somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গনতন্ত্রের সহজ পাঠ

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মাঝে অনেক বেশী আলোচিত বিষয় হলো গনতান্ত্রিক অধিকার। আসলে গনতান্ত্রিক অধিকারটা কি?

অনেকের কাছে গনতন্ত্র হলো মায়াবী মনোরম কোন একটা ব্যবস্থা - যেখানে যে যা ইচ্ছা করতে পারবে - শুধু মাত্র সংঘবন্ধতা দরকার। যেমন ধরা যাক - জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র মনে করলো তারা রাজনীতি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কেরানী হবার যোগ্যতা অর্জন করবে এবং বিনামূল্য সেই পড়াশুনার খরচ রাষ্ট্রের কাছ থেকে আদায় করা তার অধিকার - আর সেই অধিকার আদায়ের জন্যে রাস্তায় মিছিল করে বাসে ঢিল ছোড়া আর পুলিশের সাথে রায়ট করা তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার। কাজটা তারা করলো প্রেসক্লাবের কাছাকাছি - সাংবাদিকদের স্টোরি করার জন্যে কষ্ট করতে হলো না। পরদিন মধ্যবিত্তের মুখপাত্র সুশীল সমাজ নেমে পড়লো তাদের গনতান্ত্রিক অধিকারে বয়ান দিতে। সরকারও বিব্রতকর অবস্থা এড়ানোর জন্যে দাবী মেনে নিলো।

এখানে গনতন্ত্রের মুল বিষষ স্বচ্ছতা কোথাও রইল না - সরকার কোন খাত থেকে এই অর্থ বরাদ্ধ দেবে তার কোন ব্যাখ্যা জনগনকে দিতে হলো না। আর যে লোকজন বাসে চড়ে যাচ্ছিলেন - তাদের উপর যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো তার দায় কেহই নিলো না। বরঞ্চ দাবী আদায়ের মাধ্যমে সরকার এই ধরনের সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করলো। কিন্তু যে মানুষটি বাসে চড়ে যাচ্ছিলেন বা যে বাচ্চাটা মায়ের সাথে স্কুল থেকে ফিরছিলো - তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার পুরষ্কার পেলো একদল সন্ত্রাসী । এখানে দেখা যাচ্ছে সুস্পষ্ট ভাবে একদল সংঘবদ্ধ হয়ে অসংগঠিত জনগনের উপর বল প্রয়োগ করে তাদের দাবী আদায় করে নিলো - এইটা কি গনতান্ত্রিক অধিকার? মোটেও না। এইটা সংঘবদ্ধ পেশীতন্ত্র।

গনতন্ত্রে প্রতিটি নাগরিকে অধিকার সংরক্ষনের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে গনআন্ত্রিক অধিকারের নামে একদল সংঘবন্ধ হয়ে সাধারন মানুষের নিরাপত্তাকে জিম্মি করে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে যায়।

ফলাফল দেখি অসংঘবদ্ধ তিস্তা প্রজেক্টের কৃষকরা পানির অভাবে বোরো চাষ করতে পারছে না - এরা নিশ্চিত ভাবে দারিদ্রতার দিকে চলে যাচ্ছে - কিন্তু সুবিধাভোগী মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি সুশীলরা এবং তাদের নিয়ণ্ত্রাধীন মিডিয়া বায়বীয় বিষয় নিয়ে আলোচনায় মানুষকে ব্যস্থ করে রেখেছে। যে আলোচনা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মাঝে করে সমাধান করতে পারে ( ভিন্নদলের নেতারা নিজেদের ছেলে মেয়ে বিয়ে দেবার সময় এরা নিম্চয় ধর্মঘট ঢেকে দাবী আদায় করে না নিশ্চয়ই) - তা না করে সাধারন মানুষকে জিম্মি করে তারা গনতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করে।

এবার আসা যাক একটা উদাহরনে। তার আগে একটু বলে নেওয়া দরকার - গনতন্ত্র কোন ব্যবস্থা না - যা আসমান থেকে নাজিল হয়েছে বা ইউনিভার্সাল কোন একটা গ্রহনযোগ্য রূপ আছে। গনতন্ত্র হলো একটা প্রক্রিয়া - যার চর্চার মাধ্যমে কোন সমাজ বা রাষ্ট্র একটা কল্যানময় ব্যবস্থাপনায় উন্নীত হয়। বাংলাদেশই একটা প্রথম দেশ না যে - গনতন্ত্রের চর্চা শুরু করেছে। বিশ্বের অনেক দেশ গনতান্ত্রিক চর্চায় অনেকদুর এগিয়ে গেছে। তারমধ্যে একটা দেম হলো কানাডা। কানাডায় প্রতিটি নাগরিক কিভাবে গনতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করে তার একটা উদাহরন দেওয়া যাক।

