somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটি গল্প, :) ১. একজন মহিলা ও তার জুতার গল্প ২. আমার একটি নাস্তিক্তাময় দিন।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
মহিলাটি নিঃশব্দে ট্রেনে উঠে পড়ল; যদি তার চোখে চোখ না পড়ে যেত, আমি বুঝতেও পারতাম না যে তার চোখ ছলছল করছিল। যেকোনো মুহূর্তে সেই অশ্রু যেন ঝরে পড়বে। আমি তার পায়ের দিকে তাকালাম, দেখলাম খালি পা, এক জোড়া জুতা তার হাতে। কোলে কম্বলে মোড়ানো একটি ছোট শিশু; শিশুটি কোন শব্দ করছেনা। মহিলাটি যাত্রীদের কাছে এসে নিচুস্বরে কি যেন বলছিল, কিন্তু তার কথা ফেরিওয়ালার কণ্ঠ ঢেকে দিচ্ছিল। মহিলাটি ট্রেনের এক পাশে আমার কাছাকাছি আসলো। তার পুরনো ব্যবহৃত ক্ষয়ে যাওয়া জুতা জোড়ার দিকে লজ্জিতভাবে তাকিয়ে আস্তে বলল, ‘কারও কি এটা লাগবে? কেউ কি আমার কাছ থেকে জুতা তা কিনবেন?’ সবাই বিব্রতভাবে না করে দিল, কেউ বুঝে পেল না কেনই বা কেউ ব্যাবহার করা, পুরনো, ক্ষয় হয়ে যাওয়া জুতা কিনবে। অন্য একজন মহিলা ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে তাকে দান করতে চাইল। কিন্তু মহিলাটি এমন কিছু গ্রহন করতে অস্বীকার করল; তার ঘুমন্ত শিশুর হাতের মধ্যে দেওয়ার পরও সে তা ফিরিয়ে দিল। সে তখন জুবুথুবু হয়ে পরাজিতের মত ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।



মহিলাটি তার মুখ এমনভাবে নীচু করে রাখল যেন অন্য যাত্রীরা তার চোখ থেকে গড়িয়ে পরা অশ্রু দেখতে না পায়। তখন একজন মহিলা তার কাছে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে বলল, ‘আমি তোমার কাছ থেকে জুতা জোড়াটা কিনব।’ তখন জুতা হাতে সেই মহিলাটি আশান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কিনবেন, তাইতো? আপনি কিনে নেবেন? দান না তো, আমি কিন্তু ভিক্ষা চাচ্ছি না।’ অন্য মহিলাটি তখন হেসে মাথা ঝাকাল, তারপর বড় একটি নোট তার হাতে গুজে দিয়ে জুতা জোড়া হাতে নিয়ে চলে গেল।



এইমাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনাটি দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় কুরআনের একটি আয়াত ঘুরতে লাগলোঃ

“যারা আল্লাহর পথে অবরুদ্ধ রয়েছে বলে ভূপৃষ্ঠে গমনাগমনে অপারগ সেই সব দরিদ্রদের জন্য ব্যায় কর; (ভিক্ষা হতে) নিবৃত থাকার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অবস্থাপন্ন মনে করে, তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণের দ্বারা চিনতে পার, তারা লোকের নিকট ব্যাকুলভাবে যাচ্ঞা (ভিক্ষা করে না) করে না এবং তোমরা শুদ্ধ সম্পদ হতে যা ব্যায় কর বস্তুতঃ সে সমস্ত বিষয় আল্লাহ সম্যকরূপে অবগত।” [সূরা বাকারাঃ ২৭৩]



আমি জানিনা এই মহিলার ঘটনা কি, টাকাটা তার কেন দরকার, অথবা টাকাটা দিয়ে সে কি করবে; আমি যা জানি তা হল তার চোখে যন্ত্রণার চিহ্ন, তার কাধে যেন অনেক ভারী বোঝার ভার। এই আয়াতটি আমি আগে বহুবার পড়েছি, এই আয়াত নিয়ে বহু আলোচনা শুনেছি, কিন্তু কখনও এই আয়াতের ওজন বুঝিনি; আজ বুঝলাম যখন আমার চোখের সামনে আয়াতটিকে এভাবে জলজ্যান্ত ঘটে যেতে দেখলাম।



