একাজ আমার করার ক্ষমতা নেই বা এ ক্ষমতা আমি রাখার কে?
২০০৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী। সরদার স্যার তখন পশিম রাজাবাজারে থাকেন। মুকুন্দদাস রচনাসমগ্র নিয়ে স্যারের বাসায় যাই। ওই বছর বইমেলায় আমার সম্পাদনায় মুকুন্দদাস রচনাসমগ্র বের হয়।
রাজাবাজারের খুব সম্ভবতঃ ৬৭ নম্বর বাসায় থাকতেন। রাত সাড়ে ৮ দিকে আমরা বাসায় প্রবেশ করি। আমার সাথে আরো দুজন ছিলেন। স্যার তখন ভাত খাচ্ছিলেন। সে সময়ও তিনি তেমন একটা সুস্থ ছিলেন না। মেয়ে এবং জামাই ডাক্তারের কড়া নজরদারিতে ছিলেন। যে কারণে ঠিক সাড়ে ৮ টার সময় তিনি রাতের খাবার খেতে বসেছিলেন।
গেস্ট রুমের পাশেই ছিল ডাইনিং। রুমে প্রবেশ করা মাত্র স্যারকে দেখি খাচ্ছেন। স্যার কেমন আসেন? আমাদেরকে দেখা মাত্র স্যার খাবার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন এবং বললেন ভাল, আপনারা কেমন আছেন। আমরা ভাল আছি বলতে বলতে স্যারের দিকে এগিয়ে গেলাম। স্যার আমাদেরকে বসতে বললেন। তখন আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে এবং আমার সাথী দুজন ৮ ফুট দুরত্বে গেস্ট রুমের ছোপায় বসে পড়েছে।
আমি দেখতেছি স্যার ভাতের পেলেটটা পাশে রেখে অন্য একটি পাত্রের উপরে হাত রেখে গ্লাস দিয়ে পানি ঢেলে হাতের আঙ্গুলগুলো ধুয়ে নিচ্ছেন। আমি বললাম স্যার আপনি ভাত খাওয়া শেষ করেন, আমরা বসি, তারপর কথা বলি।
স্যার বললেন, তা কই করে হয়! আমি ভাত খাব আর আপনারা বসে থাকবেন, তা হয় না। স্যার আপনি খেয়ে নেন। স্যার শুনলেন না, একটা ছেলে ডেকে আমাদেরকে চা-বিস্কুট দিতে বললেন এবং তিনি আমাকে নিয়ে গেস্ট রুমে এসে বসলেন।
বসে বললেন আপনাদের জন্য কি করতে পারি? আপনারা কোথা থেকে এসেছেন, কেন এসেছেন?
আমরা তাকে বললাম মুকুন্দদাস রচনাসমগ্র বই টা আপনাকে দিতে এসেছি। বেশ ভাল কথা, দেন। বইটা কিছুক্ষণ দেখলেন, তারপর বললেন শেখ রফিক কে? স্যার আমি। এটা আপনি করেছেন? ভাল কাজ, বেশ ভাল কাজ, আমি খুশি হয়েছি। আপনারা আমাকে মনে করেছেন এজন্য আরো খুশি হয়েছি। আরও কত কথা।
বিদায় নেওয়ার আগে স্যার কে আবারো জিজ্ঞাস করলাম স্যার আপনি না খেয়ে কেন উঠে গেলেন? স্যার বললেন আপনারা আমার বাসায় এসেছেন। আপনাদের বসিয়ে রেখে আমি খাব, এটা ঠিক না। আপনাদের বসিয়ে রেখে, মূল্যবান সময় অপচয় করা একেবারেই বেমানান। একাজ আমার করার ক্ষমতা নেই বা এ ক্ষমতা আমি রাখার কে?
একাজ আমার করার ক্ষমতা নেই বা এ ক্ষমতা আমি রাখার কে?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কাঁচা আম পাড়ার অভিযান
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন