somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বসেরা জাতীয় কবি (মেলায় আমার নতুন বই ) ব্লগারদের জন্য ভূমিকা ফ্রি

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভুমিকা

সাহিত্য মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি, অতীত ভবিষ্যতের সেতু, পারাপার করে দেয় মানব মনের গাড়িকে এপার ওপার, ভাবিয়ে তোলে, সতর্ক করে, জাগিয়ে তোলে। জীবনের দীর্ঘ পথ ভ্রমনের সাথী হয়ে পাশে থাকে সাহিত্যে। এই সাহিত্যের একটি অঙ্গ কবিতা, কবিতাই সাহিত্যের গলার মালা, কবিতাই সাহিত্যকে করে সম্মৃদ্ধ, সাহিত্যের গভীর ভাবের স্বাধ নেয়া যায় কবিতা পঠনে, স্মরণে। আর এই কবিতার জনক কবি। কবি গান গায় নিজের ঢংগে,আপন প্রাণে, আপন সুরে। কিন্তু এই সুর সকলের, সর্বত্র গৃহীত। এই সর্বজনীন সুরকে আমি মলাটের বীণাতে বাজানোর চেষ্টা করেছি এই বইতে।

আমার মনে পড়ে সার্টিফিকেট প্রদান স্বর্বস্ব পাঠ্যক্রমের বাইরে আমার প্রথম সাহিত্য পাঠ আমার বাবার লাইব্রেরী থেকে নজরুলের ‘বাঁধন হারা’, আমার চিঠি লিখতে ভালো লাগত, লিখেছিও ক্রমাগত সর্পিল গতিতে আপন প্রাণের কথা মালায়। সময়ে অসময়ে বন্ধু, অবন্ধু, কল্পনায়, বাস্তবে লিখেছি সবাইকে। অনুকরন করেছি বাধন হারার চিঠির সুর আর লেখ্যরূপ। তারপর পড়েছি মৃত্যুক্ষুধা, সময়টা এতোটাই অনুপযুক্ত ছিলো যে কিছুই বুঝিনি, না ভাব না এর উপাদেয় স্বাধ। তবুও পড়েছি। এর কাছাকাছি সময়ে হঠাৎ করে আমি আবিষ্কার করি আমার বাবার ছাত্রজীবনের কবিতার খাতা। মন আর শরীরের ভাবের ঐকতানে ছন্দ মিলের সমাহারে সুখপাঠ্য কবিতা, আমার কবিতার হাতেখড়ি এখানেই। দু চারটে শব্দের অদল বদল সংযোজনে নতুন লেখ্যরূপ পেলো বাবার কবিতা আমার হাতে। নিজেকে কবি ভেবে এক ধরনের সুখও নিয়েছি। এই চুরি কর্মে ধীরে ধীরে জেগে উঠে সাহিত্য ক্ষুধা, বেড়ে উঠে সাহিত্য প্রেমের জ্বালা অনুভবে, বহিঃপ্রকাশে কলমে। ছোট সময় ও কিশোর বয়সে সাহিত্য ক্ষুধা নিবারণে বইয়ের অপ্রতুলতায় বেশীর ভাগ সময়ই থেকেছি ক্ষুধার্ত।
মনে পড়ে আমাদের মফস্বল শহরে একটি পাবলিক লাইব্রেরী ছিলো কিন্তু অনেক দিন থেকে বন্ধ। কয়েকজন বন্ধুমিলে খুজে বের করলাম লাইব্রেরিয়ানকে, তার সাথে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতাম কবে খুলবেন লাইব্রেরী, তিনি শুধু আশ্বাস বাণী শুনিয়ে যেতেন। পরে একদিন আসলো সেই খুশির দিন, লাইব্রেরী খুলল। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে হতাশ হয়ে গেলাম, যে বই ছিলো তা পড়ে শেষ করেছি,নতুন বই নেই, কেনাও হয় না, শেষ পর্যন্ত পত্রিকার শিশু ও সাহিত্য পাতার জন্য অপেক্ষা করেছি সপ্তাহব্যাপী। হঠাৎ করেই কয়েক মাসের মধ্যে আবার লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে গেলো। তারপর থেকে খুজে বের করলাম সিনিয়র ভাইদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরী, আজ আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এরসাথে বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে কেনা ও পড়া চলল অনেক দিন। কিছু রাজনৈতিক দলের কিশোর ম্যাগাজিনের গ্রাহকও ছিলাম নিয়মিত। এরপরেও যখন বই সংকটে পড়লাম বন্ধুত্ব করলাম এক বই বিক্রেতার সাথে শর্তসাপেক্ষে ও প্রতি বইতে পাচ টাকা হারে ভাড়া দিয়ে পরলাম অনেক দিন। এরই মধ্যে অবস্থান ও সময়ের পরিবর্তনে বইয়ের রাজ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার পেয়েছি ।
বই পড়ার কতো স্মৃতি যে আছে, একটা স্মৃতি উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছিনা। কিশোর বয়সে পড়াশুনা করতে হতো শোনা গলায় যাতে করে বাবা মা দূর থেকে আমার পড়ার শব্দ শুনতে পান কিন্তু আমার তো গল্পের বই পড়তেই হবে কি আর করা উচ্চ স্বরেই পাঠ করে যেতাম উত্তেজনায় টানটান গল্পের বই। ধরাও খেয়েছি অনেকবার। আর একদিন শীতের সকাল বেলা লেপটাকে মাথার উপর দিয়ে আড়াল করে কাসের বইয়ের মাঝে গল্পের বই রেখে পড়ছিলাম গভীর মনযোগে। হঠাৎ করেই মাথার লেপে ঝটকা জোরে টান পড়ে, দেখি বাবা দাড়িয়ে আছেন, সাথে সাথে ধরা খাওয়া, সদ্য শীতে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া গালে কষে এক চড় খেলাম। বইটা ধরে ছুড়ে ফেলে দিলেন জানালা দিয়ে ঘরের বাইরে। আমি দেখলাম বইটি পরে আছে ঘরের বাইরে উপরে লেখা ‘চরিত্রহীন’ লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। যাহোক সেই দিন গুলির ক্ষোভ, দুঃখ, ক্ষুধার স্মৃতি আমাকে অনবড়ত তাড়িত করেছে এই বইটি শেষ করার জন্য। মাঝে মাঝে ঝিমিয়ে পড়তাম, অশান্ত স্মৃতিগুলো আমাকে খাটিয়ে নিয়েছে তার স্বার্থে, তার উজ্জ্বলতার জন্য, তার অব্যক্ত বেদনার পূর্ণতার জন্য। আমিও অন্ধ অনুকরন করেছি তার নির্দেশ। বইটি লিখতে গিয়ে কিছু স্মৃতি আটকে পরে জীবনের দেহে। কিছুদিন অলসতায় ঝিমিয়ে থাকে আমার কলম, কিন্তু সময়তো আর অলসতা বুঝে না, সময়ের সংকীর্ণতায়, নির্দিষ্টতায় চাপ পড়ে লেখায় কিন্তু শেষ তো আর করতে পারছিনা। রেগে যাই নিজের অবিবেচক আত্মার উপর, ক্ষেপে উঠে শপথ করি যতদিন বইয়ের কাজ না শেষ হবে ততদিন কাটবোনা আমার দেহের অবাঞ্ছিত লোমগুলো। এদিকে কাজ এগিয়ে চলছে সাথে তাহারাও ক্রমাগত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে আর এই ক্রমাগত দীর্ঘতরতা আমাকেও অস্বস্তিতে কুড়ে কুড়ে খেতে শুরু করলো। একদিকে শপথ আরেক দিকে দীর্ঘতরতার খোঁচা। শেষপর্যন্ত আমি উন্মাদ হয়ে উঠি, টানা কাজে মত্ত হয়ে যাই, প্রিয়জনকে অবহেলা করি, ঘুমকে ছুটি দিয়ে বিসর্জন দেই। অস্বাভাবিকতাতে আপন করে নেই। পরিশেষে সর্বাঙ্গে দীর্ঘতর অবাঞ্ছিত কেশ নিয়ে শেষ করি বইয়ের কাজ, পরবর্তীতে আমি মুক্তি দেই আমার অন্তকরন কে আমার দেহকে ।

