somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরাজ স্যারকে কি মনে পড়ে?

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষকতাকে কখনোই তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন নি। জ্ঞানের পাদপ্রদীপের আলোয় অজ্ঞতার অন্ধকারকে দূর করার প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষকতাকে ব্রতরূপে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হলেন আমাদের সিরাজ স্যার। পুরো নাম মোঃ সিরাজুল ইসলাম। ১৯৮১ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা ব্রতে প্রবেশ করেন। সময়ের পরিক্রমায় তিনি আমাদের পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে সহযোগী অধ্যাপক পদে আসেন ২০০১ সালে।

এডওয়ার্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগে যোগদানের পর থেকেই পুরো বিভাগকে আপন করে নেন। বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে আপন সন্তান স্নেহে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে লাগলেন। একাডেমিক পড়াশোনাকে যেমন গুরুত্বারোপ করতেন, একইভাবে শিক্ষার্থীদেরকে শুধুমাত্র একাডেমিক পড়াশোনাতে আবদ্ধ না থেকে জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় অনুসন্ধানের জন্য প্রেরণা যোগাতেন। কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি কখনো বিরাগ হয়েছেন এমনটি কখনো ঘটে নি। বরং, তাঁর স্নেহ ও মমতায় অনেক অবাধ্য শিক্ষার্থী সঠিক পথের সন্ধান লাভ করেছিল। অন্যদিকে, তাঁর পড়ানোটা এমন ছিল যে, শিক্ষার্থীদের কাছে কখনোই তা নীরস কিংবা একঘেয়ে মনে হত না। সাহিত্যের অপার সৌন্দর্য পরম যত্নে শিক্ষার্থীদের সামনে উন্মোচনের মাধ্যমে জীবনের অন্তর্নিহিত সত্যের সন্ধান করতেন।

সিরাজ স্যারের আরেকটি গুনের কথা না বললেই নয়। স্যার সংগীতের একজন অনুরাগী। তিনি গান গাইতে ও শুনতে ভালবাসতেন। সেই প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। সম্ভবতঃ ২০০৩ সালের দিকের কথা। প্রতিবারের ন্যায় বিভাগ থেকে শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়। সকলের মতামতের ভিত্তিতে দিনাজপুরের রামসাগর স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। শিক্ষাসফর নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবল উৎসাহ। অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহরের পালা শেষ হয়ে আসে সেই কাঙ্খিত দিন। কিন্তু দেখা যায় যে, রামসাগরে পৌঁছানোর পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মন খুব খারাপ। এগিয়ে এলেন সিরাজ স্যার। তিনি বুঝতে পারলেন যে, যাত্রা দেরি করে শুরু হওয়ার কারনে রামসাগরে পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় সকলেরই আনন্দ মাটি হওয়ার উপক্রম। তখন তিনি নিজ উদ্যোগে সবাইকে নিয়ে নৌকাভ্রমণের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মাত্রাটাকে আরও একটু বাড়িয়ে দিতে স্যার গাইতে শুরু করলেন ভাওয়াইয়া গান। তাঁর গানের সুরের সঙ্গে শোনা গেল তাঁর স্নেহধন্য শিক্ষার্থীদের সমস্বর।

বিভাগের শিক্ষকদের সাথে ছিল তাঁর চমৎকার সম্পর্ক। সহকর্মীর পরিচয় ছাপিয়ে সিরাজ স্যার সবাইকে মনে করতেন একই পরিবারের অবিচ্ছেদ্য সদস্য। সিরাজ স্যার সম্পর্কে এডওয়ার্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ কলিম উদ্দিন স্যার এভাবে বলেন, “তিনি সুশৃঙ্খলতাকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করতেন। তবে সবচেয়ে বড় কথা, তাঁর মধ্যে মানবিক গুণাবলীর ছিল সপ্রতিভ উপস্থিতি।”

আজ আমাদের প্রিয় সিরাজ স্যার শারীরিকভাবে চরম সঙ্কটময় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর শরীরের দুটো কিডনীই অকেজো হয়ে গেছে। প্রথম দিকে কয়েকদিন পরপর ডায়ালাইসিস করা হলেও এখন একদিন অন্তর অন্তর ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন যে, অনতিবিলম্বে কিডনী প্রতিস্থাপন না করা গেলে কোনোরকম আশাব্যাঞ্জক সম্ভাবনার কথা বলা যাচ্ছে না। কিডনী প্রতিস্থাপনের জন্য যে ৩৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন, তা নিশ্চয় অল্প পরিমান অঙ্কের নয়। তাছাড়া, ডায়ালাইসিস বিপুল অঙ্কের ব্যয়বহুল চিকিৎসাপদ্ধতি। স্যারের একার পক্ষে তা কতটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার তা বোধ করি সহজে অনুমেয়।
এই লেখাটি লেখার পূর্বে স্যারের কাছ থেকে অনুমতি চাইলে তিনি রাজী হন নি লেখাটি প্রকাশ করার। কিন্তু তারঁ সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ রাখবেন না, এমনটি তিনি নন। তবে তিনি শর্ত দিলেন, কোনো সাহায্যের আবেদন নয়। স্যারের সেই আদেশ মেনে নিয়েই এই লেখার প্রয়াস। স্যারের স্নেহধন্য অনেক শিক্ষার্থীই জীবনের প্রয়োজনে দেশে-বিদেশে অবস্থান করছেন। হয়তো বা নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় স্যারের কোনো খোঁজ রাখতে পারি নি। আজ কি আমরা পারি না সেই ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে স্যারের পাশে দাঁড়াতে? স্যারের হাত দুটি ধরে বলতে পারি না, “ স্যার, আপনি একা নন। আপনার সন্তানেরা আপনার পাশে আছে।” সন্তান হিসেবে এটি আমাদের শুধু দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের অধিকার। সেই অধিকারের দাবিতেই আসুন আমরা সবাই স্যারের এই সঙ্কটপূর্ণ ক্ষণে তাঁর পাশে দাঁড়াই।

১. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
মোঃ সিরাজুল ইসলাম
হিসাব নম্বরঃ ২৩৯৭৯

২. সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
মোঃ সিরাজুল ইসলাম
হিসাব নম্বরঃ ০০২৫৩৯০০৬

সিরাজ স্যারের সঙ্গে যোগাযোগঃ ০১৯২০৭৭৫৬১৩।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×