somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজশাহী-০১

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুনিয়ার সবচেয়ে অভাগা পোলাপানদের ভার্সিটি লাইফ টা খুব সম্ভবত রাজশাহী তেই কাটে। অভাগা এইজন্যে বলছি যে এখাঙ্কার চরমভাবাপন্য আবহাওয়া।গরম এর দিনে মাথা চাড়া দেওয়া গরম, শীতের দিনে অস্বাভাবিক শীত তার সাথে আবার ঝমঝমে বৃষ্টি, আর বর্ষা কালে তো বৃষ্টি খুজে পাওয়াই দায়।
তো যাই হোক , আমি আমার জীবনে এর আগে কখন শীতের দিনে এইরকম বৃষ্টি দেখি নাই।যার জন্যেই লিখতে বসা। অনেক অমায়িক মিশ্রস্বাদের একটা রাত কাটানোর পরে আমি তপু শফিক আর সামি মিলে ঠিক করলাম খাইতে যাবো। একটু হেভী কিছু সকালের নাস্তা হিসেবে। যারা ভার্সিটি তে পড়েন তারা হয়তো জানেন যে ভার্সিটি স্টুডেন্ট দের চলমান লাইফ এ ব্রেকফাস্ট বইলা কিছুই নাই। তখন ভোর সাড়ে ছয়টার মত বাজে। তখন পর্যন্ত সবাই প্রায় ত্রিশ ঘন্টার মত না ঘুমায়ে। তো সেই কনকনে ঠান্ডায় চারজনে বাইর হইলাম। আর সাথে ছিল আমাগো মার্টিন। বাই দি বাই মার্টিন এর কথা আপনাদেরকে বলি নাই। মার্টিন হইল আমার নতুন বন্ধু। সবসময় আমার চারপাশেই ঘোরাফেরা করে। ওরে খুইজে পাইসিলো আমার ফ্রেণ্ড অপু খেলার করার সম্য় মাঠের এক কোনায়। আমাদের হলে নিয়ে আসল ছোট কুকুরের বাচ্চাটাকে। আমি কয়েকদিন খাওয়াইসিলাম মার্টিন রে। এরপর থেইকে আমার সাথেই ঘুরে। মাঝে মাঝে মার্টিনের মা আইসা দেইখাও যায় ওরে। ফেসবুকে মার্টিনের একটা নিজস্ব একাউন্ট আছে। ত যাই হোক ভার্সিটির মেইন গেইট পর্যন্ত গিয়া মার্টিনকে আবার হলের দিকে পাঠায়ে দিসি। মেইন রাস্তায় মার্টিনরে নিয়া ঘুরাফিরা করা অনেক ঝামেলা।
আমরা চারজন মিলে গেলাম তালাইমারী মোড়ে। বৈশাখী খোলাই। জিগাইলাম,
-মামা, কি আছে?
-পরটা,মিষ্টি আর ডিম পোচ
তপু জিগাইলো
-ডাল,ভাজি,গরু কিছু নাই???
-না,শুধু মিষ্টি আর ডিম পোচ
এরপরে শফিক কইল যে
-চল সাহেব বাজারে রহমানিয়া তে যাই। পরটা আর গরু খায়া আসি।
আমরাও রাজী হইয়া গেলাম। বহুদিন পরটা আর গরুর ভুনা দিয়া সকালের নাস্তা করি না। আর পকেট টাও তখন গরম আছিল।

অটো তে উঠলাম। এরপরেই চিন্তার সাগরে ডুইবা গেলাম। ভাবতেসি কি করসি গতকাল রাত থেইকা??সন্ধ্যা পর্যন্ত দেয়াল পত্রিকার হাবিজাবি কাম। আমি দুইটা কালারিং স্প্রে কিনাইসিলাম ফোম এর উপরে কম কষ্টে রঙ করার জন্যে। কিন্তু সব কিছহু গেল উলটা হউয়া। ফোম এর উপরে স্প্রে করার সাথে সাথে ফোম গলে যাইতেসে। কি আর করার আমার দোষ। সবাই গেল চেইতা। আমি কেন চাইরশ টাকা খরচ কইরা দুইটা স্প্রে কিনলাম??পরে অবশ্য বিকল্প উপায় আমিই বাইর করসিলাম। একটা লেখার হার্ড কাগজের উপরে আমার কেনা সবুজ আর হলুদ স্প্রে টা নিয়া ডেমো নিলাম। দেখলাম বেশ ভালোই একটা রঙ হয়। ব্রাজিল ব্রাজিল লাগে। দেখাইলাম সবাইরে ডেমো টা। সবাই খুশি হইল। ওইটা হবে ব্যাকগ্রাউণ্ডের কালার। এরপর শার্টের হাতা গুটায়ে পুরাটা রঙ করসি।ব্রাজিল ব্রাজিল লাগতেসিল পুরা বোর্ডটা। ভালই লাগতেসিল।তবে কাহিনি ছিল অন্যখানে। যার জন্যে এই দেয়ালিকার কাজ টা হাতে নেওয়া হইসিল অর্থাত রিদয় আসে নাই। কি একটা কারণে পাভেল উপরে চেইতা আর আসেই নাই। এর পরে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করসি। রাতে সবাই কাজ শেষ কইরা হলে গেসি।
সেইখানে গিয়াও শান্তি নাই। আর্টির্কেল বানাও নিজের ব্যান্ড নিয়া। আবার রাইতে ভার্সিটির ছবি তুলতে যাও দেয়ালিকার জন্যে। সেই ছবি আবার পিসিতে ঢুকায়ে এডিট করো।

