somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুদের হার কত হওয়া উচিত? ১০% না কি ২৫%??

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ব্যাংকিং খাতে সুদ হারের উলম্ফন এ মুহুর্তে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। টার্ম ডিপোজিটে সুদ ৮-৯% থেকে বেড়ে এখন ১৪-১৫%। বড় অংকের ক্লায়েন্টরা দর কষাকষি করে আরো কিছুটা বাড়িয়ে নিতে পারেন। অনেক ব্যাংক নতুন কোন গ্রাহককে ঋন দিচ্ছে না। পুরনোদের সিসি লোনে রেট ১৩% থেকে ১৬% করা হয়েছে। টার্ম লোনে রেট এখন ১৭-১৮%। ব্যবসায়িরা বলছেন এত চড়া দামে টাকা নিয়ে তাদের পোষায় না। আর ব্যাংক বলছে ১৫% রেট দিয়েও ডিপোজিট পাচ্ছিনা। সরকারী প্রতিস্টান/ কর্পোরেশনের বড় বড় ফান্ড ধরার জন্য ব্যাংকাররা রীতিমত 'ঘুষ' দিচ্ছেন 'জায়গামত।' দালাল গজিয়েছে একশ্রেনীর। ইত্যাদি ইত্যাদি।

কথা হল, আসলে কত হওয়া উচিৎ সুদের হার? এটা কি পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া ভাল, না কি বাধ্যতামূলক সীমারেখা থাকা ভাল? না কি আধাআধি হুমকি-ধামকি ভিত্তিক সাময়িক ব্যবস্থাপনার আওতায়ই চলবে (যেমনটি চলছে)? এক কথায় কোন উত্তর না দিয়ে একটু বৃত্তান্ত দিই।

সুদ ও টাকা কি?
টাকার ইটসেলফ কোন মূল্য নেই। যা আছে তা রেফারেল ভ্যালু। তাই স্থান ও কাল ভেদে সমপরিমান টাকায় আমরা সমবস্তু/সেবা পাই না। ৪০ টাকায় এ মুহুর্তে ঢাকায় ১ কেজি চাল পেলেও বাঘাইছড়ির সাজেকে পাওয়া যাবে ১/২ কেজি মাত্র! মোটামুটি ১৫ টাকায় এখন ১ কেজি টমেটো পেলেও ক'মাস বাদেই এ টাকায় ২০০ গ্রামের বেশী মিলবে না। সুতরাং আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তা যক্ষের ধনের মত কাপড়ের পুটলি বা মাইট্টা ব্যাংকে আঁকড়ে ধরে রাখলে তেমন লাভ নেই। বরং কালে কালে তা ক্ষয়েই যাবে। উপরন্তু চুরি, ডাকাতি, উইপোকায় কাটা, পুড়ে যাওয়া, পানিতে ভেজার ঝুঁকিতো রয়েছেই! তাই রিয়াল ভ্যালুতে লসে না পড়া বা খানিকটা লাভের জন্য টাকাকে ভ্যালু এডিং অর্থনৈতিক প্রবাহে ঠেলে দেয়া জরুরি। সুদ এ প্রবাহে টাকাকে ঠেলে দেয়ার প্রণোদনা।

সুদের মিনিমাম রেট কত হওয়া উচিত?
যেহেতু টাকার ভ্যালু রেফারেল। তাই আর দশটা পণ্যের দামের সাথে টাকার দামেরও একটা ন্যায্যতাভিত্তিক উঠানামা দরকার। বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ল অথচ টাকা স্থির দামে রইল তাহলে লোকেরা কেন সঞ্চয় করবে? দেশে এ মুহুর্তে মূল্যস্ফীতি কত তা কেউ জানেনা! যদি ধরি জমি তাহলে তা কমছে কম +৩০%, রিকশাভাড়ায় +১০০%, চাল ডালে হয়ত +১০%, মোবাইল সেটে -২৫%, চুল কাটায় +২৫% ইত্যাদি। তবে খাতাকলমের হিসেবে সরকারী বোদ্ধারা তা ১১% বলে থাকেন। যে যাই বলুক, আমি বলব কমছে কম ১৫% করে রিটার্ন না পেলে একজন সঞ্চয়কারীর চলতি বাজারে পোষাবে না!

