somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়াবার অবৈধ ব্যবসার ফাঁদে নিরীহ মানুষ

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানীর নারিন্দার একটি মাদ্রাসার আলিম শ্রেণীর ছাত্র মিজানুর রহমান। স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে মিজানকে। রিমান্ডে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে মিজান পুলিশকে জানান, কম পরিশ্রমে বেশি টাকা আয়ের লোভে তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে শুধু পৌঁছে দিয়ে কিছু টাকা পেতেন। পরে পুরাদস্তুর ব্যবসায় নামেন। ইয়াবা সিন্ডিকেটে তাঁর নাম 'বাবা হুজুর'।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এই মিজানের মতো অনেকেই বাহক হিসেবে কাজ শুরু করে এখন জড়িয়ে পড়েছেন ইয়াবার সিন্ডিকেটে। ইয়াবা বহনকারী হিসেবে কাজ করা এসব লোকের ইয়াবা সিন্ডিকেটে বলা হয় 'গাদা'। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী এক কর্মকর্তা জানান, গাদার সংখ্যা বর্তমানে বাড়ছে।
মিজানকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাতিয়ার রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, ক্রেতার বেশে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় ইসমাইল নামে একজনকে। জিজ্ঞাসাবাদে ইসমাইল জানান, নারিন্দায় মিজানের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেওয়া তাঁর কাজ। শত ও হাজার হিসাবে টাকা পায় ইসমাইল। সেই সূত্রে মিজানকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায় তাঁর ইয়াবা সিন্ডিকেটে জড়ানোর গল্প। দাখিল পাস করে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ঢাকায় আলিম শ্রেণীতে পড়তে আসেন মিজান। বাল্যবন্ধু টেকনাফ এলাকার নুর হোসেন মানিকের মাধ্যমে প্রথম দিকে কিছু ইয়াবা ঢাকায় নিয়ে আসতেন তিনি। পরে ঢাকায় খুচরা ক্রেতা সংগ্রহ করতে থাকেন মিজান। জুটে যায় পাঁচজন বহনকারীও। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় গ্রামের বাড়ি হওয়ায় ইয়াবা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে জড়ানো সহজ হয় মিজানের। কারাগারে পাঠানোর পর মিজানের বর্তমান অবস্থা জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা কালের কণ্ঠকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে যেসব ইয়াবা মাদকের বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁদের বেশির ভাগই নিজেদের বহনকারী বলে দাবি করেন। ইয়াবা বহনকারীদের বেশির ভাগের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোর পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, গত বছরের ৯ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা মধ্যপাড়া (গরীবের বাজার) হাজী আবুল হোসেনের বাসায় অভিযান চালিয়ে সহযোগী ইয়াছিনসহ গ্রেপ্তার করা হয় আনোয়ার হোসেন নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে। দুই হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় তাঁদের কাছ থেকে। ইয়াবার অপরাধ জগতে আছে কক্সবাজারের আনোয়ার, আরেকজনের নাম পিচ্চি আনোয়ার।
আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি এক সময় ইয়াবার বহনকারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে টাকার লোভে নিজেই ব্যবসা শুরু করেন। এক হাজার ইয়াবা ঢাকায় নিয়ে এলে পাওয়া যায় মাত্র এক হাজার টাকা। আর রাজধানীতে ইয়াবার মিনি চক্র গড়ে ১৮০ থেকে ৩০০ টাকায় এনে খুচরা বিক্রি করা যায় প্রতি পিস ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ইয়াবা ডিলারদের হয়ে কাজ করলে প্রতি পিস বিক্রিতে কমিশন দুই টাকা। আর মাসিক পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন। বাসা ভাড়াও দেন ডিলাররাই। আনোয়ারের দেওয়া তথ্যমতে, কক্সবাজারের প্রায় ১০০ পেশাদার বহনকারী ইয়াবার চালান নিয়ে রাজধানীতে আসে। এরমধ্যে নারী আছে ১৫-২০ জন। কক্সবাজারের দক্ষিণ তারাবনিয়ারছড়ার ছেলে আনোয়ার ইয়াবার ব্যবসায় জড়িয়েছে চার বছর আগে। শেষবার গ্রেপ্তারের আগে আনোয়ারের মাসিক আয় ছিল ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা।
গত ১৭ জানুয়ারি কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে র‌্যাব-৩ সহযোগী ইমাম হোসেনসহ টেকনাফের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক শামসুল আলমকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে শামসুল জানান, এলাকার এক অপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে প্রতি হাজারের জন্য এক হাজার টাকার চুক্তিতে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসেন তাঁরা। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, ইয়াবা ব্যবসা করেন না এমন অনেকেই টাকার জন্য ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় আসেন।
রাজধানীতে সর্বশেষ বড় ইয়াবা চালানটি ধরা পড়ে গত ২৬ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর ধলপুর লিচুবাগান এলাকায়। ওই দিন দুই হাজার ৯০০ পিস ইয়াবাসহ র‌্যাব-১০ গ্রেপ্তার করে শাহ আলম ও সাথী বেগম নামে দুজনকে। যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় শাহআলমকে তিন দিন ও সাথীকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম জানান, ধলপুর লিচুবাগান মসজিদের পাশে ৩৫/৮ নম্বর, সুতিখালপাড় ঠিকানায় বাসা ভাড়া নিয়ে ইয়াবার ব্যবসা করছিল সাথী। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার তিতাসে। তিনি এক সময় বহনকারী হিসেবে কাজ করলেও এখন নিজেই বড় চালান নিয়ে আসেন। বেপরোয়া জীবনে অভ্যস্ত সাথী কক্সবাজার থেকে সুমন নামে একজনের সঙ্গে মিলে এই ব্যবসা চালাচ্ছেন। শাহআলম তাঁর নিয়মিত খদ্দের ও সহযোগী।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশার মতে, সীমান্ত এলাকার মানুষের দারিদ্র্য এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার সুযোগ নিচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। পরে সামান্য পরিমাণ ইয়াবা বহনের অপরাধে ধরা পড়লে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয় বহনকারীদের।
http://www.dailykalerkantho.com/


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×