somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিলখানার সেই বধ্যভূমিতে আজো স্পষ্টতই লেগে আছে শহীদ বীর সেনাকর্মকর্তাদের রক্তের লাল ছাপটুকু

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রক্তাক্ত পিলখানা হত্যার শোকাবহ দিন আজ। ২০০৯ সালের এদিনে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ার ইতিহাসে সেনাকর্মকর্তা হত্যার এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছিল। ওই বছরের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত নির্মম ট্র্যাজেডি দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়কে যেন ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।

ঘটনাক্রমে আমি সেইদিন সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। আমার ভার্সিটির ক্যাম্পাস হল ধানমন্ডি ৪/এ যা বিডিআর গেটের খুব কাছেই। ওই দিন সকাল ৯টার দিকে আমার ক্লাস ছিল বিধায় আমি ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলাম । বিডিআর গেটসংলগ্ন রাইফেলস স্কয়ারে আসতেই দেখি গুলি আর ফায়ারিং এর আওয়াজ। ভাবলাম এইটা হয়তো রাইফেলস সপ্তাহ উপলক্ষে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারলাম সত্যি ঘটনাটা কি।দেখলাম বিডিআর জওয়ানরা প্রধান গেটে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে এবং আমাদের মত সাধারণ মানুষদের আসা যাওয়া দেখলেই গুলি ছুঁড়ছে। ইতিমধ্যেই এর কারনে এক রিকশাওয়ালা সহ “Independent University’r এক ছাত্র এবং কিছু পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে হাসপাতালে নিহত হন। ঘটনার আকস্মিকতা দেখে কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তারপর কোন মতে ধানমন্ডি লেকের পিছন দিয়ে ক্যাম্পাসে এসে হাজির হলাম নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য। ক্যাম্পাসে এসে দেখি “RAB’r Especial Bomb Disposal Team হাজির এবং তারা বিডিআর গেটের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাথে সাথে সাত মসজিদ রোড এলাকায় শুধু সেনাবাহিনীর বিশাল ট্যাংক ও কামান। ওই দিকে হেলিকপ্টারে সেনাবাহিনীর বিশেষ টিম টহল দিচ্ছে। পিলখানার ভিতর থেকে শুধু গুলির আওয়াজই পাচ্ছি আমরা।তারপর অনেক কষ্টে শাহবাগ পর্যন্ত হেঁটে এসে পরে বাসে করে বাসায় নিরাপদেই আসতে পেরেছিলাম। এদিকে আমার আম্মা তো আমার জন্য অনেক টেনশন করছিলেন। আর একটি কথা ২৪শে ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী পিলখানায় যাওয়ার ২/৩ দিন আগে আমি বিডিআর দরবারহল সংলগ্ন মাঠে ক্রিকেট খেলে এসেছিলাম আমার ভার্সিটির দুই বন্ধুর সাথে যারা ওই পিলখানাতে থাকত।

কিছু প্রশ্নের উত্তর আজো পাইনি এই যেমন-

ডি এ ডি তৌহিদের নেতৃত্বে যে ১৪ জন বিডিআর সদস্য শেখ হাসিনার সাথে দেনদরবার করতে গিয়েছিলো, তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ১২ জন গেলো কোথায়?

এদের নামে থানায় এজাহার করা হয়নি কেন?

এখন তারা কোথায়?

সেদিন পিলখানায় অপারেশন ডাল-ভাত কর্মসূচির দুর্নীতি নিরসন, বিডিআর সদস্যদের জাতিসংঘ মিশনে অন্তর্ভুক্তি, বিডিআরের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাহিনী পরিচালনাসহ বেশ কয়েকটি দাবির নামে বিদ্রোহ ঘোষণা করে কিছু বিপদগামী জওয়ানরা। সরকার কি আদৌ এই দাবিগুলা প্রশমন করতে পেরেছে ???

২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে নজিরবিহীন নৃশংসতার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকালের দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দু’দিনের বিভীষিকা থামিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করে বিদ্রোহীরা। আগেই পালিয়ে যায় প্রকৃত খুনিরা। কারা সুযোগ করে দিল ??

প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বিদ্রোহের পর পিলখানা পরিণত হয় একটি মৃত্যুপুরীতে। পিলখানায় শুধু লাশ আর লাশ। রক্ত আর রক্ত। পোড়া গাড়ি, পোড়া বাড়ি, ভাঙা গ্লাস, ঘাসের ওপর তাজা গ্রেনেড, চারদিকে শুধু ধ্বংসচিহ্ন। সেনা কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারগুলোর তছনছ অবস্থা। বিভিন্ন স্থাপনায় জ্বালাও-পোড়াওয়ের দৃশ্য। ড্রেনের ম্যানহোল থেকে আসে রক্তের উৎকট গন্ধ।

এ অভিশাপ কেবল ভুক্তভোগী সেনা ও বিডিআর সদস্যদের পরিবারই নয়, গোটা জাতিকেই তা বহন করতে হচ্ছে। স্তম্ভিত হয়ে যায় বিশ্ববিবেক। বিশ্বের ইতিহাসে এমন নৃশংস ঘটনার নজির আর নেই। অজানা আতঙ্কে গোটা জাতি ছিল সেদিন উৎকণ্ঠিত।

সেই বীর সেনানিদেরকে মহান আল্লাহ্‌ জান্নাত নসিব করুন এবং তাঁদের পরিবারগুলো যেন হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার পান। আমীন।



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×