somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসা চিরকালের

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালবাসা চিরকালের

এবারের বসন্ত কেন জানি একটু অন্যরকম। প্রতিবার বসন্ত যেমন উষ্ণতার ছোঁয়া নিয়ে আসে এবার ঠিক তেমনটি নয়। অনেকটাই শীতল, কোথায় যেন একটা বিষাদের সুর। এমনিতেই ফেব্রুয়ারী বাঙালীদের জন্য শোকের মাস, মহান ভাষা আন্দোলনের মাস। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙলাকে প্রতিষ্ঠিত করার মাস। সম্প্রতি সাংবাদিক দম্পত্তির মর্মান্তিক মৃত্যু, হুমায়ুন ফরিদীর অকাল প্রয়াণ সবকিছু মিলিয়ে পারিপার্শ্বিক পরিবেশটা কেমন ভারী হয়ে উঠেছে। প্রবাহমান ঘটনা যেন এবারের বসন্তকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। আমরা যারা বয়সে প্রবীণ, যাদের মাঝে তারুণ্যের তেমন উচ্ছলতা নেই তাদের কাছে একুশের বইমেলা যেন এক নির্মল আনন্দের ক্ষেত্র, যেখানে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়া যায়। তবুও কোথায় যেন বিষণ্নতার ছায়া।

এতো কিছুর মাঝেও বসন্তকে ঘিরে তরুণদের মাঝে প্রাণের চাঞ্চল্য, বর্ণিল উৎসবের ঘনঘটা। বসন্তকে সাদর আমন্ত্রণ জানাতে কারো মাঝে উচ্ছাসের কোন কমতি নেই। রঙ বেরঙের ফুলে সেজেছে সবাই। পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ী। খোঁপায় জড়ানো নানা রঙের ফুল। খুশীর আমেজ পুরো ভার্সিটি এলাকা, টিএসসি আর চারুকলার সবুজ চত্ত্বর জুড়ে। মেঘমুক্ত আকাশ যেন আলোয় ঝলমলে। দখিনা বাতাসের চপল নৃত্য, চকিত ঝাপটায় কেঁপে ওঠে তরুণ তরুণীর শরীর মন। সব মিলিয়ে এক অনুপম ভাললাগার রেশ। শীতের আলসেমি ভাবটা এখনও পুরোটা কেটে ওঠেনি, শীত শীত আমেজটা এখনো রয়েই গেছে।

বসন্ত দিনের সূচনালগ্নে শুকনো পাতার মতো ভেসে ভেসে বেড়াতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির কোলে কোলে। আর তেমনটা হলে ঝরাপাতা এই নাবিক মন হয়তো নোঙর ফেলতো ভালবাসায় সবুজ হয়ে ওঠা কোন উঠোনে। যেখানে কেউ একজন শীতল পাটি বিছিয়ে অপেক্ষা করছে আমারই জন্য। কিন্তু তাতো হবার নয়, সেটা হবার কোন সুযোগও নেই। সময় এবং বয়স একসময় সবকিছু দূরে ঠেলে দেয়। পুরোনো স্মৃতিগুলো তাই শুকনো পাতার মত মনের আঙ্গিনায় যত্রতত্র পরে থাকে। সুর কেটে গেলে যেমন গানের মূচ্ছর্ণার আমেজটা আর আগের মত থাকেনা, ঠিক তেমনটাই জীবনের সুর কোথাও কেটে গেলে বেঁচে থাকার আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। চলার পথে স্থবিরতা আসে। ইচ্ছেশক্তি কমে যায়। কান্তির ছায়া নেমে আসে। বিষন্নতা পেয়ে বসে অকারণে। কারও প্রতি নির্ভরতা সঁপে দিতে মন চায়। আমি কোনদিন কিছু ছিলাম না, আমার কোন অভিলাষ ছিলনা অথচ আমার ভেতরে পৃথিবীর তাবৎ স্বপ্ন।

আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্নগুলো যদি অবারিত দিগন্ত ছুঁয়ে যেতে পারতো, আমাদের ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো যদি রঙিন সূতোয় ফুল তোলা রুমালের মত ভালবাসার চিহ্ন হয়ে যেত, আমাদের চেনা-জানা ভাললাগাগুলো যদি ময়ূরী আকাশের নীচে সন্ধ্যা প্রদীপ হয়ে জ্বলতো, আর আমাদের চারিপাশের মানুষের হৃদিক সম্পর্কগুলো যদি বহতা নদীর মত চিরকাল স্রোতস্বীনি থাকতো- তবে কী আমরা শ্রাবণের মেঘের মতো প্রতিদিন ভেতরে ভেতরে এরকম ঝরে যেতাম? তবে কী আমাদের হৃদপিন্ড এরকম গলে যাওয়া বরফের মত ক্ষয়ে যেতো- দুঃখ আর বিনাশে? প্রগাঢ় ভালবাসা আর অগাধ মমত্বের সূতায় সবাই যদি গাঁথা হতাম তবে হয়তো এমনটা হতো না।

স্পর্ধিত মধ্যাহ্নের মতই জীবন একসময় ডুবে যায় মহাকালের অতলে। প্রজ্জ্বলিত সূর্য যেমন ডুবে যায় কোন এক দূর দেশে কিংবা কোন এক মেরুতে, আমরাও তেমনি হারিয়ে হারিয়ে যাই পৃথিবীর পথে প্রান্তরে নয়তো মাটির অভ্যন্তরে। এই যে বেঁচে থাকা সেতো একগুচ্ছ রক্তজবার মতোই- সময়ের সূতোয় জীবনকে বেঁ‡a রাখা আর মনের বাঁধনে অন্যদের জড়িয়ে থাকা। নিঃসঙ্গতা কখনও গাংচিল হয়ে নির্জন উপকুলে কান পেতে বসে থাকে ভালবাসার শিলাপাত শোনবার ব্যকুল আশায়। সেখানেও ক্ষীপ্র গতির বিদ্যুৎ এসে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় আমাদের মনে লালিত কোমল অনুভূতিগুলো। কেঁপে ওঠে সমুদ্রের বুক। আশার তটে হতাশার ঢেউ আছড়ে পরে। নিরন্তর মনের পাড় ভাঙ্গতে থাকে। আহত হই বিপর্যস্ত সময়ের কাছে। অগ্নিকোণের তল্লাট থেকে ছুটে আসা প্রবঞ্চক হাওয়া এলোমেলো করে দেয় আমাদের নাক্ষত্রিক প্রেম। বুঝতে পারি জীবন মানেই ভাঙ্গা গড়ার নীরব খেলা।

তবুও আমরা ভালবাসি। ভালবাসার সৌরভ ছড়াই হৃদয় গভীরে, প্রগাঢ় মমতায়। শুকনো বনভূমিতে জমা করি সজল মেঘ, মরুভূমিতে খুঁজে নিই মরুদ্দ্যান। আকুল হাহাকারে মনের প্রান্তর ভরিয়ে তুলি নানা বর্ণে, নানা ছন্দে। শিশির এবং রৌদ্রের নমনীয়তায় আবারও উচ্চারণ করি সুবচন। আমাদের হৃদপিন্ডের ডান-বাম অলিন্দে আবারো কর্ষণ করি মানুষের জন্য ভালবাসা। বেঁচে থাকা যদি জীবন হয় আর জীবন মানে যদি ফুল ফোটানোর খেলা হয় তবে হয়তো সেই কারণেই অজস্র প্রতিকুলতা সত্তে¡ও আমরা বুকে রোপন করি ভালবাসার অজস্র গোলাপ, মন রাঙানোর জন্য অসংখ্য শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া। বিষন্নতার অর্গল ভেঙ্গে কাছে টানি প্রিয় কোন মানুষকে - যাকে ভালবাসি, ভালবাসি এবং শুধুই ভালবাসি।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×