somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই গল্পের নাম নাই

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাড়ি ভর্তি লোকজন , হৈ চৈ । খাবার দাবারের আয়োজন । আজ সোমার বিয়ে । পাত্র লন্ডন প্রবাসী । মাত্র ৩ দিন আগে কনে দেখতে এসে পাত্র পক্ষ পছন্দ করল সোমাকে । সামনে সোমার এইচএস সি পরীক্ষা । ঠিক এই মুহূর্তে বিয়েতে রাজি ছিলোনা সোমা । প্রথম প্রথম আমতা আমতা করলেও আত্মীয় স্বজন এর চাপে সোমার বাবাও আর অমত করলেন না । লন্ডন প্রবাসী বর , দেখতে সুদর্শন , টাকা পয়সারও অভাব নেই । এমন পাত্র হাত ছাড়া করা মোটেই ঠিক হবেনা বললেন সোমার মামি । সোমার বাবা একটা দাবি করেছিলেন , আগে পরীক্ষা শেষ হোক , তারপর বিয়ে । বরের ফুপু বললেন , বিয়ের পড়ে বুঝি মেয়েরা পড়াশুনা করেনা ? অবশেষে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হোল । বধু বেশে পুতুলের মতো করে সাজানো কালো কাজলের চোখ দিয়ে অবিরাম কাঁদতে কাঁদতে বরপক্ষের গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলো সোমা । গাড়ির গ্লাসের ভীতর দিয়ে বাবা মায়ের চোখের মাঝেই আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলো বারবার । কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়া মেয়েটি এইবার এসে দাঁড়ালো শ্বশুরবাড়ির দরজায় । নানা নিয়ম কানুন এর দরজা পাড়ি দিয়ে ফুলশয্যার ঘরে প্রবেশ করলো সোমা । নতুন পরিবেশ , নতুন মানুষজন , বর বেশে একজন সবকিছুই ক্যামন যেন !! নিজেকে সোকেসের পুতুল মনে হচ্ছে । আত্মীয় সজনেরা উঁকি ঝুঁকি মেরে নতুন বৌ কে দেখছে । ঠিক তার কিছুক্ষণ পর ওর স্বামী বাসর ঘরে প্রবেশ করলো । দরজার সিটকিনি লাগিয়ে পাশে এসে বসলো । সোমার হাতে হাত রাখল । এই প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শ পেলো সোমা । অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করলো ওর শরীরে । শিহরিত হোলো ও । লোকটা ওকে কোলের উপর টেনে নিলো । ও বাঁধা দিতে চাইলেও ধরা দিতে হোলো তার বাহুতে । প্রবল ভাবে বুকের মাঝে চেপে ধরল সোমাকে । লিপস্টিক মাখা খয়েরি ঠোঁটে ঠোট রাখল সে । শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধড়তেই আগূণ লেগে যায় শরীরে । লোকটা পাগলের মতো ওর বুকের ঘ্রাণ নিতে শুরু করল । সোমা শুধু একবার বলল প্লীজ ........./ বৈশাখী ঝরের মুখে খড় কুটোর মতো ভেসে গেলো সোমার মিনতি ।

পরের দিন নাস্তার টেবিলে লোকজনের ভীড়ে নিজেকে কেবল সঙ সেজে ঢং করে বসে থাকা পাপেট মণে হচ্ছে ।
মানুষের জীবন খুব অল্প সময়ের । এই অল্প সময়ে মানুষ নানা রকম স্বপ্ন দ্যাখে । সোমার স্বপ্ন ভালো ফলাফল করে মেডিকেল কলেজে পড়বে । পরীক্ষা আর বেশি বাকী দিন নেই । শোমা তার স্বামীকে বলল , আমি একটু পড়াশুনার পরিবেশ চাই । সে বলল বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর পড়াশুনা করে কী হবে ? আমি তো তোমাকে দিয়ে চাকরী করাবো না । লন্ডনে আমার নিজের দোকান আছে । লাখ লাখ টাকা আয় করি । আমার বৌ পড়াশুনা করবে , চাকরী করবে ?? না না একদম না । লোকটার কথা শুনে বিস্মিত সোমা । বিয়ের আগে তো বলেছিলেন পড়াশুনা করাবেন !! এখন তবে ঊল্টো বলছেন কেন ? সে বলল পড়াশুনার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো । বাকরুদ্ধ সোমা । নিঃস্ব নির্জন ভাবে থেমে যেতে লাগলো সোমার স্বপ্ন !! তবে কি বিয়ে মানে পরাধীনতার শিকল পায়ে দিয়ে নিজকে বিসর্জন দেবার নামান্তর ?