আবারও আমার মাথায় নানান কথা ঘুরতে থাকল, এবার হাদিসের কথা। আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একজন লোক এসে রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, আমি কি আমার উট বেঁধে রাখব আর তারপর আল্লাহর উপর তাওাক্কুল রাখব, নাকি উটকে খোলা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর তাওাক্কুল রাখব? উত্তরে রাসুল (সাঃ) বললেন, ‘তাকে বেঁধে রাখ, এবং সেই সাথে আল্লাহর উপর তাওাক্কুল রাখো।’ [তিরমিযী]



মহিলাটির জন্য হাল ছেড়ে দেওয়াই সহজ ছিল, যদি সে এইটা ভাবত যে তার কাছে বিক্রি করার মতও কিছু নেই, কাজেই এমন কোন উপায় নেই যাতে সে কিছু টাকা পেতে পারে। তা সত্ত্বেও সে এই হাদিসটি বাস্তবায়িত করে দেখাল। তার কাছে যাই অকিঞ্চিৎকর ছিল তাই সম্বল করল, যেটা আসলে ট্রেনের যাত্রীদের কাছে মুল্যহীন ছিল। সে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখল, এবং এমন মুল্য পেল যা সে দর কষাকষি করে কখনই পেতে পারত না। যেমন, আল্লাহ সুবহানা ওয়াতা’আলা বলেনঃ



“...যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ সহজ করে দিবেন। আর তাকে তার ধারনাতীত উৎস হতে দান করবেন রিজিক; যে ব্যাক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আল্লাহ তার ইচ্ছা পুরন করবেনই, আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।” [সূরা তালাকঃ ২-৩]



ট্রেনের মধ্যে নিজস্ব ব্যাক্তিগত সমস্যা সমাধানে ব্যাস্ত এক অচেনা মহিলা আমাকে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কত গভীর শিক্ষা দিয়ে গেল। সেই মহিলার হাতে খুব সামান্য কিছুই ছিল, কিন্তু আমি এটা বলতে পারি, তার অন্তর পরিপূর্ণ ছিল। তার কাছ থেকেই আমারা বুঝতে পারি, সব কিছু দেওয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহর- তিনি তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী দেন, আমাদের আশা অনুযায়ী নয়। আমরা যদিও ভাবি, কোন পরিস্থিতিতে আমাদের হয়তো তেমন কিছুই করার নেই, আমাদের আবার ভেবে দেখা উচিত। কারণ আল্লাহ আমাদের সেই সামান্য পুঁজিই আমাদের আশাতীত হারে বহুগুনে বাড়িয়ে দিতে পারেন। এবং সবশেষে আমরা সেই সব অভাবী মানুষ সম্পর্কে চিন্তা করব যাদের কথা আল্লাহ বলেছেন, তাদের অন্তরের সেই ব্যাখ্যাতীত সৌন্দর্যের কথা ভাবব যেমন এই মহিলাটি দেখিয়েছেন।

লিখেছেনঃ রিহাব রামাদান, অনুবাদ ও প্রকাশনায়ঃ কুরআনের আলো ওয়েবসাইট
২.

এখন সন্ধা।

আমি বসে আছি নিলয় স্যারের বসার ঘরে । স্যার একটু ব্যস্ত। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই। আমার মাথা তা ঢুলু ঢুলু করছে। হালকা নেশা করেছি! বেশি না । বন্ধুদের সাথে ২ পেগ হুইস্কি খেলাম আজ। জীবনের প্রথম মদ্য পান । মদ্যপান খারাপ জিনিস না- ভালই লেগেছে! কেমন যেন নিজেকে ভাবুক ভাবুক লাগছে!

আমি সোফায় হেলান দিয়ে আজকের দিনটার কথা ভাবছি! আজ আমি নাস্তিক ধর্ম পালন করেছি! নিলয় স্যার আমাকে দীক্ষা দিয়েছেন নাস্তিকতার। উনি আমাদের জেলা শহরের কলেজের পদার্থের শিক্ষক। আমার সাথে ওনার অনেক ভালো সম্পর্ক। উনি তার কথা ও যুক্তি দিয়ে আমাকে ঘায়েল করেছেন। উনি বিজ্ঞান, দর্শন দিয়ে আমাকে বুঝিয়েছেন যে পৃথিবীতে ইশ্বর বলে কিছু নেই। ইশ্বরের বাস আমাদের মনে, আমাদের ভয়ে!

আমার ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা কম তাই ওনার সুক্ষ যুক্তির কাছে আমি পরাস্ত!
আমি বললাম-স্যার ওকে, আমি কিছু দিন নাস্তিক ধর্ম পালন করি তারপর বুঝে সিদ্ধান্ত নিব!

কিন্তু হয় প্রথম দিনেই আমি ঘায়েল! নাস্তিকতায় অনেক মজা! কোনো ভয় নেই!! জুজুর ভয় নেই, পরকালের ভয় নেই!! এই জীবন তাই তো সবাই চায়!

আজ সারাদিনে অনেক মজা করেছি একসঙ্গে এত মজা আমার সারা জীবনেও হয় নাই!! সুধু আমার মনে বার বার আসছিল যে- আমি যাই করি না কেন আমাকে কারো কাছে জবাব দিতে হবে না!

স্যার রুমে ঢুকলেন-"স্যরি মুহিন, তোমাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম! তারপর নাস্তিকতায় প্রথম দিন কেমন কাটল?
- অনেক অনেক মজা! নিজেকে আজ সত্যি স্বাধীন মনে হলো! সব আপনার জন্য স্যার!
হটাত স্যারের মুখ কুচকে গেল- তুমি কি ড্রিঙ্কস করেছ মুহিন?

আমি সলজ্জ হেসে বললাম- এই বেশি না, একটু! আজ মনে অনেক ফুর্তি ছিল, তাই আর কি!!

-তুমি কি আগেও ড্রিঙ্কস করতে?
-না স্যার।
স্যারের মুখটা মলিন হয়ে গেল- তারপর বল আজ সারাদিন কি কি করলে? কার সাথে মিশলে?
আমি আমার দিনের বর্ণনা শুরু কলাম- এমনিতে প্রতিদিন সকালে উঠে দাদার সাথে নামাজ পড়তে যেতাম, কিন্তু আজ উঠেছি সকাল ১০ টায়। কেমন যেন অলস্স্য লাগছিল। নাস্তা সেরে বাসা থেকে বের হতেই পাসের বাসার মিনা ভাবির সাথে দেখা।



ভাবি বললেন- মুহিন, তুমি আমার সাথে একটু আসনা, আমি একটু ভাইয়ের বাসায় যাব।



আমি বললাম-ঠিক আছে।



রিক্সায় আমি আর মিনা ভাবি পাসাপাসি বসলাম, হটাত আমার শরির শির শির করে উঠলো! মিনা ভাবির বয়স ২৮ বছর, ওনাকে আমি অনেক দিন ধরেই চিনি। আমাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ডের মত। আমি আগেও ভাবিকে তার ভাইয়ের বাসায় দিয়ে আসছি রিক্সায় করে কিন্তু আজকের মত এমন কখনো লাগেনি! আমার মনে হলো যে অনার সাথে আমার একটা কিছু হতে পারে! জানেন, এমন আগে কখনো মনে হয়নি...!!



স্যার বললেন- তারপর?



