ঘটনাপরিক্রমা...
রাত্রি দুটো বেজে ত্রিশ ।।
মোবাইলের “হ্যালো হানি –বানি ...পামকিন পামকিন...” রিংটোনে বাবুটার
তীব্র আকুতি সহ্য করতে না পেরে ঘুমের স্বপ্নপুরী থেকে জঞ্জাল যুক্ত বাস্তবে চলে
এলাম । হঠাৎ করে ঘুম ভাঙাতে ; ছাদ থেকে মেঝেতে পরা টিকটিকির মতই আমার অবস্থা দাঁড়াল । কোন মতে ঢুলতে-ঢুলতে মোবাইলের কাছে পৌঁছলুম । এই ডিজিটাল ডিজুসের যুগেও রাত বারোটার পরে ফোনকলে অভ্যস্ত হতে পারিনি,
এখনও আধুনিক সমাজের গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড সংস্কৃতিতে প্রাগৈতিহাসিক যুগে আমার অবস্থান বলে, গভীর রাত্রির যে কোন ফোনকল আমার কাছে দুঃসংবাদের বার্তাবাহক, অপরিচিত নাম্বার হওয়া সত্ত্বেও হন্তদন্ত হয়ে ফোনকল গ্রহণ করলাম
আমিঃ হ্যালো ... (ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ... )
অপরিচিতাঃ ক্রুদ্ধ কণ্ঠে মা-বোনের সাথে জাগতিক তাবৎ অশালীন –অশ্লীল শব্দ যুক্ত করে মুঠোফোনের মাধ্যমে আমার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করতে লাগলো (গালির মাত্রাগুলো অপেরা সঙ্গীতের মতই ক্রমান্বয়ে চড়তে লাগলো ) , জগতের সকল প্রাণীর সাথে বাচ্চা শব্দ যুক্তপূর্বক সম্বোধন করতে লাগলো ............
ততক্ষণে আমার মুখ-কান পাকা মরিচের মতই লাল বর্ণ ধারন করেছে
মেজাজ লৌহতপ্ত হয়ে উঠল, আড্রেনালিন তাহার কাজ ততক্ষণে সারিয়া ফেলিয়াছে
ঘুম চোখ-মুখ তথা চিন্তা জগত হইতে দূরীভূত হইয়াছে ......
আমিঃ সাপের মতই ঠাণ্ডা কণ্ঠে বল্লাম “আপনার পরিচয় দেয়া কি শেষ হল , এবার যদি মহারাণীর আজ্ঞা হয় ,তাহলে বলবেন কি আপনি কাকে চাচ্ছেন ?”(রাতের বেলার রাণী বলতে যাহা বুঝায় আরকি )
অপরিচিতাঃ ক্ষণিক থমকে ......(ক্ষণিক বিরতি) বিস্মিত কণ্ঠে অস্ফুট শব্দ করলেন ,বললেন “ এটা কি রংপুর ?”
তাহার প্রশ্ন শুনে আমি হতবাক ,সাধারনত আমি ব্যাক্তি বিশেষকে ফোন দিই , ক্ষেত্রে বিশেষে কোন প্রতিষ্ঠানকে, আর ইনি সমগ্র বিভাগকে ফোন দিয়েছেন
আমিঃ আমি তাকে জিজ্ঞাস করলুম “আপনার সমগ্র সম্বোধন কি এই বিভাগকে কেন্দ্র করেই ছিল ?”
বলা মাত্রই "খুট" শব্দ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো ......
লোকে বলে “বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ ,
কেড়ে নিয়েছে আবেগ”
রাতদুপুরে আবেগের এই শুদ্ধ বহিঃপ্রকাশ কি তার উল্টোটাই প্রমাণ করেনা
হাসি আর গালি এই দুটোকেই এদের স্বতঃস্ফূর্ততার জন্য, কেন যেন আবেগের শুদ্ধ বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয়