somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অটিজম সচেতনতা ও ভাটি বাংলার বাস্তবতা।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতকাল ২ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হল ৬ষ্ঠ অটিজম সচেতনতা দিবস। আমাদের দেশে এই দিনটি রাষ্ট্রীয় কিছু আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেশ কয়েক বছর ধরে পালন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার অটিজমের উপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করেছেন যা আমাদেরকে আশার আলো দেখাচ্ছে। গরিব দেশে সাধারন প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুরাও রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে, এর জন্য সরকারের কর্তাব্যাক্তিরা সাধুবাদ পাবেন। যদিও দেশে কতজন অটিস্টিক শিশু আছে তার কোন সঠিক হিসাব তাদের কাছে নেই! উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে ২০ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত সে হিসাবে আমাদের মত জনবহুল দেশে এর সংখ্যা সহজেই অনুমেয়। অটিজম কি তা শহুরে মানুষজন কম বেশী জানলেও প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষরা এখনও এটিকে ঈশ্বর প্রদত্ত শাস্থি হিসাবেই ধরে নেয়। তাই সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে রাষ্ট্রের আরও যত্নবান হতে হবে।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হওয়ার দরুন সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ বা যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না, তারা তাদের মত করে চলতে বা বলতে চেষ্টা করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর জন্য আমাদের ত্রুটিপূর্ণ জিনকেই দায়ী করেছেন, এ ক্ষত্রে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে আরও নতুন কিছু বের করে এনে অটিজমকে আরও ভালো ভাবে জানা যায়। শিশুদের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ ৬ মাস বয়সেই বোঝা যেতে পারে, তিন বছর বয়সের মধ্যে তা পরিপূর্ণরূপে দেখা যেতে পারে যা পরবর্তীতে সারাজীবন স্থায়ী হয়।

অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সমাজিক আচার ব্যাবহারে সাবলিল নাও হতে পারে। তারা অনেকটা একা থাকতে ভালবাসে কিন্তু তারপরেও তারা বন্ধুত্বের বন্ধনে আবধ হয় তবে তা তৈরি হয় তাদের স্বীয় চাহিদা মোতাবেক। তাদের কাছে বন্ধুর সংখ্যার চেয়ে বন্ধুর সাথে নিজেকে খুঁজে ফেরার প্রবনতাই বেশী চোখে পড়ে। অপরিচিত মানুষের চোখে চোখ না রাখা, ইতস্তত বোধ করা, আমতা আমতা করে কথা বলার চেষ্টা করা তাদের স্বাভাবিক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশী শিশু সঠিক ভাবে কথা বলতে পারে না। তারা হয়ত মাথা ঘোরাতে থাকবে, হাত উচু-নিচু করতে থাকবে, উচ্চ স্বরে কথাও বলতে পারে। তারা দৈনন্দিন একটা রুটিনের মধ্যে চলতে পছন্দ করে এর হের ফের হলেই রাগ করে থাকে। সময়মত খাবার খাওয়া, গোসল করা, প্রতিদিন একই রকমের কাপড় পরা তাদের রুটিনের মধ্যে পড়ে। অটিস্টিক শিশুরা তাদের পছন্দনীয় ক্ষেত্রে খুবই মেধাবী হয়ে থাকে, কেউ হয়ত খুব ভালো ছবি আঁকতে পারে বা কেউ হয়ত খুব ভালো পিয়ানো বাজাতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে ভালো যত্ন নিলে অটিস্টিক শিশুরা সাবলীলভাবে জীবন যাপন করতে পারে। তাই রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবার তথা সমাজের সচেতন ভুমিকা অটিস্টিক শিশুদের জীবনে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে। তাদেরকে সমাজের বোঝা না ভেবে লুকানো প্রতিভা কাজে লাগিয়ে মানব সম্পদে পরিনত করা যেতে পারে, তারজন্য চাই শুধু একটু ভালবাসা আর তাদেরকে বোঝার সক্ষমতা।

সুনামগঞ্জের মত প্রান্তিক এলাকায় যেখানে স্বাভাবিক অবকাঠামই গড়ে উঠেনি সেখানে অটিস্টিক শিশুদের জন্য কোন কিছু না থাকাটা আস্বাভাবিক না। এক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুদের পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো সামাজিক সংস্থা এখানে মুখ্য ভুমিকা পলন করতে পারে। তারা অটিস্টিক শিশুর পরিবারদের সাথে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন করে তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতা আদান প্রদানের ব্যাবস্থা করতে পারে। আমরা ফাউন্ডেশন একটু সক্ষম হয়ে উঠলে সুনামগঞ্জ তথা ভাটি এলাকায় এরূপ একটি ব্যাবস্থা গড়ে তুলবে যার মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে তাদেরকে সমাজের যোগ্য অংশীদার করে তোলা যায়। আমাদেরকে জানতে হবে অটিজমে আক্রান্ত প্রায় সব শিশুরা বড় হয়ে উঠার পরও একা একা থাকার যোগ্য হয়ে উঠে না, তাদেরকে সারাজীবন অন্যের তত্বাবধায়নে থাকতে হয়। আর তাই অটিস্টিক শিশু আছে এমন পরিবারকে প্রস্তুত ও সচেতন হতে হবে কারন তারাই তাদের শেষ ও একমাত্র আশ্রয়স্থল। ধন্যবাদ।

মোঃ জাকারিয়া জামান তানভীর
প্রেসিডেন্ট, আমরা ফাউন্ডেশন
[email protected]


২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×