somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মমতার ক্ষমতা: নির্মমতা !!!

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ছোটবেলা থেকেই যে নেত্রীকে বেশি পছন্দ করতাম তিনি হলেন ভারতের মমতা ব্যানার্জী । তার কথা চলন তার জোড়ালো যুক্তি সততা দৃঢ়প্রত্যয় ভাষণ সবকিছুই আকর্ষনীয় । তার সাধাসিধে জীবনযাপন অন্য সব নেতার চেয়ে আলাদা । তিনি কৃষকদের জন্য আন্দোলন করে হিট হয়েছেন , নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরের জমি রক্ষাকরতে পুলিশের পেটুনি খেয়ে অনশনে বসেছিলেন । অবশেষে তার প্রতিবাদে টাটা গ্রুপ কৃষকদের জমি ফেরত দিতে বাধ্য হয় , যদিও বামফ্রন্ট বলেছিল “ মমতা সস্তা রাজনীতি করছে, রাজ্যে শিল্পায়ণ হোক তা তিনি চান না ।“ ঠিক তাই হল বাংলাদেশের সাথে, তিনি সস্তা রাজনীতি শুরু করেছেন , বাংলাদেশকে ইস্যু করে তার সমর্থন বাড়াচ্ছেন ! তিনি রাজ্যবাসিকে বোঝাচ্ছেন বামফ্রন্টের সময় যেভাবে রাজ্যের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে পানি দিয়েছে তা আর মমতা হতে দেবেন না । তিনি এখন তিস্তা নিয়ে শিলিগুড়ী কুচবিহারে তথা উত্তর বঙ্গে ( পশ্চিমবঙ্গ ) জয় করতে চাচ্ছেন অপরদিকে নূতন করে গঙ্গার জল নিয়ে বিতর্ক তুলে দক্ষিণবঙ্গ জয় করতে চাচ্ছেন । আমার ছোটবেলার তাকে ভাললাগার একটা দিক জানাছিলনা যে মমতার সৎ রাজনীতির অন্তরালে আছে একটি নির্মমতার চেহারা , আর সস্তা রাজনীতি । তাকে টিভিতে দেখলেই অভিভূত হয়ে যেতাম , এখন দেখলেই মনে হয় তার দ্বৈত-চরিত্রের কথা ! বামফ্রন্ট নির্বাচনের আগেই বলেছিলেন মমতা দ্বৈত-চরিত্রের অধিকারী । ।এখন তা দেখতে পাচ্ছি , যিনি বাংলাদেশের নেত্রী শেখ হাসিনাকে পরমবন্ধু মানতেন, যিনি শেখ হাসিনাকে অদর্শ মেনে রাজনীতি করতেন, তাকে শুনেছি পশ্চিমবাংলার শেখ হাসিনা বলা হয় আর এতে তিনি গর্বিত ছিলেন । শেখ হাসিনাকে দিদি বলে ডাকতেন , কারণ শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া ভারতের পারমাণবিক বিভাগে চাকরিরত অবস্থায় মমতার সাথে হাসিনা বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে , গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতার শ্লোগান ছিল মা-মাটি-মানুষ আর প্রতিশ্রুতি ছিল শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করেই ডিজিটাল পশ্চিম বঙ্গ আর পরিবর্তনের অঙ্গিকার , হ্যাঁ পরিবর্তন তিনি করছেন তবে তা রাজ্যকে কেন্দ্র করেই তার আর হাসিনাকে মনেহয় মনে নেই । তিনি যে বামফ্রন্টের ভাষায় দ্বৈত চরিত্রের অধিকারী, তাই তার এই চরিত্রের পরিবর্তন হওয়া অস্বভাবিক নয় । তার দ্বৈতচরিত্রের উদাহরণ দেয়া যেতেপারে , এক. তিনি একসময় বিজেপির সাথে জোট করেছিলেন সেই সময় তিনি রেলমন্ত্রী হোন , কিন্তু এবার নির্বাচনে তিনি ভাষনে বলেছিলেন “এই বামফ্রন্টই নাকি বিজিপির মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদকে রাজ্যে জায়গা দিয়েছে !! “ আবার এবার