somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মভূমির জন্মকথা : তথ্যচিত্র ১৯৭১

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভার্চুয়াল জগতে সরল-সত্য বলে কিছু নেই। সেদিন দেখি ফেসবুকে একটা ছবি- সাবধান! আপনার আবেগ চোরাচালান হয়ে যাচ্ছে।ছবিটি তাতে বর্ডারে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী হত্যার সংবাদের সাথে যে ছবি দেওয়া হয়েছে সেটা প্রকৃত ছবি নয়। অন্য ছবি ব্যবহার করে সংবাদটি জোরদার করা হয়েছে। তবে সীমান্তে যে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে তা ১০০% সত্য। কিন্তু সে সত্যকে প্রচারের জন্য, কিম্বা তাতে রঙ চাপাতে মিথ্যে ছবির আশ্রয় নেওয়া কতখানি সঙ্গত?
এভাবে ছবি/ভিডিও এডিট করে প্রচার বর্তমানে হামেশাই হচ্ছে। তাই কোন কিছু ক্রস ম্যাচিং ছাড়া বিশ্বাস করা দুঃস্কর। আর ইতিহাসে এমন এডিট তো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে, যা আমাদের দেশে খুবই পরিচিত বিষয়। আমাদের সবচেয়ে মহান ও গৌরবময় যে ইতিহাস। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সেখানেও নানা মতের অমিল। পৃথিবীর আর কোন দেশে তাদের জাতীয় ইতিহাস নিয়ে এমন মতানৈক্য আছে কিনা আমার জানা নেই। একেক সরকারের আমলে একেক রকম ইতিহাস পড়েপড়ে বিভ্রান্ত আমাদের ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। কার কথা বিশ্বাস করবো? বিশ্বাস করা যায় যদি নিজ চোখে দেখে নিতে পারি সেই সময়কে। যদি নিজের কানে শুনতে পারি সে সময়ের সাক্ষী যারা, তাদের কথা। আর সেই সত্যের নিশানা খুঁজে পেলাম তানভীর মোকাম্মেল এর সাম্প্রতিক ডকুমেন্ট্রি "১৯৭১"- এ। সেখানে ব্যবহৃত নানা দুষ্প্রাপ্য ফুটেজ, ডকুমেন্টস, সাক্ষাৎকার সত্যকে তুলে ধরেছে বস্তুনিষ্ঠ ভাবে। ছবিটি নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কাজ করেছেন তানভীর মোকাম্মেল । ৭১ সালের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত ১৫৬ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এই তালিকায় আছেন ১৯৭১ সালের রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্ষিতা নারী এবং উদ্বাস্তু মানুষ। এ ছাড়াও কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক এবং সাধারণ বাঙালি, যারা সেই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন; তাদেরও সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এই ছবির জন্য মোট ৩৫০ ঘন্টা শুট করেছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে ১৯৭১ সালের কিছু ফুটেজ সংগ্রহেরও চেষ্টা করেছেন যা ওই সময়ে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছিলো। বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে গবেষনার জন্যও এটা একটা উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ।
কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে চান। যদি চাক্ষুষ করতে চান বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ গৌরবের ইতিহাস। তবে আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ এই ডকুমেন্ট্রি ফিল্মটি দেখুন।
ইতিহাসে কেবল বিজয়ী দলের বীরগাঁথা লেখা থাকে। সেখানে দেশের সাধারণ মানুষের ভূমিকা খানিকটা উপেক্ষিত। কিন্তু সেই সব গৃহহীন যুদ্ধপীড়িত মানুষের ও যে কিছু ভূমিকা রয়ে যায়, এবং সেটা ও যে সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে কোন অংশে কম নয়- এসব কথা ইতিহাসে কমই উঠে আসে। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক দিব্যদ্যুতি সরকার তাঁর এক গবেষণায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে শরনার্থীদের ভূমিকা নিয়ে কাজ করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ৭১ সালে ভারতে যে পরিমাণ শরনার্থী আশ্রয় নিয়েছিলো তাদের ভরণ পোষনের চাপও বাংলাদেশের পক্ষে তাদের কাজ করার একটা বড় পরোক্ষ কারণ। আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম তানভীর মোকাম্মেল তার ৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই মেগা প্রামাণ্যচিত্রে সাধারণ মানুষের ইতিহাসকেও তুলে এনেছেন যথাযথ ভাবে। সবচেয়ে বড় কথা কোন তথ্য বা সত্যকে দর্শকের উপর চাপিয়ে দেননি এই গুণী নির্মাতা। নিরপেক্ষ ভাবে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব ইতিহাস থেকে শুরু করে বিজয়ের ইতিবৃত্ত। ছবি শেষে দর্শক বুঝে নেবে তার জন্মভূমির জন্মকথা।



বি.দ্র: ২২ (বুধবার) ও ২৩ (বৃহস্পতিবার) ফেব্রুয়ারী, ২০১২ শাহবাগস্থ জাতীয় গ্রন্থাগার শওকত ওসমান মিলনায়তনে (পাবলিক লাইব্রেরী) মুক্তিযুদ্ধের উপর তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত মেগা-ডকুমেন্টারী “১৯৭১” প্রদর্শিত হবে। প্রামাণ্যচিত্রটির দৈর্ঘ্য ৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট। দুপুর ২.৩০ ও সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে প্রামাণ্যচিত্রটির দুইটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।

৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্রটির ‘প্রথম অধ্যায়’ অর্থাৎ প্রথম দুই ঘন্টার পর দশ মিনিটের বিরতি। পরে ছবিটির ‘শেষ অধ্যায়’ অর্থাৎ শেষ দুই ঘন্টা প্রদর্শিত হবে। দর্শকেরা একই প্রবেশপত্রে প্রামাণ্যচিত্রটির ‘প্রথম অধ্যায়’ ও ‘শেষ অধ্যায়’ দেখতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×