ঘটনা ২: সামিরা বেগম ইদানিং খেয়াল করছেন, ডান হাত দিয়ে চুল আচড়ানোর সময় হাতের সাথের ঘাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হচ্ছে। তিনি কোন আঘাত পাননি আর তাই ভেবেছিলেন ব্যথাটা হয়তো এমনিতেই চলে যাবে। কিন্তু দিন দিন ব্যথাটা বেড়েই যাচ্ছিল। ব্যথার ঔষধ খাওয়া শুরু করলেন তিনি। কিছুদিন পর দেখলেন, এখন আর তিনি ডান হাত দিয়ে চুল আচড়ানো বা পিঠ মুছতে পারছেন না।
উপরের আলোচিত দুই ব্যাক্তির সমস্যার সূচনা ভিন্ন হলেও, দুই জনই ফ্রোজেন শোল্ডার নামক সমস্যায় ভুগছেন। আসুন তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক ফ্রোজেন শোল্ডার কি এবং এই রোগের কি ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন।
ফ্রোজেন শোল্ডার:
ফ্রোজেন শোল্ডারকে বাংলায় বলতে পারি, হাতের সাথের ঘাড়ের জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। এটি ঘাড়ের জয়েন্টের প্রদাহজনিত রোগ। এ ক্ষেত্রে জয়েন্টের মধ্যকার সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামক এক ধরনের তরল পদার্থ কমে যেতে থাকে। ফলে শোল্ডার জয়েন্ট ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যেতে থাকে। ফ্রোজেন শোল্ডারকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় শোল্ডার অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বলা হয়। এই রোগ ৪০-৬০ বছর বয়স এবং মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।
উপসর্গ সূমহ:
-হাতের সাথের ঘাড়ের জয়েন্টে ব্যথা
-জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া
-জয়েন্টের নাড়ানোর ক্ষমতা কমে যাওয়া
-আক্রান্ত পাশে শুতে না পারা
-হাতে দূর্বলতা চলে আসা ইত্যাদি
ফ্রোজেন শোল্ডার কেন হয়:
এই রোগের প্রধান কারন এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন-
-ডায়াবেটিস থাকলে
-ঘাড়ের জয়েন্টে আঘাত পেলে
-কোন কারনে জয়েন্ট অনেকদিন নাড়ানো না হলে (যেমন: হাত ভাঙ্গা)
-ফুসফুস, হূদপিন্ডের বা হাতের অপারেশন হলে
-থাইরয়েডের রোগ থাকলে
চিকিৎসা পদ্ধতি:
ফ্রোজেন শোল্ডার রোগীর কাছে ব্যথা প্রধান সমস্যা মনে হলেও, তার মূল সমস্যা হলো জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। রোগী যত ব্যথার ভয় করে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখবে, তার জয়েন্ট তত বেশি শক্ত হয়ে যাবে। তাই রোগীকে বুঝাতে হবে, ব্যথার ঔষধের চেয়ে হাত নাড়ানোর চিকিৎসা করা বেশি জরুরী। এ ক্ষেত্রে রোগীর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি হলো সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
ফ্রোজেন শোল্ডারের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট রোগীর রোগ বর্ণনা, ফিজিক্যাল টেষ্ট, এবং ফিজিওথেরাপিউটিক স্পেশাল টেষ্ট এর মাধ্যমে রোগীর জয়েন্টের সমস্যা সূমহ নির্ণয় করে থাকেন। অত:পর রোগীর সমস্যানুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা বা ট্রিটমেন্ট প্লান করেন এবং সেই প্লান অনুযায়ী নিন্মোক্ত পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।
-ম্যানুয়াল থেরাপি
-মোবিলাইজেশন
-মুভমেন্ট উইথ মোবিলাইজেশন
-থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ যেমন: স্পাইডার এক্সারসাইজ, পুলি এক্সারসাইজ, পেন্ডুলার এক্সারসাইজ ইত্যাদি।
-ইনফিলট্রেশন বা জয়েণ্ট ইনজেকশন
-ইলেকট্রোথেরাপি বা অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা (যেমন: IRR, UST) ইত্যাদি।
-কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রাগ্স বা ঔষধ
রোগীর জয়েন্টের সমস্যা দুর করে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা অপরিসীম। তবে ফিজিওথেরাপি'র নামে শুধূমাত্র মেশিন যেমন: হিট, ভাইব্রেশন, ইলেকট্রিক্যাল ষ্টিমুলেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে যে চিকিৎসা দেয়া হয় তা অপচিকিৎসার সামিল। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, ব্যাথামুক্ত জীবন যাপন করুন।
ডাঃ মাহমুদুল হাসান আল ইমাম
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিষ্ট,
অর্থোপেডিক বিভাগ, সি. আর. পি.
সাভার, ঢাকা।
ই-মেইল: [email protected]