তিনি ধর্মনিরপেক্ষ দল কগ্রেজের সাথে জোট করেছেন, তার ক্ষমতার মসনদ দখল করতে হিন্দুত্ববাদহোক আর ধর্মনিরপেক্ষ যেই হোক কোন আপত্বি নেই !! মমতা ক্ষমতায় বসে হাসিনা দিদিকে ভুলেগেছেন কিন্তু মমতার এই সস্তারাজনীতি ভারতের উন্নয়ণ বৈষম্য বৃদ্ধিকরবে । পূর্বভারতের সাথে পশ্চিম ভারত চিরকালই বৈষম্য বিরাজমান । ত্রিপুরার অসমের মিজোরামের মতো সাতটি রাজ্য সবসময়ই চায় তারা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রেখে পশ্চিম ভারত থেকে সরাসরি করিডোর বা ট্রানজিটের মাধ্যমে পন্য আদানপ্রদান করতে , এর জন্য চাই বন্ধুত্ব আর সেটা ভারত চায় । কিন্তু মমতার কাছে যেন পরাস্থ হয়েছে দিল্লী সরকার । পরাস্থ হয়েছে সেভেনসিস্টার নামের প্রদেশগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা ! পানি চুক্তি না হবার কারনে শুধু যে বাংলাদেশই হতাশ হয়েছে তা নয় বরং ভারতের বহু ব্যক্তি রাজনীতিক বুদ্ধিজীবিরা হতাশ হয়েছেন ! এমন কি বামফ্রন্টও হতাশ হয়েছেন । তারা বলেছেন মমতার সস্তা রাজনীতি আমাদের দেশকে বন্ধুহীন করে ফেলবে । দিল্লী ত রাজ্যের কাছে বন্দি । মমতা বন্দি সস্তা রাজনীতিতে ! তার বাংলাদেশের প্রতি নির্মমতা দুই দেশেরই সচেতন মহল সহ্য করতে পারছেনা । মমতার বক্তব্য গঙ্গার পানিচুক্তি নাকি পশ্চিমবঙ্গের হলুদিয়া আর কলকাতা বন্দরকে শুকিয়ে দিয়েছে !! তিনি বুঝাতে চাইছেন জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের কথা না ভেবেই দায়িত্ব জ্ঞানহীন ভাবে গঙ্গাচুক্তি করেছেন আর তিনি তা করবেন না । আসলে মমতা যতদিনই মূখ্যমন্ত্রী থাক কখনই জতির্ময় জ্যোতি বসু হতে পারবেন না । ।
মমতা ভুলে যেতে পারেন যে হাসিনা তার বন্ধু , তিনি ভুলেযেতে পারেন বাংলাদেশেও তার ভক্ত ছিল , তিনি ভুলেযেতে পারেন ইলিশের স্বাদ । তার ভুললে চলবেন না যে তাদের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের কাছে বাংলাদেশ একটি বড় ফ্যাক্ট !! তার একটি উদাহরণ দেয়া যাক , গত বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ে বাংলাদেশে পার্বত্ব অঞ্চলে পাকিস্তানি গয়েন্দা সংস্থা আইএসআর ঘাঁটি গাড়তে দেয়া হয়েছিল , লক্ষ্য ভারতী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য করা , অবশ্য আমাদের জঙ্গিরাও এতে পরিপূষ্ট হয় ! আর তার ফলশ্রুতিতে পূর্বভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী উল্ফাগোষ্ঠি অসমে বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম ও বিদ্রোহ করতে থাকে । এমনকি আমাদের দেশে হোটেল শেরাটনে পারভেজ মোশাররোফের সাথে উল্ফার নেতা পরেশ বড়ুয়ার ৩ ঘন্টা ব্যাপি সরকারি প্রোটকলে বৈঠক করানো হয় । এর পরপরই বাংলাদেশ হয় অন্তর্জাতীক চোরাচালানির বড়রূট । আস্ত্র আসতে থাকে , চলে ভারত বিরোধী ষড়যন্ত্র ! পাকিস্তানের লক্ষ্য হচ্ছে তারা বাংলাদেশের হাড়ানোর বেদনা অসম দ্বারা মেটাতে । তারা অসমকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় , আর