মিলি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। ভয়ে জড়োসড়ো। দুবছর আগে ঠিক এভাবেই আমাকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে কাঁপছিল, আমি বলেছিলাম "কিছু হবে না তোমার, আমি তোমার কিছু হতে দেব না", বেইমান আমি, কথা রাখিনি। তবু পাগল মেয়েটা আমাকে ছেড়ে যায়নি। এখনো আমাকে আগের মতই ভালবাসে। মাঝে মাঝে ওর ভালবাসার গভীরতা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।
সেইবার মিলি কিছু হয়েছিল, তারপর থেকে সে মানুষ দেখলেই ভয় পেত। কিন্তু ভয় পাওয়ার মত কোন কাজতো আমরা করিনি। দুজন দুজনকে খুব ভালবাসতাম। এটা কখনোই অপরাধ হতে পারেনা। হা, ও ভিন্ন ধর্মের ছিল। আমি জানতাম, কিন্তু আমি মেনে নিয়েছিলাম। মিলিও মেনে নিয়েছিল। পরিবার থেকে মেনে নিবে না বলে জানালেও আমাদের শক্ত অবস্থান টলাতে পারেনি। পরিবারের সবাইকে জানিয়েই আমরা বিয়ে করি।
এই বাসায় আমরা আছি প্রায় পাঁচ বছর। দুবছর আগে তারা আমাদের বাসায় যখন আগুন দিল তখন মিলি ৬ মাসের প্রেগনেন্ট ছিল। আমাদের সেই সন্তান আর হলো না। মিলি কত কাঁদলো। আমি কোন সান্তনা দেইনি। আমার সান্তনা দেবার ভাষা ছিল না। আমি মিলির সামনে যেতে পারতাম না, কেমন যেন নিজেকে অপরাধী মনে হতো। এই বাসায় তারপরেও কিছু মানুষ থাকতো। দুই একটা ছোট ছোট বাচ্চা যখন "বাবা বাবা" বলে ডাকতো, তখন আমি কেঁপে উঠতাম। ওদের আদর করতে যেতাম। কিন্তু কেও কাছে আসতো না।
দুবছর পর আজ তারা আবার ফিরে এসেছে। আমাদের সাজানো সংসার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিবে বলে তারা সবাই এসেছে। আমাদের বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলছে। কেন যাব?? এই বাসা আমাদের, আমরা সাজিয়েছি। এই ঘর এই দেয়াল এই এই সব কিছু আমাদের, আমি আর মিলি দিনের পর দিন কষ্ট করে সাজিয়েছি। আমরা যাব না। কোন ভাবেই যাব না, যা হবে হোক। মিলিকে কানে কানে বললাম, "যাই-ই হোক মিলি, আমি তোমার সাথে আছি, থাকবো, ভয় পেওনা, এজীবনে আছি তার পরের জীবনেও আছি"। মিলি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। ভয় ও পাবে না জানি, একে অপরকে হারানোর ভয় আমাদের অনেক আগেই কেটে গেছে।
আচ্ছা, মানুষ মরে গেলে ভু্ত হয়, ভুত মরে গেলে কি হয় বলতে পারেন ???
(ছবিটা কিন্তু আমার আঁকা গল্পটাও)