somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহীদমিনারহীন ক্যাম্পাসে বসবাস

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিরায়ত বাঙালি তরুণের হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ক্যাম্পাসে পথচলা শুরু চোখের আলোয় বিশ্ব দেখার আহ্বান পেয়ে আমি তখন শিহরিত।ভাবতাম এখানে চর্চা হবে বিশ্বলোকের,নানা রংয়ের মানুষের মুখবই থেকে পড়ে নেবো ‘জীবনের’ সাহিত্য।এখান থেকে দীক্ষা নেবো অগ্নিচেতনার,গড়ে তোলার শপথ নেবো আগামীর বাংলাদেশ।
চিন্তা চেতনার এই সমৃদ্ধি এবং নিজেকে বাঙালি প্রকৌশলী রূপে গড়ে তোলার জন্য শুধুই পুঁথিগত প্রকৌশল বিদ্যা আয়ত্ত করা পর্যাপ্ত নয়।আপন মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করার প্রেরণা পেতে জানা দরকার পূর্বপুরুষের গর্বিত কীর্তি।যাদের রক্ত এখনো বইছে এ ধমনীতে জানা দরকার কতটুকু উত্তাপ সে প্রবাহে।আমরা বাঙালিরা বোধহয় সেই কাজটুকু করতে পুরোপুরি ব্যর্থ।এজন্যই তো এতো হীনমন্যতা,এতো বৈদেশিক পদলেহন।সূর্য না ডোবার গর্বে গর্বিত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আমরা ছিলাম অগ্রগামী,আইয়ুব খানের বাংলা বিরোধী অবস্থান যে আগুন জ্বেলেছিলো তাতে আমরাই অগ্নিমুখে ধাবমান পতঙ্গের মতো হাজির হাজির বলে হাজির হয়েছি,বিশ্বপরাশক্তির বেয়নেটের সম্মুখে বুক পেতে দিয়েছি অকাতরে,রক্ষা করেছি মাটির অধিকার।কোনো স্বৈরশাসক তার শিকড় গাঁড়তে পারেনি এই মাটিতে,তার পতন ঘটিয়েছি “স্বৈরাচার নিপাত যাক,গণতন্ত্র মুক্তি পাক” স্লোগানে।হাতে আসাদের জামার পতাকা বুকে নূর হোসেনের প্রত্যয় নিয়ে শুরু করা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পদযাত্রার পরিণতি এরকম গনহীন্মন্যতায় রূপ নেওয়ার কথা ছিলো?কেনো সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করা হবে না বলার পরেও আমরা আশ্চর্য প্রতিবাদহীন?বীরপ্রসূ এ মাটির সন্তানদের স্মৃতিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করা কি এর একটা প্রধানতম কারণ নয়?
আসি আপন ক্যাম্পাসের কথায়।প্রকৌশল শিক্ষার কাঠখোট্টা গাণিতিক পড়াশোনার ফাঁকে দেশের ইতিহাস চর্চা,নিজেকে বাঙ্গালিরূপে গড়ে তোলার সুযোগ হয় কমই।সারাদিন এট্যান্ড্যান্সলোভী ক্লাস,বিকেলে ঘুম ঘুম সেশনাল আর রাত্রে কম্পিউটার কেন্দ্রিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা নিয়ে ফেসবুক।কেউবা এখানে জাতি শিক্ষিত করতে গিয়ে নিজে অশিক্ষিত থাকছে,আবার কেউবা বই চুষতে চুষতে মারা যাচ্ছে।আছে নষ্ট ক্ষমতালোভী,কারিকুলাম থেকে এক্সট্রা কারিকুলাম কাজ বেশী করা সংগঠক।দেখা মেলে তথাকথিত রাজনীতিবিরোধী বুদ্ধিজীবী অথবা অপসংস্কৃতির একনিষ্ঠ অনুশীলকারীদের।সময় কই বাঙ্গালির বিরত্ব চর্চার?আসলে কথাটা ভুল বললাম,বলা দরকার নেই কোনো চর্চার প্রেরণা।
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়,বলতে গিয়ে লজ্জায় মুখ লুকাতে ইচ্ছা করে,বড় ক্ষুদ্র মনে হয় নিজেকে যখন দেখি আমার ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান কোনো শহীদ মিনার নেই!!!প্রথম বর্ষে থাকতে স্বপ্ন দেখেছি চতুর্থ বর্ষে দেখবো,ক্রমাগত প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছি সিনিয়রদের,দ্বিতীয় বর্ষে নবাগত জুনিয়রদের সান্ত্বনা দিয়েছি,তৃতীয় বর্ষে হয়েছি আশাহত আর চতুর্থ বর্ষে সাধ জাগছে টাইম মেশিন বানিয়ে ২০৫০ সালে গিয়ে দেখে আসার তখনও শহীদ মিনার হয়েছে কিনা।
গেট দিয়ে ঢুকতেই বাম দিকে চোখে পড়ে ঘাস লতাপাতায় ঢাকা অর্ধনির্মিত রডের কঙ্কাল।চার বছর ধরে প্রতিদিন এই কঙ্কাল আমাদের তাড়িয়ে বেড়িয়েছে পেছনে তাড়া করে ফেরা পাশ করে চাকরি না পাওয়ার দুঃস্বপ্নের মতো।প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি আসলে পত্র পত্রিকায় কিছু লেখালেখির মধ্যেই আমাদের শহীদ মিনারের আকুতি সীমাবদ্ধ।ভীত হয়ে লক্ষ্য করছি সেই আকুতিটাও আস্তে আস্তে ফরমালিনে ডুবে যাচ্ছে।শহর থেকে আসার পথে অবস্থিত গশচি নয়া হাটের ‘শিশুবাগেও’ মাথা উঁচু করে আছে শহীদ মিনার,পাশের ইমাম গাজ্জালী কলেজে নবনির্মিত শহীদ মিনার দেখে চোখ চকচক করে উঠে আর আমরা হিসেব কষতে বসি আর কত টাকা হলে আমাদের শহীদমিনারের কঙ্কালের গায়ে মাংস গজাবে!!
মনে হয় নির্মীয়মাণ শহীদ মিনারের কাঠামো অতি জটিল এবং ত্রিমাত্রিক পৃথিবীতে তাকে আকৃতি দেওয়া সম্ভব নয়!!তাই এর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বোধ হয় একে বাস্তবে নিয়ে আসতে পারছে না।আর কর্তৃপক্ষের কথা কীইবা বলার আছে তারা ব্যস্ত শুধু ক্যাম্পাস বন্ধ করার কাজে,তাদের এতো ছাত্রদের মনোজগতের উন্নতির দিকে নজর দেওয়ার ফুসরত কই??আর উনাদের প্ল্যান দেখেও বলিহারি যাই,রাস্তার পাশেই হল,রাস্তার পাশেই শহীদ মিনার আবার নতুন একটা একাডেমিক বিল্ডিং হচ্ছে,তাও রাস্তার পাশেই।২৫০০ মানুষের জন্য বরাদ্দ ক্যাম্পাসের অর্ধেক আর বাকি ৬০০/৭০০ লোকের জন্য বাকী অর্ধেক!!!
ইচ্ছা করে শহীদ মিনারের একটা ছোটখাটো রেপ্লিকা বানাই আর তাতে ফুল দেই,অন্তত পক্ষে পূর্ণাংগ একটি মিনারে ফুলতো দেওয়া হবে!!!
দুঃখের বিষয় আমরা ক্যাম্পাস থেকে এখনো কোনো জোরালো আওয়াজ তুলতে পারি নি।এক হতে পারিনি ক্যাম্পাসের যুক্তিবাদী,সাংস্কৃতিমনা,প্রগতিশীল মানুষগুলোই।আর কতো এ অপেক্ষা????
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×