আঘাতের আগুনে জর্জরিত সোমার হৃদয় । আমরা কবে মুক্তি পাবো চেতনার এই সর্বনাশ থেকে ?? এও এক বিচিত্র বলি । স্বপ্নের বলি । এস এস শি পরীক্ষায় স্টার মার্ক পেয়েও এখন পরীক্ষা দিতে না পাড়ার কষ্ট তীরের মতো বিদ্ধ করছে সোমা কে । মনে মনে ভেবে চলেছে কেন এই নিয়মের মিথ্যে জ্বালে নিজেকে সঁপে ছিলাম ?? সোমা ওর স্বামীর পায়ের কাছে নতজানু হয়ে বসে পড়লো । শুধু আমাকে এই পরীক্ষা টা দিতে দাও ! তারপর নাহয় আমি পড়াশুনা বন্ধ করে দেবো । ইচ্ছা প্রবল হলে অকল্যাণের সাধ্য নেই গন্তব্যকে আড়াল করে । রাজা রাম মোহন চিতার আগুনে সহমরণ বন্ধ করেছিলেন । সংসার সমাজে নারীকে পোড়াবার আগুণ কোন অংশে কি কম লেলিহান ?? ওর কান্না আর কাকুতি মিনতি তে অবশেষে তিনি অনুমতি দিলেন পরীক্ষা দেবার ।
সংসারে সবার মন যুগিয়ে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে , চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে সোমার ।
পড়াশুনার জন্য ২/১ ঘণ্টা সময় বের করা খুব কঠিন । তবুও ভালো ফলাফল ওর চাই !
অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে পরীক্ষা দিলো । প্রথম বিভাগ পেয়ে পাশ করলো । উচ্চতর পড়াশুনার অদম্য বাসনাকে গলা টিপে হত্যা করলো । বিয়ের ৪ মাস পেরিয়ে গেছে । ওর স্বামী আবারো পারি জমাল লন্ডনে । সোমার পেটে এলো সন্তান । আর এই সন্তানের দোহাই দিয়ে ওর স্বামী বেঁচে যায় পড়াশুনা বন্ধ করে দেবার অভিযোগ থেকে । সন্তান পেটে নিয়ে স্বামী ফিরে আসার অপেক্ষায় কেটে যায় দিন গুলো ! একটা ফুটফুটে মেয়ে সন্তান প্রসব করে সোমা ।
দেড় বছর পর ফিরে আসে লোকটা । এইবার তাকে নতুন রূপে আবিষ্কার করে সোমা ।
ওর কাছে বিকৃত যৌনাকুঁতির আবেদন জানালো ওর স্বামী । এ ক্যামন বীভৎস আচরণ ? এইবার যেন আগের থেকে বেশি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো সোমার জীবন !! সোমা রাজি না হোলে এখন আর আগের মতো কাছে আসা তো দূরে থাক ! এক বিছানায় ঘুমাতেও চাইতোনা লোকটা !!
মাঝে মাঝে বলতো মেয়েদের গা এর গন্ধ নাকি তার অসহ্য লাগে । কিছু বূঝে উঠতে পারেনা সোমা । এমন ভাবে বদলে গেলো কেন সে ? লন্ডন থেকে ফিরে বাসায় ছেলে বন্ধু আর মদের আড্ডা চলে প্রতিদিন ! নিজের মেয়ে টা কেও কোলে নিতে তার অনীহা ! বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে । যে লোকটার জন্য নিজের সব স্বপ্ন গুলোকে হত্যা করেছে তাকে আজ বড়ো অচেনা লাগছে । ওর স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণের উত্তর খুঁজতে থাকে ও । আজ তাকে জানতেই হবে ঘরের দরজা বন্ধ করে ছেলে বন্ধুদের নিয়ে কী করে লোকটা ? দরজার ফুটো দিয়ে ভীতরে তাকাতেই একি দেখলো ? ছেলেদের সাথে সহবাস ?? তবে কি ওর স্বামী সমকামী ?
মাথাটা ঘুরে ঊঠলো ! কাঁধের উপর একটা সান্ত্বনার হাত এসে পড়লো ! সোমার ননদ এসে বলল ভাবী তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল ।
ভাইয়া বহুবছর আগে থেকেই সমকামী ছিল । ভেবেছিলাম বিয়ে করালে সব ঠিক হয়ে যাবে !!
গা ঘিন ঘিন করছে সোমার ! কোলের শিশুটাকে নিয়ে কী করবে ও এখন ? কী করে এই বিকৃত লোকটার সাথে সংসার করবে ??
প্রতিদিন একটি করেও যদি আমরা এমন স্বাধীনতার মৃত্যু দেখি , তবুও আমরা নির্লিপ্ত বসে থাকি । আমাদের মনে কোন চেতনার চাবুক পড়েনা !
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×