আর আমার এ কথার তালেই আছে সরকার। সরকারী বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে মোটামুটি ১২% রেট পাওয়া যাচ্ছে। সরকার এ দামে টাকা কিনলে সংগতকারণেই বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে আরো বেশী রেট দিতে হবে। তা না হলে লোকেরা সেখানে টাকা রাখবে কেন? সুতরাং এ বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মোটেও উচিৎ হবে না 'গায়ের জোরে' সার্কুলার দিয়ে অগনিত মধ্যবিত্ত সঞ্চয়কারীকে কম দামে তাদের টাকা 'লসে' বেচতে বাধ্য করার। যদি তা করা হয় তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌলিক কর্ম তথা রাস্ট্রের সাধারন জনগণের স্বার্থ রক্ষার বিপরীতেই কিছু একটা করা হবে।

ব্যবসায়িদের মেকীকান্না ও ঋনের সুদ
ব্যবসায়িরা নাবালক ছেলেরমত কান্নাকাটি করে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের হয়ে 'মাস্তানী'টা করে কিনা! হতাশার ব্যাপার কিছুটা করছে। তারা বলছেন এত চড়াদামে টাকা ধার করে তাদের পোষাচ্ছেনা। কথা মানলাম। তাহলে ব্যবসাটা ছেড়ে দেন! আপনারা যখন আরো চড়াদাম কিংবা একেবারে গলাকাটা দাম রাখেন তখনতো আমাদেরও পোষায়না! তবু আমরা জীবন বাচানোর জন্য কেনাকাটা করি! আর কে বলেছে ব্যবসার পুরো পুঁজিই আপনাকে ব্যাংক থেকে নিতে হবে? আপনার ইক্যুইটি কই? বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের বেশীরভাগ ব্যবসায়ী মাত্রাতিরিক্ত ঋন নিয়েছেন এবং তা পানির দরে। অনেক প্রতিস্টান প্রযোজ্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ৩/৪ গুন ঋন নিয়ে তা (স্মার্টলি) স্বীয় নামে জমিজমা, ফ্ল্যাট, অন্যব্যবসায় গেঁড়েছেন। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক বিষয় হল দেশে নারী উদ্যোক্তার নামে ও কিছু কিছু খাতে ১০% এ লোন দেয়া হয়েছে। যার বিরাট অংশ ১২-১৩% রেটে অন্যকোন ব্যাংকে এফডিআর হয়ে গেছে!!!

বাংলাদেশের টাকার প্রবাহ
আমরা একটু ডিপলি অবজার্ভ করে দেখতে পাই, পল্লী অঞ্চলের শাখাগুলোয় লোন কম ডিপোজিট বেশী আর ঢাকায় লোন বেশী ডিপোজিট কম। আবার ডিপোজিটররা পেশায় সবাই চাকুরে, প্রবাসী। আয়ে মধ্যবিত্ত ঘরানার। পক্ষান্তরে বেশীরভাগ ঋন যায় বড় বড় গ্রুপ ধাঁচের ব্যবসায়িদের কাছে। এসব গ্রুপের ব্যবসার প্রকৃত রিটার্ন অন ইক্যুইটি ৫০% এর কম নয়! তবে কাগজে কলমে গরীবানা শো করার জন্য ওনারা অনেক কিছুই করেন। হাস্যকর হলেও ৫০% ধনী প্রফিট মেকাররা ব্যাংকের কাছে ১০% এর কম রেটে লোন চাচ্ছেন। তাহলে ব্যাংক ডিপোজিটরকে কি ৫% ভিক্ষা দিয়ে বিদেয় করবে! কেন?

সবাইকে ধন্যবাদ।
চট্টগ্রাম
২৯.০২.২০১২
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×