somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সফলদের স্বপ্নগাথ--ঝুঁকি নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইকেল ব্লুমবার্গের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র। ২০০৭ সালে টাফটস ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে তিনি এ বক্তৃতা করেন।

আজকের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমি পাঁচটি জিনিসের কথা উল্লেখ করব। নোট নেওয়ার দরকার নেই। কারণ, আপাতত তোমরা আর কোনো পরীক্ষা দিতে যাচ্ছ না! তোমাদের কেবল মন দিয়ে শুনতে হবে।
প্রথমত, তোমাকে অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে। সেটা পছন্দের কাউকে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া, কঠিন কোনো কোর্সে যোগ দেওয়া কিংবা বন্ধুর কাছে টাকা ধার চাওয়া—যা-ই হোক না কেন, ঝুঁকি নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমি জানি, আজকের এই দিনটিতে আসার জন্য তোমাদের এরই মধ্যে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতেও এর ব্যতিক্রম হবে না।
পৃথিবীটা প্রতিযোগিতায় ভরা। এখানে সবাই নিজের চিন্তাভাবনাকেই সবার সেরা মনে করে। কিন্তু তোমরা খেয়াল করে দেখবে, সফল তারাই হয়, যারা সেসব সেরা চিন্তাকে বাস্তবে পরিণত করতে পারে। আমি নিজের একটা গল্প বলি। আমার চাকরিজীবনের শুরু ওয়াল স্ট্রিটে। টানা ১৫ বছর আমি ছিলাম সেখানে। দারুণ কাটছিল দিনগুলো, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রশংসায় আমি প্রায় ভেসেই যেতাম। সবাই আমাকে ভালোবাসত, যত দিন না পর্যন্ত আমি চাকরিটা খোয়ালাম।
কিন্তু আমি আশাবাদী ছিলাম সব সময়। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকার মধ্যেই আমি সুখ খুঁজে পেতাম। তাই চাকরি হারানোর পরদিনই আমি আমার নিজের কোম্পানি খুলে বসলাম। এখানেই আমি প্রচণ্ড একটা ঝুঁকি নিয়েছিলাম। আমার পরিবার, বন্ধুরা সবাই অনেক চেষ্টা করেছিল আমাকে ফিরিয়ে আনতে; তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিল, সন্দেহ নেই। কিন্তু আজকে সেই ব্যবসা সফল হয়েছে, এতেই আমার সুখ। আমার সন্তানেরাও এতে খুশি।
দ্বিতীয় ব্যাপারটি হলো, সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কখনো সফল হওয়া যায় না। তোমরা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে ভালোভাবেই এটি বুঝতে পেরেছ। যেকোনো দলগত প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দলবদ্ধ হয়ে কাজ করা। শুধু শিক্ষাজীবনেই নয়, কর্মজীবনেও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীটা যথেষ্ট জটিল, এখানে কারও পক্ষেই একা সব সমস্যা সমাধান করে ফেলা অসম্ভব।
তুমি একাকী কাজ করে মাঝারি গোছের কিছু একটা হবে, নাকি সবাইকে নিয়ে দলগতভাবে সফল হবে, তা সবাই মিলে একে অন্যকে সহযোগিতা করে কাজ করতে পারার ওপরই নির্ভর করে। তোমাকে অন্যের দুঃখ ও দায়িত্ব—দুটোর ভারই নিতে জানতে হবে, তাহলেই দলের প্রাপ্তিতে তোমার অংশ থাকবে।
আসলে বড় কিছু কখনোই একা করা যায় না। জীবনে চলার পথে যদি ‘আমি’ আর ‘আমার’ এই শব্দ দুটোর বদলে ‘আমরা’ আর ‘আমাদের’ ব্যবহার করতে পারো, তাহলেই দেখবে আগের চেয়ে অনেক ভালো করতে পারছ।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, যা বলার তা সোজাসুজি বলতে পারা। তোমার যুক্তিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করার এর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই। কেউ যদি তোমার সঙ্গে একমত হতে না-ও পারে, তবু সে তোমাকে সততা আর সাহসের জন্য সম্মান না করে পারবে না। তাই তোমাদের নিজের আদর্শের প্রতি সৎ থাকতে হবে। যা মন থেকে বিশ্বাস করো, তা-ই জোর গলায় বলতে হবে।
