somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসীলাহ বলতে কি বোঝায় ও শরীয়াত সম্মত অসীলাহ কি কি( প্রথম পর্ব)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আত্তাওয়াস্সুল এর আভিধানিক অর্থ ‘নৈকট্য লাভ করা’। অসীলাহ হচ্ছে যার মাধ্যমে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছা যায়। অর্থাৎ অসীলাহ হচ্ছে সেই উপায় ও মাধ্যম যা লক্ষ্যে পৌছিয়ে দেয়। ইবনুল আছীর (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত নিহায়াত্ গ্রন্থে এসেছে আলঅসিল অর্থ আররাগিব অর্থাৎ আগ্রহী। আর অসীলাহ্ অর্থ নৈকট্য ও মাধ্যম বা যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট বস্তু পর্যন্ত পৌছা বা নিকটবর্তী হওয়া যায়। অসীলাহর বহু বচন হচ্ছে অসায়েল। (আন্নিয়াহায়াত ৫খন্ড ১৮৫ পৃষ্ঠা) কাসূম অভিধানে এসেছে, অর্থাৎ, এমন আমল করা যার মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন করা যায়। ইহা তাওয়াস্সুলের অনুরূপ অর্থ। (ক্বামূসুল মুহীত্ব ৪র্থ খন্ড ৬১২পৃঃ)
কুরআনে অসীলাহর অর্থ
ইতিপূর্বে অসীলাহর যে আভিধানিক অর্থ বর্ণনা করেছি। সালাফগণ (পূর্বসূরী বিদ্বান তথা সাহাবা ও তাবেঈগণ) কুরআনে উল্লেখিত অসীলাহ শব্দের অর্থ তাই করেছেন। যা সৎ কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা অর্থের বহির্ভূত নয়। কুরআন কারীমে দু’টি সূরার দু’টি আয়াতে অসীলাহ শব্দটির উলেখ এসেছে। সূরা দু’টি হচ্ছে মায়িদাহ ও ইসরা।
আয়াত দু’টি নিম্নরূপঃ অর্থঃ “হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর নিকট অসীলাহ সন্ধান কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর। অবশ্যই মুক্তিপ্রাপ্ত হবে।” (সুরা মায়িদাহঃ ৩৫)
“তারা (কতিপয় জনসমষ্টি) যাদেরকে আহ্বান করে তারাই তাদের প্রতিপালকের নিকট অসীলাহ সদ্ধান করে। তাদের মধ্যে কে অধিক নিকটবর্তী; আর তারা তার (আল্লাহর) রহমতের আশা করে ও তার আযাবকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের আযাব ভীতিযোগ্য।” (সুরা ইসরাদিয়াল্লাহু আনহু ৫৭)
প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমামুল মুফাসসিরীন হাফিয ইবনু জারীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ তোমাদের প্রতি আরোপিত যাবতীয় আদেশ ও নিষেধ মান্য করতঃ আনুগত্যের সাথে আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও। অর্থাৎ আল্লাহর নিকট নৈকট্য তালাশ কর তাকে সন্তুষ্টকারী আমলের মাধ্যমে। হাফিয ইবনু কাছীর ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, অসীলাহ অর্থ নৈকট্য। অনুরূপ অর্থ সংকলিত হয়েছে মুজাহিদ, হাসান, আব্দুলাহ বিন কাছীর, সুদ্দী, ইবনু যায়েদ ও অপরাপরগণ থেকে। কাতাদাহ থেকেও এরূপ সংকলিত হয়েছে। আল্লাহর নৈকট্য থেকেও এরূপ সংকলিত হয়েছে। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কর তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ও তাকে সন্তুষ্টিকারী আমলের মাধ্যমে। অতঃপর ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ সকল নেতৃস্থানীয় আলিমগণ আয়াতের তাফসীরে যা বলেছেন এতে (নির্ভরযোগ্য) তাফসীরকারদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই। আর তা হচ্ছে এই যে, অসীলাহ হচ্ছে ঐ বিষয় যার মাধ্যমে অভিষ্ঠ লক্ষ্য উদ্দেশ্যে পৌছা যায়। (তাফসীর ইবনু কাছীর ৫খন্ড ৮৫ পৃষ্ঠা)
