somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরাধবোধ!!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আপনি এটা কি করলেন? এদেরকে টাকা দিয়ে দিলেন? জানেন না- এদের বয়স কম হলে কি হবে-এরা একেকটা বাটপারের আধার?? ঐ দেখেন দূরে গিয়ে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে।

সিরাজুল ইসলামের কথা শুনে আজিজ সাহেব তাকিয়ে দেখেন,কথাটা সত্যি। রাগে তার গা জ্বলতে লাগল। মনে হচ্ছে: বাচ্চাটাকে ধরে কয়েকটা চড় লাগাতে পারলে মনটা একটু শান্ত হত।


সিরাজুল ইসলাম আবারো বলতে শুরু করেন:

-এইসব ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আর পারা গেল না। যেখানেই যাবেন সেখানেই এরা মুখ করুণ করে হাজির হয়ে বলবে: স্যার, কয়েকটা টাকা দেন না,না খাইয়া আছি,বোনের অসুখ,বাবা মারা যাচ্ছে,হেন-তেন, আরো কত কি!! প্রতিদিন নিত্য-নতুন বাহানা তো যোগ হচ্ছেই। সব বাটপারের দল! এত ছোট বয়স থেকেই এদের মা-বাবা এদের রাস্তায় একা একা বাটপারি করে টাকা রোজগার করতে শিখিয়ে দিচ্ছে, মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় ভাবলে! যাই হোক, আপনার এখন আর কিছু করার নেই। পরের বার সাবধান থাকবেন।

এরপর থেকে আজিজ সাহেব বেশ সাবধান হয়ে গেছেন। সেদিন বাজার করে রিক্সায় উঠবেন, হঠাৎ কোথেকে যেন একটা ৭-৮ বছরের বাচ্চা দৌড়ে এসে তার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল:

-স্যার ,ও স্যার। কয়েকটা টাকা দেন না, স্যার। আমার মায়ের খুব জ্বর স্যার, একটা জ্বরের ওষুধ ( নাম বলতে পারল না- নাপা বা প্যারাসিটামল জাতীয় কিছু একটা হবে) কিনমু।

আজিজ সাহেব কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে রিক্সায় উঠে গেলেন। রিক্সা চলতে শুরু করল। এসব বাচ্চা খুব নাছোড়বান্দা টাইপ হয় - তিনি আগে দেখেছেন। এই বাচ্চাটিও হাল ছেড়ে দিল না। চলন্ত রিক্সার পিছে পিছে দৌড়াতে শুরু করল।

-স্যার, ওষুধ না পাইলে আমার মা মইরা যাইব স্যার। দেন না কয়েকটা টাকা। কেউ দেয় না স্যার। কতজনরে কইসি।

একটা কল এসেছে। আজিজ সাহেব ফোন বের করে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে থাকেন। এদেরকে পাত্তা না দিয়ে অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। তাহলেই এরা একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে। কিন্তু বাচ্চাটি মনে হয় বেশ নাছোড়বান্দা। অনেকখানি রাস্তা তার রিক্সার পিছে পিছে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসতে থাকে। কান্নার কি নিখুত অভিনয়!! বাপরে বাপ। আজিজ সাহেব খুব বিরক্ত হন।

একসময় রিক্সার গতির সাথে আর পেরে না উঠে বাচ্চাটি থেমে যায়। আজিজ সাহেব পিছনে একবার তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। যাক, আজ অন্তত তাকে ঠকাতে পারেনি। রিক্সা প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে।


হঠাৎ কি মনে হতেই আজিজ সাহেব চমকে উঠেন। তিনি মনে করতে চেষ্টা করলেন: শেষবার যখন তিনি পেছন ফিরে তাকিয়েছিলেন, তখন কি দেখেছেন? বাচ্চাটি কি রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছিল? হুম,তাই তো মনে হচ্ছে। তার মানে বাচ্চাটি যা বলেছিল সব সত্যি!!

আজিজ সাহেব দ্রুত রিক্সা ঘুরিয়ে সেই জায়গাটিতে ফিরে গেলেন। কিন্তু কোথাও বাচ্চাটিকে দেখতে পেলেন না। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। সবার মাঝেই বাসায় ফিরে যাবার জন্য এক ধরনের তাড়া। সেই অবস্থায় রাস্তায় প্রচন্ড ভীড়ের মাঝে তিনি বাচ্চাটিকে পাগলের মত এদিক-ওদিক খুঁজে বেড়াতে লাগলেন। কিন্তু পেলেন না কোথাও।


সেই ঘটনার পর অনেকদিন পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু থেমে থাকেনি বাচ্চাটিকে খুঁজে বের করার আজিজ সাহেবের অবিরাম প্রচেষ্টা। আজও আজিজ সাহেব সুযোগ পেলেই সেই জায়গাটায় গিয়ে বাচ্চাটিকে খুঁজে বেড়াতে থাকেন।

----------------------------------------------------------------------

গল্পটি লিখেছেন : স্বপ্নীল

প্রথম প্রকাশের তারিখ : ২৮ জুন , ২০১১

স্বপ্নীল এর ফেসবুক : http://www.facebook.com/sopnill.ahmed
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×