somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের তুই (To The Child) – অষ্টম পর্ব

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তোর মামনীর জন্মদিন ! বিয়ের পর এটাই প্রথম, দিনটা অবশ্যই সেকারনে বিশেষ কিছু, রাতে তোর বড় মামীর বাসায় সবাই মিলে কেক কাটা হল। যদিও সব কিছু ছাপিয়ে তুই ই আসলে সেসময় সব কিছুতেই আলোচ্য বিষয়। তোকে নিয়ে প্রথম জন্মদিন এটাও তার কাছে বিশেষ গুরুত্বের । তোর অস্তিত্ব প্রতিনিয়ত আমরা টের পাচ্ছি, সময়ে সময়ে নড়ে চড়ে সেটা তুই জানান ও দিচ্ছিস। তোর মামনী বলল ইনশাআল্লাহ আগামী জন্মদিন আমরা তিনজন এক সাথে পালন করব !! আমি মনে মনে প্ল্যান করছি তিনজন মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে চলে যাব তখন । এমনিতে তোর কারনে তোর মামনীকে নিয়ে খুব একটা ঘোরাঘুরি করিনি, আল্লাহর রহমতে সব ঠিক ঠাক থাকলে তিনজন মিলে ঘুরাটা অনেক মজারই হবে। অবশ্য পরে শুধু ছবি দেখে তোর একটু আফসোসই ই হবে, ইশ কতা জায়গায় গেলাম অথচ কিছুই মনে নেই ।
জন্মদিনের সাথে সাথে দিনটা তোর মামনীর জন্য কিছুটা টেনশনেরও বটে, আজ তার প্রথম আলট্রাসনোগ্রাফী করা হবে, তোকে প্রথম সামনা সামনি মনিটরে সে দেখতে পাবে। সকাল থেকেই সে এ নিয়ে বেশ উৎকন্ঠিত , আরেকটা জিনিসও চাইলেই আজকে জানা যাবে, আমাদের তুই কি ছেলে না মেয়ে । যদিও এ নিয়ে আমার তেমন কোন উৎকন্ঠা নেই, আল্লাহর কাছে আমার চাওয়া সুস্হ্য সন্তান, ছেলে মেয়ে সেটা কোন ব্যাপারনা, তবে মজার বিষয় হচ্ছে আমার কল্পনায় তুই একবার ছেলে হিসেবে তো আরেকবার মেয়ে হিসেবে ধরা দিচ্ছিস !!! তবে আমি তোর মামনীকে বলে দিলাম, শোন ছেলে হবে না মেয়ে হবে এটা তুমি জানতে চাইবেনা, আজানা থাকার সাসপেন্সটা অন্যরকম । তবে তোর মামনী জানতে না চেয়ে থাকতে পারবে কিনা এই নিয়ে আমি সন্দীহান ।

অফিস থেকে কিছুটা আগে বের হয়ে সোজা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চলে গেলাম, সেখানে তোর মা আগেই তোর এক খালামনি সহ এসে হাজির। অপেক্ষার পালা কখন সিরিয়াল আসবে। সর্বত্রই মায়ের আলট্রাসোনোর সময় বাবাকে ঢুকতে দিলেও কোন এক অজানা করনে এরা নাকি ঢুকতে দেয়না , ডিসিশান নিলাম ভবিষ্যতে এখানে আর আসবোনা ।

বাবু আর জয়, আমার দুই বন্ধু কাছাকাছি থাকাতে ওরা আসল আড্ডা দিতে, আমি বের হয়ে এলাম। কিছুসময় পর তোর মামনী জানাল সে পরীক্ষার জন্য যাচ্ছে। আমি উপরে উঠে এলাম।

তোর মামনি বের হয়ে এল। সে কাঁদছে । আমি কিছুটা হতচকিত। কাঁদতে কাঁদতে বলছে তোকে দেখার পর থেকেই তার খালি কান্না পাচ্ছে। তোর নড়াচড়া ,হার্ট এর মুভমেন্ট, সাউন্ড কিছুই সে ভুলতে পারছেনা। আমার বেশ মন খারাপ হল, আমি মিস করলাম, তোর সাথে দেখা হলনা বলে।

হঠাৎ করে তোর মায়ের কান্নার বেগ একটু বেড়ে গেল, সে কাঁদতে কাঁদতে বলছে আমি না জিজ্ঞেস করে ফেলেছি ছেলে হবে না মেয়ে । তোর মাকে হালকা একটা বকা দেয়াতে সে বলল তোকে দেখার পর ডাক্তার যখন জানতে চাইল ছেলে না মেয়ে জানতে চান কিনা, সে নাকি আর কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারেনি, তার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল । আমি বলে দিলাম তুমি জেনেছ ঠিক আছে, আমাকে বলার দরকার নেই, আর জেনেছ যে এ কথাও কাউকে বলার দরকার নেই ।

আর কাউকে না বললেও আমাকে না জানিয়ে সে থাকটে পারেনি, কথার কথা বলেই ফেলল আমাদের বাবুটা কি হবে !!! আমার পুরো সাসপেন্সটা , ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে। এটা জানার মধ্যে নিশ্চিত বিশাল একটা কৌতুহল আছে, সেটা একেবারে দমিয়ে দিল তোর মামনী।এরপর থেকে তোর মামনির সারাক্ষনের সব কথা বার্তার বিষয়বস্তু শুধুই তার তোকে দেখা নিয়ে। তুই কিভাবে নড়ছিলি , তোকে দেখে তার কেমন লাগছিল ।

ঢাকা শহরে বড় হবার পরও তোর মামনীর একটা আফসোস রয়ে গেছে সে নাকি কখনো স্টেডিয়ামে গিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখেনি, ফ্ল্যাড লাইটের আলোতে মাঠে খেলা দেখতে কেমন সেটাও দেখার খুব ইচ্ছা তার । ঢাকায় তখন বাংলাদেশের সাথে ওয়েষ্টইন্ডিজ এর ওয়ানডে সিরিজ চলছে, দ্বিতীয় খেলাটি হবে বন্ধের দিনে।

দিদার, আরিফ, রাব্বীরা ফোন দিল তারা খেলা দেখতে যাবে , আমরা যেতে ইচ্ছুক কিনা, রাব্বী জানাল সে টিকেট যোগাড় করে রাখবে যদি আমরা যাই। ডিসিশান নিতে পারছিলামনা, যাব কি যাব না, এখানেও বিষয় তুই কারন এতে আল্লাহ না করুন তোর যদি কোন ক্ষতি হয়। পরে ভাবলাম আল্লাহ ভরসা, যখন শুনলাম রাব্বী ভিআইপি গ্যালারীর টিকেট জোগাড় করেছে, অন্তত ভীড় আর হই হুল্লোড় থেকে তোর মামনী রক্ষা পাবে।

এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ওয়ান ডে খেলা দেখতে গিয়ে আমি কখনো হারিনি, বাংলাদেশ দলের প্রথম টেস্টের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন ও মাঠে ছিলাম , সেদুদিন ও তারা বেশ ভাল খেলেছিল ।

আজ বাসা থেকে বের হবার সময়ই মনটা কেমন খচখছ করছিল, বের হয়েই চোখে পড়ল একটা শালিক পাখি। আমাদের দেশে কুসংস্কার হিসেবে এটা প্রচলিত যে একটা শালিক দেখলে দিনটি বিশেষ সুবিধার নাও যেতে পারে । তার উপর রিক্সায় উঠার সময় তোর মামনীর ব্যাগের হাতল ছিড়ে গেল। এটাত গ্রাম বাংলার হিসেব মতে আরো ভয়ানক ব্যাপার, যাত্রা শুরুর সময় এমন কোন ঘটনা ঘটলে তারা পুরো যাত্রাটাই বলবে বন্ধ করে দিতে । যায় হউক এসব কুসংস্কারকে জীবনে প্রশ্রয় দেয়ার কোন মানে নাই, মানুষের ভাগ্য কখনো শালিক পাখির উপর নির্ভর করেনা, যদি তাই করত তাহলে মানুষ হয় দুটা করে শালিক পাখি বাসার সামনে বেঁধে রাখত আর না হয় ক্ষোভের বশে দুনিয়ার সব শালিক পাখি মেরে ফেলত । এর কোনটায় যেহেতু হয়নি সুতরাং শালিকের সাথে ভাগ্যের কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা। আর ব্যাগ নিয়ে রিক্সায় উঠার সময় সতর্ক না থাকলে হাতল ছিড়তেই পারে। আসলে এধরনের কথার প্রচলনের সম্ভবত মুল কারন যাত্রা পথে বা পথ চলাচলের সময় যেন আমরা সতর্ক থাকি সে বিষয়টা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য।নিজের ভালোর জন্যই সতর্ক থাকাটা জরুরী ।