চার নম্বর ব্যাপারটা হচ্ছে, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। বিশেষ করে, যখন মতের অমিল হয়, তখন শ্রদ্ধা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা অন্যকে তাদের মতপ্রকাশে বাধা দেয়, তারা আসলে নিজেরাই হীনম্মন্যতায় ভোগে। আমি মনে করি, প্রতিপক্ষের যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে গেলে পুরো ব্যাপারটা আরও গভীরভাবে ভাবতে হয়, যা শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থান শক্ত করতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। তবে প্রথমে অবশ্যই অন্যকে বলার সুযোগ দিতে হবে আর তার কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। আজকে যদি আমাকে একটিমাত্র উপদেশ দেওয়ার জন্য বলা হতো, তাহলে আমি এটাই বলতাম, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করো।
আজকের শেষ উপদেশ হলো, তুমি অন্যকে যত বেশি দেবে, নিজেও তত বেশি পাবে।
আমি যখন ব্যবসা করতাম, তখন সব সময় অন্যের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। পরিবর্তন আনার অদম্য ইচ্ছা আমাকে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়।
অবশেষে ২০০১ সালে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিয়ে পাবলিক সার্ভিসে যোগদান করি। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, মানুষের জন্য কাজ করে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতে পাওয়া অসম্ভব। তুমি যদি জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করো, প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সারা দিনে তুমি কী করেছ ভেবে তোমার মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটবেই।
আর একটি কথা, মাকে ফোন করতে ভুলে যেয়ো না। আমার নিজের যদিও সব সময় মনে থাকে না, তবু চেষ্টা করি।
আমি যখনই কোনো সমাবর্তন বক্তৃতার শেষের দিকে আসি, আমার একটা কথাই বারবার মনে হয়—কী বলে আমি স্নাতকদের বিশ্বাস করাতে পারব যে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ তাদের নিজের হাতে। আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে তোমরা যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছ, তা তোমাদের অনেক দূর নিয়ে যাবে। আমি বলব, তোমার বেতন অথবা পদমর্যাদা নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তা কোরো না। মনে রাখবে, এটা অনেকটা ম্যারাথন দৌড়ের মতো, ১০০ মিটার স্প্রিন্ট নয়। তোমার প্রথম চাকরি এমন হওয়া উচিত, যা থেকে তুমি শিখতে পারো, যা তোমার ভেতর উৎসাহ জাগিয়ে তোলে, তোমাকে বিনয়ী হতে শেখায়।
তোমাদের জন্য আমি বলব, অফিসে অন্য সবার আগে যাও, সবার শেষে বের হও আর পারতপক্ষে ছুটি নিয়ো না। সফল হতে হলে পরিশ্রম ছাড়া সত্যিই আর কোনো উপায় নেই। হ্যাঁ, ভাগ্য বলে হয়তো কিছু একটা আছে। কিন্তু তুমি যত পরিশ্রম করবে, ভাগ্যও তোমাকে তত সহায়তা করবে। তাই পরিশ্রম করো, আর সে কাজই বেছে নাও, যা তুমি উপভোগ করো।
জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবেই। আমি চাকরি পেয়েছি, বরখাস্ত হয়েছি, প্রশংসায় আপ্লুত হয়েছি, নিন্দার ঝড়ও সহ্য করেছি। কিন্তু সবকিছুর পরও আমি বিশ্বাস করতাম, আগামীকাল আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। সেই আশাতেই আমি আবার নতুনভাবে শুরু করতাম।
পৃথিবী তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমাদের মেধা, শক্তি, উৎসাহ—এ সবকিছুই আজ বড় বেশি দরকার। জেনে রেখো, আজ এখানে উপস্থিত সবাই তোমাদের নিয়ে গর্বিত। আমরা সবাই জানি, তোমরা তোমাদের স্বপ্নের জীবনকেই বেছে নিতে পারবে।
সূত্র: http://www.tufts.edu
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×