-তারপর আমি ভাবিকে তার ভাইয়ের বাসায় নামিয়ে এক বন্ধুর বাসায় গেলাম। বন্ধুটি বাসায় ছিল না। বাসায় তার বোন ছাড়া আর কেউ ছিলনা। তার বোনকে আমি আগে থেকেই চিনি ও আমাকে বসতে বলে ভিতরে গেল...



হটাত আমার মনে হলো এই খালি বাসায় তার সাথে আমার কিছু একটা হতে পারে! বিশ্বাস করুন স্যার, আমি এর আগেও অনেক বার এখানে এসেছি, খালি বাসায় মেয়েটিকে পেয়েছি কিন্তু কখনো এমন হয় নি! আজ কেন যেন সব কিছু অন্যরকম লাগছে! সবাইকে নিজের মনে হচ্ছে!



স্যার বললেন-হুমম..... তারপর?







-আমি যখন বুঝতে পারলাম এর বেশি কিছুক্ষণ থাকলে কোনো অঘটন করার সম্ভবনা আছে তখন আমি মেয়েটিকে না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম...



কিন্তু রাস্তয় যখন বের হলাম তখন মনে হলো বিশাল এক ভুল করেছি! বার বার মনে হচ্ছিল আমি ফেরত যাই বন্ধুর বাসায়। কিন্তু অনেক কষ্ট করে মনকে শান্ত করেছি।



পথে যেতে যেতে এক ফকিররের সাথে দেখা।



ও বলল- তাকে নাকি ১ টাকা দিলে ৭০ টাকার সওয়াব পাওয়া যায়..!



বেকুবের কথা শুনে বেশ এক চোট হাসলাম! গাধায় বলে কি!



বললাম- সওয়াব কে দিবে! আল্লাহ বলে কেউ নাই, আর আমায় দিবে সওয়াব! যা ব্যাটা ভাগ!



আমার কথা শুনে লোকটা ঘাবড়িয়ে গেল।



বলল- আপনে কন কি স্যার! আল্লায় নাই!! আপনে তো অনেক খারাপ লোক!



খারাপ লোক বলাতে মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল। দিলাম একটা থাপ্পর- ব্যাটা আমাকে ভালো খারাপ শিকাস! আল্লাহ শিক্ষাস!! যা তর আল্লাহরে বল আমারে স্বাস্তি দিতে!



জীর্ণ লোকটা আমার থাপ্পর খেয়ে পরে গেল, ঠোট কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।



স্যার বললেন-কাজটা তোমার ভাল হয়নি। তারপর?







-আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল- যে আমি জীবনে কারো গায়ে হাত তুলিনি সেই আমি একটা গরিব মিসকিন লোকের গায়ে হাত তুললাম!







আমি লোকটিকে ১০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বললাম- এই নে, ডাক্তার দেখাইস..



লোকটা এক গাদা রক্ত মিশানো থু ফেলে বলল- আপনের টাকা আমার লাগব না... আপনে আল্লা মানেনা। আমি খারাপ মানুষের কাছ থেইক্কা টাকা নেই না...



তার কথা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেল বললাম - তর আল্লার ক্যাথা পুরি! যে আল্লাহ নাই তার আবার মানা না মানা!!







তারপর আমি তারপর গেলাম সোহেলদের আড্ডায়। ছেলেটা একটু বখটে টাইপের। রাস্তায় দাড়িয়ে মেয়েদের টিজ করে। এখনও দেখি ও মেয়েদের স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছে। আগে এই সব টিজিং ফিজিং নিয়ে অরে অনেক উপদেশ দিতাম কিন্তু আজ নিজেরই টিজিং করতে ইচ্ছে হলো!



পুলিশের ভয় অবস্সো আছে কিন্তু আমার আপন চাচা এই থানার এম পি।পুলিশ আমার কচু করবে!



রাস্তায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে সোহেলের সাথে মিনু ভাভী আর বন্ধুর বোনের গল্পটা করলাম।



শেষে বললাম- দোস্ত, এদের কিছু দিনের মধ্যেই সিস্টেম কইরা ফালামু!



আমার এই মসলাদার গল্প শুনে সোহেল খুশি হলো বলে মনে হলো না।



সে আমাকে রেখে চলে গেল- কারণ টা আমি অবস্সো বুঝতে পারছি! সোহেলের একটা বোন আছে ইন্টারে পড়ে, আমার ওই বন্ধুর বোনের মত যদি তার বোনের দিকেও আমি কু নজর দেই-সেই ভয়ে ও চলে গেছে! ও আমার এবং আমার পরিবারের ক্ষমতা সম্পর্কে জানে! তাই ভয় পেয়েছে!



মনে মনে ভাবলাম- দাড়াও চান্দু, আমাকে অপমান করছ! তোমার আর তোমার বইনেরে আমি দেইক্ষা নিব।







তারপর দুপুরে এক বন্ধুর বাসি গিয়ে লাঞ্চ সারলাম, তারপর বার ড্রিঙ্কস করে এক ঘুম! তারপর সন্ধা হলে আমি আপনার বাসায় আসলাম!!



স্যার বললেন- মুহিন, তুমি আজ যা করেছ, কিছুই ঠিক কর নাই। নাস্তিক হয়েছ বলে যা খুশি করবা এটা তো ঠিক না।



আমি বললাম- স্যার, সারাদিন যা করলাম তা করা যাবেনা- এটা ও তো ঠিক না। আপনি আমাকে নাস্তিকতা শিক্ষা দিচ্ছেন, কোনো ধর্ম শিক্ষা দিচ্ছেন না। আমি যা খুসি করব- আমি কাউকে জবাব দিতে বাধ্য নই।আর প্রচলিত দেশীয় আইন আমাকে স্বাস্তি দিতে পারবে না!







স্যার অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, মনে হলো বুঝতে চেষ্টা করছেন যে-আমার মত শান্ত স্বভাবের ছেলের কি চরম বিবর্তন!







আমার মনে হলো- আমার মাথা থেকে নেশা নেশা ভাব দূর হচ্ছে।হটাত আজকের সারাদিনের কথা মনে হতেই লজ্জা পেলাম।



আমি বিনীত গলায় বললাম- স্যার, আপনার মনে আছে আপনার মা একবার অসুস্থ হয়েছিল, তখন আপনি আমাকে ঢাকা পাঠালেন আপনার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে হোস্টেল থেকে এখানে নিয়ে আসতে? আমি তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসতে রাত ৩ টা বেজে গিয়েছিল।



-মনে আছে।



-আচ্ছা সত্যি করে বলেন তো এখন কিছু হলে আপনি কি আমাকে আপনার মেয়েকে আনতে পাঠাবেন?



স্যার কোনো কথা বললেন না।



-আমি জানি আপনি পাঠাবেন না। কারণ আপনি এখন এর আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না! একজন নাস্তিক হয়ে আপনি একজন নাস্তিককে বিসসাস করতে পারছেন না! আফসোস!!







স্যার বললেন- নাস্তিক হলেই যে চরিত্র হীন হতে হবে তার কোনো কথা নেই। তুমি আজ যা করেছ তা ভুল ছিল।



- ঠিক বলেছেন স্যার! তবে আমি আপনার মত মহান মানুষ নই, আমার জানার সীমা অনেক কম। আমার ভিতরে পাপ করার টেন্ডেন্সী আগ থেকেই ছিল কিন্তু সুপ্ত অবস্থায়। আমি আল্লাহ কে ভয় পেতাম, কোনো খারাপ কাজ করেল মনে হত আল্লাহ আমাকে স্বাস্তি দিবেন কিন্তু আপনি আমার ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, আমার সুপ্তাবস্থা কাটিয়ে দিয়েছেন।







আমি হুমায়ুন আহমেদের একটা সাইন্স ফিকশন পড়েছিলাম। গল্পটা একরকম- ভবিষতের মানুষ তার ভিতরের খারাপ প্রবিত্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে, তারা রক্তে একটা চিফ ঢুকিয়ে দেয় যা তার খারাপ প্রবিত্তি গুলোকে সুপ্ত রাখে। একদিন কিছু ছেলে মেয়ে এক ঝরনার কাছে বেড়াতে গিয়ে তারা রক্ত থেকে সেই চিপ টা খুলে ফেলে। তাতে দেখা যায় যে তাদের মঝে কারো খুন করার প্রবিত্তি ছিল, কারো ছিল ধর্ষণ করার প্রবিত্তি! কিছুখন পর তারা খুনাখুনি করে মারা যায়। আপনি আমার সেই সুপ্ত চিফ টা খুলে দিয়েছিলেন।



স্যার বললেন- তুমি আমাকে ভুল বুঝনা, আমি তোমাকে পছন্দ করি তাই তোমাকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলাম।







আমি বললাম- স্যার, যে ধর্ম ভীতি আমার মত সাধারণ মানুষকে- যারা নিজের খারাপ প্রবিত্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা তাদেরকে অনেক খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। কিন্তু যারা আপনার মত মহান মনের মানুষ তাদের জন্য হয়ত ধর্ম ভীতির কোনো প্রয়জন নেই। কারণ আপনারা আপনাদের খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেন। আমি ঠিক করেছি আমি এখন থেকে আস্তিক ধর্মই পালন করব।কারণ যে পথ অনুসরণ করলে আমার নিজ বড় বনের মত ভাবি কিনবা ছোট বোনের মত বন্ধুর বোন আমার কাছে নিরাপর নয় সেই পথ আমি অনুসরণ করতে পারব না। আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন আর আমি জানি যদি আল্লাহ সত্যি থাকেন তবে আমি কখনো সর্গে যাবনা, তবুও আমি আশায় আছি..



কারণ আমার আম্মু এক বার একটা গল্প বলেছেন- এক খারাপ মহিলা মরুভূমির কাছ দিয়ে যাচ্ছিল, হটাত তার তৃষ্ণা পেল, সে একটা কুয়ার কাছে গিয়ে পানি পান করলো। হটাত দেখল একটা কুকুর কুয়ার পাশে পনির অভাবে মারা যাচ্চে। খারাপ মহিলাটির দয়া হলো, সে কিছু পানি কুয়া থেকে উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করলো। কুকুরটি বেছে গেল। এটা দেখে আল্লাহ অনেক খুশি হলেন এবং মহিলাটির সব পাপ ক্ষমা করে দিলেন।







হয়ত মনের ভুলে যদি কখনো এমন কোনো ভালো কাজ করে থাকি- এই আশায় আছি। করে ফেললে তো সর্গে যেতে পারব! আর যদি আল্লাহ বলে কেউ না থাকলো তবেও ক্ষতি নেই, আমি বোকার মত আল্লাহর ইবাদত করব। তাতে যদি আমার আসেপাশের লোকজন আমার খারাপ প্রবিত্তি থেকে বেছে থাকে! তাতেই আমার বোকামি সার্থক হবে। আপনার পথ হয়ত ঠিক আছে কিন্তু তা আমার মত সাধারণ মানুষের জন্য নয়। নাস্তিকতা পলান করতে হলে অনেক ভালো মনের মানুষের দরকার। আমার মত সাধারণ মানুষের মন থেকে যদি আপনি আল্লাহ ভীতি উঠিয়ে দেন তবে পৃথিবীটা নরক হয়ে যাবে। আশা করি আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।



স্যার বললেন- মুহিন, আমি বুঝতে পেরেছি সব জিনিস সব মানুষের জন্য নয়। সালফিউরিক এসিডকে সব পাত্রে রাখা যায় না! নাস্তিকতাও সবার জন্য নয়। আমার ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থেক।







আমি রাস্তায় নেমে গেলাম আকাশে তখন পূর্ণ পূর্নিমার চাঁদ আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম- আমায় ক্ষমা কর প্রভু।

(সংগৃহীত)
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×