আরেকটা মজার জিনিস যেটা শুনলে তুই ও হাসবি, তোর মামনীর ব্যাগে এখন সবসময় এক বক্স ম্যাচ থাকে। তোর আগমনী সংবাদের পরপরই তোর দাদীমা এই উপদেশ দিয়েছে তোর মামনীকে, আগুন সাথে থাকলে নাকি............................উত্তরাধিকার সূত্রে চলে আসা এমন সব নানা সংস্কার চলছে যুগের পর যুগ ধরে । হয়ত কোন ভিত্তি নেই, তবুও সংস্কার কে পরিত্যাগ করা হয়ে উঠেনা কারো ।
তোর মামনীর সেকি উচ্ছাস, প্রথমবার মাঠে যাচ্ছে খেলা দেখতে ।মাঠে ঢুকতে না ঢুকতে সব উচ্ছাস মিইয়ে গেল, আমাদের ততক্সনে চার উইকেট নাই হয়ে গেছে, আমি ভাবছি আল্লাহই জানে তোর মামনীর ফ্ল্যাড লাইটের আলো আর দেখা হয়ে উঠা কিনা। এর আগে আমার বন্ধু আরজু খুব শখ করে মাঠে গিয়েছিল বাংলাদেশ আর ওয়েষ্টইন্ডিজ এর বিশ্বকাপের খেলা দেখতে ফ্ল্যাড লাইটের আলোয়, তার সে আশা আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে, সেদিন ফ্ল্যাড লাইট জ্বলে উঠার আগেই খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল, আজও অমন হয় কিনা কে জানে, তোর মামনী তাহলে খুব কস্ট পাবে। যাক সে বিধ্বস্ত অবস্হা থেকে মুশফিক নাসিররা বাংলাদেশকে টেনে তুলল আর ফ্ল্যাড লাইট ও জ্বলে উঠল।

দারুন সময় কাটালাম আমরা মাঠে, হৈ হুল্লোড় করে। তোর মামনীর জন্য এই সব নিষেধ থাকলেও নিজের দেশের ভাল দেখলে কার না মন আনন্দে নেচে উঠে, মাঝে মাঝে সেও উচ্ছাসে ফেটে পড়ছিল । এর মাঝে তোর মামনী জানাল মাঠে খেলা দেখতে এসে তুই নাকি খুব এক্সাইটেড। স্বাভাবিকের চেয়ে তোর নড়াচড়া নাকি আজকে বেশী, হৈ হুল্লোড়ের সাথে সাথে তুইও নড়ে চড়ে উঠছিস প্রতিনিয়ত ।

ইদানিং গানের তালে তালে ও নাকি তুই এমন সাড়া দিচ্ছিস। টিভি বা পিসিতে যখন গান চলে তখন তোর মুভমেন্টটা বেশ ভালই টের পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে আমি আর তোর মামনী ল্যাপটপে গান ছেড়ে দিয়ে এই বিষয়টা বেশ উপভোগ করি। দ্রুতগতির গানের সাথে নড়াচড়াও তুই দ্রুত করছিস , এ অনুভূতির কোন তুলনা , বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। তোর মামনীকে বললাম মাঝে মাঝে যেন তোকে গান শোনায়, মাঝে মাঝে এই গান নিজের বিক্ষিপ্ত মনোবস্হা কিংবা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ সাহায্য করে। আরেকটা জিনিস জেনে রাখতে পারিস, তোর মামনী কিন্তু বেশ ভাল গান গায়, এমনি এমনি না, সে গান শিখেওছিল, বাসায় একটা হারমোনিয়াম ও আছে।

একদিন আমি অফিস থেকে ফিরে দেখি তোর মামনী হারমোনিয়াম নিয়ে বসে গান গাচ্ছে। হঠাৎ করে কেন এই আয়োজন জানতে চাইলে বলল, তোকে গান শোনাচ্ছে , বিয়ের পর এই প্রথম তাকে দেখলাম হারমোনিয়াম নিয়ে বসতে !!!!



আমাদের তুই (To The Child) – সপ্তম পর্ব
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×