একটা এলাকায় অনেকগুলো হাইরাইজ বিল্ডিং আছে - তাদের মধ্যে অনেকটুকু ফাঁকা জায়গা - যার মালিক একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানী। সেই কোম্পানী একসময় সিদ্ধান্ত নিলো ফাঁকা জায়গায় দুইট হাইরাইজ বানাবে। নিয়মানুসারে এরা দরখান্ত দিলো সিটিতে। সিটি তার সকল ডিপার্টমেন্টকে এসেসমেন্ট করতে বললো - যেমন পানি, বিদ্যুৎ আর পরিবহনের জন্যে বাস আর রাস্তার উপর কি প্রভাব পড়বে তার উপরে এরা কাজ শুরু করলো। ইতোমধ্যে এলাকার সিটি কাউন্সিলর একটা টাউনহল মিটিং ডাকলো এলাকার মানুষের মতামত জানার জন্যে - বাড়ী বাড়ী নোটিস এলো - মিটিং এ এলাকাবাসী(সবাই ভাড়াটিয়া) নতুন বিল্ডিং হলে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়বে এবং লোকাল স্কুলের উপর চাপ পড়বে ইত্যাদি বিষয় উত্থাপন করে বিপক্ষে মত দিলো। ভোটাভুটিতে ৭০% বিপক্ষে ভোট গেলে সিটি পরিকল্পনা বাতিল করে দিলো।

একই সময় বাংলাদেশে একটা ঘটনা ঘটছিলো - এয়ারপোর্টের মোড়ে লালনের মূর্তি বানানো শুরু করলে লোকাল মোল্লারা বিরোধীতা করলো - দেশের সুশীল সমাজ মোল্লাদের মুন্ডুপাত করলো - সরকার অর্ধসমাপ্ত কাজ বাতিল করলো। মজা বিষয় হলো পক্ষে বিপক্ষের কেউ কারো সাথে কথা বলার সুযোগ পেলো না - কেউ কাউকে তাদতের যুক্তিগুলো বলার সুযোগ পেলো না - আর যারা এই নির্মান কাজ করছিলো - তারাও দুই পক্ষের কারো সাথে কথা বলেনি - দুই পক্ষই স্বদ্যোগে পরষ্পরের মুন্ডুপাত করেছে। প্রশ্ন করা যেতো - কে এই পরিকল্পনা করেছে - টাকা আসছে কোথা থেকে - এর কোন পক্ষে কোন সম্ভাব্যতা (এসেসমেন্ট) করা হয়েছিলো কিনা? কারা নিজ দায়িত্বে একটা রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে জনগনকে বিভক্ত করে একদল কে আরেকদলে পিছনে লেলিয়ে দিচ্ছে? কোন একজনকেও এই প্রশ্ন করতে দেখলাম না। এখানে জনগনের মতামত বা পার্টিসিপেশন কোথায়? কোথায় স্বচ্চতা আর কোথাই বা জবাবদীহিতা?

আবারো বলি - গনতন্ত্র কোন আসমানী বিধান না - সোনার পাথরবাটিও না - ভিন্নমতে পথের মানুষের পরষ্পরের প্রতি সন্মান আর পরষ্পরের অধিকারে প্রতি সচেতন হয়ে বিতর্ক আর যুক্তির ভিত্তিতে একটা সকলের জন্যে কল্যানময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াই গনতন্ত্র। গনতন্ত্রের মুল ভিত্তি হলো মুক্ত আলোচনা - সচ্ছতা আর জবাবহিদীতা। সেগুলো শুরু হয় ব্যক্তিগত কর্মকান্ড থেকে - আর দলের মধ্যে গনতন্ত্রের চর্চা যে কতটা জরুরী তা নিম্চয় বাংলাদেশের মানুষরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

তার যারা নিজেদের কর্মকান্ডকে গনতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে চিৎকার করে সংঘবদ্ধতার জোরে প্রতিষ্ঠা করতে চান - তাদের প্রতি অনুরোধ বিপরীত অবস্থানে নিজেকে নিয়ে একবার দেখুন - বাসে চড়ে যে বৃদ্ধ হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে - বাসে ঢিল বারার আগে একবার ভাবুন - লোকটা আপনার বাবা হতে পারতেন - অথবা যে বাচ্চাটা স্কুল শেষ করে চোখেমুখে আনন্দ নিয়ে রিক্সায় চড়ে বাসায় যাচ্ছে - আপনার লাঠির আঘাত সেই রিক্সায় বসানোর আগে ভাবুন - মেয়েটা আপনার আপনজন কেউ হতে পারতো। একজন মানুষের রাস্তা নিরাপদে চলাচলও একটা অধিকার - তা সংঘবদ্ধতার জোরে বাতিল করে দিয়ে যদি আমরা মুখে গনতন্ত্রের কথা বলি - তা হবে খুবই ভয়াবহ।


৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×