীরা মনে করে ডাক্তার সাহেব চোখ দিয়ে তাকিয়ে শরীরের সব সমস্যা ধরে নিবে। তাই টেস্ট দেওয়ার কী দরকার? আমি বলবো তাহলে খড়ের গাদায় চুম্বক ছাড়া সূঁচ খুঁজে দেখান দেখি! আবার টেস্ট কম দিলেও দোষ হয় ডাক্তার বেশি কিছু জানে না কিংবা অনভিজ্ঞ।
আমাদের দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তার খুবই অপ্রতুল। তাই কম সময়ে অনেক রোগী ম্যানেজ করতে হয়। তাই হয়তো সময় নিয়ে কথা বলা যায় না, এইটুকু তো বুঝা উচিৎ। অনেকে বলেন ডাক্তারদের ব্যবহার খারাপ। সত্যি করে বলুন তো কয়টা ডাক্তার আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে? হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের মত কিছুটা তো অসমতা থাকবেই, নাকি ডাক্তারি পড়তে আসলে আপনা-আপনি সাধু হয়ে যায়? অনৈতিক ডাক্তার যে কিছু নাই তা নয়, তাই বলে সব ডাক্তারই অমানুষ? তাই যদি হয় তাহলে অমানুষ কীভাবে মানুষের সেবা দিচ্ছে বলুন তো?
যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা এবং টেস্ট এর ভিত্তিতে ডাক্তার ওষুধ লিখেন। সেইটা দামি হলে তার কী করণীয়? বেশিরভাগ প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক রোগীদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় সেই দোষ কি ডাক্তারদের? খোঁজ নিয়ে দেখুন তো কয়টা ডাক্তার ওইরকম হাসপাতাল খুলে বসেছে?
ডাক্তাররাও মানুষ, তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাংতেই পারে। বিরক্তি, ক্ষোভ, রাগ থাকতেই পারে। বরং সাধারণ মানুষ থেকে তাদের এগুলো বেশি থাকার কথা যে! আর কেনই বা না বলুন? জীবনটাই পার করে দিলো আনন্দ বিসর্জন করে। তবু বলবো অনেক ডাক্তারই নিষ্ঠুর হয়ে জনসাধারণের কাতারে ফিরে যাবার অদম্য বাসনায়। এই ক্ষেত্রে আমাদের আরো ধৈর্যশীল হতে হবে। এই কথা বলছি এইজন্যে যে এক ডাক্তার ইফতারির প্রস্তুতি নেবার জন্য মুমূর্ষু রোগীর প্রতি উদাসীন থেকেছে কিংবা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করানোর পরেও চেম্বারে রোগীকে না দেখে ফিরিয়ে দিয়েছে, এছাড়া আরো কত কী! তাই বলে তো সব ডাক্তারই তো আর এমন না। শুধু খারাপটাই দেখলেন? ভালোটার ব্যাপারে দয়া করে চুপ করে থাকবেননা। আমরাও আপনার মত রক্ত-মাংসের মানুষ। দয়া করে রক্তচোষা অমানুষ বলবেন না। নইলে রোগে পীড়িত অসহায়দের সারানোর দায়িত্ব নেবার মত কোন মানুষ থাকবে না!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×