১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট ভারতের হায়দারাবাদে প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের এ জামায়াতে ইসলামীর। মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত এ দলের নাম ছিল ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা যখন প্রায় নিশ্চিত ঠিক, সেই সময়ও এ মওদুদী বলেছিলেন, ভারতের স্বাধীনতার চেয়ে এ মুহূর্তে বেশি জরুরি হল এখানে হুকুমতের আইন প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পকিস্তানে জামায়াত শাখার আহ্বায়ক করা হয় খুররম শাহ মুরাদকে। মাওলানা আব্দুর রহীম, ব্যারিস্টার কোরবান আলী ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক। আব্দুর রহীম কারমাইকেল কলেজ থেকে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসেন গোলাম আযমকে। পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মাধ্যমে শুরু করে দলটি। স্বাধীনতার কয়েকদিন আগে ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে পাটনায় জামায়াতের সম্মেলন করেন মওদুদী। আগস্টে স্বাধীনতার পর মওদুদী পাকিস্তানের লাহোরে একটি বস্তিকে ‘দারুল ইসলাম’ ঘোষণা করে সেখানে অবস্থান নিতে থাকেন। এখান থেকেই দল পরিচালনার কাজ আর উগ্রবাদী সব বইপুস্তক প্রকাশ শুরু করেন।
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের আগে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার প্রায় সবাই (৯০ ভাগ বাঙালিসহ) দেশ বিভাগ এবং মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে ছিল। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ছিল পাকিস্তান তত্ত্বের ঘোর বিরোধী। জন্মের শুরু থেকে জামায়াতে ইসলামী চলেছে উল্টো স্রোতে। মাওলানা মওদুদী এমন একজন ইসলামী দলের রাজনৈতিক প্রধান যিনি সর্বপ্রথম বলেছিলেন, ‘মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের কোনো প্রয়োজন নেই।’
কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির কিছুদিনের মধ্যেই জামায়াত হয়ে গেল চরম পাকিস্তান প্রেমিক। যেন গিরগিটির রং বদলানোর আরও একটি উদাহরণ। মাওলানা মওদুদী তার পার্টি ‘জামায়াতে ইসলামী’কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ধর্মের নামে একাধিক দাঙ্গা সৃষ্টিতেও দ্বিধাবোধ করেননি। তার নির্দেশ এবং মদদে পাকিস্তানে হাজার হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে। ১৯৫৩ সালে মাওলানা মওদুদী তার লেখা ‘ছধফরধহর চৎড়নষবস’ বইয়ে ‘আহমাদিয়া’ সম্প্রদায়কে ‘অমুসলিম’ বলে ঘোষণা করেন। এর সঙ্গে পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো সরকারকে ‘আহমাদিয়া’ সম্প্রদায়কে ‘অম্সুলিম’ ঘোষণা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। পরবর্তীকালে এই বিষয়টিকে পুঁজি করেই মাওলানা মওদুদী সারা পশ্চিম পাকিস্তানে সুন্নি মুসলিম এবং আহমাদিয়াদের মধ্যে এক রক্তাক্ত দাঙ্গা বাধিয়ে দেন। শুধু পাঞ্জাব প্রদেশেই দুই হাজার ‘আহমাদিয়া’ সম্প্রদায়ের মানুষ মারা গিয়েছিল সেই রক্তাক্ত দাঙ্গায়। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মদদদানের অভিযোগে পাকিস্তানের মিলিটারি কোর্ট মাওলানা মওদুদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মৃত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত করেন এবং ১৯৫৫ সালে বহাল তবিয়তেই জেল থেকে বেরিয়ে আসেন মওদুদী। গণহত্যার বীজ বপনকারী সেই নরপিশাচের শাস্তি দিতে পারেনি পাকিস্তান। আর এভাবেই উপমহাদেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে উত্থান ঘটেছিল আজকের এই জামায়াতে ইসলামীর।
আলোচিত ব্লগ
আমার মায়ের চৌহদ্দি
আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু
খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!
নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?
শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিউ ইয়র্কের পথে.... ১
আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন