স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের মাধ্যমে অঙ্গীকার করেও বাহাস অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে তথাকথিত আহলে হাদিসরা নিজেরাই স্বীকার করে নিল তাদের মতাদর্শ সঠিক নয়। তাই আহলে হাদিসের ভ্রান্ত মতবাদে যারা বিশ্বাসী তাদের উচিত তওবা করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসরণে ইসলামের সঠিক ধারায় ফিরে আসা।
ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী তথাকথিত আহলে হাদিসের মুখোশ উন্মোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সমাবেশ ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ একথা বলেন। দলমত নির্বিশেষে দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম মনে করেন, ইসলামবিরোধী অপশক্তির এজেন্ট হিসেবে এদেশে যেমন কাদিয়ানী, দেওয়ানবাগী, রাজারবাগীসহ বিভিন্ন ফেতনা রয়েছে তেমনি একটি মারাত্মক ফেতনা হলো ‘জমিয়তে আহলে হাদিস’ নামের কথিত সংগঠনটি। আহলে হাদিস নামে এই ফেতনার মাধ্যমে কেউ যাতে ইসলামপ্রিয় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয় সমাবেশে। সেই সঙ্গে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানিয়ে ওলামায়ে কেরাম বলেন, এসব ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ত্বরিৎ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। নতুবা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর এবং ১ ও ২ ডিসেম্বর ২০১১ ঢাকা জেলার অন্তর্গত কেরানীগঞ্জ থানাধীন আইন্তা ইউনিয়ন খেলার মাঠে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে বিশাল ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ওয়াজ মাহফিলে প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মরহুম পীর সাহেব চরমোনাই-এর সুযোগ্য সাহেবজাদা হযরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোঃ ফয়জুল করীম। মাহফিলে ওলামায়ে কেরামগণ কুরআন-হাদিসের আলোকে যথাযথ বয়ান পেশ করেন। অপরদিকে গত ৩ জানুয়ারি আইন্তা আহলে হাদিস মসজিদ প্রাঙ্গণে কথিত জমিয়তে আহলে হাদিস-এর ব্যানারে ইসলামি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে আহলে হাদিসের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ ইলিয়াস আলী তার আলোচনায় মাজহাব মানাকে শিরক, চার মাজহাবের অনুসারীরা মুশরিক, কুরআন-সুন্নাহ অনুসৃত তাসাউফ ও পীর মুরিদিকে শিরক ও বিদআত, তাবলিগ জামায়াতকে মুশরিক ও পথভ্রষ্ট, আল্লাহ্্ আল্লাহ্্ জিকিরকে কুকুরের ঘেউ ঘেউ বলে আখ্যা দেয়াসহ নানান বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এমনকি অনেক হকপন্থিদের কাফের বলতেও তিনি দ্বিধা করেননি। তার আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশের গুটিকয় আহলে হাদিসের লোক ছাড়া আর কেউ মুসলমান নয়। এছাড়াও বক্তারা এমন কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেন যার কারণে সাধারণ
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এহেন পরিস্থিতিতে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্যোগে গত ২৮ জানুয়ারি সকাল ১১ টায় উভয় পক্ষ অর্থাৎ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম ও কথিত আহলে হাদিসের মধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ থানার আইন্তা খেলার মাঠে প্রকাশ্য বাহাস বা প্রমাণনির্ভর বিতর্কের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য সম্মেলন আহবান করা হয়। উল্লেখ্য, এ বাহাসের বিষয়টি উভয়পক্ষের মধ্যে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। যা গত ১৪ জানুয়ারি উভয় পক্ষের স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে সম্পাদিত হয়। সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী কথিত আহলে হাদিসের সঙ্গে বাহাসের জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম, পীর মাশায়েখগণ উপস্থিত হলেও আহলে হাদিসের লোকজন উপস্থিত না হয়ে টালবাহানা করতে থাকে। এমনকি তারা প্রশাসনের অনুমতি যাতে না পাওয়া যায় সে ব্যবস্থাও করে। ফলে সকাল ৮টা থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে থাকা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে হাসনাবাদ মদীনাতুল উলূম মাদরাসা মাঠে সমবেত করে ওলামায়ে কেরাম দীর্ঘসময় আহলে হাদিসের ফেতনা নিরসনে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সেখানে উপস্থিত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম উত্তেজিত জনতাকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন এবং ঘোষণা করেন, আহলে হাদিস নামের সংগঠনের কোনো লোক আজকে বাহাসে উপস্থিত হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে বেলা ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওলামায়ে কেরামের পক্ষে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আহলে হাদিস নামধারী ইসলামের দুশমনদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। হাসনাবাদ মদীনাতুল উলূম মাদরাসা মাঠে আয়োজিত সমাবেশে দেশের শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর সাহেবজাদা মুফতি সৈয়দ মোঃ ফয়জুল করীম, কামরাঙ্গীর চর মাদরাসার শাইখুল হাদীস মাওলানা সোলায়মান নোমানী, মারকাজুদ দাওয়া ওয়াল ইফতা-ঢাকার পরিচালক আল্লামা মুফতি আঃ মালেক, শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেবের সাহেবজাদা শাইখুল হাদীস মাওলানা মাহফুজুল হক, মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স- মিরপুর-এর খতীব মুফতি দেলওয়ার হোসেন, আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী-পীর সাহেব কারীমপুর ঝালকাঠী, অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ-পীর সাহেব খুলনা, ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি ইমাদুদ্দীন, আমলাপাড়া মাদরাসা নারায়ণগঞ্জের মুফতি নুরুল আমীন, তেজগাঁওয়ের উলুমিল ইসলামীর মুফতি মুহাম্মাদ আলী, চৌধুরীপাড়া মাদরাসার মুফতি বোরহান উদ্দিন, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মুফতি রফিকুল ইসলাম, রামপুরা জামিয়া কারীমিয়ার মাওলানা মকবুল হোসাইন, মুফতি হেমায়েতুল্লাহ, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী-ফেনী, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম- নোয়াখালী , মুফতি কেফায়েতুল্লাহ কাশফী-কুমিল্লা, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক-কেরানীগঞ্জ, হাটহাজারীর আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের খলিফা মাওলানা মুফতি বিল্লাল হোসাইন বিক্রমপুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক হাজি সুলতান খান, হাজি শামসুল হক, হাজি মোহাম্মদ হোসেন প্রমুখ।
সূত্র:
Click This Link
চরমোনাই পীরের সঙ্গে স্ট্যাম্পে সই করেও বাহাসে আসেনি আহলে হাদিসপন্থিরা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার আরও কিছু তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!
এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজকের কিছু উল্টা পালটা চিন্তা !
১।
কলকাতা গিয়ে টুকরা টুকরা হল আমাদের এক সন্ত্রাসী এমপি, কলকাতা বলা চলে তার ২য় বাড়ি, জীবনে কতবার গিয়েছেন তার হিসাব কেহ বের করতে পারবে বলে মনে করি না, কলকাতার অলিগলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
মাটির কাছে যেতেই..
মাটির কাছে
যেতেই..
ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও
স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!
ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন