somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাখি পর্যবেক্ষণ (পর্ব-২): পাখি চিনার সহজ উপায়

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাখি পর্যবেক্ষণে পাখি সনাক্ত করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকৃতিতে একটি পাখি দেখার পর সেটিকে সনাক্ত করার ক্ষমতার উপরই পাখি পর্যবেক্ষকদের দক্ষতা নির্ধারিত হয়। পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় দশ হাজার প্রজাতির পাখি এবং বাংলাদেশে প্রায় ৭০০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এত বিপুল সংখ্যক পাখির মধ্যে একটি পাখি দেখার পর তা চিনতে পারা ও মনে রাখা খুবই কষ্টের ব্যাপার।

পাখি সনাক্ত করার জন্য কয়েকটি বিষয় জরুরী বা অত্যাবশ্যকীয়। তাদেরকে পাখি চিনার চাবিকাঠি ও বলা যেতে পারে। যেমন:
১) আকার ও আকৃতি
২) বর্ণ বিন্যাস বা রঙ
৩) আচরণ
৪) বাসস্থান বা আবাসস্থল
৫) বিশেষ চিহ্ন বা দাগ
৬) ডাক ও গান বা শব্দ


আকার ও আকৃতি দেখেই ধারনা করা যায় কোন পাখি

১) আকার ও আকৃতি: খুব অল্প অনুশীলন করেও পাখিদের আকার ও আকৃতির পার্থক্য সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। একটি চরই, শালিক এবং কবুতরের আকার নিশ্চয়ই এক নয়। তেমনি একটি শালিক ও বুলবুলির আকৃতিও এক নয়। পাখির আকার ও আকৃতির সমন্বয় হল পাখি সনাক্ত করার সবচেয়ে শক্তিশালী উপকরণ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বক বা মাছরাঙা পাখিটি তাদের দেহের আকার আকৃতি দেখেই সনাক্ত করা সম্ভব। আকার আকৃতির পার্থক্য শুধু দৈহিক ক্ষেত্রে নয় পাখির বিভিন্ন অঙ্গ যেমন ঠোট, পা, পালক এই সকল কিছুতেই প্রজাতিভেদে আকার আকৃতির ভিন্ন পার্থক্য লক্ষ করা যায়। যেমন ধনেশ পাখির ঠোট ও কাকের ঠোঁটের আকার ও আকৃতিতে রয়েছে বিরাট পার্থক্য।

২) বর্ণ বিন্যাস বা রঙ: পাখিরা মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশী আকর্ষণীয় তাদের বাহারি রঙের জন্য। কালো কাক, সাদা বক, সবুজ টিয়া তাদের রঙেরই কথাই মনে করিয়ে দেয়। পাখি সনাক্ত করার জন্য পাখিদের বিভিন্ন রঙ বা বর্ণ খুবই শক্তিশালী উপকরণ। আমাদের দেশের পাতি মাছরাঙা ও পাকরা মাছরাঙা এই দুইটির রঙ সম্পূর্ণ ভিন্ন যদিও আকার ও আকৃতিতে যথেষ্ট মিল রয়েছে। এই বর্ণ বিন্যাস বা রঙের পার্থক্য ঠোট, পা, বুক, পিঠ, লেজ সহ অন্যান্য অঙ্গেও লক্ষ করা যায়।

দুটি ভিন্ন বর্ণের পাকরা মাছরাঙা ও পাতি মাছরাঙা

৩) আচরনঃ পাখিদের বিভিন্ন আচরণ দেখেও পাখিদের সনাক্ত করা আরেকটি শক্তিশালী উপায়। সনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন আচরণের মধ্যে পাখির অঙ্গস্থিতি, অঙ্গভঙ্গি, বসা বা উড়ার ধরন সর্বপ্রথমে আসে। হাঁস, কাঠঠোকরা, চরই, কাক এদের বসার ভঙ্গি ভিন্নরকম। তারপর পাখিদের চলাফেরার ভঙ্গি, উড়ার ভঙ্গি, খাদ্যগ্রহণ করার প্রকৃতিও খাবারের ভিন্নতাও পাখিদের সনাক্ত করতে অনেক সাহায্য করে। কিছু পাখি একা একা উড়ে কিছু পাখি দলবদ্ধভাবে উড়ে এই আচরণ দেখেও পাখি সনাক্ত করা যায়।

