somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফারজানা খান গোধুলি, ফটোসাংবাদিক, ওয়াশিংটন থেকে

ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি আমাকে সাহায্য করলেন সিদ্ধান্ত নিতে। এতো দিন দোদুল্যমান ছিলাম কি করা উচিৎ তা নিয়ে। তা এখন কেটে গেলো আপনার কথায়। ‌‌‌দুই সাংবাদিককে নিজেদের ঘরে মারা হয়েছে। সরকারের পক্ষে কারও বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়- আপনার এই বক্তব্যে।

২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার গণভবনে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আপনি এ কথা বললেন।

আমি গত একটা বছর ধরে ভাবছিলাম দেশে ফিরে যাব কী? দুই তিনটি মিডিয়ার যে কোনো একটির প্রস্তাব গ্রহণ করে ফিরবো কিনা? বিদেশের মাটিতে হাজার ভালো চাকরি, নিরাপদ জীবন যাপন, ভেজাল মুক্ত খাবার, যানজটহীন চলা-ফেরাও পিছুটান রোধ করতে পারছিলো না। এক বছর ধরে প্রতি রাতেই ঘুমাতে গেছি এই ভেবে, যে পরের ভোরে স্বামীর সাথে চূড়ান্ত আলোচনা করবো। কিন্তু মেয়েটা পুঁচকে। মাত্র ১৭ মাস বয়স। ওর কারণে সিদ্ধান্ত নেয়াটা বার বার পিছিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আপনি এক মুহূর্তে সব ঠিক করে দিলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি একজন ক্ষুদ্র সাংবাদিক। দেশে থাকাকালে আপনি এক সময় সাহসিকতার সাথে কাজের কারণে মাঝে মধ্যে ডেকে কথা বলেছেন। প্রশংসা করেছেন। স্নেহও করেছেন। বাহবা দিয়েছেন। ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে শুরু করেছি। ক্ষমা করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেলাইনে চলে যাবার জন্য। বেলাইনে আমরা যেতে পারি না। আমরা জনগণ তো তিন বাঁদরের মতো (খারাপ কিছু দেখো না, খারাপ কথা শোনো না ও খারাপ কথা বলো না) যাদের জন্য প্রযোজ্য সরকারের খারাপ কিছু দেখো না, সরকারের বিরুদ্ধে খারাপ কিছু শোনো না, সরকারের বিরুদ্ধে খারাপ কিছু বলো না। দুঃখিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার লাইন ছাড়া হয়ে গেছি।

সাগর ও রুনি যাদের সাথে বন্ধুতা ১৪ ও ১১ বছরের। কাজের-অকাজে, দরকারে-অদরকারে অনেক সময় কাটিয়েছি। সাংবাদিক হিসেবে ওরা দুই জনই ছিলো উঁচুমাপের। দেশের মানুষ তাদের কর্মদক্ষতার জন্য চিনত। তাদের বন্ধু ও আত্মীয় মহলে তারা প্রিয় ছিলো হাসিখুশি ও মিশুক এই জন্য। সেই দু’জন কে অবর্ণনীয় কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে নিজ বাসার শোবার ঘরে। কারণ কি? কেন? কিভাবে? তা জানাতে চাই আমরা ১৬ কোটি বাংলাদেশি।

শুধু জানতে চান না আপনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন (আমার অনুমান, আপনাদের কথায় মনে হয়েছে)।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যতদূর মনে পরে আপনি প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ কালে শপথ নিয়েছিলেন দেশবাসীর জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। ওই সময় উল্লেখ করেননি কোন কোন স্থানে নিরাপত্তা দেবেন আর কোথায় দেবেন না। আমরা জনগণ মনে করেছিলাম আপনি আমাদেরসহ সারা দেশের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বলেছিলেন। এবার কি একটু অধম জনগণ কে জানাবেন কোথায় কোথায় নিরাপত্তা দেবেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা জনগণ আমাদের শোবার ঘরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার কথা কোনদিন বলিনি, এতো খুন হচ্ছে শোবার ঘরে তারপরও বলিনি।

