somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক প্রযুক্তি বইকে সেকালের স্মৃতিতে পরিণত করতে পারবে না আবদুশ শাকুর,

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুচি সৈয়দ
বইমেলা এবং অমর একুশের বইমেলার ভেতর কী কী পার্থক্য বোধ করেন? বইমেলা নিয়ে আপনার নিজস্ব ভাবনা ও পরামর্শ কি?
প্রশ্নের জবাবে দেশের বিশিষ্ট লেখক আবদুশ শাকুর বলেন, যেহেতু একুশে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসরূপে ঘোষিত ও উদযাপিত, যেহেতু বাংলা ভাষায় একুশে বললে একমাত্র একুশে ফেব্রুয়ারিই বোঝায় এবং যেহেতু একুশে এখন বাঙালির চিরস্থায়ী ইতিহাসের অংশÑ সেহেতু ঢাকার বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণস্থ বাৎসরিক বইমেলাকে স্রেফ “একুশের বইমেলা” বলাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ এবং পর্যাপ্ত ব্যঞ্জনাময়, যেমন কলকাতার বইমেলাকে “কলকাতা বইমেলা” বলা হয় একই বিবেচনায়। বইমেলা নিয়ে আমার নিজস্ব একটা প্রধান ভাবনা হল ‘ঢাকা গ্রন্থমেলা’কে ‘একুশে বইমেলা’র সঙ্গে মার্জ করে দেওয়াÑ যাতে বাংলাদেশের বইমেলা বললে একটিমাত্র বইমেলাই অভিপ্রেত হয় ‘একুশে বইমেলা’, যেমন জার্মানির বইমেলা বললে একমাত্র ‘ফ্রাংকফুর্ট বুক ফেয়ার’ই বুঝতে হয়। বইমেলা ও অমর একুশে বইমেলার মধ্যে আমার বোধে পার্থক্য একটাই এবং তা হল একুশে হল বাংলাদেশের বইমেলার একটি বাড়তি মহিমাজ্ঞাপক, যা সমগ্র বিশ্বের মধ্যে একক। এই বিশেষণ বইমেলার স্বাভাবিক মুখরতার সঙ্গে একটা আদর্শিক পবিত্রতা যোগ করে।
আর পরামর্শ হল এককথায় মেলাটিকে ফ্রাংকফুর্ট, দিল্লিœ, কলকাতার মেলার মতো ‘ডিজিট্যালাইজ’ করে ‘ই-বুক’-এর মূল্য সংযোজন করা। একুশে বইমেলায় বাংলাদেশের প্রকাশকদের উল্লেখযোগ্য ই-বই আনতে এখনো অনেক দেরি থাকতে পারে। কিন্তু এদেশের বিশ্বমানের তরুণ প্রোগ্রামারগণ পর্যাপ্ত ই-তথ্য তো আগামী বইমেলাটির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেই আনার চেষ্টা করতে পারেন। কথাটি বললাম দুটি কারণে। প্রথম কারণ এ লেখাটির তথ্য আহরণের জন্যে সকল গ্রন্থমেলার ওয়েবসাইটে বেড়ানোর শেষে বাংলা একাডেমীর সাইটে ঢু মারতেই দেখলাম লেখা আছেÑ সাইটটি এখনও অসম্পূর্ণ। (ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট চালু হবার এত বছর পরেও নির্মাণাধীন?)। দ্বিতীয় কারণÑ কলকাতা বইমেলার ই-প্রচারণার কিছু অবা¯তব দাবি সম্পর্কে সন্দেহ, যা অলংঘনীয়রূপে ক্ষালন করা অপরিহার্য।
এক সময় একুশ ফেব্র“য়ারিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের আনাচে কানাচে প্রকাশ পেত একুশের স্মরণিকাÑ এখন সে রীতি স্তিমিত হয়ে গেছে প্রায়Ñ এখন বেরোয় একুশের বইÑ এই পরিবর্তন বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও অভিমত জানান, একুশের স্মরণিকার একুশের বইয়ে পরিবর্তনকে আমি বলবো বিবর্তন ও উত্তরণ। সেজন্যেই এর প্রতি আছে আমার জোর সমর্থন। কারণ স্মরণিকা হয় স্বভাবতই উচ্ছ্বাসপ্রবণ, আর বই হয় প্রকৃতিগতভাবেই সারবান। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করিÑ স্মরণিকার পণ্ডশ্রমের স্থলে গ্রন্থ প্রণয়নের সারগর্ভ শ্রম বিনিয়োগ সুদূরপ্রসারী অবদান রাখতে সক্ষম।
