somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কথা হয়নি বোঝা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু কথা আছে যা এখনো বোঝা যায়নি। বোঝার জন্য কত হাজারো চেষ্টা করেছি লাভ হয়নি। এখনও সেসব কথা শুনি কিন্তু বুঝি না। আর যারা এসব কথা বলেন তারা শুধুই বলে যান কিন্তু বোঝাতে চাননা।

আজ ফেব্রুয়ারি ২৪ তারিখ। আর মাত্র একদিন পর সেই কালো অধ্যায়। যা ঘটেনি ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে। যা অন্য দেশের ইতিহাস ঘাটলে বিরল হয়ে দাঁড়াবে।

সে দিন কি ঘটেছিল তা সবার জানা। কিন্তু কেন ঘটেছিল তা আজও খুজে ফেরে সবাই। কাদের ইন্ধনে ঘটেছিল তাও জানা নাই কারো। তবে শোনা যায় এখনো অনেক কিছু। এখনো তারা বলেন, আগেও বলেছেন।

কথাগুলো তাহলে কি?

সবাই হয়তো বুঝেছেন ঘটনাটি পিলখানা। ঘটেছিল ঢাকা ছোট্ট একটি পরিসরে। কিন্তু শ্বাসরূদ্ধ আতংক ছিল সারা দেশে।

ঘটনাটা শুরু এবং শেষ সবাই জানেন। কিন্তু মাঝের কিছু কথা বোঝা গেল না।

কথা এক: পিলখানায় যখন হত্যাকান্ড শুরু তখন কেন সরকার বা সেনা বাহিনী পিলখানার ভিতরের শৃংখলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চুপ ছিলেন? কেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ঘটনা ঘটার শুরুতেই আসেনি।

কথা দুই: ঘটনার দিন বিকেলে গণপূর্তপ্রতিমন্ত্রী নানকসহ মির্জা আজম সাদা পতাকা নিয়ে যখন ভিতরে গেলেন তখন কেন তিনি বিডিআর এর প্রধানকে খুজলেন না বা তার তথ্য নিলেন না। তিনি কেন ডিএডি তৌহিদকে খুজলেন।

কথা তিন তৌহিদের সাথে সরকারের বৈঠক হল কিন্তু ভিতরে হত্যাকান্ড চলতে ছিল তখনও। ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে যদি বিদ্রোহ হয়ে থাকে তাহলে তার কমান্ড কেন সৈনিকেরা শুনলো না?
আর এই কমান্ড না শোনাটা প্রমাণ করে তৌহিদ একজন বিদ্রোহী, কোন নেতা ছিল না। তাহলে সরকার কেন তৌহিদকে নিয়ে এতো টানাটানি করলো।

কথা চার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিতরে গেলেন অস্ত্র সমর্পণ করাতে। কিন্তু তিনি কেন ডিজি শাকিলকে খুজলেন না বা তার বাসায় গেলেন না। তিনি তো ঐদিন রাতে অন্যান্য অফিসারদের বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারকে বের করে এনে ছিলেন। তার অর্থ কি এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই জানতেন ডিজি শাকিল বেঁচে নেই।

কথা পাঁচ: স্বরাষ্টমন্ত্রী অস্ত্র গ্রহণের পরও কেন পর দিন আবারো হত্যাকান্ড চললো।

কথা ছয়: এই কথাটা অনেক বেশি পিড়া দেয় আমাকে। যখন বিডিআর বিদ্রোহ চলছে তখন শুধু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের না সারা বিশ্বের নজর ছিল পিলখানার দিকে।
তাহলে বিদ্রোহের শেষ দিন এই নজরগুলোর মধ্য দিয়ে কিভাবে বিদ্রোহীরা পালানোর সুযোগ পেল।
যখন ড্রেনেজ লাইন দিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের লাশ ভেসে আসতে শুরু করলো তখন কেন সরকার পুরো পিলখানার নিছিদ্র নজরদারী করলো না। সব গেটে যখন পুলিশ আর্মি র‌্যাব অবস্থান নিচ্ছিল তখন কেন বিডিআর ৫নং গেট অরক্ষিত।

আর একটা কথা হল কেন তৃতীয় দিন সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস হ্যান্ড মাইকে ঘোষনা দিল " পিলখানার আশেপাশের সকল মানুষ কয়েক কিলো মিটার দূরে সরে যান।"
এই ঘোষণা অর্থ কি? কেন তাদের সরাতে হল ঘোষণা দিয়ে? সবাইকে সরিয়ে দিয়ে কি সরকার সেখানে বোমপিং করতে চেয়েছিলেন? নাকি কোন যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল।
তবে যাই হোক এই ঘোষনা দেয়ার ফলে সাধারণ মানুষের সাথে ডিএডি তৌহিদসহ বিদ্রোহী জাওয়ানরা সেই অরক্ষিত ৫নং গেট এলাকা থেকে পালিয়ে গেল।
কিন্তু সরকার থেকেও কোন যুদ্ধ হল না। তার মানে কি এই বুঝবো এই ঘোষনা ছিল বিদ্রোহীদের পালানোর সুযোগ করে দেয়া?

ঘটনা শেষ এবার তদন্ত।

কথা সাত: তদন্তকারী তিনটি দলের একটির তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেল বাকি দুইটার খবর কবর হলো কেন? যেটা পাওয়া গেল তারও পূর্ণাঙ্গ কোন তথ্য ছিল না। কেন এটা করা হল?

কথা আট: তদন্ত কমিটি সমন্বয়কারী ছিলেন সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী ও বর্তমান পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান। তিনি তদন্ত চলাকালীন সময় মন্তব্য করলেন, " পিলখানা হত্যাকান্ডে জঙ্গী সম্পৃক্ততা রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না। তদন্ত শেষ হলে তা প্রকাশ করা হবে।" এই কথাগুলো আমরা তাকে বলতে শুনেছি বিভিন্ন মিডিয়ার সামনে তখন তার পাশে দেখেছি তদন্ত কমিটি প্রধান আবদুল কাহার আকন্দকে।

কিন্তু তদন্ত শেষে দেখা গেল তদন্ত রিপোর্টে জঙ্গীর কোন নাম গন্ধ নেই। তাহলে ফারুক খান এই কথাগুলো কোথায় পেলেন? কেন তিনি এমনটি বলেছিলেন? আর তার কথা যদি অনুমান নির্ভর হয় তাহলে কাহার আকন্দ কেন তাতে মৌন সম্পতি দিয়েছিলেন?

কথা নয়: সংসদে প্রধান মন্ত্রী বললেন, " আমাদের কাছে তথ্য আছে এই হত্যাকান্ডের সাথে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দুই ছেলে জড়িত। যারা দুবাইতে বসে এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন। আর তাদের সাথে একজন সংসদ সদস্যও জড়িত যার মুখ দাড়ি আছে (ইঙ্গিত করে)।" কিন্তু তদন্ত শেষে সেই দাড়িওয়ালা এমপির নামও আসলো না বা তারেক কোকোর নামও আসলো না। তাহলে প্রধানমন্ত্রী এই তথ্যটা কোথা থেকে পেলেন? কে দিলেন তাকে এমন তথ্য।

কথা দশ: বিদ্রোহের পর চ্যানেল আই বিবিসির একটি লাইভ সংলাপ অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বললেন, "চার দল ক্ষমতায় থাকতে শিবির জেএমবির কিছু কর্মীকে বিডিআর নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের কোথায় কিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে সে তথ্য সরকারের কাছে আছে। এবং বিদ্রোহের সময় যে রংয়ের কাপড় দিয়ে বিদ্রোহীদের মুখ বাধা ছিল সেই রংটি ঐ জঙ্গী সংগঠনটির প্রতীকি রং।"

মতিয়া চৌধুরীর এমন বক্তব্য আমাকে নয় সকল মানুষকে আশা দেখিয়েছিল। কিন্তু তদন্ত শেষে তদন্ত রিপোর্টে এবিষয়ে কোন তথ্য ছিল না।
এমনকি একটি বিশেষ রংয়ের কাপড় বিডিআর বিদ্রোহীরা কোথায় পেলেন তার তথ্যও পাওয়া গেল না। কে তাদের এই কাপড় দিল। কোথা থেকে এই কাপড় কেনা হল তার কোন তথ্য নেই রিপোর্টে। কিন্তু কেন? এই তথ্য কি বের করা সম্ভব ছিল না?

যে কথাই হোক তা জনগণ ভুলতে বসেছে। কিন্তু কথা চালাচালি কি থেমে আছে? নেই। গতকাল আইনপ্রতি মন্ত্রী বললেন বিডিআর বিদ্রোহে জামায়াত বিএনপি জড়িত। এই তথ্যটা তাকে কে দিল? তার এই তথ্য যদি সত্য হয় তাহলে কেন জড়িতদের ধরা হচ্ছে না? আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে এখন যে বিচার হচ্ছে তাও কি মিথ্যার উপরে ভিত্তি করে?????


তাই আবারও বলছি যেকথা শুনেছি সেকথা হয়নি বোঝা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×