৪) বাসস্থান বা আবাসস্থলঃ পাখিদের আবাসস্থল বা বাসস্থানও পাখিদের সনাক্ত করা আরেকটি নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী উপায়। কোন কোন পাখি জঙ্গলে বাস করে কোনটা আবার জলাশয়ে কোন পাখি আবার পাওয়া যায় নদীতে কোনটা আবার সমুদ্রে এমনকি বরফ ঢাকা মেরু অঞ্চলেও কিছু পাখি পাওয়া যায়। কোন পাখি বাসা বানায় মাটিতে গর্ত করে আবার কোনটা বাসা বানায় গাছে গর্ত করে। যেমন সুইচোরা পাখি মাটিতে গর্ত করে বাসা বানালেও পেঁচা গাছের গর্তে বাসা বানায় ঠিক তেমনি বাবুই পাখির কারুকার্যময় আসাধারন সুন্দর বাসা দেখেই সবাই বলে উঠবে এটি বাবুই পাখি।

পাখির বাসস্থানের ভিন্নতা

৫) বিশেষ চিহ্ন বা দাগঃ পাখি সনাক্ত করার জন্য উপরে যে কয়েকটি উপকরণ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা দিয়ে একদম সঠিক প্রজাতির পাখি সনাক্ত করা সম্ভব নয় তবে পাখিদের একটা গ্রুপ বা সংক্ষিপ্ত তালিকায় যাওয়া সম্ভব। মাঠ পর্যায়ে একটা বিশেষ চিহ্ন খুঁজে সেই পাখিকে সনাক্ত করতে হয়। এটা হতে পারে কোন রঙ্গের বিন্যাস, বিশেষ কোন দাগ, বিশেষ কোন গঠন ইত্যাদি।
উদাহরণ স্বরূপ কোন পাখির মাথায় কি কি বিশেষ চিহ্ন বা দাগের ভিন্নতা বা পার্থক্য থাকতে পারে একটু দেখি;
১) চোখের উপরের দাগ বা রঙ
২) চোখের নীচের দাগ বা রঙ
৩) জুলফি বা গোঁফ দাগ বা রঙ
৪) ঠোটের নীচ বা গলার দাগ ও রঙ
৫) উপরের ঠোঁট ও নীচের ঠোঁটের গঠন ও রঙ
৬) ঠোঁট ও চোখের মাঝখানের দাগ বা রঙ
৭) চোখের চারপাশের রঙ
৮) চোখের রঙ
৯) মাথায় ঝুঁটি আছে কিনা
১০) মাথার মাঝখানের রঙ
এমনি করে পাখির পা, পাখির ডানা ও দেহের অন্য অংশেও বিশেষ চিহ্ন, দাগ বা রঙ দেখে পাখি শনাক্ত করতে হবে। এর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। বুকের পালকের সাদা রঙের জন্য এই মাছ রাঙার নামই হয়েছে সাদা বুক মাছরাঙা।


বুকের সাদা পালক সাদা বুক মাছরাঙার বিশেষ চিহ্ন

৬) ডাক ও গান বা শব্দ: একটি কথা আছে কাক কোকিল একই বর্ণ স্বরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন। পাখির ডাক শুনে খুব অল্প সময়ে পাখিকে নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। বিশেষ করে রাতে বা দৃষ্টির আড়ালে থাকার কারণে যখন পাখি দেখতে পাওয়া তখন পাখির ডাক বা শব্দ শুনে পাখিকে সনাক্ত করতে হয়। রাতে প্যাঁচার ডাক শুনে অভিজ্ঞ পাখি পর্যবেক্ষকরা বলে দিতে পারে এটা কোন প্রজাতির প্যাঁচা তেমনি রাতচরা পাখির অনবরত ডাক শুনেও বলে দিতে পারে এটা কোন রাতচরা পাখি। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে অনেক পাখির ডাক ও শব্দ ডাওনলোড করে শুনা যায়।

তবে পাখি সনাক্তকরণের জন্য অভিজ্ঞ পাখি পর্যবেক্ষকদের সাথে মাঠ পর্যায়ে পাখি দেখার বিকল্প নাই। বারংবার চর্চা করার ফলে পাখি সনাক্তকরণের উপর দক্ষতা অর্জিত হয়।

আজ এই পর্যন্তই আগামী পর্বে থাকবে “পাখিদের অভিন্নতা ও বিভিন্নতা”

গত পর্বঃ পাখি পর্যবেক্ষণ (পর্ব-১): উপকরণ, কলাকৌশল ও নীতিমালা

লেখকঃ মাইন রানা
তথ্য ও ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×