তারই ফাঁদে পা বাড়ায় বিএনপি নেতা ও যুবরাজরা । এফবিআই রিপোর্ট মোতাবেক বিএনপি নেত্রীর পূত্র তারেক রহমান উলফার কাছথেকে এক হাজার কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র চালান আনতে সম্মতি প্রদান করেন । এমনকি ভারতের গণতন্ত্রের ও স্থিতিশীলতার হুমকি দাউদ রহমানের সাথেও তারেকের ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক শোনা যায় । এগুলো যুক্তরাস্ট্রের গয়েন্দা এফবিআই তাদের ওয়েব সাইটে ডকুমেন্ট সহ তুলে ধরে । মমতা কি জানেন পররাস্ট্রনীতি কি জিনিস ? তার তো বোঝা উচিত হাসিনা সরকার ভারতের জন্য কত গুরুত্ব বহন করেন ? তিনি তার আঞ্চলিক রাজনীতির স্বার্থের উর্ধে উঠতে পারলেন না !! আজ যদি বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর চীনকে দিয়ে দেয়া হয় তবে ভারতের জন্য কত হুমকি হবে তা কি মমতা বোঝেন ? আসলে ভারতে রাজনীতিবীদরা চান ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালথাক । তাইত তারা কিছুটা বেশি ছাড়দিয়ে হলেও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কামনা করেথাকে । কিন্তু দুর্ভাগ্য ভাতের কিছু বড় বড় আমলা আছেন যারা পাকিস্তান থেকে আগত রিফিজী আর কিছু আছেন আইএসআই এর পয়সা খান (কিছুদিন আগে ধরাও খেয়েছেন একজন) তারা কখনই চান-না বাংলাদেশের ক্ষমতায় শেখ হাসিনা থাক , তারা পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা করতেই ব্যস্ত , তারা চায় পাকিস্তানের মূল এজেন্ডা সফল হোক , আর সেই কারনে কিছু আমলারাও পানিচুক্তি হতে দিচ্ছেন না , হতে দিলেন না সাউথ এশিয়ান টাস্কফোর্স !! এগুলো হল গভির ষড়যন্ত্রের ব্যাপার । বাংলাদেশ নদীর আনুপাতিক আয়তন অনুসারে ২৮ শতাংশ পানি পায় , কিন্তু এই বন্ধুত্ব বজায় রাখতেই মনমোহন ৪৮শতাংশ পানি দিতে সম্মত হোন , কিন্তু বাধসাধল মমতার নির্মমতা আর ভারতীয় কিছু আমলার ষড়যন্ত্র !! মমতার কগ্রেজ তৃণমূলকগ্রেজ দ্বন্দ্ব এটা বড় ফ্যাক্টর হয়েছে নূতন করে । মমতা কখনই চাইবেননা কগ্রেজ সফল হোক , তাহলে যে রাজ্যে আবার তার দখল চলেযাবে প্রণবের হাতে , আবার এসএম কৃষ্ণাও মমতা বড় শত্রু কারণ তার উপর রাগ হিলারী ক্লিন্টনকে কলকাতা না এনে তাকে মাদ্রাজ নিয়ে যাওয়ায় মমতা কৃষ্ণার কোন কথাই মানতে নারাজ । মমতা বামদের খষড়া করা চুক্তিতে সই করবেননা বলে পণও করেছেন , এতকিছু ভারতীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও মমতার সংকীর্ণ রাজনীতি ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব নষ্ট করছে ।
আমি হলফ করে বলতে পারি মমতা আঞ্চলিক নেত্রী হিসেবে ভাল কিন্তু পররাস্ট্রনীতিতে মমতা ভারতের একটি অভিশাপ বটে !! মমতার নির্মমতায় বাংলাদেশ বলি হচ্ছে !!!
তবে আমরা এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্বের খাতিরে সকল সমস্যা অচিরেই সমাধান হবে বলে আশা রাখি ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×