দ্বিতীয় আয়াতঃ বিশিষ্ট সাহাবী ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার উপলক্ষ্য সম্পর্কে যা বলেছেন তাতে তার অর্থ স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেছেন- অর্থঃ “কিছু সংখ্যক মানুষ কিছু সংখ্যক জ্বিনের পূজা করত, অতঃপর পূজ্য জ্বিন সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করে, কিন্তু তারা (ঐ মানব সম্প্রদায়) নিজেদের ধর্মে (জ্বিন পূজায়) বহাল থাকে”। (বুখারী শরীফ)
হাফিয ইবন হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জ্বিনের পূজাকারী মানব সম্প্রদায় জ্বিন পূজায় বহাল থাকে, অথচ এ সকল জ্বিন তা পছন্দ করতো না, যেহেতু তারা ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর নিকট অসীলাহ কামনা করতে শুরু করেছে। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড ৩৯৭ পৃষ্ঠা) উক্ত আয়াতের এটাই হচ্ছে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা। যেমনটি ইমাম বুখারী ইবনু মাসউদ থেকে বর্ণনাপূর্বক তার ছহীহ্ বুখারী গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন।
অসীলাহ বলতে যে ঐ সকল বিষয় বস্তু উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়, এ ব্যাপারে আয়াতটি অত্যন্ত স্পষ্ট। এজন্য আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ তারা সন্ধান করে এমন সৎ আমল যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
দু’টি আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে সালাফদের (পূববর্তী মুফাস্সিরদের) থেকে যা সংকলিত হয়েছে তা নির্দেশ করে আরবী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান (অভিধান) ও সঠিক বোধশক্তি।
পক্ষান্তরে,
যারা এ আয়াত দু’টি থেকে নবীগণ ও নেককারগণের অবয়ব সত্ত্বা আল্লাহর নিকট তাদের অধিকার ও সম্মানের অসীলাহ গ্রহণ করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করে থাকে তাদের ব্যাখ্যা বাতিল এবং বাক্যকে নিজের স্থান থেকে বিকৃত করণ,
শব্দকে তার প্রকাশ্য নির্দেশনা থেকে পরিবর্তন করণ
ও দলীলকে এমন অর্থে ব্যবহার করার শামিল যার সম্ভাবনা রাখে না।
তদুপরি এমন অর্থ কোন সালাফ তথা সাহাবাহ্ তাবিঈ ও তাদের অনুসারীগণ বা গ্রহণযোগ্য কোন তাফসীরকারক বলেননি। যখন প্রতিভাত হলো যে, অসীলাহ শব্দের অর্থঃ ঐ সকল সৎকর্ম যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এবার এই সৎকর্মটির শরীয়ত সম্মত কিনা জ্ঞাত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
কারণ, আল্লাহ এ সকল আমল নির্বাচন করার দায়িত্ব আমাদের দিকে সোপর্দ করেননি, বা তাহা চিহিৃত করার ভার আমাদের বিবেক ও রুচির উপর ছাড়া হয়নি। কেননা এমনটি হলে আমলে বৈপরিত্য ও বিভিন্নতা সৃষ্টি হতো। তাই আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমলের ক্ষেত্রে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে এবং তার নির্দেশনা ও শিক্ষার অনুসরণ করতে। কেননা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা কোন্ বিষয় তাকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মাধ্যমগুলো জানা। আর তা এভাবে সম্ভব; প্রতিটি মাস্আলার (বিষয়) আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা প্রবর্তন ও বর্ণনা করেছেন তার দিকে প্রত্যাবর্তন করা। অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে যে, কোন আমল সৎ হওয়ার জন্য তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে খাঁটি হতে হবে এবং আল্লাহর দেয়া নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। এ কথার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে,
তাওয়াস্সুল দু’ভাগে বিভক্ত শারঈ (শরীয়ত সম্মত) ও বিদঈ (বিদ’আতী বা শরীয়ত বিরোধী)