রাতে রুমে আইসা আমরা আড্ডা দিতেসি। রিদয় ঘুমাইতেসিল। একটু পড়ে আমাগো আলাপ শুইনা উইঠা আসলো। রিদয় যে পাভেল উপরে চেইতা আসে আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দেই নাই শুরুতে। বলতেসিলো যে রুম চেইঞ্জ করবে। তো আমরা আলাপ করতেসি। একটু পরে পাভেল ঢুকা মাত্রই এমন ছিল রিদয় গেল চেইতা। এরপরে হুট কইরাই রাগে কাইন্দা দিল।
এইটা ছিল সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত বিষয়। যেই ছেলে কোনদিন সফট ফিলিংস দেখাই নাই,কারো উপর চেতে নাই সেই ছেলে এম্নে চেইতা গেসে। এর আগে রাতে আন্টিরে ফোন দিয়া বলতেসিল যে ও কয়েকদিনের জন্যে ঢাকা আস্তে চায়। আর ওর গলায় ছিল একটা অস্বাভাবিক টোন। আন্টির উপরে চেইতা যাইতেসিল। যত যাই হোক রাতে যে ও এইভাবে একটা রিএক্ট করবে সেইটা ভাবা যায় নাই। এম্নিতে খুব একটা রাগে না। কিন্তু ঐ রাতে ও আসলে ওর ভেতরে ছিল না। যাই হোক কোনো ভাবে আমরা অকে শান্ত করাইলাম। মুখ ধোয়াইলাম। আমি মাঝে মাঝে বুঝি না মানুষ নিজের ফ্যামিলিরে এত মিস করে ক্যাম্নে। আমার কাছে বাবা মাকে মিস করাটা কখনও সেইভাবে লাগে নাই। এইটা আমার সৌভাগ্য দুর্ভাগ্য যেকোনোটাই হইতে পারে। কারণ ছোটো বেলা থেকেই বড় হইসি একা একা। বাবা মা দুজনেই অফিসে যাইতেন আর আমি সারাদিন একা একা কাটাইতাম। তাই আমার কাছে মিস করা বলতে ছিল আমার ফ্রেণ্ডদেরকে।তারপরেও রিদয় এর ব্যাপারটা অনেক খারাপি লাগতেসিল। পাভেল কাছে দেয়ালিকাটা নিয়ে ওর একটা বড় এক্সপেক্টেশন ছিল। যেইটার ভুল বোঝাবুঝিতে রিদয় রিএক্ট করে ফেলে। দেয়ালিকা টা বের করার আইডিয়া টা পাভেল হইলেও রিদয় -ই সবাইরে একসাথে করে ব্যাপারটার কাজ শুরু করে। ঐদিন আর কেউ না হইলেও আমি বুঝতে পারসিলাম পাভেল রিদয় এর ব্যাপারটা। বাই দি বাই, রিদয় , পাভেল দুইজনেই আমার রুম মেট ও।

যাই হোক এইসব ভাবতে ভাবতে রহমানিয়াতে পৌছায়ে গেসিলাম। আমি আর সামি খাইলাম ৫ টা কইরা পরটা আর সাথে গরুর মাংস। তপু ৪ টা আর শফিক ৩ টার বেশী যাইতে পারল না। রাজশাহীতে রহমানিইয়া এর চেয়ে ভালো রেস্তুওরা আমি দেখি নাই।আমার অনেক দিন পড়ে খায়ে মনে হচ্ছিল যে বাসায় কোরবানির গরু দিয়া নাস্তা করতেসি। খাওয়া শেষে একেক জনের ৮৭ টাকার মত বিল আসছিল।(এম্নিতে ৩০ টাকায় নাস্তা করি)।
খাওয়া শেষে যখন বের হলাম অটো খুজতে তখন নামসে ঝুম বৃষ্টি। ভাবতেসিলাম একটা সিগারেট ধরাবো। কিন্তু সেইটা আর পারলাম না শালার বৃষ্টির জ্বালায়। এম্নিতে কনে কনে ঠাণ্ডা তারপরে সেই বৃষ্টি নামসে। সামনে একটা দোকানের সামনে দাড়ায়ে অটো ওয়ালারে ডাক দিচ্ছি। ব্যাটা খালি অটো নিয়া বইসা আসে কিন্তু পাত্তাই দিল না। মেজাজ টা এমন খারাপ হইল। পরে একটা অটো পাইলাম চারজনে বৃষ্টির মইদ্দে দৌড়ায়ে উঠলাম। যখন সেই হারামজাদা অটো ওয়ালার পাশ দিয়া আমাদের অটো টা যাইতেসিল ব্যাটা তখনো খালি বইসা আসে। সবাই মিল্লা দিলাম ঝাড়ি আর সাথে সেই গালি। ব্যাটা পুরাই হতভম্ব আর চেহারাটা তখন দেখার মত হইসিল ঐ শালার। এরপর সকাল ৮টায় ৪ জনে পুরা কাক ভেজা হয়ে হলে ঢুকসি। আমার শুধু মনে হইতেসিল আমি আজকে ঠান্ডায় মইরাই যামু। জানুয়ারী মাসের ভোরের ৬ ডিগ্রী ঠান্ডায় ঝুম বৃষ্টি। শালার রাজশাহী……

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৫০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×