প্রকাশকরা প্রকাশনা ব্যবসায়কে শিল্প ঘোষণার দাবি জানান, সব রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন কিন্তু লেখক, শিল্পী এবং সংশ্লিষ্ট আরও অন্যদের রয়্যালটি, পারিশ্রমিক দিতে কৃপণতা দেখানÑ এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা এবং অভিমত কি? এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অভিজ্ঞতা হতাশাব্যঞ্জক। আর অভিমত হলÑ এদেশের প্রকাশকদের দশকের পর দশক চর্চা করে আসা অ্যামেচারি পরিহার করে উন্নত দেশগুলোর মতো পেশাদারি অর্জনে আর দেরি না করা।
লেখক জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা বলুনÑ প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট, সম্মাননা প্রাপ্তি বিষয়ে, পাঠকের ভালবাসার ঘটনাÑ আপনার বিবেচনাযোগ্য যা। উত্তরে জানান, অভিজ্ঞতা হল দুর্ভাগ্যজনকÑ এ অর্থে যে আমি খুবই কম পঠিত হই। তবু বলতে হয় যে পুরস্কার-সংবর্ধনা সে তুলনায় বেশিই পেয়েছি। সীমিত সংখ্যক হলেও আমার যাঁরা ‘কমিটেড’ বা অঙ্গীকারবদ্ধ পাঠক, আমার লেখার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা অপরিসীম।
কাদের জন্য লিখে আনন্দ পান ছোটদের জন্য নাকি বড়দের জন্য? কি লিখে আনন্দ পানÑ গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গান। তিনি জানান, বড়দের জন্য, বরং তাঁদের মধ্যেও সুশিক্ষিতদের জন্য লিখে আনন্দ পাই। আনন্দ পাই গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও রমণীয় রচনা লিখে।
আধুনিক প্রযুক্তি কি বইকে সেকালের স্মৃতিতে পরিণত করবে? জবাবে তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি যে বইকে সেকালের স্মৃতিতে পরিণত করতে পারবে না, তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে চলেছেÑ এমনকি সবচেয়ে অগ্রসর প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশগুলোতেও। মোদ্দা কথা হল : সফ্ট কপি পড়া দিয়ে যে হার্ড কপি পড়ার কাজ চালানো যায় না, তার হাতের কাছের প্রমাণ নির্ভুল ‘প্রুফ দেখা’ হার্ড কপিতেই সহজ। হার্ড কপির মতো একনিবিষ্ট মনোযোগ, নিষ্ঠা, ধ্যানÑ কোনোটাই সফ্ট কপিতে দেওয়া যায় না। দুই মলাটে বন্দি করা বইয়ে যখন তখন যেখানে সেখানে প্রবেশ করা যায়Ñ যা সিডি-ডিভিডিতে বন্দি করা বইয়ে যায় না। ‘প্রেমপত্রে’র স্বাদ কি ‘এসএমএস’-এ মেলে? কখ্খনও মিলবে না।
যে বই পড়ে গভীর ভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। যে বই আপনার প্রিয়জনকে পড়তে বলবেনÑ তার ভাষ্য, রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’, যাতে একত্র সন্নিবিষ্ট হয়েছে কাব্য, সংগীত, দর্শন ও ধর্ম। আর শেক্সপিয়ার-রচনাবলি, যাকে একটি অখণ্ড কাব্যগ্রন্থ জ্ঞান করা হয়।