শরীয়ত সম্মত অসীলাহ
কুরআন সুন্নাহ অধ্যয়ন করে শরীয়ত সম্মত অসীলাকে তিন ভাগে সীমাবদ্ধ পাওয়া গেছে।
(ক) আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অসীলাহ।
(খ) সৎ আমলের অসীলাহ।
(গ) সৎ ব্যক্তির দু’আর অসীলাহ।
প্রিয় পাঠক! আপনার সমীপে প্রকারগুলো দলীল সহ বিশদ বর্ণনা দেয়া হলোঃ-
প্রথমতঃ আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অসীলাহ ধারণ সম্পর্কেঃআল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অসীলাহ গ্রহণ করার নিয়ম, যেমন মুসলিম ব্যক্তি তার দু’আয় বলবেঃ অর্থঃ “হে আল্লাহ তুমি প্রজ্ঞাময় পরাক্রমশালী করুণাময়, কৃপানিধান, আল্লাহ তাই তারই অসীলায় সমগ্র বস্তুকে পরিব্যপ্তকারী তোমার রহমতের অসীলায় তোমার নিকট আমার জন্য রহমত ও ক্ষমা ভিক্ষা করছি। অথবা অনুরূপ আল্লাহর সুন্দরতম নাম ও গুণাবলীর মাধ্যম ধরে দু’আ করবে।” কিতাব ও সুন্নাহ এ প্রকার অসীলাহর প্রতি নির্দেশ দান করেছে। আল্লাহ বলেনঃ অর্থঃ “আর আল্লাহর অনেক সুন্দরতম নাম রয়েছে। অতএব সেগুলোর অসীলায় তাকে আহবান কর এবং পরিত্যাগ কর ওদেরকে যারা তার নাম সমূহের ভিতর বিকৃতি সাধন করে”। (সূরা আ’রাফঃ ১৮০)
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর নিকট সৎ আমলের দ্বারা অসীলাহ গ্রহণ করাঃ সৎ আমল যার ভিতর কবুল হওয়ার নির্ধারিত শর্ত পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান*। আল্লাহ্‌র নিকট সৎ আমলের দ্বারা অসীলাহ গ্রহণ করা আর তা এরূপ যেন দু’আকারী বলবে- অর্থঃ “হে আল্লাহ! তোমার প্রতি আমার ঈমান, তোমার জন্য আমার ভালবাসা এবং তোমার রাসূলের অনুসরণ ও অনুকরণের অসীলায় আমাকে ক্ষমা করো।” আরো এরূপ শরীয়ত সম্মত দু’আহর অসীলাহ গ্রহণ করা যায়। এ সকল অসীলাহ নির্দেশনায় কুরআন থেকে আল্লাহ তা’আলার কিছু বাণী উদ্ধৃত হলোঃ অর্থঃ “হে আমাদের প্রতিপালক নিশ্চিতরূপে আমরা ঈমান এনেছি অতএব আমাদের গুনাহ্ সমূহ ক্ষমা করা এবং নরকের শান্তি থেকে রক্ষা কর।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৬)
আরো আল্লাহর বাণীঃ অর্থঃ “হে আমাদের প্রতিপালক তুমি যা অবতীর্ণ করেছে আমরা তার উপর ঈমান এসেছি এবং তোমার রাসূলের অনুসরণ করেছি অতএব আমাদেরকে সাক্ষ্যপ্রদানকারীদের (মুহাম্মদী উম্মাতের সৎকর্মশীল বান্দাদের) দলে লিপিবদ্ধ কর।” (আলে ইমরানঃ ৫৩)
আরো আল্লাহর বাণীঃ অর্থঃ “হে আমাদের রব! আমরা শ্রবণ করেছি ‘তোমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান আনো বলে’ ঘোষণা প্রদানকারীর ঘোষণা অতঃপর আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের গুনাহ্সমূহ ক্ষমা কর এবং আমাদের পাপরাশি মোচন কর এবং সৎ ব্যক্তিদের সাথে মৃত্যু দান কর।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৯৩)
সুন্নাহ থেকে বুরাইদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর হাদীস প্রনিধানযোগ্য, অর্থঃ বুরাইদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট এই অসীলাই চাচ্ছি যে, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি তুমি সেই আল্লাহ যিনি ব্যতীত আর কেউ প্রকৃত উপাস্য নেই। তুমি একক, মুখাপেক্ষীহীন, যিনি কাউকে জন্ম দেননি, এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। এতদশ্রবণে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাঁর এমন সুমহান নামের অসীলায় আবেদন করেছে যে, তার মাধ্যমে আবেদন করা হলে, প্রদান করেন এবং প্রার্থনা করা হলে, কবুল করেন (হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
