somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর কত মরনোত্তর পদক দেয়া হবে.? বেঁচে থাকতে প্রাপ্য মর্যাদা দেয়া চাই!!

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এখন আমরা আমাদের মুখের ভাষা, বাংলায় কথা বলি। এই বাংলা একদিনে কিংবা সহজে আসেনি। আন্দোলন আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মাতৃভাষা। যা বর্তমানে আর্ন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো; আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস যখন ৬০ বছরে পা রেখেছে, সারা দেশজুড়ে যখন ভাষা সৈনিকদের স্মরনে প্রতিদিন স্মরণসভা, সেমিনার, বই মেলা সহ নানা আয়োজন চলছে ঠিক সেই মুহুর্তে ভাষা সৈনিকদের অন্যতম সংগঠক অলি আহাদ অবহেলায়, অযতেœ ঘরের কোনায় জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার দিনক্ষন গুণছেন।

কেউ কাছে গিয়ে যদি প্রশ্ন করে, তিনি জানান জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে যখন দেখি গণতন্ত্র বন্দী হয়ে আছে তখন হৃদয়টা কষ্টে ভরে উঠে। ভাষা আন্দোলনের এই মহা নায়ক ১৯২৮ সালে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার সদর উপজেলার ইসলামপুরে জন্ম গ্রহন করেন। পড়াশুনার হাতেখরি পরিবারের মধ্যে শেষ করে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ন হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তার পর তার শুরু হয় গণতন্ত্রের পথে, সংগ্রামের পথে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন পথচলা। ১৯৫২ সালের রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের এই মহান নেতার জীবনে নির্যাতন, জুলুম, অত্যাচার, কারাবরন সহ নানা প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ৫২’র ভাষা আন্দোলনকে যে কজন বীর ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব, আব্দুল মতিন, গাজীউল হক’র নাম উচ্চারিত হয় তাদের মধ্যে জীবন্ত কিংবদন্তী হিসাবে আজও বেঁচে আছেন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন ও অলি আহাদ।

ভাষার মাস এলেই এই দুই জনকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত করার জন্য রিতিমত সরকার ও বিরোধীদলে প্রতিযোগীতা শুরু হয়, পাশাপাশি সুশীলসমাজের সমাজপতিরাও তাদের পাশে বসে ভাষা সৈনিকদের স্মৃতিচারন করে নানা মুখরোচক বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য যখন শেষ তখন শুরু হয় অবজ্ঞার আসল দৃশ্য। আয়োজকরা প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ভুলে যান যাদের জন্য এই আয়োজন তাদের কথা।

এক সময়ে সাহসী সৈনিকরা নরম সুরে বিদ্রোহী কন্ঠে বলেন, শরীরটা আর ঠিক রাখতে পারছিনা, বাসায় যাওয়া দরকার, তখন আবারো ব্যস্ততা মুহুর্তে বেড়ে যায়। কোন কোন আয়োজক নিজেদের গাড়ী আর কেউ কেউ বা সি.এস.জি’তে উঠিয়ে দিয়ে মাতৃভাষার জন্য শ্রেষ্ঠ কাজটি করে ফেলেছেন এই তৃপ্তিতে বাড়ী ফেরেন, আর ঘরের সদস্যদের সাথে আনন্দের সাথে শেয়ার করেন ”জানো! আজ ভাষাসৈনিক মতিন ভাই‘র সাথে, কিংবা অলি আহাদ এর সাথে ছবি তুলেছ্”ি। রাষ্ট্রের প্রধানরাও তাদের সমাপরী বক্তৃতায় ভাষা সৈনিকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। হয়তো দু-একজনের কপালে জুটেছে একুশ পদক, স্বাধীনতা পদক সহ রাষ্ট্রীয় কিছু পদকী মর্যাদা। কিন্তু ভাষা সৈনিক অলি আহাদ এখন কি অবস্থায় আছে, কেমন আছে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন সহ অন্যান্য ভাষা সৈনিকরা? সেদিন এক টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে একজন ভাষা সৈনিক হাসপাতালের বেডে চিৎকার করে বলছিল “বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে” আমাকে এভাবে অসহায়ের মত বেঁচে থাকতে হতো না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা তিনি একবারও আমাকে এসে দেখার সময় পান নি।

রাষ্ট্রের শতব্যস্ততার মাঝেও ২০ ফেব্র“য়ারী দিবাগত রাত ১২:০১ মিনিটে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীপরিষদ, বিরোধীদলীয় নেতা সহ সকল মানুষ হাজার হাজার ফুলে ফুলে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ভরিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সহ প্রতিটি শহীদ মিনার। তখন জীবন্ত কিংবদন্তী ভাষা সৈনিকরা বিছানায় শুয়ে বুকফাটা করবে আত্মচিৎকার। হয়তো কেউ শুনবেনা, শুনবে শুধু বিধাতা। হয়তো তারা বলবে, আমাদের মৃত্যুর পরও আমাদের বেদীতেও ফুলে ফুলে ভরে উঠবে, কিন্তু বেচে থেকে কি পেলাম আজ অধিকার??

আসুন আমরা আমাদের বিবেক কে জাগিয়েতুলি, আমাদের প্রিয় ভাষা সৈনিক অলি আহাদ, আবদুল মতিন সহ যারা ৫২’তে গুরুত্বপূর্ন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের মৃত্যুর পর মরনোত্তর কোন পদক না দিয়ে বেচে থাকার যে আশা রয়েছে সেটুকু সময় তাদেরকে রাষ্ট্রীয় খরচে উন্নত চিকিৎসার সু ব্যবস্থা করতে পারলে মৃত্যুর শেষ মুহুর্তে এসে অন্তত তারা এইটুকু শান্তনা পাবে “মায়ের জন্য, মায়ের ভাষার জন্য” এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য যে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ও অবদান রেখেছিলেন, রাষ্ট্র তাদের সেই অবদানের জন্য শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সম্মান জানিয়েছে।

যা আগামী প্রজন্মের কাছে একটি মাইলফলক দৃষ্টান্ত হিসাবে উপস্থাপিত হবে। আমরাও চাই এসব জাতীয় বীরদের বেঁচে থাকতে উপযুক্ত সম্মান জানানো হোক। অন্তত সরকারি বা জাতীয় ভাবে এটুকু করা হোক এসব বীররা যেন, বীরের মতো জীবনের অন্তিম সময়গুলো কাটাতে পারে। তাঁরা মারা গেলেও অমর। এআ বাংলা যতদিন থাকবে, বাংলাভাষা যতদিন থাকবে ‘ভাষাবীর’রা অমর থাকবে। মরণোত্তর সম্মান যখন জানাবোই আমরা, বেঁচে থাকতে তাদের ওসব দেখে যেতে দিব না কেন.?

হাসান মাহামুদ
লেখক ও সংবাদকর্মী।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×