তরুণ লেখক এবং পাঠকদের প্রতি তাঁর পরামর্শÑ আমার পরামর্শ হল, এককথায় পড়ার পরে লেখা। আর পাঠকদের প্রতি অনুরোধ হল সময় কাটানোর জন্য না পড়ে সময়কে কাজে লাগানোর জন্য সানুধ্যান পাঠÑ অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে টীকা-ফুটনোট লেখার জন্য হাতে কলম রেখে পড়া।



বইমেলাকে বলি ইউলিসিসের ঘরে ফেরার দিন
Ñফখরুজ্জামান চৌধুরী, লেখক

শুচি সৈয়দ
‘আমি তো বইমেলাকে বলি ইউলিসিসের ঘরে ফেরার দিন। প্রবাসে যারা আছেন, লেখালেখির বিষয়টি যাদের প্রাণের সংলগ্ন, প্রবাসে তাদের যত বাধ্যবাধকতা থাক না কেন, ফেব্র“য়ারির বইমেলায় শামিল হতে ঘরে ফিরবেনই। আমার জানা মতে এরই মধ্যে কয়েকজন প্রবাসী লেখক ঢাকা পৌঁছে গেছেন বা পথে আছেন। এই সময়ে তাদের নতুন বইও বের হয়। সেটা এক বাড়তি টান।’ প্রবাসী লেখক ফখরুজ্জামান চৌধুরী বইমেলা প্রসঙ্গে এ কথা বলেন। এবারের বইমেলায় তার অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘দুঃখ আমার। শারীরিক অবস্থার কারণে ডাক্তার দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের অনুমতি দিলেন না। শুধু এ কারণে, আপাতত আমার শারীরিক অপারগতার কারণে আমার স্ত্রী দিলারা জামানেরও ঢাকা যাওয়া হল না। এ নিয়ে পরপর দুইবার বইমেলায় যাওয়া থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা। শারীরিকভাবে এখানে আছি বটে, তবে মন পড়ে আছি দেশে, বইমেলার জনাকীর্ণ পরিবেশে। বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি, প্রকাশকও আগ্রহী। কিন্তু তারপরও হল না। এক ধরনের বিষণœতা আর দেশের জন্য আবেগী হাহাকার, সব মিলিয়ে কিছুই করা হল না শেষ পর্যন্ত।
প্রবাসে তার দিনের বেশিরভাগ কাটে ইন্টারনেটে দেশের পত্রিকা পড়ে, টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখে আর এখানে প্রকাশিত বিভিন্ন বই পড়ে। তিনি জানান, এখন পড়ছি পেরুর নোবেল বিজয়ী (২০১০) লেখক মারিও বার্গাস য়োসার উপন্যাস ‘দি ফিস্ট অফ দি গোট’। অসাধারণ এক রাজনৈতিক উপন্যাস ‘ব্যাড গার্ল’। শেষোক্ত উপন্যাসটি গুস্তাভ ফ্লভেয়রের ‘মাদাম বোভারি’র ছায়া অবলম্বনে লেখা বলে সাহিত্য-সমালোচকরা মনে করেন।
বইয়ের দোকান ‘বার্নস গ্র্যান্ড নোবেল’ সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে এ প্রসঙ্গে তার দুঃখ ব্যক্ত করে বলেন, আগে সময় হলে ওকলাহোমার কোয়েল স্প্রিংসে ‘বার্নস গ্র্যান্ড নোবেল’ বুক আউট লেটে যেতাম নতুন বইয়ের খোঁজে। চমৎকার পরিবেশে অনেকটা সময় কেটে যেত। কিন্তু বিশালাকার এ বইয়ের সুপার মলটি সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের বই বেচাকেনার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারল না দীর্ঘদিনের এ প্রতিষ্ঠানটি। বইপ্রেমীদের জন্য এ দুঃখ সহজে ভোলার নয়।
তরুণ পাঠকদের প্রতি তার আবেদন, বই পড়–ন, বই কিনে পড়–ন। লেখককে উৎসাহ দেবেন যাতে নতুন লেখা লিখতে তারা অনুপ্রাণিত হন! ধন্যবাদ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×