somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যাঁচালের বিষয়ঃ লিখালিখি

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলের সময় থেকেই চিঠি লিখতাম প্রচুর। বড়বোন ঢাকায় চলে গেলো বিয়ের পরে, হলুদ খামে করে নিয়মিত চিঠি লিখতাম। ভাই চলে গেলো যুক্তরাষ্ট্রে। বাসার সবাই দলবেঁধে, একটা এয়ারমেইল খামে ভরে চিঠি পোস্ট করতাম। তারপর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম জবাবের জন্যে। লেখালিখির হাতেখড়ি বোধকরি সেসময় থেকেই হয়েছিল আমার।
চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণে একটা মহিলাদের পাতায় একটা গল্প লিখেছিলাম, তখন আমি পড়ি ক্লাস এইটে। বাসায় কাউকে না-বলে লিখেছিলাম লুকিয়ে। কেউ না দেখে মতো পোস্ট করে দিয়েছিলাম মোটা খামে ভরে। অবশ্যই ছদ্মনামে লিখেছিলাম, কারণ রোমান্টিক গল্প, বাসায় জানলে যদি মাইর দেয়!! প্রতিসপ্তাহে সেই পাতা উল্টিয়ে দেখতাম আমার লেখা এলো কিনা। আমার মনে আছে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি, ছাপানো হয়ে গেল সেই গল্পটা।
বুক ধুকধুক করেছিল সারাটাদিন, যদি পড়ে আম্মু বুঝে ফেলে, ওটা আমি লিখেছি? যদি আমার বড়বোন বুঝে ফেলে? ভয়ে ভয়ে গল্পটা নিজেও পড়েছিলাম। কী যে আনন্দ হয়েছিল ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা পড়তে, সেটা আজও ভুলিনি। কেউ বুঝে ফেলবে এই ভয়ে নির্বিকার থেকেছি। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে আবার, পরেরদিন আবারো পড়েছিলাম।
কাউকে বলতে পারিনি। লেখাটা জমিয়েও রাখিনি। মনেও নেই কোন ছদ্মনামে, কী লিখেছিলাম। শুধু মনে আছে তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি, এবং পত্রিকাটা পূর্বকোণ।
কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে আরেকটা গল্প লিখলাম। কাগজের পর কাগজে লিখে স্ট্যাপ্ল করে পড়তে দিলাম তিনজন বান্ধবীকে। প্রেমের গল্প, বলা অপেক্ষা রাখেনা। পড়ার পরে, অবাক কান্ড, আমার তিনজন বান্ধবীই আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ঘটনা কি সত্যি নাকি? আমি যে বানিয়ে এমন গল্প লিখতে পারি সেটা তারা বহুদিন পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারেনি। কী আর করা, সেই লেখাও আর ছাপতে দেওয়া হলোনা। কে জানে, বাসার সবাই যদি মনে করে ঘটনা সত্যি? ঐ লেখাও জমিয়ে রেখেছিলাম অনেকদিন, একদিন পরে ফেলে দিলাম।
ডায়রী লেখা শুরু করলাম স্কুলের শেষের দিকে। একবার বড়বোনের কথাবার্তায় বুঝলাম সে আমার ডায়রীর নিয়মিত পাঠক। ইতি হলো ডায়রী লেখার। আবার ডায়রী লেখা শুরু করলাম রোকেয়া হলে এসে। তখন নিজের একটা লকার ছিল। লেখার মত অনেক টপিকও ছিল। তবে সময় ছিলনা যে, নিয়মিত লিখবো। বিশেষ একজন একদিন সেই ডায়রী লেখা নিয়ে কিছু খোঁচা দিলেন। আমার এমন ফেভারিট ব্যাপার নিয়ে কটুকাব্য সইতে না-পেরে সেই ডায়রীকে দিলাম অগ্নিবিসর্জন।
তবে চট্টগ্রাম থেকে আমার দুই বান্ধবী আমাকে চিঠির পর চিঠি লিখতো। রোকেয়া হলে একবার চিঠি হারিয়ে গিয়েছিল। আমি অবর্ণণীয় কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। এরপর থেকে চিঠি আসতো আমার ডিপার্ট্মেন্টে্র ঠিকানায়। ব্যাচ, নাম, রোল নাম্বার ধরে বিশাল বিশাল মোটা খামে চিঠি আসতো। এক পর্যায়ে প্রোগ্রাম অফিসার আমাকে প্রশ্ন করাও ছেড়ে দিলেন, এত কিসের চিঠি? আমাদের ক্লাসের সবার জন্যে খুব হাসির ব্যাপার ছহিল আমার চিঠি আসা-টা, আমাকে বেশ পচাতো এই নিয়ে। তখন কি আর লেখার টপিকের কমতি ছিল? আজ প্রেম তো কাল ছ্যাঁকা, পরশু এক্সাম, তরশু ট্রেন জার্নি…কত্তো কী!!
একদিন যখন প্রেম হয়ে গেলো, লেখাটেখা কমে গেলো। এক্কেবারে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলো চিরকুটের মত প্রেমপত্রের মধ্যে। ডায়রী লেখাটাও বাদ হয়ে গেলো, সেটা তো লিখেইছি।
চাকরি ছেড়ে দিলাম, ভাইয়ের ব্লগে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, বাহ, বেশ দারূণ প্ল্যাটফর্ম তো, লেখালিখি করার!!
আমার ভাই আর ব্লগ লিখেনা, কিন্তু আমি মাঝে মাঝে এখনও আজাইরা প্যাঁচাল পেড়ে যাই। লিখতে ভালই লাগে, তাই লিখি। আমার লেখা পড়তে কার কেমন লাগে, সেটা ভাবতে গেলে তো আর লেখাই যাবেনা। :)
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×