আরো এ বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করে তিন ব্যক্তির ঘটনা সম্বলিত আব্দুলাহ্ বিন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর হাদীস। তারা এক গর্তে প্রবেশ করে আশ্রয় নিলে একটি পাথর উপর থেকে নিক্ষিপ্ত হয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় তারা একে অপরকে বলল, তোমরা তোমাদের সৎ আমলসমূহের অসীলায় আল্লাহ আল্লাহর নিকট দু’আ কর। অতঃপর তাদের একজন পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারের দ্বারা অসীলাহ্ গ্রহণ করল। দ্বিতীয় ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে অবাধ্যতায় কাজ থেকে বিরত হওয়ার অসীলাহ গ্রহণ করল। তাঁর চাচাতো বোনকে আয়ত্তে পাওয়ার পর যখন সে আলাহ্কে স্মরণ করিয়ে দেয় তখন সে আল্লাহর ভয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। তৃতীয় ব্যক্তি তার আমানত দারিতা ও সততার অসীলাহ গ্রহণ করল। আর তা এভাবে, এক শ্রমিক তার পারিশ্রমিক ছেড়ে চলে গেলে সে তার পারিশ্রমিক সম্পদকে বিপুল সম্পদে পরিণত করে। পরবর্তীকালে সে এসে তার সমস্ত সম্পদ নিয়ে যায় কিছুই ছেড়ে যায়নি। (বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন) এখানে ঘটনার সারাংশের উলেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি মুসলিম ব্যক্তির খুলুসিয়াত পূর্ণ আমলের অসীলাহ গ্রহণ শরীয়ত সম্মত হওয়ার প্রতি নির্দেশ করে।
তৃতীয়তঃ আল্লাহর নিকট সৎ ব্যক্তির দু’আর অসীলাহ গ্রহণ যেমন মুসলিম ব্যক্তি চরম সংকটে পড়লে বা তার উপর কোন বিপদ আপতিত হলে এবং নিজেকে আল্লাহর হক আদায়ে ক্রটি সম্পন্ন মনে করলে সে আল্লাহর নিকট মজবুত উপায় গ্রহণ করতে ভালবাসে। এজন্য এমন এক ব্যক্তির নিকট গমন করে থাকে যাকে পরহেযগারী, পরিশুদ্ধি, মর্যাদা ও কুরআন-হাদীসের বিদ্যায় অধিক উপযুক্ত মনে করে তার নিকট বিপদমুক্তির ও দুশ্চিন্তা দূরীকরণের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করার আবেদন করে। এ ব্যাপারে সুন্নাহ ও সাহাবাগণের আচরণ নির্দেশ করে।
সুন্নাহ থেকে দলীলঃ আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বর্ণিত হাদীস “এক পল্লীবাসী নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মিম্বরে খুৎবাহ দানকালে মসজিদে প্রবেশ করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমাদের সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল, রাস্তা ঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল অতএব আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’খানা হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন, এ পরিমাণ হাত উঠিয়েছিলেন যে, আমি তার বগলের শুভ্রতা পর্যন্ত দেখেছিলাম। (দু’আটি এই) অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান কর, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দান কর, হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দান কর। লোকেরাও তাদের হাত উঠিয়ে দু’আ করলো। আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর কসম করে বলছি, (দু’আর পূর্বে) আমরা আসমানে ব্যাপক অংশ জুড়ে মেঘের একটিও খন্ড দেখি নাই, আমাদের মাঝে ও সিলা’র মাঝে কোন ঘরবাড়ীও ছিলনা। দু’আর পর রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছন দিক থেকে মেঘ প্রকাশিত হলো ঢালের ন্যায়। আসমানের মাঝা-মাঝি স্থানে এসে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো এবং বর্ষিত হলো। সেই যাতের কসম যার হাতে আমার জীবন নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত রাখেননি যে পর্যন্ত মেঘমালা পাহাড় সম আকারে বিস্তৃতি লাভ না করেছিল। অতঃপর মিম্বর থেকে অবতরণ করার পূর্বেই তার দাড়ির উপর দিয়ে বৃষ্টি গড়িয়ে পড়তে দেখেছি। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করলেন এবং আমরা সালাতান্তে বের হলাম পানিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ীতে পৌছলাম। দ্বিতীয় জুমু’আহ্ পর্যন্ত এ বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। অতঃপর ঐ পল্লীবাসী লোকটি কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, যেন তিনি আমাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃদু হাসলেন এবং তার হাত দু’খানা উত্তোলন পূর্বক বললেন, অর্থঃ “হে আল্লাহ আমাদের আশে পাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ ঢিলার উপর, ছোট ছোট পাহাড়ের উপর, মাঠের ভিতর ও গাছপালা উৎপাদনস্থলগুলোতে। (বুখারী ও মুসলিম) মেঘ সরে গেল এবং মদীনার পাশ্বস্ত ভূমিগুলিতে বর্ষিতে লাগল, মদীনায় আর একটুও বৃষ্টি বর্ষিত হলো না।
সাহাবাগণের আমল হতে প্রমাণঃ
এ মর্মের হাদীসটিও আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ লোকেরা যখন অনাবৃষ্টিতে ভুগতো তখন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব এর মাধ্যমে বৃষ্টি চাইতেন। তিনি বলতেন, অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর অসীলা ধারণ করলে তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিয়ে থাকতে, আর এখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর চাচার অসীলাহ ধারণ করছি। অতএব আমাদেরকে বৃষ্টি দান কর। বর্ণনাকারী বলেন, ফলে তারা বৃষ্টি প্রাপ্ত হতো। (বুখারী)
উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বাণী আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর অসীলাহ ধারণ করতাম এখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর চাচার অসীলা ধারণ করছি, এর অর্থঃ আমরা আমাদের নবীর শরণাপন্ন হতাম এবং তাঁর নিকট দু’আর আবেদন করতাম এবং তাঁর দু’আর অসীলায় আল্লাহর নৈকট্য কামনা করতাম। আর এমন যেহেতু তিনি উর্দ্ধতন বন্ধুর সান্নিধ্যে চলে গেছেন (মৃত্যুবরণ করেছেন) সেহেতু আমাদের জন্য তাঁর পক্ষে দু’আ সম্ভব নয় তাই আমরা নবীর চাচার সম্মুখীন হচ্ছি এবং আমাদের জন্য দু’আর আবেদন করছি। এসব কথার অর্থ এটা নয় যে, তাঁরা তাদের দু’আয় এরূপ বলতেন, হে আল্লাহ তোমার নবীর সম্মানের অসীলায় আমাদেরকে বৃষ্টি দান কর। অতঃপর তার মৃত্যুর পর তারা বলতেন, হে আল্লাহ! আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর মান মর্যাদার অসীলায় আমাদের বৃষ্টি দান কর ! কারণ এ ধরনের দু’আ বিদআতী। কুরআন ও সুন্নাহতে এর কোন ভিত্তি নেই। এরূপ অসীলাহ পূর্বসূরী কোন বিদ্বান ধারণ করেননি।
অনুরূপভাবে মু’আবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর যুগে ইয়াযীদ বিন আস্অদ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অসীলাহতে অর্থাৎ তাঁর দু’আর অসীলাহতে বৃষ্টি চেয়েছিলেন। তিনি (ইয়াযীদ) সম্মানিত তাবেঈগনের একজন ছিলেন।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, যদি ব্যক্তিসত্তা, সম্মান ও মর্যাদার অসীলাহ ধারণ করা শরীয়ত সম্মত হতো তাহলে উমার ও মু’আবিয়াহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসীলাহতে পানি চাওয়া বাদ দিয়ে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও ইয়াযীদ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অসীলাহ ধারণ করার শরণাপন্ন হতেন না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×