somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাঙনের শব্দ শুনতে পাই...

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি। মহান ভাষা দিবস। একজন বাঙালি হিসেবে গর্বের সাথে বলছি এটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। বাংলা-ই পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলা ভাষা-ভাষীদের জন্য এই মহান স্বীকৃতি এনে দেয়। তারপর থেকে এই দিনটি বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়ে আসছে। এই ভাষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০৮ সালকে ‘আন্তর্জাতিক ভাষা-বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে।

ওই দিনটি ছিল ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এবং বাংলা ক্যালেন্ডারের ১৩৫৮ সালের ৮ই ফাল্গুন বৃহস্পতিবার। ভিনদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করতে করতে আমরা বাংলা সন আর তরিখটির কথা প্রায় ভুলতেই বসেছি। ফেব্রুয়ারি আসলেই চারপাশে শুরু হয় ভাষা প্রেমীদের আনাগোনা। বড় বড় বোদ্ধারা যুক্তি-তর্ক দিয়ে বাংলার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ, বিকৃতি ইত্যাদির চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ করেন। আমি নিশ্চিত যে, আমার এই প্যানপ্যানানিও আপনি শুনতেন না যদি না এটা ভাষার মাস হতো। আমরা কি আসলেই ‘মৌসুমী-বাঙালি’...? বোধ হয় সত্য। আমি অনেকগুলো মানুষকে চিনি যাদের বিভিন্ন উৎসবে পরার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পোশাক রয়েছে। যা নির্দিষ্ট দিনটির সাথে মানানসই। তারা খুব জাঁকজমকের সাথে প্রতিটি উৎসবই পালন করে থাকেন।
নিজেদের সংস্কৃতি পালনের পাশাপাশি আমরা ভিন্ন দেশের সংস্কৃতিও পালন করে থাকি। তবে ধারণ করার জন্য নিজেদের চিরকালীন সংস্কৃতিটাকে ধারণ করাটাই বোধ হয় যুক্তিযুক্ত। তাহলে আর ভিন্ন সংস্কৃতি দেশীয় সংস্কৃতিকে ছাপিয়ে যেতে পারবে না। এই ‘ছাপিয়ে যাওয়া’টাকেই বড্ড বেশি ভয় পাই। মানব সমাজ যেহেতু গতিশীল তাই সেখানে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তবে পরিবর্তনটা যেন নিজের সত্ত্বাকে মাড়িয়ে না হয়।
আমরা আরও কি আরও বেশি করে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করতে পারি না? অবশ্যই পারি। এ জন্য নিজেদের আর একটু বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। চাইনিজরা নিজেদের ভাষাটাকে অনেক কষ্ট করে শিখে। একটা বাঙালি শিশু যেখানে দুই বছর বয়সেই পুরোপুরি কথা বলতে শিখে সেখানে চীনা শিশুর মাতৃভাষা শিখতে ৮-১০ বছর বয়স হয়ে যায়। সে দেশে বোধ হয় এ জন্যই ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা সহজে দখল নিতে পারে না। কই, চীন তো কোন অংশেই আধুনিকতা থেকে পিছিয়ে নেই; বরং অনেক বেশি এগিয়ে।
একটি ছোট্ট বিষয় বলি। আমার খুব কাছের একটি বন্ধু আছে। বন্ধুটি মোটামুটি সাহিত্যপ্রেমী। যথাসম্ভব শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে চেষ্টা করে। আমরা একসাথে আড্ডায় বসলে একটা মজার খেলা খেলি; তা হলো আমরা যে কোনো একটা বিষয়ের উপর আলোচনা করবো। কথা বলার সময় খেয়াল রাখবো যেন কোন ইংরেজি শব্দ না বলা হয়। বললেই একটি শব্দের জন্য এক নম্বর গণনা করা হবে। তবে যে শব্দগুলোর প্রচলিত বাংলা শব্দ নেই, সেগুলোর ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দ বলা যাবে। আমরা এই খেলাটা দারুণ উপভোগ করি। কখনো কেউ কথা বলার সময় একটা ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে যখন ‘স্যরি’ বলে তখন সবাই সজোরে হেসে উঠি। আমার সেই বন্ধুটি কিছুদিন আগে ফোনে পরিচিত একটি মেয়ের সাথে দেখা করে ও কিঞ্চিৎ প্রেমে পড়ে যায়। মেয়েটির সাথে তার অনেক কথা হয়। এক পর্যায়ে সে তাকে ভালো লাগার কথা জানায়। মেয়েটি তথাকথিত আধুনিকা। সে আমার বন্ধুটিকে জানায়- “তুমি কিছুটা ‘ব্যাক ডেটেড’ তোমাকে আরও আধুনিক হতে হবে। কথা বলার সময় ইংরেজি না বললে কেমন যেন ‘গাঁইয়া’ মনে হয়। চুলে ‘স্পাইক’ করতে হবে। সর্বোপরি আমার কথা মতো নিজেকে বদলাতে হবে। যদি তা পারো আমি তোমাকে ভালোবাসবো।“
বন্ধুটি বড় ব্যথিত হয়ে বিষয়টি আমাকে বলে-‘যে ভাষাটার চর্চার জন্য আমরা সাধনা করি তার জন্য আজকে অপমানিত হলাম’। আমি বললাম-বন্ধু তুমি ভুল দরজায় কড়া নেড়েছো। এই মেয়েটি তোমার জন্য নয়। তারপরও ভালো লাগা বলে কথা। ভেবে দেখো, কী করবে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম- হায় রে আধুনিকতা...!

আমরা চাইলেই সুন্দর বাংলায় কথা বলতে পারি। ভাষাটাকে ভালোবেসে যদি একটু সচেতন হই তবে কথা বলার সময় আর ‘বাংলিশ’ হবে না। এই যেমন- ‘থ্যাংক ইউ’ না বলে যদি বলি ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘স্যরি’ না বলে ‘দু:খিত’ এভাবে প্রত্যেকটি কথা বাংলায় বলার চেষ্টা করলে একটা সময় আমরা সুন্দর নির্ভেজাল বাংলায় কথা বলতে পারবো। তাহলেই বোধ হয় এই ভাষাটির প্রতি আরো বেশি সম্মান দেখানো হবে। আশার কথা হলো-আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো এখন অনেক বেশি সচেতন। যদিও ‘এফএম’ রেডিও গুলো নিয়ে বিতর্ক আছে। তবুও সবাই এগিয়ে আসলে এই সমস্যাটি থাকবে না। ‘এবিসি’ রেডিও পরিপূর্ণ বাংলায় অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করে। এতে তাদেঁর জনপ্রিয়তা মোটেও কমে যায়নি বরং বেড়েছে। সবারই উচিত এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া। আমরা নিজেদের উন্নয়নের জন্য বিদেশি ভাষা শিখবো, তবে তা জগাখিচুড়ি করে নয়।
যেদিন আমরা পুরোপুরি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারবো সেদিনই বোধ হয় ভাষা শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। আর তখনই আমরা বাঙালি হয়ে বাংলা ভাষার পূর্ণ মর্যাদা ও ভালোবাসা দিতে পারবো। নইলে যে ভাঙনের শব্দ শুনতে পাচ্ছি তা বোধ হয় আরও বেশি করে অনুভূত হবে...।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×