somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নারীর পদচারণা

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেবা-শুশ্রূষা করার ব্যাপারে সর্বদা নারীকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় বটে। কিন্তু, যেই নারী এখন সেবা-শুশ্রূষা করার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। সেই নারীকেই কিনা আজ এই কার্যক্রম পর্যন্ত আসার জন্য বা সঠিক স্বীকৃতি আদায় এর জন্য অনেক বাধার সম্মুখীন আর সংগ্রাম করতে হয়েছে। খৃষ্ট জন্মের পূর্বে থেকেই অবশ্য নারীরা লোকজনের সেবা করে আসতো।

কিন্তু চার শতাব্দীতে এথেন্সে, অ্যাগ্ন্মোডাইস-কে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কারন, খুবই সাধারণ ছিল। তিনি ডাক্তারি করেছিলেন বলে। পরবর্তীতে এর ধারা অনুসারে দ্বাদশ শতকে প্যারিসে জেকোবা ফেলিস নামে এক একজন মহিলাকে পুরোপুরিভাবে ধর্মচ্যুত করা হয়। কারন আর কি, সেই একই অপরাধ। তিনিও নারী হয়ে কেন চিকিৎসা করলেন। এটাই নাকি ছিল অপরাধ। এর পূর্বে একাদশ শতকে অবশ্য আরও একটি ঘটনা ঘটে যায়। ট্রোটুলা সেলার্নোতে চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যাপক হয়েছিলেন। নারী ও শিশুসন্তানদের রোগের উপর লেখা তার একটি গ্রন্থ ৫০০ বছর যাবত চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি অন্যতম উৎকৃষ্ট গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হতো। কিন্তু ভেক্টরিয়ান যুগে যখন চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাস রচনা হল। তখন ট্রোটুলাকে দেখানো হল একজন পুরুষ হিসেবে। তাদের হইতবা একটু সমস্যাই হয়েছিলো। যদিও এর সুবিধা পূর্বেই গ্রহন করে নিয়েছিল। তবে, একজন নারী যে এত ভাল একটি গ্রন্থ লেখতে সক্ষম হয়েছিল, এ নিয়ে হইতবা ভেক্টরিয়ানদের সন্দেহের মাত্রা ছিল না। সে ভুলটা অবশ্য আধুনিক যুগে এসে ধরা পড়েছে অনেকটাই।

চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত নারি চিকিৎসকদের শাস্তি দিয়ে স্তব্ধ করে দেবার প্রবণতা খুব ভাল আকারেই পরিলক্ষিত হয়। শুধু ধর্মযাজক রাই নয়, সাথে সাথে নতুন গঠিত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ডাক্তাররাও নারীদের এই অর্থনৈতিক সচ্ছলতা মেনে নিতে পারছিল না। তাছাড়া চিকিৎসাশাস্ত্র অনেক কঠিন, এমন অজুহাত দিয়ে নারীকে এই শিক্ষা থেকে বিরত রাখা হত। তবে নারীরা এসব শিক্ষাক্ষেত্রে সুযোগের অভাবে অভিজ্ঞ মহিলাদের কাছ থেকে ধাত্রীবিদ্যার ব্যাপারে পারদরশি হয়। এবং পরবর্তীতে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল তার বাস্তব রূপ প্রদান করেন।

উনবিংশ শতাব্দীতে নারীরা প্রথম ডাক্তার হিসেবে মর্যাদা পায়। তবে ইংল্যান্ডের মেডিকেল কলেজ থেকে প্রথম ডিগ্রি পাওয়া নারী চিকিৎসক জেমস বেরি। কিন্তু তিনি ছেলে পরিচয়ে (মিরান্দা স্তুয়ার্ট) ভরতি হয়েছিলেন। কারন মেয়েদের সে সময়ে ভরতি করা হত না। তবে তিনি ১৮১২ সালে ডিগ্রি শেষ করে আর্মিতে যোগদান করেন। কিন্তু তিনি যে নারী ছিলেন সেটা অনেকেই মানতে নারাজ। হইতবা মদ্ধলিঙ্গা ছিলেন। এই রহস্যর সমাধান এখনও অসমাপ্ত।

জেমস বেরিকে বাদ দিলে পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম নারী চিকিৎসক ছিলে এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েল। তবে ডাক্তার হওয়াটা তার পক্ষে ছিল অসম্ভবের মতো। অর্থ তো ছিলই না আবার নারী হিসেবে ভর্তি হবার একটা ব্যাপার তো থেকেই যায়। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যবশত নিউ ইয়র্কের জেনেভা-র একটি ছোট মেডিকেল তাকে নিতে সম্মত হল। এখনেও আছে আরেকটি গল্প…
তার ভর্তির ব্যাপারে কলজের অধ্যাপক সব ছাত্রদের মতামত চাইলেন। প্রথমে ছাত্ররা সবাই ব্যাপারটাকে হাস্যকর হিসেবে সম্মত হল। হুম, বহু বছর বাদে এলিজাবেথের ক্লাসে আসা নিয়ে তার এক সহপাঠী এমনই লেখেছিল।

“অধ্যাপকের আহবানে যখন একটি মেয়ে ক্লাসে ঢুকল,
আর তিনি মেয়েটিকে সবার সাথে পরিচয় দিয়ে বললেন যে, এটা
মিস এলিজাবেথ। ----সারা ক্লাস হয়ে রইলো অবাক নিশ্চুপ----
পুরো সময় ধরে ক্লাসের লেকচারে শুধু ছাত্রীটিই নোট নিচ্ছিল।
অধ্যাপক যখন চলে জাচ্ছেন তখন ছাত্রিটিও সাথে সাথে প্রস্থান
নিচ্ছে। আর লেকচার শেষে বসে থাকা সেই মাস্টারমশাইয়ের
প্লাটফরমের উপর।”


তবে যাই হোক ১৮৪৯ এর দিকে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে প্যারিসে চলে যান। কারন তাকে সেখানে প্র্যাকটিস করতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে তিনি নারী ও শিশু বিষয়ক অনেক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তার আত্মজীবনী “পায়ওনিয়ার ওয়ার্ক ইন ওপেনিং মেডিকেল প্রফেসনাল টু উইম্যান” প্রকাশিত হয় ১৮৯৫ তে। এভাবেই এলিজাবেথের মাধ্যমে অনুপ্রানিত হয়ে পরবর্তীতে গেরেট নামক আরেকজন নারী বহু বাধার পর ডাক্তার হবার যোগ্যতা অর্জন করে।

এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের ডাক্তার হবার পর প্রায় ১৫০ বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৫জন নারী নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন। এলিজাবেথ যে দেশ থেকে প্রথম নারী চিকিৎসক হন, ১৯৭০ সালে প্রায় ৮শতাংশ নারী এর সুযোগ লাভ করে। ২০০০ সালে যার মাত্রা বেড়ে দারিয়েছে ৪৩ শতাংশে। তবে ঐতিহ্য বলে কথা। ভাঙ্গতে একটু সময় তো লাগবেই। এভাবেই বিশ্বের সব দেশে বেড়েই চলেছে আমাদের নারী চিকিৎসকের সংখ্যা আর অবদান।

ওহে নারী
শাস্ত্র তোমার গগনচুম্বী,
লয়ে যাও তুমি মোরে
সেবার দ্বারে তোমার আচল
বইছে, সারাজীবনের তরে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×