আপনার নিরাপত্তাবাহিনীর কাজ আমাদের ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৬ শত ৭০ জন বাংলাদেশির (বাকি ৩৩০ জন আপনি ও আপনার মন্ত্রি, এমপি যাদের বাসার সামনে নিরাপত্তাবাহিনী থাকে) সদর দরজার বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাড়া-মহল্লায়, অলিতে-গলিতে, রাস্তায়, মাঠে, দোকানে, বাজারে, মসজিদ- মন্দিরে, স্কুল, কলেজে, অফিস, বাসে, রিক্সায়, বাবার কোলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। শপথ রক্ষা করুন।

২০০৯ থেকে ২০১১ এই তিন বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ৩৬৫ জন, বিএসএফ’র হাতে নিহত হয়েছে ২০৩ জন, রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছে ৬০৬ জন, গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৪৬২ জন, গুম হয়েছেন ৫০ জন, কারাগারে মৃত্যু হয়েছে ২১৫ জন। সাংবাদিকের প্রতি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৫২৯টি। পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০২ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২০১ জন, যৌতুকের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১২১৩ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৭২৬ জন। অধিকার নামের মানবাধিকার সংস্থাটির দেওয়া এসব তথ্য এটাই প্রমাণ করে, আমরা শুধু বেডরুমে না রাস্তাঘাটেই বেশি খুন হচ্ছি।

এবার কি বলবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? সব মিথ্যা বানোয়াট। আপনি বললে তাই সত্যি।

আমরা যারা কাজের কারণে দেশের বাইরে থাকি, তারা দেশে ফিরবো না, নাকি সার্বিক নিরাপত্তার অভাবে বিদেশের মাটিতে রয়ে যাবো? শিকড়ের টান উপেক্ষা করে অপঘাতে মরার হাত থেকে বাঁচতে থেকে যাবো বিদেশ বিভূঁইয়ে? শিকড়ের টান উপেক্ষা না করে সাগর-রুনির দেশে ফেরা ওদের নিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। এদেশেও খুন হয়, অপঘাতে মৃত্যু হয়, আমাদের দেশের সাথে কি তার তুলনা চলে?

আমাদের ফেরার পথ কি কোনদিন হবে না? আজীবন প্রবাসী হয়ে থাকতে হবে?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাইন্ড করবেন না এবার বেশি কথা বলে ফেলেছি। সিদ্ধান্ত কি নিলাম সেটা না বলে যত আগডুম বাগডুম কথা। না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি দেশে ফিরতে চাই না। আমার ১৭ মাসের শিশু কন্যাটিকে তার মা-বাবার জন্মভূমি দেখাতে চাই না। আনবো না দেখতে তার মা-বাবার স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, ধানক্ষেত, নদী, শহিদ মিনার, সৃতিসৌধ, আনবো না দেখাতে। আনবো না দেখতে পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ, পৌষমেলা ।

শোনাতে আনাবো না নজরুল সঙ্গীত, লালনগীতি, জারিসারি, ভাটিয়ালী, পল্লীগীতি। আনবো না সাগর-রুনির বাসার বারান্দার কাটা গ্রিলের ছোট্ট ফাঁকা দেখাতে। যেই ফাঁকটুকু গলে ছোট শিশু ঢুকতে পারে না তা দিয়ে আজ অনেক কিছুই ঢুকছে বের হচ্ছে। ফাঁকা দিন দিন আরও বড় হচ্ছে। সেই ফাঁকা দিয়ে দশ জন জজমিয়া একসাথে ঢুকতে বের হতে পারবে। আবারো বেলাইনে যাচ্ছি। জনগণের কথা শোনা আপনার একটা কাজ। আপনি আমাদের কথা শুনবেন এটা আমাদের অধিকার, সেই অধিকার নিয়ে আপনাকে লেখা।

জাকিয়া আহমেদের মতো আমারো কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ চিঠি পাবেন কিনা জানি না, পেলেও পড়বেন কি না জানি না। যদি পড়েন এই আশা নিয়ে লেখা।

ফারজানা খান গোধুলি, প্রবাসী সাংবাদিক।
Washington, D C.


Click This Link
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×