somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাদ্রী জারজিস ওরফে বুহাইরা বা বহিরার সাথে বালক মুহাম্মাদ (সা) -এর সাক্ষাৎ

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
খ্রীস্টান পাদ্রী জারজিস ছিলেন বসরার একজন বেশ জ্ঞানী ও পন্ডিত ব্যক্তি। ইসলামের ইতিহাসে তিনি বুহাইরা বা বহিরা নামে অধিক পরিচিত। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত সিরিয়ার একটি জনবহুল শহর ছিল বসরা। বসরার এক টিলার উপর অবস্থিত ছিল পাদ্রী জারজিসের গীর্জা যা বুহাইরার গির্জা নামে সে সময় খুব নামকরা ছিল। পাদ্রী জারজিস ছিলেন তাওরাত-ইঞ্জিলসহ পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থের উপর একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। সেজন্যে দূরের এবং কাছের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকেরা প্রায়ই তার গির্জায় আসতো। ধারণা করা হয়, পাদ্রী জারজিস ছিলেন নেস্টোরিয়ান অথবা আরিয়ান। নেস্টোরিয়ান এবং আরিয়ান খ্রীস্টানদের দুটি বিলুপ্তপ্রায় ফেরকা। ত্রিত্ববাদী রোমান ক্যাথলিকসহ অন্যান্য খ্রীস্টান ফেরকাদের থেকে এ দুটি ফেরকার ধর্মীয় বিশ্বাসে ছিল বিস্তর ফারাক। সে যাই হোক, বালক মুহাম্মাদ (সা) এর বয়স যখন মাত্র বারো তখন তার সাথে পাদ্রী জারজিসের সাক্ষাৎ হয় এই বসরা নগরীতেই।

দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিবের বাড়িতেই শিশু মুহাম্মাদ (সা) বেড়ে উঠতে থাকেন। চাচা তাকে অসম্ভব আদর করতেন এবং মুহাম্মাদ (সা) -ও চাচা আবু তালিবকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতেন। আবু তালিব পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন এবং প্রতি বছরেই ব্যবসার কাজে সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মাদ (সা) এর বয়স যখন ১২ ব্ছর তখন একবার তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলে আবু তালিব তার অতি আদরের ভাতিজার আবদার উপেক্ষা করতে পারলেননা।

প্রথমবারের মত বালক মুহাম্মাদ (সা) চাচার সাথে সিরিয়া সফরে বের হলেন। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। পাদ্রী জারজিস এ কাফেলার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হলেন। তাদের তিনি আমন্ত্রণ জানালেন। আবু তালিব পাদ্রীর আমন্ত্রণ রক্ষা করলেন। এই প্রথমবার বালক মুহাম্মাদ (সা) কোন খ্রীস্টধর্মাবলম্বীর সম্মুখীন হলেন। পাদ্রী জারজিস একের পর এক প্রশ্ন করে যান বালক মুহাম্মাদ (সা) কে। এখানে উল্লেখ্য যে, পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থের আলোকেই পাদ্রী জানতেন যে, তাওরাত ,ইঞ্জিল সহ অন্যান্য গ্রন্থে যে মহান নবী বা পবিত্র আত্মার আগমণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তার আগমণ ইসমাঈলের বংশধরদের মধ্য থেকেই হবে। কারণ ইসহাকের বংশধর ইসরাঈলীরা একত্ববাদকে নিজেদের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। তাদের দ্বারা একত্ববাদকে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া অসম্ভব। অন্যদিকে ভ্রান্ত খ্রীস্টানরা তো স্রষ্টার সংজ্ঞাই পরিবর্তন করে ফেলেছে। আর বাকিরা লিপ্ত পৌত্তলিকতা ও অন্ধকারে।

বালক মুহাম্মাদ (সা) কে দেখে, তার সাথে কথা বলে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাদ্রীর চিনতে আর বাকী রইলো না যে এই সে বহু প্রতিক্ষীত শেষ নবী, ইতিহাসের গতি পরিবর্তকারী, আরবসহ সমগ্র পৃথিবী থেকে পৌত্তলিকতার বিনাশকারী, একত্ববাদকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠাকারী। পাদ্রী বুহাইরা আবু তালিবকে মুহাম্মাদ (সা) কে সিরিয়ায় নিয়ে যেতে নিষেধ করেন; কারণ সেখানকার ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানরা তার ক্ষতি করতে পারে। পাদ্রীর উপদেশ মত আবু তালিব মুহাম্মাদ (সা) কে কয়েকজন ভৃত্যের মাধ্যমে মক্কায় পাঠিয়ে দেন।

পাদ্রীর সাথে বালক মুহাম্মাদ (সা) এর সাক্ষাতের এই ঘটনা অমুসলিমদের লেখনীতেও পাওয়া যায়। যেমন, সিরিয়ার আরেক খ্রীস্টান পন্ডিত জন অব দামাস্কাসের লেখনীতে। তবে জনের দৃ্ষ্টিতে বহিরা ভিন্ন মতাবলম্বী (ত্রিত্ববাদের বিরোধিতাকারী সবাই) এবং মুহাম্মাদ (সা) সত্য নবী নন। বহিরা ও জন দুজনই ইসলামের ইতিহাসের সাক্ষী, তবে একজন সত্যকে বুঝতে পেরেছিল আর আরেকজন ভ্রান্ত পথেই ছিল আজীবণ। শেষ করবো বাইবেলের একটি বাণী দিয়ে যেটা যীশু দিয়েছিলেন তার অনুসারীদের যাতে তারা মহান নবীকে সহজে চিনে নিতে পারে। বাণীটি ইংরেজীতে এরকম, I have yet many things to say unto you, but ye cannot bear them now. Howbeit when he, the Spirit of truth, is come, he will guide you into all truth: for he shall not speak of himself; but whatsoever he shall hear, [that] shall he speak: and he will shew you things to come. He shall glorify me: for he shall receive of mine, and shall shew [it] unto you. gospel of john chapter 16 verse 12-14

তথ্যসূত্রঃ
Monastery of Bahira the monk
নূরনবী মোস্তফা (সা)
মুহাম্মদের শৈশব ও কৈশোরকাল
en.wikipedia.org/wiki/Bahira
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০৩
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×