গত বছরের কোনো একদিন নয়া দিগন্তের সাহিত্য সম্পাদক জাকির আবু জাফর ভাইয়ের সাথে সাহিত্যকেন্দ্রিক আড্ডা হচ্ছিল, সেদিন তিনি আমাকে বিভিন্ন দেশের জাতীয় কবির উপর লিখতে বলেন,তারপর অনেকদিন হয়ে গেলো কিন্তু লেখা হচ্ছিল না। তবে মাথায় আইডিয়াটা ঘুড়তে থাকে অনবরত। জীবিকা নির্বাহের সাথে সাথে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি। তার আইডিয়া থেকেই এই বিষয়ের মলাটবদ্ধতায় আজকের এই বই। এ জন্য তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

আমার বইটি মুলত কবিদের জীবনি ও সাহিত্য সমালোচনা কেন্দ্রিক সংকলন ও সম্পাদিত গ্রন্থ। জীবনি লেখা হয়েছে অনেকটা সাহিত্যরসের মাখামাখিতে। সাহিত্য সমালোচনার সাথে সাথে কবিদের কিছু কবিতা, সাক্ষাতকার, চিঠি,ভাষনও সংকলন করা হয়েছে কবিদের সামগ্রিক জীবনের ধারনা পেতে। এতো ছোট মলাটে নির্বাচিত কবিদের সাহিত্যরস আকন্ঠ পান করা যায় না, তা সম্ভবও না। তবে পাঠকের শুষ্কবালুচর প্রতিক্ষিত হয়ে উঠবে সাহিত্যের রসে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে। পাঠকমনের তরী আকাঙ্খার স্রোতে ভেসে ভেসে নির্ভুল নোঙ্গর ফেলবে কবিদের সাহিত্যের ঘাটে। বিশ্রামহীন চেটেপুটে স্বাধ নিবে কবিতার অমৃত।
আমি তথ্য নিতে গিয়ে অকৃপন হয়েছি। যার কাছ থেকে বা যেখান থেকে নিয়েছি তাকে শুষে শুষে আকণ্ঠ পান করে তারপর ছেড়েছি। সময়ের সংকীর্নতায় এই বিশাল তথ্যে সূত্র উল্লেখ করা থেকে বিরত থেকেছি। আগামীতে আশা করি সংযুক্ত করে দেয়া হবে।
‘বিশ্বসেরা জাতীয় কবি‘ প্রকাশে মিজান পাবলিশার্সের কর্ণধার লায়ন আ ন ম মিজানুর রহমান পাটওয়ারী পিএমজেএফ-কে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে আমার বইয়ের নাম ‘বিশ্বসেরা জাতীয় কবি‘ তারই দেয়া। আমি কৃতজ্ঞ আমার বড় ভাই জোবায়ের ও আহমেদ ফিরোজ, বন্ধু পপলু, জিনাত রেহানা, আদনান ভাই, ছোট ভাই জুনায়েদের কাছে। বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই নিখিল দাদা ও হেলাল ভাইকে তাদের আমি বিরক্ত করেছি সময় অসময়ে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×