somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সীমান্ত নিয়ে ভারত

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বেচে থাকার অধিকার আছে এ পৃথিবীর সব প্রাণীর। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টির সেরা জীবের অধিকার সর্ব প্রথমে। মানবের অধিকার রক্ষায় পৃথিবীতে গড়ে উঠেছে বহু মানবতাবাদী সংগঠন। সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত হওয়ার অন্যতম মানদণ্ড মানবাধিকার। জাতিসংঘ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মানবাধিকারের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে। বিশেষ দিনে তা প্রকাশ করে। বাংলাদেশে আজ সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের মানবাধিকারের কথা উঠছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ'র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি হত্যা অপহরণের প্রেক্ষিতে মানবাধিকারের প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে। এরই মধ্যে বিএসএফ প্রধানের উক্তি " সীমান্তে গুলি বন্ধ হবে না"। বিএসএফ প্রধানের উক্তি হতাশ করেছে বাংলাদেশের মানুষদের।হতাশার কথা রাজনৈতিক ভাবে বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে সরকারিভাবে।

সীমান্তের মানুষেরা বরাবরই অবহেলিত। বেঁচে থাকার নুন্যতম সেবা সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ পায় না। নাগরিকত্ব সংকট এর মধ্যে অন্যতম। ভারত বাংলাদেশ ছিট মহল সমস্যা থেকে এটি উদ্ভূত। ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের সাথে রয়েছে দুটি দেশের সীমান্ত। একটি ভারত অন্যটি মিয়ানমার। এই দুই দেশের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বড়। বাংলাদেশের তিন দিক দিয়ে রয়েছে ভারত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বাদ দিলে উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বের অর্ধেকরও বেশি ভারতীয় সীমান্ত বাংলাদেশকে ঘিরে রেখেছে। এই বৃহৎ সীমান্ত পাহারা দেওয়ার মত লোকবল নেই ভারতেরও। নেই বাংলাদেশেরও। আর এই দুর্বল দিকটি পুঁজি করে গড়ে উঠেছে এক বিশাল পাচারকারী চক্র। যেটি সীমান্তের উভয় দিকে সক্রিয়। অস্ত্র থেকে মাদক, কিংবা গরু থেকে মানুষ । সবকিছুরই পাচার চলে সীমান্তের উভয় দিকে।পাচারের সংবাদ ছাপানো হচ্ছে।

ভারত তার সামরিক বাজেট প্রতি বছর বাড়াচ্ছে। বাজেটের একটি বিশাল অংশ খরচ হচ্ছে সীমান্ত নিরাপত্তায়। বাংলাদেশ সীমান্তে দ্রুত ফোর্স মোতায়েন করার জন্য ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ঘিরে রাস্তা নির্মাণ করেছে। কাটা তারারে বেড়া নির্মাণ তো শেষ হয়েছে বহু আগেই। যে চীন সীমান্তে কোনো গোলাগুলি হয়না। সেখানেও ভারত তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নতুন নতুন সেনা চৌকি নির্মাণ করেছে। সেখানে মোতায়েন করেছে ব্রামোস(ক্রুজ) মিসাইল। টাইমস অব ইণ্ডিয়ার খবরে এ সংবাদ ছাপানো হয়।

পাকিস্তান সীমান্তে ভারতে প্রস্তুতি ও কৌশল ভিন্ন রকম। সেখানে ভারতের নিরাপত্তা রক্ষীরা কোনো ব্যক্তিকে দেখামাত্র গুলি করে। যে কারণে সেখান থেকে গোলাগুলির ভিন্ন রকম খবর আসে। সেখানে কেউ মারা গেলে বলা হয়, "আজ ভারত সীমান্তে অনুপ্রবেশ কালে ৪ অনুপ্রবেশকারী নিহত।" কোনো কোনো সময়, "সেনা জঙ্গিদের গোলাগুলিতে ৩ জঙ্গি ১ ভারতীয় সেনা নিহত।"

ভারতের সাথে সীমানা রয়েছে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের। এসব সীমান্তে গোলাগুলির বা হতাহতের খবর সচরাচর পাওয়া যায়না বা শোনা যায়না। একবার ভুটানের রাজা তার দেশের ভিতর অবৈধ ভাবে আশ্রয় নেওয়া আসামের জঙ্গি সংগঠন আলফা ও উলফার ক্যাম্প গুড়িয়ে দিয়েছিলো। ভুটানের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে সে অভিযান পরিচালনা করেছিলো। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে রাজা নিজে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ভুটানের নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে রাজা একাজে হাত দিয়েছিলেন বলে জানায়।

মিয়ানমার সীমান্তে ভারত অন্যরকম কৌশল নিয়েছে। সেখানে তারা দেশটির সেনাবাহিনীকে রাতে ও দিনে পাহারা দেওয়ার মত সকল লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ভারত যুদ্ধাস্ত্র থেকে শুরু করে সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সকল উপকরণ সরবরাহ করে থাকে। মাঝে মাঝে উভয় দেশ যৌথভাবে পাহারা ও জঙ্গি ঘাটি উড়িয়ে দিতে সেনা অভিযান চালায়। মিয়ানমার নিজেও বাংলাদেশ দিক ঘেঁষে লম্বা কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। জানিনা আমাদের পূর্ব মুখি কূটনীতির সফলতা কিনা এটি। আবার মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে এদেশের রাজাকার ইসলামী জাতীয়তাবাদীদের কোনো বিবৃতি বা সমালোচনা নাই। ভারতীয় বিষ্ঠার গুনাগুণ বিচার করতে গিয়ে আজ তাদের এই অবস্থা।

ভারত তার সীমান্তকে যেভাবে মূল্যায়ন করে বাংলাদেশ তার সীমান্তকে সেভাবে মূল্যায়ন করে না । বাংলাদেশ চায় তার সীমান্ত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকুক। ২৪ ঘণ্টা লোকজন চলাচল করুক। বাংলাদেশ ভারতের সাথে যৌথ টহলে রাজী নয়। ভারতের মত বাংলাদেশ রাতে সীমান্তে নিরাপত্তার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারি করতে রাজি নয়। তবে বাংলাদেশ ফেনী সীমান্তে পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা শুরু করেছে।

যে হারে বিনা পাসপোর্টে বিনা ভিসায় ভারত ও বাংলাদেশের লোকেরা দালালদের সাহায্যে সীমান্ত অতিক্রম করছে। তার সঠিক সংখ্যা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না। এই দালাল চক্র ও তাদের সীমান্ত পারাপারের ঠিকানা নিয়ে বহু রিপোর্ট বাংলাদেশের দৈনিক গুলোতে ছাপানো হচ্ছে। সেই চক্র কি থেমে গেছে? উত্তর না। সর্বশেষ ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ নিয়ে উভয় দেশের মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। খোজ নিয়ে জানা যায়। ফেলানি নিজেও বিনা ভিসায় তার পিতাকে নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলো। সেদিন একই ঘটনা ঘটে। প্রাণ যায় ফেলানির। রাতের আধারে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিনোর পূর্ব সফলতা ফেলানিকে উৎসাহ যোগায়। কিন্তু সেদিন তা করতে ব্যর্থ হলে মারা যায় কিশোরী ফেলানী। যা হৃদয়বিদারক। ভারত প্রতিবছর বাংলাদেশিদের লক্ষাধিক ভিসা দেয়। তারপরও কেনো এই অবৈধ সীমান্ত পারাপার। বর্ডার হাট হয়েছে। তারপরও কেনো গরু পাচারের ঘটনা ভিডিওতে ধরা পড়ে। এসব নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে দুই দেশকে।

সীমান্তের বাস্তব চিত্র অস্বীকার করে এ সমস্যার সমাধান করা যায় না। সীমান্ত নিয়ে ভারত বিরোধী রাজনীতি কতটা যৌক্তিক। গরুচোর, মুরগি চোর ইত্যাদির মানবাধিকার রক্ষায় রাজনীতিবিদদের গলাবাজি মানায় না। ভারত সীমান্তে গুলি করবে না। সীমান্তকে অরক্ষিত রেখে এ ঘোষণা কোনো দায়িত্বশীল দেশ দিতে পারে না। এ ঘোষণা যদি দেওয়া হয়। তবে দেখা যাবে চোরা কারবারিরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে সীমান্তে চোরা কারবারিতে নেমেছে। এখন যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তের ওপারে যায়। তারা আরো সাহস সঞ্চয় করে সীমান্ত অতিক্রম করবে।

শোনা যায় ভারত থেকে বাংলাদেশে গরুর চালান আসে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে নারী,ইলিশ ও ঢাকাই জামদানীর চালান যায় ভারতে। ভারতের বক্তব্য এই পাচারকারীদের রোধেই ভারত সীমান্তে গুলি চালায়। অতীতে বিএসএফ প্রধান বলেছে, ভারত যে রকম পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশও ভারতের বিরুদ্ধে একই রকম পদক্ষেপ নিতে পারে। সুতরাং কয়েকটি ভারতীয় গ্রামবাসী মেরে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবি কেনো একই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে না। বিএসএফ প্রধানের কথার ইঙ্গিত তো সে রকমই দাড়ায়। তাহলে দেরি কেনো ? মরতে থাকুক সীমান্তের ওপারে থাকা ভারতীয় কৃষক শ্রমিক মজদুর। আর মারার পর সে দেশের মিডিয়া বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালাক । অন্যদিকে আমরা বলবো বাংলাদেশি নারী অথবা ইলিশ অথবা জামদানি পাচার করতে আসা কিছু পাচারকারীর উদ্দেশে বিজিবি তাদের গুলি করে মেরেছে। খবরের সূত্র এই লিংকে
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×